Sunday, July 22, 2012

ঊন-সাফল্য

কথাটি আন্ডারঅ্যাচিভার। বাংলা হতে পারে, ঊন-সফল। বলতে গেলে সাম্প্রতিক এক গণ্ডগোলের সূত্র এ শব্দটিই। ১৬ জুলাই টাইম ম্যাগাজিনের এশিয়া সংস্করণটির প্রচ্ছদে ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। আন্ডারঅ্যাচিভার শব্দটির উপলক্ষ তিনিই। এই অভিধাটির নিচে লেখা হয়েছিল, 'ভারতের এখন দরকার একটা কেঁচে গণ্ডূষ (রিবুট)। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং কি সে কাজের যোগ্য ব্যক্তি?' অনেকেরই মনে পড়বে, টাইম ম্যাগাজিনের এশিয়া সংস্করণগুলো সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের ব্যাপারে বিশেষ আগ্রহ দেখাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন কার্টুন কাণ্ড নিয়ে মিডিয়ার তোপের মুখে তখন ম্যাগাজিনটি বিশ্বের ক্ষমতাধর শীর্ষ একশ'জনের তালিকায় মমতার নাম প্রকাশ করেছিল। সম্প্রতি তারা গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে কভার করেছে; বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারকে নিয়েও। নরেন্দ্র মোদির ক্ষেত্রে টাইমের দৃষ্টিভঙ্গি উদার। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে তিনি কতটা উদার এবং কাজের সেটি বেশ গুরুত্বের সঙ্গেই উল্লেখ করা হয়েছে। ব্যক্তিগত উত্থানের স্টোরি ছাপিয়ে তাকে গ্গ্নোরিফাইও করার চেষ্টা করা হয়েছে প্রকারান্তরে। আর নীতিশ কুমারের উন্নয়ন কার্যক্রম, সফলতা ও পরিবর্তনের স্টোরিও যে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিপ্রসূত তা বলার অপেক্ষা রাখে না। টাইমের এই ইন্ডিয়াপ্রীতিকে অবশ্য খুব সমাদর করেনি ভারতীয় মিডিয়া। কিছু ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া থাকলেও মিডিয়া সমানে ধুয়ে দিয়েছে টাইম ম্যাগাজিনকে। টাইম প্রকারান্তরে বিকল্প ক্ষমতাকেন্দ্রগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্কে যাচ্ছে কি-না সে প্রশ্নও উঠেছে। ভারতের যে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি তাতে টাইম ম্যাগাজিন মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে কভার করলে কারও বাগড়া দেওয়ার নেই। সমালোচনা তো চলছেই, তাতেও বাগড়া দেওয়ার কেউ নেই। ফলে টাইমের উদ্দেশ্য-বিধেয় নিয়ে কথাবার্তা খোলাখুলি হচ্ছে। টাইম লিখেছিল, মোদি মিনস বিজনেস। পরিহাস করে বলা হচ্ছে, আসলে টাইম মিনস বিজনেস। নিউইয়র্কভিত্তিক টাইম ম্যাগাজিন মার্কিন মেইনস্ট্রিম বিজনেস পলিসির বড় সমর্থক ও পৃষ্ঠপোষক। বিশ্বের বহু প্রসঙ্গই তাদের নখদর্পণে। মোটামুটি প্রতি সংখ্যার চারটি সংস্করণের মাধ্যমে তারা পুরো বিশ্বের ইস্যুগুলোকে তুলে ধরে। কখনও কখনও সংস্করণের সংখ্যা বেড়েও যায়। এমন আন্তর্জাতিক একটি মিডিয়ার এশিয়া এডিশন এশিয়ার এত ঘটনা রেখে হঠাৎ করে ভারতের মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে উৎসাহী কেন সে প্রশ্ন উঠবেই। উত্তর একটাই, ক্রমবর্ধমান বাজার হিসাবে ভারতের সম্ভাবনা। দ্বিতীয় কারণ, ভারতের রাজনীতি এবং অর্থনীতিও এখন কেন্দ্রীয় একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। ছোট ক্ষমতাকেন্দ্রগুলো কেন্দ্রকে প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জ করে চলেছে। আর এটি তো সত্য যে, সামনের নির্বাচনে মমতা, মোদি, নীতিশ কুমাররা বড় নির্ধারকের ভূমিকায় থাকবেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীদের তোষণ করে খোদ দেশটির প্রধানমন্ত্রীকে দুয়ো দেওয়া হবে_ এ কেমন কথা? মনমোহন সিং কি বিজনেস বোঝেন না? বলা হয়ে থাকে, নরসিমা রাওয়ের আমলে ভারতে যে উদারীকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল তার কেন্দ্রীয় ভূমিকায় ছিলেন মনমোহন সিং। প্রথম দফার প্রধানমন্ত্রিত্বে তিনি প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রেখেছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় দফায় এসে খানিকটা হতচকিত অর্থনীতি। রাজনৈতিক ক্ষমতা টলোমলো, দুর্নীতির নানা অভিযোগ, বৈশ্বিক মন্দা, নানামুখী চাপে অর্থনীতির অবস্থা বেসামাল। প্রবৃদ্ধিও নিম্নগামী। তিনি তো প্রত্যাশিত মাত্রায় সফলতা পাননি। সাম্প্রতিক সময়ে বহু সরকারপ্রধানই সফলতা পাননি। আমেরিকাকে পরিবর্তনের মিছিলে এনে খোদ বারাক ওবামাই কি সফল হতে পেরেছেন? সংস্কারের 'স'ও করতে পারেননি তিনি। চাকরি-বাকরির অবস্থা শোচনীয়। অর্থনীতি ঋণের চাপে কেরোসিন। তাহলে তো তাকেও আন্ডারঅ্যাচিভার বলা যায়।


এ কাজটিই করল ভারতের আউটলুক ম্যাগাজিন। আউটলুক উদারপন্থি পত্রিকা, সাহসী সব লেখা প্রকাশ করার জন্য প্রশংসিত। এই পত্রিকাটি টাইমের প্রচ্ছদের জবাব দিল তাদের ৩০ জুলাই সংখ্যায়। বারাক ওবামার ছবিতে আন্ডারঅ্যাচিভার ট্যাগ লাগিয়ে পত্রিকাটি যুক্তরাষ্ট্রে রিবুটের প্রসঙ্গ তুলেছে। অনেকে বলছেন টিট ফর ট্যাট। কেউ বলছেন সাবাস। নিজেদের প্রধানমন্ত্রীর মানরক্ষার জন্য নিশ্চয়ই আউটলুক মাঠে নামেনি। প্রধানমন্ত্রীর কঠোর সমালোচনা তারাও ছেপে থাকে নিয়মিত। আউটলুক যেটি করল তার মানে একটাই। আমরা সমানে সমান। তোমরা ওপর থেকে একতরফাভাবে কে ভালে,া কে মন্দ লিখবে_ সেটি আর হবে না। মূল্যায়নের ক্ষমতা আমাদেরও আছে। এটাই স্বাধীন গণমাধ্যমের কব্জির জোর।

Wednesday, July 18, 2012

রাস্তার তিন অবস্থা

কথায় আছে, সস্তার তিন অবস্থা। কথায় থাকলেও আমরা ঠিক জানি না তিন অবস্থা কী কী? অনুমান করি, সস্তা জিনিস গুণে-মানে এমনকি পরিমাণেও কমতি থাকবে। তবে বাজারে গিয়ে সস্তা জিনিসের কথা মনে হওয়ার জো নেই। কারণ এখন সবই দুর্মূল্য। মানহীন, ভেজাল, রাসায়নিক মিশ্রিত সবকিছুর দাম আকাশছোঁয়া। তাই বাজারের প্রসঙ্গে সস্তা শব্দটি ইতিমধ্যেই তামাদি হয়ে উঠেছে। বরং রাস্তার প্রসঙ্গে এখন তিন অবস্থার প্রস্তাব করা যেতে পারে। ঢাকার বাইরের রাস্তা তো বটেই, ঢাকার রাস্তাঘাটের অবস্থাও এখন বেহাল। তাই বলা যায়, রাস্তার তিন অবস্থা। কিছুদিন আগে ঢাকার মূল সড়কগুলোর পরিস্থিতি কিছুটা সহনীয় ছিল। কিন্তু নানামুখী বৃহৎ ও ক্ষুদ্র উন্নয়ন কার্যক্রমে রাস্তার পরিস্থিতি অসহনীয় হয়ে উঠেছে। কোথাও ফ্লাইওভারের জন্য খোঁড়াখুঁড়ি, কোথাও স্যুয়ারেজ পাইপ বসানোর খোঁড়াখুঁড়ি, কোথাও তার বসানোর খোঁড়াখুঁড়ি। সবই উন্নয়ন কার্যক্রম। উন্নয়নের জন্য খনন খুব দরকারি। কিন্তু খোঁড়া রাস্তাকে আগের মতো চলাচলযোগ্য করার কেউ নেই। ফলে বর্ষায় সেগুলো রীতিমতো রুক্ষ ও কর্কশ হয়ে উঠেছে। রাজধানীর মূল সড়কগুলোতে বেরোলে এই কর্কশ বাস্তবতার মুখে পড়তে হবে। মূল সড়ক থেকে গলিতে ঢুকলে অন্য বাস্তবতা। গলি বা ছোট রাস্তার দায়িত্ব কার, কে জানে! অনেকগুলোই ময়লা-আবর্জনার ভাগাড় একেবারে। আর অধিকাংশই এখন ভেঙেচুরে শেষ। ছোটখাটো গর্ত নয়, রাস্তার ভাঙন বড় বড় গর্ত সৃষ্টি করেছে। ভয়াবহতায় এগুলো ম্যানহোলের চেয়ে কম নয়, বরং একটু বেশিই। কোনো কোনো বড় ও গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাতেও অবশ্য এখন এমন গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ছোট-বড় রাস্তার এসব গর্তে ট্রাক থেকে রিকশা সবই হেলে পড়ছে। হেলে পড়লেও রক্ষা নেই_ বর্ষা বলে নোংরা জল-কাদায় মাখামাখি হতে হচ্ছে পথচারীদের। বস্তুত গাড়িতে চলাফেরা করুন, কি রিকশায়_ প্রত্যেকের প্রতিদিনের চলাফেরার পথে উন্নয়ন কার্যক্রমে একটি-দুটি, আর অনুন্নয়ন কার্যক্রমের একটি-দুটি রাস্তার দেখা মিলবেই। নিত্যকার এ দুর্ঘট দেখে কীভাবে এড়িয়ে যান দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা সেটিই প্রশ্ন। বৃষ্টির মৌসুমে পত্রপত্রিকায় রাস্তার তিন অবস্থার নানা ছবি ছাপা হচ্ছে, তবু সাড়া মিলছে না। কেউ কেউ পরিহাস করে বলছেন, কর্তাব্যক্তিরা বড় স্বপ্ন বাস্তবায়িত করার পথে এগোচ্ছেন। হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন পরিকল্পনা যখন মাথায় থাকে তখন বড় আইডিয়া মাথায় ঘোরে। ছোটখাটো গর্ত তখন চোখে পড়লেও হৃদয়ে পশে না। সত্যিই তো, রাস্তা ঠিক করার দায়িত্ব যাদের তারা তো বড় স্বপ্ন নিয়ে ব্যস্ত। ফ্লাইওভার, পাতাল রেল, উড়ালপথ, বড় বড় সেতু, চার লেন মহাসড়ক। জগতের এই আনন্দযজ্ঞে ছোট রাস্তার কথা ভাববার সময় কোথায়? বড় রাস্তার ছোট গর্তের কথাই-বা কে ভাববে! তাই হয়তো নিয়তির মতো মেনে নিয়েছেন সবাই। কোথাও দাবি উঠছে না, মানুষ কষ্ট সয়ে এধার-ওধার করে রাস্তা পেরোচ্ছেন। গর্তে পড়ে জলকাদা মেখে চারপাশে তাকাচ্ছেন, কেউ কি দেখে ফেলল? মানসম্মানের প্রশ্ন। কেউ না দেখলে ঠিকই আছে। গর্ত থাকলে মানুষ. গাড়ি-ঘোড়া সবই পড়তে পারে। রাস্তা সারাবার আইডিয়া আর কারও মাথায় আসছে না। অবশ্য এর জন্য আইডিয়ার বিশেষ প্রয়োজন নেই। কিছু বরাদ্দ দিয়ে কাজ ভাগবাটোয়ারা করে দিলেই হয়। কিন্তু বরাদ্দ কি আছে? বরাদ্দের প্রশ্ন ওঠাতেই হবে। কেননা, গতবার ঈদের সময় বেহাল রাস্তা দিয়ে যখন লোকেরা বাড়ি ফিরতে পারছিলেন না তখন যোগাযোগমন্ত্রী বলেছিলেন বরাদ্দ নেই। সে নিয়ে কত কথা কাটাকাটি হলো! এবার বরাদ্দ আছে কি-না খোঁজ নিয়ে দেখা দরকার। যুক্তি অনুসারে বরাদ্দ থাকার কথা, রাস্তা খোঁড়ার জন্য যদি বরাদ্দ থাকে তবে খোঁড়া জায়গা মেরামতের বরাদ্দ নিশ্চয়ই পরের বছরের বাজেটে থাকবে না। তবে খোঁড়া মেরামতের কিংবা গর্ত মেরামতের বরাদ্দ না-ও থাকতে পারে। থাকবেই যদি তবে বরাদ্দ ব্যয়ের চিন্তা কারও মাথায় আসবে না কেন?

Thursday, July 12, 2012

বিচারক ও পুলিশ

নরসিংদীর ঘটনাবলি সকলের জানা। বিচারক মো. ইমান আলী শেখ আদালত প্রাঙ্গণে ঢুকতে গেলে তাকে বাধা দেন গেটে পাহারারত পুলিশ সদস্যরা। বিচারক তার পরিচয় জানান। তবুও তার পরিচয়পত্র দেখানোর জন্য পীড়াপীড়ি করতে থাকেন তারা। আবারও পরিচয় দিলে পুলিশ সদস্যরা বিচারককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। মারধর করে আহত করেন তাকে। যুক্তির খাতিরে যদি ধরে নিই যে, পুলিশ সদস্যরা কর্তব্যে অতিশয় মনোযোগী। কাউকেই তারা পরিচয়পত্র ছাড়া আদালত প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে দিচ্ছিলেন না। কিন্তু আদালত প্রাঙ্গণে কর্মরত পুলিশ সদস্যরা ওই আদালতে কর্মরত বিচারককে চিনবে না_ এটি কী করে মানা যায়? আদালত প্রাঙ্গণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব যেমন তাদের, তেমনি বিচারকদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনও তাদের দায়িত্ব। ধরে নেওয়া গেল, কোনো এক রহস্যময় কারণে বিচারককে তারা চেনেননি। তবে পরিচয় দেওয়ার পর তাকে সম্মান প্রদর্শন করে পথ ছেড়ে দেওয়া হলো না কেন? একাধিকবার পরিচয় দেওয়ার পর যখন পুলিশ সদস্যরা বিচারকের ওপর হামলে পড়লেন তখন তাদের গর্হিত উদ্দেশ্য সম্পর্কে আর সন্দেহের অবকাশ থাকে না। বস্তুত একজন সম্মানিত বিচারককে তারা এভাবে অপমান করতে পারেন না, এমনকি কোনো সাধারণ নাগরিকের বেলাতেও এমন আচরণ করার অধিকার তাদের নেই। উচ্ছৃঙ্খল জনতা যদি কোনোভাবে জননিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায় সেক্ষেত্রে পুলিশের করণীয় থাকে। কিন্তু একা একজন ব্যক্তিকে ঠেকাতে বল প্রয়োগের উদাহরণ কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। অথচ এমন অন্যায্য বল প্রয়োগের ঘটনা অহরহই ঘটে চলেছে। অবশ্য নরসিংদীর বিচারক মারধরের ঘটনায় মামলা হয়েছে, দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিচারও চলছে। সে ঘটনার রেশ ফুরাতে না ফুরাতেই পুলিশের আরেক কর্মকর্তা হুমকি দিলেন জজকে। বরিশালের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করেছেন তার স্ত্রী। অপরাধ_ তিনি যৌতুক দাবি করেছেন। গুরুতর অপরাধ সন্দেহ নেই। বিষয়টি আমলে নিয়ে প্রত্যাশিত কাজ করেছেন বিচারক মো. সাদিকুল ইসলাম তালুকদার। অভিযোগ গঠন করে আবুল কালাম আজাদসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দিয়েছেন তিনি। এতে ক্ষেপে গেছেন এএসপি। তিনি বিচারককে বদলি করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। বিস্ময়কর ঘটনা সন্দেহ নেই। প্রশ্ন উঠতে পারে, একজন পুলিশ কর্মকর্তা কী করে একজন বিচারককে বদলি করে দেওয়ার হুমকি দিতে পারেন? পুলিশ সদস্যরা যদি আদালত প্রাঙ্গণে একজন বিচারকের ওপর হামলা করতে পারেন তাহলে একজন এএসপি নিশ্চয়ই বিচারককে বদলি করে দেওয়ার মতো ক্ষমতাও রাখতে পারেন। আর এ অবৈধ ক্ষমতা যার থাকে তিনি স্ত্রীর কাছে যৌতুকও দাবি করতে পারেন। স্ত্রী বিচারপ্রার্থী হলে তাকে অপহরণের হুমকিও দিতে পারেন। উদাহরণগুলো ভালো নয়। আমরা নিশ্চয়ই বলব না, পুলিশ সদস্যরা সবাই এভাবে এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে নিজেদের ক্ষমতা দেখাচ্ছেন। নিয়মানুবর্তিতার তোয়াক্কা করছেন না। ঊর্ধ্বতন বলে বিবেচিত সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতিও তারা সম্মান দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছেন। একটি-দুটি ঘটনায় তা বলা যায় না। কিন্তু একের পর এক এমন ঘটনা ঘটতে থাকলে কিন্তু এক সময় বলতে হবে। সে সময় যাতে না আসে এ জন্য এখনই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সচেতন হতে হবে। অপমান, মারধর ইত্যাদি হয়তো সাধারণ নাগরিকদের গা সওয়া হয়ে গেছে। কিন্তু বিচারকদের প্রতি অন্তত তারা প্রাপ্য সম্মান প্রদর্শন করুক। দায়িত্ব পালনের কারণে বিচারককে একজন পুলিশ কর্মকর্তা হুমকি দিলে আইনের শাসন এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ঝুলিতে আর কিছু অবশিষ্ট থাকে কি?