Wednesday, May 5, 2010

বিড়াল-মন্দির


গার্হস্থ্য জীবনের সঙ্গে বিড়ালের সম্পর্ক নিবিড়। সুদীর্ঘকাল ধরে মানুষের বাসস্থানের পাশে বিড়াল বাস করছে। কিছুটা বন্য, কিছুটা পোষা এ প্রাণী শহরের যান্ত্রিক জীবনের সঙ্গেও অনায়াসে মানিয়ে নিয়েছে নিজেকে। কেউ কেউ বিড়াল বিশেষত কালো বিড়ালকে দেখেন ভয়ের চিহ্ন হিসেবে। কারও কাছে আবার অত্যন্ত প্রিয় প্রাণী। বলা হয়ে থাকে, অত্যন্ত আরামপ্রিয় এই প্রাণীর কাছ থেকে মানুষ শিখতে পারে সুখ কেমন ব্যাপার আর চরম প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও কীভাবে সুখে থাকতে হয়। মানুষের কাছের এ প্রাণীটিকে নিয়ে রহস্যের শেষ নেই। আধুনিক সাহিত্যের প্রত্যেক বড় কবিই বোধহয় বিড়াল নিয়ে এক বা একাধিক কবিতা লিখেছেন। অ্যাডগার অ্যালান পো থেকে শুরু করে জীবনানন্দ দাশ কেউ বাদ দেননি বিড়ালের প্রসঙ্গ। বিড়াল নিয়ে সাহিত্যকর্ম একজোট করলে তা বিশাল এক বিড়াল-রচনাবলির আকার ধারণ করবে বলেই ধারণা করা যায়। বিড়াল নিয়ে সাহিত্য আছে, বিড়াল নিয়ে রহস্য আছে, আমাদের ঘরের পাশে বিড়ালেরাও আছে বহাল তবিয়তে। কিন্তু কেউ কি বিড়ালের মন্দিরের কথা ভাবতে পেরেছিলেন? আমরা ভাবতে পারি না পারি, খ্রিস্টপূর্ব ২৪৬ থেকে ২১১ অব্দে মিসরের লোকেরা ঠিকই বিড়ালের মন্দিরের কথা ভাবতে পেরেছিল। শুধু ভাবা নয়, বিড়ালের মন্দিরও তৈরি করেছিল। মিসরের আলেক্সান্দ্রিয়ার আধুনিককালের এক সড়কের নিচে সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয়েছে এমন এক বিড়াল-মন্দির। মিসরীয় বিড়াল-দেবী ব্যাসটেটের উদ্দেশে নির্মিত এ বিড়াল-মন্দিরে কম করে ৬০০ বিড়ালমূর্তি পাওয়া গেছে। যারা এই মন্দির আবিষ্কার করেছেন তারা বলছেন, মিসর শাসনকারী গ্রিক সম্রাট তৃতীয় টলেমির স্ত্রী দ্বিতীয় বেরেনিক এই মন্দির তৈরি করিয়েছিলেন। প্রাচীন মিসরে বিড়াল ছিল খুবই আদুরে পোষা প্রাণী। নানা গার্হস্থ্য সামগ্রীতে বিড়ালের ছবি খোদাই করা হতো। প্রত্নতাত্তি্বকরা বলেছেন, গত একশ' বছরে আলেক্সান্দ্রিয়ায় এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক বলছে, বিড়াল-দেবী নাকি আনন্দেরও প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হতেন প্রাচীন মিসরে। উইকিপিডিয়া বলছে, প্রাচীন মিসরীয় সমাজে বিড়ালের খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। প্রাচীন মিসরে এদের ডাকা হতো ম্যাও বলে। শুরুতে বন্য অবস্থাতেই ছিল বিড়ালেরা। বন্য অবস্থাতেই মানুষের নানা উপকার করত। বেজি, ইঁদুর মেরে শস্যক্ষেতের উপকার করত। তাদের উপকারে খুশি হয়ে মানুষ তাদের পুষতে শুরু করে। উচ্চ ও নিম্নভূমির মিসরে একদা নানা প্রাণীর পূজা চালু হয়েছিল। বিড়াল-পূজা ছিল এসবের অন্যতম। বিড়াল-দেবী কালে কালে উর্বরতা ও মাতৃত্বের দেবী হিসেবেও গণ্য হয়েছিলেন। পরিস্থিতি এত দূর গড়িয়েছিল যে, রাজা-ফারাওদের মতো বিড়াল মরলে তাদেরও মমি করে রাখা হতো। সাড়ম্বরে বিড়ালের কবর দেওয়া হতো। এরকম মমি করা মৃত বিড়ালের সন্ধানও মিলেছে। পরিস্থিতি সহজেই অনুমেয়, ইঁদুরের প্রচণ্ড উপদ্রব থাকলে বিড়ালের কদর কতটা বাড়তে পারে তার নমুনা মিলেছে মিসরে। মন্দির তৈরির ভাবনা অভিনব হলেও তখনকার বাস্তবতায় দরকারি ছিল বলে অনুমান করা যায়। বিড়ালের মন্দির তৈরির কথায় যারা চমকে উঠছেন তারা নিশ্চয় অধিবিদ্যার রহস্যময় বিড়ালের বিষয়ে আরও কিছু দার্শনিক ভাবনা ভাবার অবকাশ পাবেন। হাজার বছর ধরে বিড়াল মানুষকে ভাবিয়েছে। এমনকি মানুষের সশ্রদ্ধ পূজাও আদায় করে নিয়েছে। শহরের পথে পথে ঘুরে বেড়ানো অবহেলিত বিড়াল দেখে কে আর বিড়ালের সেসব উজ্জ্বল দিনের কথা মনে করবে?

No comments:

Post a Comment