Wednesday, May 5, 2010
মোবাইল চালান, গাছ বাঁচান!
ভারতের মোবাইল অপারেটর হলেও 'আইডিয়া সেলুলারে'র সঙ্গে বাংলাদেশে অনেকেই কমবেশি পরিচিত। ঢাকায় ক'দিন আগে যে আইডিয়া কাপ ত্রিদেশীয় ক্রিকেট হলো বাংলাদেশ-ভারত-শ্রীলংকার মধ্যে, সেটির স্পন্সর ছিল আইডিয়া সেলুলার। ভারতের বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে আইডিয়ার বিজ্ঞাপনগুলো অভিনবত্বের জন্য বিশেষ আলোচিত ও প্রশংসিত হয়েছে। সম্প্রতি 'ওয়াক হোয়েন ইউ টক' স্লোগানটি ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করেছিল। মোবাইল বা সেলফোনে কথা বলার সময় হাঁটুন এই ছিল ওই বিজ্ঞাপনের মর্মবাণী। সুস্বাস্থ্যের জন্য হাঁটতে হবে। কিন্তু হাঁটার সময় কোথায়? তাই ফোনে কথা বলার সময় হাঁটুন, হাঁটতে হাঁটতে কথা বলুন। আইডিয়ার এই বিজ্ঞাপন ফোনে কথা বলতে অভ্যস্ত মানুষেরা কতটা অনুসরণ করেছিলেন জানা ভার। কিন্তু বিজ্ঞাপনের আইডিয়া হিসেবে যে খুব অভিনব ছিল সেটা সবাই স্বীকার করেছেন। 'ওয়াক হোয়েন ইউ টক'কে টেক্কা দিয়ে আইডিয়া এখন নতুন স্লোগান নিয়ে বাজারে এসেছে। নতুন এই স্লোগানটি হলো_ 'ইউজ মোবাইল, সেভ পেপার।' টিভিতে মোবাইল ব্যবহার করে গাছ বাঁচানোর এই অভিনব বিজ্ঞাপন দেখে বলতে হয়, 'হোয়াট অ্যান আইডিয়া স্যারজি!' বলতে হয়, এভাবে তো ভেবে দেখিনি। বিজ্ঞাপন বিষয়ে একটু খোঁজখবর নিতে আইডিয়ার ওয়েবসাইটে গেলাম। ওয়েবসাইটের ওয়েলকাম পেজ বা শুরুর পাতাতেই ওরা লিখে রেখেছেন, ১০ লাখ না ছাপা কাগজের পাতা ৮৫টি গাছ বাঁচাতে পারে। সবারই জানা, মূলত গাছ থেকেই কাগজ তৈরি হয়। আসবাব তৈরি থেকে নির্মাণযজ্ঞ সর্বত্রই কাঠের ব্যবহার চলে। জ্বালানির কথা তো আসে সবার আগে। গাছ সাবাড় করার বাহানার অভাব নেই। আর এই করতে করতে বিশ্বের বন-জঙ্গল সব ধ্বংস হতে চলল। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, পরিবেশ বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ এই বৃক্ষনিধন। এও জানা কথা। কিন্তু মানতে পারছেন ক'জন? কারণ নিত্যপ্রয়োজনীয় বহু জিনিসই গাছ থেকে আসে। যেমন এই কাগজ। সকালবেলা খবরের কাগজ দিয়ে শুরু। অফিসে, বিদ্যালয়ে, আদালতে কত শতভাবে কাগজ ব্যবহার করছি আমরা। কিন্তু সাদা কাগজই হোক আর ম্লান নিউজ পেপারই হোক কাগজের দিকে তাকিয়ে কি একবারের জন্যও মনে হয়, এটি বহুল প্রয়োজনীয় গাছ থেকেই আসে? যে গাছ আমাদের বাতাসের দূষিত কার্বন ডাই-অক্সাইড শুষে নেয়, যে গাছ বেঁচে থাকলে আমাদের পরিবেশকে আরেকটু সহনীয় করতে ভূমিকা রাখতে পারত। কেন কাগজ ব্যবহারের সময় গাছের কথা সহজে মনে হয় না কে জানে। কিন্তু আইডিয়ার বিজ্ঞাপন মনে করিয়ে দিচ্ছে বারবার। আইডিয়া বলছে_ যদি পত্রিকা পড়ার কাজ, এমনকি লেখার কাজও মোবাইলে করা সম্ভব হয় তবে আর কাগজ কেন? মোবাইলেই কাগজের বেশিরভাগ কাজটা সেরে ফেলুন। মোবাইল চালান, গাছ বাঁচান। কাগজ তো শুধু মোবাইল ব্যবহার করেই বাঁচানো যায় না। কম্পিউটার ব্যবহার করেও করা যায়। বেশ কিছুদিন আগে, আমাদের বন্ধু একটি ব্লগের উদ্যোক্তা হিসাব দিয়েছিলেন ব্লগে কয়েক লাখ লেখা প্রকাশ করার মধ্য দিয়ে তিনি কত কাগজ বাঁচিয়েছিলেন। শুনে একটু পরিহাসবোধ করেছিলাম। এ হয়তো তার ব্লগের বাজার তৈরি করার আইডিয়া, আইডিয়া হয়তো মোবাইল বিক্রি করার জন্যই গাছ বাঁচানোর কথা চাউর করছে। ব্যবসায়িক এই উদ্দেশ্য সত্ত্বেও কিন্তু বিজ্ঞাপনের মর্মবাণীটা ফুরিয়ে যাচ্ছে না। মোবাইল তো আমাদের জীবনসঙ্গী। কম্পিউটারও। বলা হয়, এই মোবাইল-কম্পিউটার তৈরি করতে গিয়েও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়। কিন্তু তাই বলে তো মোবাইল-কম্পিউটার তো আমরা ছাড়তে পারছি না। এখন যদি সেগুলো ব্যবহার করে গাছ বাঁচানো যায় তাহলে সমস্যা কোথায়? আমাদের দেশে হয়তো আইডিয়াটা নতুন মনে হবে। কেউ কেউ কম্পিউটারে অভ্যস্ত হলেও মোবাইলে খবরের কাগজ পড়ার অভ্যাস এখনও জমেনি। কিন্তু পশ্চিমে ইতিমধ্যে ছাপা কাগজের খবরের কাগজের দিন নাকি ধীরে ধীরে শেষ হয়ে আসছে। পাঠকরা নিজেদের সুবিধা অনুসারেই ইন্টারনেটে খবরের কাগজ পড়ছেন। দ্রুতলয়ের জীবনে এ হলো রথ দেখা এবং কলা বেচা একই সঙ্গে। খবরও মিলল, গাছও বাঁচল। হোয়াট অ্যান আইডিয়া স্যারজি!
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment