Tuesday, May 4, 2010
দেখে যেন মনে হয় বোমা উহারে
তিলকে তাল বানানোর অভ্যাস আমাদের আছে। কিন্তু রাজনীতিতে বোধহয় দুটিই ঘটে। তিলকে যেমন চোখের নিমেষে তাল বানানো হয়, তালকেও তিল বা তিসিতে পরিণত করা সামান্য আয়াসেরই ব্যাপার। তালকে তিল আর তিলকে তাল বানাতে বানাতে আমাদের রাজনীতি ক্রমশ তিলোত্তমা বা তালোত্তমা হয়ে উঠছে। কোনো ত্রিকালদর্শী হয়তো এমন কাণ্ডে তালকানা হবেন না। বলবেন, এ তো রাজনীতির চিরাচরিত নিয়মই। কিন্তু আমজনতা দিশাহীন হয়ে যেতে পারে সহজেই। সোমবার বিরোধীদলীয় নেত্রীর গুলশান অফিসের সামনে থেকে বোমার মতোন দুটি জিনিস উদ্ধার করেছে পুলিশ। বোমা তো বোমাই। বোমাসদৃশ বা বোমার মতোন আবার কী জিনিস? নাশকতা ঘটানোর উদ্দেশ্যে কেউ হয়তো বোমা ফেলে গিয়ে থাকবে। কিন্তু পুলিশ বলছে, এ তো ককটেল মাত্র। ক্ষতি করার তেমন ক্ষমতা নেই এ বোমার। নেহাতই ছোট বোমা। কিন্তু বিএনপি কি আর বিরোধী দলে থেকে পুলিশের বাণী শুনবে? তারা বলছে, এর পেছনে গভীর ষড়যন্ত্র আছে। এ ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত আরও কত কি। বিরোধীদলীয় নেত্রীর অফিসের সামনে পড়ে থাকা ককটেল রাজনীতির গুণে বোমা হয়ে যেতে পারে। আর পত্রিকার কল্যাণে তা যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে প্রকাশিতও হতে পারে। অন্যদিকে ভাবুন শেরপুরে পাওয়া গ্রেনেডের কথা। পত্রিকায় এমনভাবে ছাপা হবে, আর এমনভাবে আলোচনা হবে এ নিয়ে যে, বিধ্বংসী গ্রেনেড নয়, এ নেহাতই দু'চারটি ককটেল। এই হলো আমাদের পরিস্থিতি। কখনও বিরোধীদলীয় নেত্রীর বাড়ি হয়ে পড়ে রাজনীতির কেন্দ্রীয় আলোচনা, কখনও কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন হয়ে পড়ে সরকারের প্রধান এজেন্ডা। রাজনীতির লীলা বোঝা বড় ভার! বোমা নিয়ে বিশেষ এক ধরনের রাজনীতিও আছে। কোথাও হয়তো বোমা পোঁতা হলো, কোথাও বোমা ফেলে রাখা হলো। সেদিকে মিডিয়ার প্রচার চলে গেল। সবাই বোমা নিয়ে ভেবে ভেবে মাথা ভার করে ফেলল। কেউ বলল, নাশকতার আশঙ্কা; কেউ বলল, হত্যার রাজনীতি; কেউ বলল, বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র। কিন্তু কাজের কথা অল্প লোকেই বলেন। যারা বলেন তারা জিজ্ঞেস করেন, এ বোমা কোথা হতে এলো? কোনো ক্লু না পেয়ে খোদ বোমাকে জিজ্ঞেস করেন বিশেষজ্ঞরা, বোমা তখন নিজেই ভাবতে থাকে, কোথা হতে এলেম আমি? কেউ বলেন, অবৈধ অস্ত্রের বিস্তার রোধ করতে হবে। কেউ বলেন, সন্ত্রাসী, বোমাবাজরা কারও বন্ধু নয়, সকলের শত্রু। তবু কি বন্ধ হয় রাজনীতি। আমাদের দেশে তো এই সেদিনও কত গ্রেনেড ফুটল। কত লোকের প্রাণহানি হলো। বোমা যতক্ষণ না ফোটে ততক্ষণই এ নিয়ে রাজনীতি চলে। কিন্তু যখন ফোটে তখন তো সবাইকে নির্বাক করে দিয়ে যায়। এ তো ক'দিন আগে ভারতের পুনেতে বোমা বিস্ফোরণ হলো। ভারতীয় পত্রিকায় দেখলাম, পুলিশ বলেছে, কোথাও বোমার মতোন জিনিস দেখলে নাড়াচাড়া করবেন না। পুলিশ ডাকবেন। পুলিশ এসে দেখবে বোমা না অন্য কিছু। ফলে বোমা নিয়ে না খেলাই ভালো। বিশ্বে প্রতিদিনই কত বোমা ফুটছে, কত নিরীহ মানুষের প্রাণহানি ঘটছে। এসব কথা মনে করে, ককটেলগুলোকে বোমা করে তোলার চেষ্টা আপাতত ক্ষান্ত থাকুক। আমাদের সবার পরিচিত একটা গল্প আছে। এক রাখাল বালক ছিল। বাঘ বাঘ করে চিৎকার করত। শেষে একদিন সত্যি বাঘ এলো। কিন্তু সেদিন আর কেউ রাখালের কথা বিশ্বাস করল না। গল্পটি পুরো বললাম না। গল্প সবার জানা, মোরালও। একদা আমাদের এখানেও নেতা-নেত্রীরা বোমা বোমা বলে চিৎকার করতেন। শেষে দেখা গেল একদিন সত্যি বোমা ফুটল। সেদিন তো কতজনের কথাই বলা হলো। কত গবেষণা চলল। অবশেষে অনেক কষ্টে আমরা বোমার ভয় থেকে বের হয়েছি। আবার তাহারে কেন ডাকো? আমরা আর বোমার ভীতিকর জগতে ফিরতে চাই না। বোমাকে চিরবিদায় জানাতে চাই। আর এজন্য রাজনীতির লাঠালাঠি, বকাবকি, ব্লেমগেমের মধ্যে কিছুতেই যেন বোমা চলে না আসে সেই আমাদের প্রার্থনা।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment