Wednesday, May 5, 2010
পদবঞ্চিতদের মানভঞ্জন
খবর পড়ে নিধুবাবুর টপ্পার সেই বিখ্যাত লাইনগুলোর কথাই ঘুরেফিরে মনে আসছে। রামকুমার চট্টোপাধ্যায়ের কণ্ঠে যারা নিধুবাবুর গানটি শুনেছেন, ছাপার অক্ষরে দেখলে তাদের সুরসমেত মনে পড়ার কথা। নিধুবাবু কার উদ্দেশে বলছেন কে জানে! কিন্তু বলছেন, 'অনুগত জনে কেন করো এত প্রবঞ্চনা?/ তুমি মারিলে মারিতে পারো/ রাখিতে কে করে মানা?' টপ্পার খোশমেজাজি তালে গানের যে রস তৈরি হয় তা তো লিখে বোঝানো সম্ভব নয়। কিন্তু আকেলমন্দ কে লিয়ে ইশারা হি কাফি। বুঝমানের জন্য ইঙ্গিতই যথেষ্ট। গানটির কথা বিশেষ করে মনে হলো সোমবারের সমকালে ছাপা একটি খবর পড়ে। খবরে প্রকাশ, ১০ জানুয়ারি সকালে আওয়ামী লীগের তিন নেতা আবদুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সঙ্গে দেখা হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠান ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের। সেখানে তিন নেতাকে বক্তৃতা দেওয়ার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। নেতারা আসেন, বক্তৃতা দেন এবং নেতাকর্মীদের প্রশংসাও কুড়ান। শুধু তিন নেতাই নন, বিএনপির কাউন্সিলে গিয়ে জোটবিরোধী বক্তৃতা দেওয়ায় একটু পিছলে পড়েছিলেন অসীম কুমার উকিল, তিনিও ১০ তারিখের অনুষ্ঠানে সভা পরিচালনার দায়িত্ব পান। বেশ একটা ঐক্য ও সংহতির বাতাবরণ তৈরি হয়েছে বটে। কিন্তু যারা রাজনীতির উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের সমঝদার, তারা ভালো করেই জানেন, রাজনীতিতে মান-অভিমান, রাগ-অনুরাগ বলে কিছু নেই। ফলে মানভঞ্জনের বিষয়ও নেই। রাজনীতি শ্রীকৃষ্ণ কীর্তনের মতো কাব্য নয়, আবার রোমান্সও নয়। কোমল শিল্পকলায় পারদর্শী কবিমন রাজনীতিতে শিশুমাত্র। বলতে হয়, রাজনীতি কঠোর শিল্পকলা। ওয়ান-ইলেভেনের পর কতকিছুই না ঘটেছিল! সংস্কার সংস্কার রব উঠে মাঠ গরম করে দিয়েছিল। সংস্কার নিয়ে যারা সরব হয়েছিলেন, তাদের গায়ে সংস্কারপন্থির ছাপ পড়েছিল। তখন অনেকে ভেবেছিলেন, সংস্কারের ছাপ যাদের গায়ে পড়ল না তারা বোধহয় রাজনীতি থেকেই নাই হয়ে গেলেন। কিন্তু নজরুল বহু আগে গেয়ে গেছেন, 'চিরদিন কাহারও সমান নাহি যায়।' সেদিন যারা ওয়ান-ইলেভেনের রথে শামিল হননি, তারা আজ গণতন্ত্রের রথে সওয়ার হয়েছেন। আর যারা সংস্কার করতে চেয়েছিলেন, তারা খানিকটা সংস্কার হয়ে গেছেন। আওয়ামী লীগের বিজয়ের পর অনেকে বলেছিলেন, যা হয়ে গেছে তা তো ফেরানো যাবে না। এবার মিলেমিশে দেশগড়ার কাজ চলুক। কিন্তু নেত্রী বলেছেন, ক্ষমা করলেও ভুলে যাবেন না। দেখি কী হয়, দেখি কী হয় করে এক বছর গেল সরকারের। না দলে, না সরকারে কোথাও ভালো জায়গা হলো না সংস্কারপন্থিদের। সবশেষে পত্র-পত্রিকায় মৃদু গুঞ্জন উঠেছিল_ মন্ত্রিসভা বাড়ছে, উনি মন্ত্রী হচ্ছেন, উনি অমুক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাচ্ছেন। কিন্তু অপেক্ষার প্রহর আর ফুরাচ্ছে না। সংস্কারপন্থিদের শনি কাটছে না। মান-অভিমান করে তো আর রাজনীতি হয় না! রাজনীতি ক্ষমতা ও আনুগত্যের কঠোর হিসাবে চলে। ফলে নেতাদের আপাতত বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে, অনুশোচনা করে কাটাতে হবে হয়তো আরও কিছুদিন। বলছিলাম নিধুবাবুর টপ্পার কথা। এদেশে শেখ হাসিনা আর খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তার কথা কে না জানে! শিশুপাঠ্যে ছিল, একে চন্দ্র, দুইয়ে পক্ষ, তিনে নেত্র, চারে বেদ। আমাদের রাজনীতিপাঠ্যে লেখা আছে, একে দেশ, দুইয়ে নেত্রী। এক-এগারোর সামান্য ধাক্কায় অনেকে ব্যাপারটা ভুলতে বসেছিলেন। নির্বাচনের পর বেশ মনে পড়েছে। কিন্তু তখন তো অনেক দেরি হয়ে গেছে। এখন যদি নেত্রী খুশি হন, যদি তার মনে ক্ষমা জাগে তো কখনও হয়তো পদবঞ্চিতদের জন্য পদ মিলতে পারে। ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে। ভারতের টিভিতে বিজ্ঞাপনের একটি কথা মনে পড়ছে, 'পাহেলে যদি পাতাহি থা, তো এস্তেমাল কিঁউ নেহি কিয়া?' যদি জানাই ছিল তবে আগে ব্যবহার করেননি কেন? জানা না থাকার তো কথা নয়। শেখ হাসিনার মতো নেত্রীকে টেক্কা দেওয়া সম্ভব নয়_ এ তো জানাই ছিল। তবে আর সংস্কারের কথা উঠিয়ে তাকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার বাসনা অল্প হলেও প্রকাশ করেছিলেন কেন?
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment