Saturday, April 30, 2011

অ-মৌসুমি বইমেলা

আমাদের বইমেলার মৌসুম ফেব্রুয়ারি, বাংলা মাসের হিসাবে মাঘ-ফাল্গুন। ফেব্রুয়ারির অমর একুশে বইমেলা নিয়ে আমাদের গর্ব অনেক। সময়ে, স্থানে ও গুরুত্বে একুশে বইমেলার সঙ্গে তুলনীয় কোনো বইমেলার কথা ভাবা যায় না। এককালে একুশে বইমেলাকে টেক্কা দেওয়ার জন্য ঢাকা বইমেলার আয়োজন করা হয়েছিল ফেব্রুয়ারির মেলার ঠিক আগে ডিসেম্বরে। প্রথম প্রথম অনেকে চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন। ভেবেছিলেন, একুশে বইমেলা গুরুত্ব হারাবে। আন্তর্জাতিক একটি মেলা হিসেবে ঢাকা বইমেলার পরিকল্পনা হয়েছিল। সাজানো হয়েছিল জাঁকজমক আয়োজনে। কিন্তু পাঠকের সাড়া তেমন মেলেনি। পাঠকের সাড়া মেলেনি বলে, লেখক-প্রকাশকের সাড়াও মেলেনি। এমনকি দেশের বাইরের প্রকাশকরা পর্যন্ত তেমন আগ্রহ দেখাননি। এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশের বাংলা বইয়ের প্রকাশকরা পর্যন্ত তেমন আগ্রহ দেখাননি। ঢাকা বইমেলা এখন নিবুনিবু। একুশে বইমেলাই বইয়ের মূলধারা হিসেবে শক্ত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু সমস্যা হলো, মেলার সঙ্গে বই লেখা, বই প্রকাশ, বিপণন এমনকি বই কেনা পর্যন্ত সব কার্যক্রম যেন ফেব্রুয়ারির মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ছে। বইয়ের এই ফেব্রুয়ারিনির্ভরতা নিয়ে অনেকেই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। সারা বছরে যদি এক মাসেই পাঠকের বইয়ের কথা মনে হয়, তবে তো প্রতিদিনের বা নিদেনপক্ষে নিয়মিত পাঠাভ্যাসটুকু গড়ে উঠবে না। সবচেয়ে বড় কথা, প্রকাশনা শিল্প মৌসুমি ভিত্তি থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না। সারা বছরের বিপণন চালু হবে না। এমন একটি পরিস্থিতিতে অনেকেই ভাবছেন সারা বছর নানা উপায়ে বই নিয়ে পাঠকের দোরগোড়ায় হাজির থাকার কথা। কাজটি কিন্তু সহজ নয়, কেননা দেশব্যাপী বইয়ের দোকান নেই, যে দোকান আছে সেখানে মানসম্মত বই বিপণনের তেমন ব্যবস্থা নেই। দেশের প্রেক্ষাপট অনেক বড়, খোদ রাজধানী শহরে এমন দোকান উঠে যেতে বসেছে যেখানে গেলে প্রত্যাশিত বইটি কিনতে পাওয়া যাবে। এখনও যে ক'টি দোকান আছে আজিজ মার্কেটে, নিউ মার্কেটে তা কতদিন থাকবে সে এক বড় প্রশ্ন। সারা বছর বই বিপণনের এই বেহাল পরিস্থিতি থেকে মনে হয়, আমরা ক্রমশ পাঠাভ্যাসবঞ্চিত জনগোষ্ঠীতে পরিণত হতে চলেছি। আমাদের বিপণি কেন্দ্রগুলোতে এমনকি আমাদের শিক্ষাকেন্দ্রেও বই বিক্রির ব্যবস্থা নেই। অথচ তথ্যপ্রযুক্তি বিকাশের পরও, জীবনধারার পরিবর্তন সত্ত্বেও পৃথিবীর অনেক জাতি বইয়ের সঙ্গ ছাড়েনি। আমরা মনে করি, এমন একটি পরিস্থিতিতে আমাদের বইয়ের জন্য কিছু জায়গা তৈরি করা উচিত। ঢাকার প্রকাশকদের মধ্যে অনেকে, বিশেষত তরুণরা এখন বই বিপণনের উপায় নিয়ে ভাবছেন। তারা ফেব্রুয়ারির বইমেলার বাইরে ঢাকায় ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন বইমেলার আয়োজন করছেন। বই বিপণনের এই বিকল্প আয়োজনগুলো ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হচ্ছে। এগুলো যত নিয়মিত হবে পাঠক ততই বছরভর বইয়ের কথা ভাবতে পারবেন। এখন শাহবাগের পাবলিক লাইব্রেরি চত্বরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঐতিহ্য ও শুদ্ধস্বরের বৈশাখী বইমেলা। অনেক ছাড় দিয়ে বিক্রি হচ্ছে বই। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে এবং ঢাকার বাইরে এমন বইমেলার নিয়মিত আয়োজন মানুষের সঙ্গে বইয়ের সম্পর্ক বাড়াবে বলে আমাদের আশা।