Tuesday, May 4, 2010

'নিউজিয়াম'


১ ফেব্রুয়ারি ডেইলি স্টারের একটি ছোট খবরে চোখ আটকে গেল। দিলি্ল শহরে ভারতের প্রথম 'নিউজিয়াম' উদ্বোধন করা হবে। প্রথম দর্শনে নিউজিয়াম শব্দটি দেখে একটু খটকা লাগলেও দ্রুত নিউজ ও মিউজিয়াম শব্দ দুটি জুড়ে গিয়ে একটা অর্থ তৈরি করে ফেলল। সুকুমার রায় একদা ছেলে ভুলানো ছড়ায় হাঁসজারুসহ নানা মিশ্র ধারণা আমদানি করেছিলেন। হাঁস ও সজারুর মিলিত চেহারার অদ্ভুত দর্শন এক প্রাণীর ছবিও আমরা দেখেছি। খুব মজার ধারণা ছিল এই হাঁসজারু। সব বয়সের লোককেই বহুকাল ভাবিয়েছে এমন ধারণা। এখন অবশ্য জিন-প্রযুক্তির এমনই বিকাশ হয়েছে যে, হাঁসজারুকেও সম্ভব মনে করা হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, এমন এক সময়ও নাকি আসতে পারে, যখন গাছ থেকে উড়ে এসে আপেল খাবার টেবিলে বসে পড়বে। জেনেটিক্যালি মোডিফাইড ফুড বা জিএম ফুডের উচ্চ ফলনের কেরামতির সঙ্গে যারা পরিচিত তারা আর এসবে চমৎকৃত হন না। বরং তারা জিন পরিবর্তনের ফলে হাজার বছরের প্রাকৃতিক সম্পদে কী ক্ষতি হচ্ছে, সে নিয়েই বিশেষ চিন্তিত। শুধু জিন-প্রযুক্তিই নয়, আমাদের ভাষা-প্রযুক্তিতেও হাঁসজারু বিশেষ প্রভাব বিস্তার করেছে। দুটি শব্দ যতই দূরের হোক, তাদের এখন জোড়া লাগাতে সময় লাগে না। যেমন ইনফরমেশন এবং এনটারটেইনমেন্ট_ এ দুটি শব্দ মিলে হয়ে গেল ইনফোটেইনমেন্ট। এ এমন এক তথ্য যা নাকি বিনোদনও দেবে। এমন উদাহরণ পাওয়া যাবে এন্তার। বাংলাভাষাতেও এমন জোড় শব্দের হাওয়া এসে লেগেছে। তবে সেগুলোর অধিকাংশই এখনও অচ্ছুৎ বলেই গণ্য। ভাষা নিয়ে তর্ক হতেই পারে; কিন্তু নতুন একটা শব্দ যখন অভিনব একটা আইডিয়ার জন্ম দেয় তখন একটু নড়ে না বসলে চলে না। যেমন এই নিউজিয়াম। খবরের জাদুঘর। আর্কাইভ। নিউজ মিউজিয়াম। ভেবেছিলাম, এ বোধহয় ভারতীয়দেরই আবিষ্কার। তারাই প্রথম চালু করতে যাচ্ছে এমন নিউজিয়াম। নেটে একটু সার্চ দিতে আরও নানা নিউজিয়ামের দেখা মিলল। ওয়াশিংটন ডিসির পেনসিলভানিয়া এভিনিউতে বড় এক নিউজিয়াম গড়ে উঠেছে। দাবি করা হচ্ছে, এটি সবচেয়ে মিথষ্ক্রিয়ামূলক নিউজিয়াম। মিথষ্ক্রিয়া বললে ইন্টারঅ্যাকটিভ শব্দটার গুরুত্ব ঠিক বোঝা যায় না। তবে ধারণাটা এমন, অডিও-ভিডিও-প্রিন্ট মিডিয়ার সম্মিলিত এ নিউজিয়াম ব্যবহারকারীদের অনেক কিছু করার থাকে। তাদের অংশগ্রহণে জীবন্ত হয়ে ওঠে নিউজিয়াম। ছবিতে দেখে নিউজিয়াম দেখার লোভ হলো; কিন্তু আমাদের জন্য দিলি্ল অনেক দূর, ওয়াশিংটন তো আরও দূরের ব্যাপার। ফিলিপ এল গ্রাহাম বলেছিলেন, নিউজ ইজ দ্য ফার্স্ট ড্রাফট অব হিস্ট্রি। খবর হলো ইতিহাসের প্রথম খসড়া। এ উপলব্ধি আমাদের গবেষকদের আছে। তাই জাতীয় আর্কাইভ থেকে পাবলিক লাইব্রেরি পর্যন্ত গবেষকরা ইতিহাসের সন্ধানে ছোটাছুটি করে গলদঘর্ম হন; কিন্তু ইতিহাসের প্রথম খসড়ার কোনো কার্যকর খোঁজ মেলে না। যারা হাতে-কলমে কোনো নির্দিষ্ট সময়ের খবরের কাগজের সন্ধানে গিয়েছেন তারা আমাদের সংগ্রহের দুরবস্থা দেখে নিশ্চয়ই অবাক হবেন না। কথিত আছে, আমরা বিস্মৃতিপ্রবণ জাতি। আমাদের ইতিহাসবোধ প্রখর নয়। যাদের ইতিহাসবোধ প্রখর নয়, তাদের জন্য ইতিহাসের খসড়া তো তেমন গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কথা নয়। হয়তো এ কারণেই কর্তাব্যক্তিরা একটু নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন। কিন্তু সময় তো বদলাচ্ছে। মানুষের মধ্যে ইতিহাস চেতনা জাগছে। মানুষ জানতেও চাইছে। তথ্যকে অধিকার হিসেবেও গণ্য করা হচ্ছে। এখন প্রশ্ন হলো, নতুন প্রজন্মের মানুষের জন্য একটি নিউজিয়াম কী ঢাকায় হতে পারে না? শুরু থেকে ২০১০ পর্যন্ত প্রকাশিত সব সংবাদপত্র যদি একটা জায়গায় পাওয়া যায়, তবে তা কতই না সুখের ব্যাপার হতো। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিজিটাল নিউজিয়াম গড়ে তোলাও হয়তো কঠিন ব্যাপার নয়। অবশ্য ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সংবাদপত্র একত্র করে নিউজিয়াম গড়তে বড় উদ্যোগ দরকার। আশাটুকু তোলা থাক। আপাতত আমরা ভাবতে থাকি শুধু ওই শব্দটির কথাই। নিউজিয়াম! পাশাপাশি শব্দ দুটি কিন্তু খুব অনায়াসে মানিয়ে গেছে।

No comments:

Post a Comment