Thursday, July 29, 2010

আসল পরিচয় ব্যাংক ব্যালান্সে!


সৈয়দ কাশুয়া ইসরায়েলি আরব লেখক। বয়সে তরুণ। জন্ম ১৯৭৫ সালে ইসরায়েলেরই তিরায়। তিনটি আলোচিত উপন্যাসের লেখক। হারিটজ, জেরুজালেম পোস্ট ইত্যাদি পত্রিকায় বিদ্রূপাত্মক কলাম লেখেন। স্ত্রী-পুত্র নিয়ে থাকেন জেরুজালেমেই। সম্প্রতি তার উপন্যাস 'সেকেন্ড পারসন' বের হয়েছে। এ নিয়ে জেরুজালেম পোস্টেই তার একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে। স্বভাবে তির্যক মন্তব্যে অভ্যস্ত সৈয়দ কাশুয়া। সাক্ষাৎকারের শুরুতেই তার স্বভাবের কিছু পরিচয় দিয়েছেন সাক্ষাৎকারগ্রহীতা। বলেছেন, কেউ যদি তার বেস্ট সেলিং বই নিয়ে কাশুয়াকে জিজ্ঞেস করেন তো উত্তর মিলবে, 'এটি তেমন কিছুই নয়, ব্যঙ্গকাহিনীর মোড়কে একটা সস্তা মেলোড্রামা।' এমন একজন ইসরায়েলি লেখককে নিয়ে আগ্রহ বোধ করার স্বাভাবিক কারণ তৈরি হয়। তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল আইডেনটিটি নিয়ে। ইসরায়েলে বসে তিনি আইডেনটিটির ব্যাপারটা কীভাবে দেখেন? তিনি বলেন, ইসরায়েলে বসে আইডেনটিটি নিয়ে আলোচনা করা কঠিন। কারণ কেউ যখন আইডেনটিটি ক্রাইসিসের কথা বলেন তখন বুঝতে হবে তিনি মানসিক কোনো সংকটের কথা বলছেন। আর কেউ যখন আইডেনটিটির কথা বলেন তখন বুঝতে হবে তিনি জাতীয় পরিচয়ের কথাই বোঝাচ্ছেন। কিন্তু ইসরায়েল তো যুদ্ধের মধ্যে আছে। তিনি বলেন, এখানে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের কোনো ব্যাপার নেই। এখানে আমরা কোনো একটি পক্ষের হয়েই জন্ম নেই। আর আজীবন সেই পক্ষেরই চিহ্নিত হয়ে থাকি। কাশুয়াকে প্রশ্ন করা হয় তার উপন্যাসের চরিত্র নিয়ে। তিনি উত্তর দেন একটু ঘুরিয়ে, একটু গভীরে গিয়ে, আগের প্রশ্নের সূত্র ধরে। বলেন, ব্যক্তিগতভাবে তুমি কে? এ প্রশ্নের উত্তর জানাটা আমার কাছে প্রয়োজনীয় মনে হয় না। এটা ঠিক, চরিত্ররা তাদের কাজ, পাঠাভ্যাস, বন্ধুদের দ্বারা চিহ্নিত হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলেই এ পরিচয় ঠুনকো হয়ে যায়। এগুলোকে ভুয়া মনে হয়। কাশুয়া বলেন, 'বাছা, সব কথার শেষ কথা হলো ব্যাংক অ্যাকাউন্টই হলো তোমার আইডেনটিটি। তুমি হয়তো তরুণ বলেই আমি কে এমন বিলাসী প্রশ্ন জাগছে। এখন অপেক্ষা করো প্রথম ঋণ নেওয়ার ঘটনা পর্যন্ত। বুঝবে তোমার প্রকৃত আইডেনটিটি কোথায়।' কাশুয়া আরও নানা কথা বলেছেন। বলেছেন, পরিবার-পরিজন, স্ত্রী-পুত্র, সামাজিক ও পারিবারিক দায়বদ্ধতা নিয়ে। আর অবশ্যই তার নতুন উপন্যাস নিয়ে। বলা হচ্ছে, এ উপন্যাস নাকি তার আত্মজীবন থেকেই প্রভাবিত। বলেছেন, তার নিজের আচার-আচরণ নিয়েও। আপনি কি বিনয়ী? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি স্মরণ করেছেন মাহমুদ দারবিশের একটি উক্তি। মাহমুদ দারবিশ বলেছেন, বিনয় হলো নির্বুদ্ধিতারই একটি ধরন। তো কাশুয়া বলেন, আমি নির্বোধ কিন্তু বিনয়ী নই। সরলার্থে আমি সাফল্যের সঙ্গে যুক্ত হতে পারি না। আমি নিজেকে প্রশ্ন করি, আমি একটি বই লিখেছি। প্রচুর বিক্রি হচ্ছে। রিভিউগুলোও ভালো। এর বেশি আমি কি চাই? কেন আমি এ জন্য খুশিতে নাচতে পারব না?
এসব নানা কথার ভিড়ে সৈয়দ কাশুয়ার একটি কথা মনে গভীর রেখাপাত করে গেল। ফরাসি দার্শনিক জঁ বদ্রিয়ার বলেছিলেন, তুমি যা কেনো তা-ই তোমার পরিচয়। কাশুয়া এক কাঠি সরেস। ইসরায়েলে বসে জাতীয় পরিচয়ের প্রশ্নটি তুলে রেখে তিনি বললেন, জাতীয় পরিচয় নয়, গোষ্ঠী নয়, রাষ্ট্র নয়, ব্যাংকে গচ্ছিত টাকাই তোমার পরিচয়। এখানে গিয়েই ঠেকে সব পরিচয়ের রাস্তা। শেষ পর্যন্ত হয়তো এখানে গিয়েই পেঁৗছেছে পরিস্থিতি। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, রাষ্ট্র নির্বিশেষে এখানে গিয়েই মানুষ হয়তো থমকে দাঁড়ায়। বাজারের দুনিয়ায় তার বাজারদরটি বুঝতে পারে খুব সহজ মাপকাঠিতে।

Wednesday, July 14, 2010

পুরনো গাড়ি


গাড়ির ক্ষেত্রে পুরনো কথাটি ভীষণ আপেক্ষিক। বিশেষ করে, বাংলাদেশের রাস্তায় যেসব গাড়ি চলে, তার সিংহভাগই নাকি পুরনো। খুব কম ভাগ্যবানই নতুন গাড়ি কিনতে এবং তা রাস্তায় চালাতে পারেন। অন্য দেশে এক-দু'হাত ঘুরে যে গাড়িটি বাংলাদেশে আসে, তার গুণ ও মান বিচার করে সেটিকে হয় নতুন গাড়ির শোরুমে কিংবা রিকন্ডিশন্ড গাড়ির ঝাঁকের মধ্যে সাজিয়ে রাখা হয়। তাই কেউ যদি পুরনো গাড়ির কথা তোলেন তবে প্রথমেই প্রশ্ন উঠবে_ কতটা পুরনো, কোন গাড়ির থেকে পুরনো, কেমন পুরনো? যখন অধিকাংশই পুরনো, তখন পুরনো বাছার নিয়মনীতি যদি স্পষ্ট না হয় তবে পুরনো বাছতে রাস্তা উজাড় হবে এ নিশ্চয় করে বলা যায়। আশার কথা, সব গাড়িকে পুরনো আখ্যা দিয়ে গাড়ি উজাড়ের অভিযান চালু হওয়ার সম্ভাবনা কম। বরং ইদানীং পুরনো গাড়ির বিরুদ্ধে যে অভিযান চালু হওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে, তার লক্ষ্য নাকি একেবারে লক্কড়-ঝক্কড় মার্কা গাড়িগুলো। ঢাকার রাস্তায় যারা পাবলিক পরিবহনে যাতায়াত করেন তারা ভালো করেই জানেন, দরকারের সময় একটি বাস কী মহার্ঘ বস্তু। আর সে যদি লক্কড়-ঝক্কড় মুড়ির টিন হয়, তাতেও অসুবিধা নেই। বাসে যদি সিটগুলো শ্যাওলা জমা হয়, তাতেও আপত্তি নেই। বসার জায়গা না থাকলেও ক্ষতি নেই। শুধু একটু দাঁড়ানোর জায়গা পেলে আর বাসটিকে কোনো রকমে চলতে দেখলেই যাত্রীরা খুশি। বলা বাহুল্য, মুড়ির টিন বলে কথিত পাবলিক পরিবহনগুলোই পুরনো গাড়িবিরোধী অভিযানের মূল লক্ষ্য। এ গাড়িগুলোর কামাই ভালো, কদরও ভালো; কিন্তু চেহারা ভালো নয়। বছরের পর বছর মেয়াদ-উত্তীর্ণ হয়ে চলছে এগুলো। পরিবেশ দূষণ করছে নানাভাবে। সবচেয়ে বড় কথা, একান্ত প্রয়োজন না হলে এ বাসগুলোকে দেখলে আর ভ্রমণের রুচি হয় না। যেমন এগুলোর চেহারা, তেমনি ব্যবস্থাপনা। যাত্রী হয়রানির চূড়ান্ত ব্যবস্থা তাদের বেশ রপ্ত। জনমত জরিপ করলে যে কেউ বলবেন_ অবশ্যই, অতি অবশ্যই এ গাড়িগুলো উঠিয়ে দিন। কিন্তু অনেকেই বেখবর যে, এ গাড়িগুলোই কোনো কোনো রুটের পরিবহনে সবেধন নীলমণি। এর আগে একবার এমন পুরনো গাড়িবিরোধী অভিযান চলেছিল। তখন দেখা গেল, সাধারণের ব্যাপক অসুবিধা হচ্ছে। আর সাধারণের এ অসুবিধাকে পুঁজি করে খারাপ ও লক্কড়-ঝক্কড় গাড়ির মালিকরা বেশ ফায়দা হাসিল করলেন। আরও কিছুদিন অচল গাড়ি চালানোর অনুমতি পাওয়া গেল। সত্যি বলতে, এমন অভিযান ভালো। অনন্তকাল চলতে পারে, চলা উচিত। কিন্তু তাতে সমস্যার সমাধান হবে কি-না কেউ বলতে পারে না। কারণ, যারা অভিযান পরিচালনা করছেন তারা হয়তো জানেন না, ডিম আগে না মুরগি আগে। রাস্তা থেকে গাড়ি উঠিয়ে তারপর গাড়ি কেনার বায়না পাঠালে চলে না। মানুষ তো ঘরে ফিরবে, ঘর থেকে অফিসেও যাবে। তাই প্রথমে গাড়ি কেনার বায়না দিতে হবে। নতুন গাড়ি নামাতে হবে। সেগুলো যখন যথেষ্ট জনপ্রিয় হবে, তখন পুরনো গাড়িতে কেউ সেধে উঠতে যাবে না। আর যদি যায়, তবে তখন পুলিশ নামিয়ে পুরনো গাড়ি উচ্ছেদ করলে কেউ কিছু বলবে না। ঢাকার রাস্তা থেকে পরিবেশ দূষণকারী মুড়ির টিনগুলো এভাবেই উচ্ছেদ সম্ভব। এভাবে না করে অন্যভাবে আগের মতো উচ্ছেদ করলে অবশ্য নিয়মিত বিরতিতেই এমন উচ্ছেদ অভিযানের দেখা মিলতে থাকবে। সেও মন্দ নয়। কর্তাব্যক্তিরা ভাবছেন, উদ্যোগ নিচ্ছেন তার প্রমাণ হিসেবে এমন অভিযানের যথেষ্ট গুরুত্ব আছে।

Friday, July 9, 2010

দর্শক সারি

পত্রপত্রিকায় এবারের বিশ্বকাপকে অঘটনের বিশ্বকাপ বলা হচ্ছে। একটি-দুটি নয়, অসংখ্য অঘটনের জন্ম দিয়ে বিশ্বকাপ এখন ফাইনালে। বিশ্বকাপ ফাইনালে গেলেও আমাদের দেশের দর্শকদের অনেকেই ফাইনাল পর্যন্ত আগ্রহ ধরে রাখতে পারছেন না। কারণ, একে একে টপ ফেভারিটরা বিদায় নিয়েছে। ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার বিদায়ের পর থেকে সবাই বলাবলি করছিল, বিশ্বকাপ অন্তত বাংলাদেশে শেষ। বাসাবাড়ির ছাদে তাকালে বোঝা যায় কথাটির তাৎপর্য। আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিলের পতাকার ফাঁকে দু'একটি জার্মানি বা ইংল্যান্ডের পতাকা ছিল বটে। কিন্তু স্পেন আর নেদারল্যান্ডসের পতাকা পেতে হলে দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্য নিতে হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার, এ দুটি দেশই এখন ফাইনাল খেলবে। এখন ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার জাতীয় পতাকাগুলো উড়ছে অবহেলায়। এভাবে উড়তে উড়তে বর্ষাতেই ফিকে হয়ে আসবে ওগুলোর রঙ, ছিঁড়ে যাবে একসময়। চার বছর পর আবার হয়তো পতাকাগুলোর কথা মনে পড়বে ভক্তদের। পাড়ায় পাড়ায়, ঘরে ঘরে আবার আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, জার্মানি, ইংল্যান্ডের সমর্থক গোষ্ঠী তৈরি হবে। মনে পড়বে মেসি, কাকাদের কথাও। ভক্তদের বিড়ম্বনার পাশে বিজ্ঞাপনদাতাদের বিড়ম্বনাও কম নয়। পোস্টার বিক্রেতাদের বাজারে পসার কমবে সন্দেহ নেই, পতাকা বিক্রেতাদের বাজারও মন্দা যাবে। কিন্তু লাখ টাকা খরচ করে যারা বিজ্ঞাপন বানিয়ে রেডিও-টিভিতে প্রচার করতে শুরু করেছিলেন তাদের কী হবে? এখন বিজ্ঞাপনগুলোর কিছু সম্প্রচারিত হচ্ছে। শুনে বা দেখে বোঝা যাচ্ছে, ইতিমধ্যে এগুলো ইনভ্যালিড হয়ে গেছে। ভক্তদের পটাতে এ বিজ্ঞাপনগুলো তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ভক্তরা পটার আগেই বিদায় নিয়েছে প্রিয় দলগুলো। ফলে এখন ইনভ্যালিড বিজ্ঞাপন বিশেষ টীকাভাষ্য সহকারেই পড়া বা শোনা চলে। বাণিজ্যে দোষ নেই, ভক্ত হওয়াতেও দোষ নেই, ফুটবল নিয়ে এক মাস ধরে যে মধুর বিতর্ক হলো, তাতে তো কোনো দোষই নেই। তাহলে দোষটা কোথায়? দোষ হলো, আমাদের অবস্থানে। বাজারের একটা নিজস্ব নিয়মের কথা বলেন অর্থনীতিবিদরা। বাজারে চাহিদা থাকলে নাকি জোগান আসে। কিন্তু অর্থনীতির এ হিসাব হয়তো ফুটবলের বেলায় খাটে না। বাংলাদেশে মানুষের মধ্যে ফুটবলপ্রেম অকল্পনীয়। আমাদের দর্শকরা নাকি ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার দর্শকদের চেয়ে অনেক কাঠি এগিয়ে। আমাদের বিজ্ঞাপনদাতা, পৃষ্ঠপোষক, মিডিয়া থেকে শুরু করে সবাই ফুটবলবান্ধব। শোনা যায়, রাষ্ট্রনেতারা ফুটবল-অন্তঃপ্রাণ। মাঠ আছে, বল আছে, সবই আছে, শুধু খেলা নেই। খেলা নেই বললে একটু বাড়িয়ে বলা হবে। খেলাও আছে। কিন্তু সে খেলা নিয়ে বিশ্বের দরবারে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। ছোটখাটো গেমসে আমরা কুপোকাত হয়ে ফিরে আসি। ফলে বিশ্বকাপ আমাদের কাছে অনেক দূরের ব্যাপার। প্রশ্ন এখানেই। ফুটবলের এমন জনপ্রিয়তা দেখে কি আমাদের খেলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে কিছু বোধোদয় হয় না? চার বছর পর কেন আমাদের মনে পড়বে এই খেলার কথা? কেন আজ থেকেই আমরা শুরু করব না। কেন স্কুল থেকে খেলোয়াড় বাছাই করে আমাদের দেশেও ফুটবল নিয়ে একটা হেস্তনেস্ত হবে না? কেন আজ নয়, কাল নয়, বিশ বছর পরও আমরা বিশ্বকাপে খেলতে পারব না? প্রশ্নগুলো এখানেই। এককালে আমাদের মোহনবাগান ছিল, মোহামেডান ছিল, ইস্ট বেঙ্গল ছিল, আবাহনী ছিল। কিন্তু এখন এ ঐতিহ্যের কী হাল তা নিয়ে ভাবতে হবে। অবস্থা দেখে অনেকেই বলেন, আমরা এক নিষ্ক্রিয় জাতিতে পরিণত হয়েছি। বিশ্বের দরবারে আমাদের অবস্থান কোথায়? প্রধানত ভোক্তার আসনে। লোকে জিনিস বানায় আমরা কিনি, আবিষ্কার করে আমরা চেয়ে থাকি, লোকে উন্নতি করে আমরা বিস্মিত হই। বিদেশ আমাদের কাছে সুন্দর, দেশের চেয়ে। কিন্তু দেশকেও যে সুন্দর করা যায়, সে ভাবনা আমাদের নেই। এই নিষ্ক্রিয় দশায় খেলার বেলায়, আমাদের আসনও শুধু দর্শক সারিতে। আমরা খেলতে পারি না, মাঠে আমাদের খেলোয়াড় নেই। শুধু দর্শকের আসনে বসে হাহুতাশ করা, উল্লাস করা ছাড়া যেন কোনো কর্তব্য নেই আমাদের। কিন্তু কেন নেই? আমরা কি এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারি না?

Thursday, July 8, 2010

একটি সিমের করুণ কাহিনী


রেডিওতে 'বন্ধ কেন বন্ধু?' বা বন্ধ সিম চালু করার কোনো বিজ্ঞাপন হলেই আমার খুব আনন্দ হয়। মনে হয় এই বুঝি সময় হয়ে এলো, হয়তো এবার পুরনো কাগজের জটলার মধ্যে একটা হলুদ খামের ভেতর আমার অনিশ্চিত জীবনের অন্ত ঘটতে যাবে হয়তো এবার। কিন্তু না। আমার কথা হয়তো মনে নেই, শান্তর। ভুলে গেছে। শান্তকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। প্রায় দুই বছর হতে চলল, আমি অচল হয়ে পড়ে আছি। প্রথমবার খুব বিরক্ত হয়েছিল। জরুরি অবস্থার সময়ের কথা। সরকার থেকে ঘোষণা দেওয়া হলো বাধ্যতামূলকভাবে সবাইকে সিম রেজিস্টার করতে হবে। একটার পর একটা ডেট ঘোষণা হলো, সময় বাড়তে থাকল, কিন্তু শান্ত কিছুতেই সময় পাচ্ছিল না। প্রতিদিনের অফিস, বাসার কাজ, রাস্তায় কেটে যাওয়া অনেক সময় হিসাব করে শেষ দিনটাতেও সময় করে উঠতে পারল না। শান্ত ভাবছিল, হয়তো তার সিমটা বন্ধ হবে না। তার এই ভাবনার পেছনে একটা যুক্তি ছিল। আমাকে যেদিন কিনে আনে, সেদিন পরিচয়পত্রের ফটোকপি, ছবি, টিপসই দিয়ে সব তথ্য দিয়ে এসেছিল। দোকানের লোকেরা বলছিল, এ তথ্য মোবাইল অপারেটরদের কাছে গেলে তবেই আপনার সংযোগ চালু হবে। শান্ত ভাবছিল, সরকারের লোকেরা মোবাইল অপারেটরদের কাছে খুঁজলে নিশ্চয়ই তারা সংরক্ষিত তথ্য তাদের দেবে। কিন্তু শান্তর ভাবনাটা মিলল না। শেষ তারিখ যাওয়ার দু'দিন পর আমি বন্ধ হয়ে গেলাম। সকালবেলা ইনকামিং-আউটগোয়িং বন্ধ হওয়ার পর শান্ত একেবারে স্তম্ভিত হয়ে গেল। তার পস্তানো দেখে আমারও কান্না পাচ্ছিল। আমার ভেতর যত নম্বর সংরক্ষিত ছিল, তার সবই হয়তো পাওয়া যাবে কিন্তু আমাকে কেন্দ্র করে যে নেটওয়ার্ক তা আর মিলবে না। বারবার বলছিল। টিঅ্যান্ডটি থেকে একে-ওকে ফোন করে জেনে নিচ্ছিল কোনোভাবে আর বন্ধ হওয়া সিম চালু করা যায় কি-না। না কেউ-ই কোনো সমাধান দিতে পারছিল না। সকলে বলছিল, দেখো হয়তো আবার ডেট বাড়াবে। না আর ডেট বাড়াল না। আমার মৃত্যু হলো। একটা হলুদ খাম হলো আমার কফিন। খুব যত্ন করে জরুরি কিছু কাগজপত্রের নিচে রেখে দিল আমাকে। নতুন করে একটা সিম কিনে আমার জায়গায় স্থান দিল। আমার ফোনবুকটা ধীরে ধীরে টুকে নিলো সে সিমে। আমি সেই হলুদ খামের ভেতর থেকে দু'বছর ধরে অপেক্ষা করছি। যখনই বিজ্ঞাপন দেয় পুরনো সিম চালু করার, একটা আশা জাগে। ভাবি, এই অফারটা কেমন। নিবন্ধনহীন সিম কি অ্যাকটিভ করা যাবে? শান্তর কি মনে পড়বে আমার কথা? কিন্তু কোনো কিছুই ঘটে না। ড্রয়ারের ভেতর থেকে তবু ভাবতাম, দেশের ভালোর জন্যই আমি মরে আছি। আমি মরে আছি কিন্তু দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে তো এখন সমস্ত সিমের তথ্য আছে। তারা চাইলেই যে কোনো অপরাধীর সিম শনাক্ত করে তাকে ধরতে পারে। কিন্তু তা হয়নি। শান্ত একদিন খুব উত্তেজিতভাবে বলছিল, তাতেই শুনে ফেললাম তথ্য। মন্ত্রীকে ফোনে হুমকি দেওয়ার পর নাকি সিমের লোককে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মোবাইল কোম্পানি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কেউ তথ্য বের করতে পারছে না। শান্তই বলছিল, সিম নিবন্ধনে এত কড়াকড়ির পরও কেন সন্ত্রাসীরা ফোনে চাঁদা দাবি করছে? মোবাইলের অপরাধ বেড়েই যাচ্ছে? সিম নিবন্ধনে আসলেই কি কোনো কাজ হয়? আসলেই কোটি কোটি সিমের তথ্য সংরক্ষণ করে প্রয়োজনমতো সেখান থেকে কোনো তথ্য বের করার ব্যবস্থা কি আমাদের আছে? শান্ত আমার কথা বলছিল না। কিন্তু আমার কথা হয়তো তার মনের গভীরে কোথাও লুুকিয়ে ছিল। তাই একটু অভিযোগের সুরেই বলছিল কথাগুলো। বলছিল, রাষ্ট্র নাকি নাগরিকদের ওপর নজরদারি করতেই চায়। তাই বৈধ-অবৈধ বিভিন্ন পথে নাগরিকদের ফোনে আড়িপাতে, গতিবিধি নজরদারি করে। কিন্তু তাই বলে নিয়মিত বিরতিতে সিম নিবন্ধনের মতো উদ্যোগ নিয়ে একেবারে কোটি মানুষকে হেনস্তা করার উদ্যোগ বোধহয় খুব কম দেশেই আছে। নজরদারির জন্য রাষ্ট্রকে সচেতন হতে হয়। গোড়ায় ব্যবস্থা নিতে হয়। মোবাইল ফোন কেনাকাটার সময় কড়াকড়ি আরোপ করলেই হয়। এত বছরেও যখন মূল জায়গাটাকে ঠিক করা গেল না, তখন শুধু সিম নিবন্ধন করে কী লাভ? শান্তর বলছিল, নতুন করে সিম নিবন্ধনের কথা শুনে। আমি শান্তর এই নতুন তথ্য শুনে আশঙ্কায় স্থবির হয়ে গেলাম। এবার হয়তো আমার মতোই মরে যাবে অসংখ্য সিম। কিন্তু তার বিনিময়ে কি রাষ্ট্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারবে। অপরাধীদের ধরার একটা নির্ভরশীল ব্যবস্থা কি এবার হবে?

Wednesday, July 7, 2010

ঢাকার রাস্তা ও শুল্কমুক্ত গাড়ি

'রাস্তা ব্যবস্থাপনা' বলে যদি কোনো শাস্ত্র থাকে আর সে শাস্ত্রে যদি ঢাকার রাস্তা ব্যবস্থাপনার কথা পড়ানো হয় তবে সেটি নিশ্চিতভাবেই পৃথিবীর জটিলতম একটি শাস্ত্র হবে। কোটি লোকের ঘনবসতিপূর্ণ শহর ঢাকা। এত লোকের চলাচলের জন্য যে রাস্তা দরকার তা ঢাকায় নেই। এত লোকের বাসস্থানের জন্য যে বাড়ি দরকার তাও নেই। এমনকি বাজার-ঘাটের জন্য যে ব্যবস্থা দরকার তাও নেই। ফলে, বাসস্থান কমিয়ে রাস্তা বাড়ানোর উপায় যেমন নেই, তেমনি রাস্তা কমিয়ে বাসস্থান করার উপায়ও নেই। ফলে ভূমিতে যে পরিমাণ রাস্তা, বাসস্থান, শিল্প-কারখানা আর বাজার-ঘাট আছে তা বোধকরি কোনো বৈপ্লবিক উদ্যোগ ছাড়া একই রকম থাকবে। শহরে উড়াল পথ হতে পারে, পাতাল পথ হতে পারে, পাতাল রেলও হতে পারে। কিন্তু সেসবের দেখা কবে মিলবে সে কথা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারে না। ফলে যে পথ আমাদের আছে, সে পথটুকুকেই মিলেমিশে ব্যবহার করা ছাড়া আপাতত আমাদের হাতে কোনো উপায় নেই। কিন্তু মিলেমিশে ব্যবহার করার কোনো মানসিকতা আমাদের আছে কি-না তা নিয়ে ভাবা যেতে পারে। জ্যামে আটকে গেলে, সামনে-পেছনে একবার তাকালেই বোঝা যায় রাস্তার সমস্যাটা কী? অভিজাত সড়ক হলে তো কথাই নেই, আমসড়কেও অধিকাংশ যানই প্রাইভেট। রাস্তায় প্রাইভেট কারের প্রাচুর্য নিশ্চয়ই আমাদের সমৃদ্ধির প্রতীক। কিন্তু বিপুল কার যখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা অলস জ্যামে আটকে থাকে তখন সেটা আমাদের অসহায়ত্বের প্রতীক হয়ে ওঠে। আর যখন জ্যামের মধ্যেই গাদাগাদি লোকে ঠাসা লক্কর-ঝক্কর বাসের পাশে এক-দু'জন লোক বহনকারী প্রাইভেট কার দাঁড়িয়ে থাকে তখন সেটা বৈষম্যের প্রতীক যেমন তেমনি আমাদের অপরিণামদর্শী-অপরিকল্পনারও প্রতীক। পৃথিবীর কোনো স্বাভাবিক শহরে এত বেশি প্রাইভেট কার আর এত কম জনপরিবহন থাকতে পারে না। আমরা অবাধে প্রাইভেট কার বাড়তে দিয়েছি। যারা একটু আরামে কাজে যেতে চান তাদের চলার কোনো ব্যবস্থাই এ শহরে নেই। ফলে তারা নিরুপায় হয়ে প্রাইভেট কারের দিকেই ঝুঁকবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কারে কারে অবস্থা এমন জায়গায় গিয়ে ঠেকেছে যে, এ শহরে যার প্রাইভেট কার নেই তার জন্য চলাফেরা ভীষণ কষ্টকর। অবস্থা এমন জায়গায় ঠেকার পর আমাদের নীতিনির্ধারকরা রাস্তা থেকে গাড়ি কমানোর উপায় নিয়ে ভাবছেন। রাস্তা থেকে নতুন গাড়ি উচ্ছেদ করা কঠিন বটে, তাই পুরনো গাড়ি উচ্ছেদের কথা শোনা যাচ্ছে। আর গ্যাসের দাম কম বলে যেহেতু গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে, সে জন্য গ্যাসের দাম দ্বিগুণ করার কথাও ভাবা হচ্ছে। প্রশ্ন হলো, তাতে কি গাড়ির সংখ্যা কমবে? মানুষ বাড়তি দামের গ্যাসেই গাড়ি চালাবে। কিন্তু কেউ যদি শুভ চিন্তা করে গাড়ি ছেড়ে আবার পাবলিক পরিবহনের দ্বারস্থ হন তাকে কি আমরা সুসংবাদ দিতে পারব কোনো? না। তার জন্য আপাতত কোনো সুসংবাদ নেই। রাস্তায় নতুন বাস নামবে, সরকারি ব্যবস্থাপনায় দ্রুত পরিবহনের ব্যবস্থা হবে, টিকিট কেটে লোকে আরামে গন্তব্যে যেতে পারবে_ এসব যেন ক্রমাগত অতিভাবনার বিষয়ে পরিণত হচ্ছে। ঢাকার রাস্তায় বের হয়ে একটি দুঃস্বপ্নযাত্রা করা ছাড়া কোনো গত্যন্তর নেই। এমন দুঃস্বপ্নের সিরিজের মধ্যে একটি সুসংবাদ পাওয়া গেল সোমবারের পত্রিকায়। প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রীদের শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন। প্রথমত, এটি ঢাকার রাস্তার জন্য সুসংবাদ। একটি প্রাইভেট কার রাস্তায় না নামলেও সেটি সুখের খবর। পাশাপাশি, এই শুল্কমুক্ত গাড়ি ও তার অবৈধ বিকিকিনি যে মন্ত্রী-এমপিদের জীবনে কী উপদ্রব বয়ে আনে তা তো গত জরুরি সরকারের আমলে আমরা দেখেছি। ফলে এমন সিদ্ধান্তের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে সাধুবাদ জানাতে হয়। মন্ত্রীরা না পারলেও এমপিরা ঠিকই গাড়ি আনতে পারবেন। এমপিদের গাড়ি আনার ব্যবস্থাটি বন্ধ করতে পারলে, এমপিদের একটু কষ্ট হতো বটে কিন্তু তিন শতাধিক গাড়ির হাত থেকে ঢাকা বাঁচতে পারত। ঢাকার নিরীহ রাস্তাগুলোর দিকে তাকিয়ে প্রধানমন্ত্রী যদি আরও কিছু গাড়ি সাশ্রয়ের ব্যবস্থা করেন তবে পথ
ও পথিক উভয়েই তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে, এটা নিশ্চিত করে বলা যায়।

Thursday, July 1, 2010

ডেথ অব দি ল্যারি কিং লাইভ


ল্যারি কিং লাইভের সঙ্গে পরিচয় নেই এমন টেলিভিশন দর্শক হয়তো খুবই কম। জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল সিএনএনের সরাসরি সম্প্রচারিত অনুষ্ঠান ল্যারি কিং লাইভ আদতে একটি টক শো। বলা হয়ে থাকে, ল্যারি কিং লাইভ হলো টক শোগুলোর পিতৃস্থানীয়। একটি টক শো কেমন হবে, কীভাবে সেটি জনপ্রিয় হবে এবং কীভাবে একজন সাক্ষাৎকারদাতাকে প্রশ্ন করা হবে এসব বিষয়ে রীতিমতো শিক্ষকের আসনে ল্যারি কিং।
সচেতন টক শো হোস্টরা ল্যারি কিংয়ের কাছ থেকে এখনও শেখেন। আর সেলিব্রেটি সাক্ষাৎকারদাতারা ল্যারি কিং লাইভে ডাক পাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকেন। কারণ এই অনুষ্ঠান প্রতিরাতে ১ মিলিয়ন মানুষ দেখেন। এতে কথা বলতে পারা মানে খবরের উৎস হয়ে যাওয়া। ল্যারি কিং লাইভ হলো এমন একটি অনুষ্ঠান যা গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান পেয়েছে। কারণ এ হলো দীর্ঘতম সময় ধরে চলতে থাকা একটি অনুষ্ঠান_ যার হোস্ট, চ্যানেল এবং সম্প্রচার সময় ২৫ বছর ধরে এক ছিল। কোনো হেরফের হয়নি। আর এই ২৫ বছরে ল্যারি কিং ৫০ হাজার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। সিএনএনের সবচেয়ে জনপ্রিয় অনুষ্ঠান এটি। এমনকি এও বলা হয়, এ অনুষ্ঠানকে টেক্কা দিতে পারে এমন অনুষ্ঠান এখনও আসেনি। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন ওঠে, ল্যারি কিংয়ের জনপ্রিয়তার রেসিপি কী? অনেকে বলেন তার সহজ ও সাবলীল কথনভঙ্গির কথা। তার তাৎক্ষণিক বুদ্ধিদীপ্তির কথা। কেউ বলেন, তিনি হোস্ট হিসেবে গেস্টদের প্রতি অত্যন্ত সদয়, এমন কথাও। আর সমালোচকরা বলেন, কিং গেস্টদের অনেক ছাড় দেন। আক্রমণাত্মক প্রশ্ন করেন না। ফলে নিউজমেকাররা তার কাছে আসতে এবং খোলাখুলি কথা বলতে পছন্দ করেন। সমালোচকরা বলেন, তিনি অধিকাংশ সময়ই প্রস্তুতিহীনভাবে সাক্ষাৎকার শুরু করেন। কিন্তু কিং বলেন অন্য কথা, সবচেয়ে ভালো প্রশ্নগুলো করার চেষ্টাই থাকে তার। ল্যারি কিং লাইভ নিয়ে আলোচনা ও গবেষণার শেষ নেই। এবার নতুন আলোচনার জন্ম দিলেন স্বয়ং ল্যারি কিং।
ক'দিন আগে একটা ব্লগ পড়ছিলাম। একটু কর্কশ ভাষাতেই ব্লগার লিখেছিলেন, সিএনএনের এখন উচিত ল্যারি কিংকে থামিয়ে দেওয়া। কারণ, লাইভ অনুষ্ঠানে ল্যারি কিং নাকি নানা ভুল করে বসছিলেন। ভুল হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। ল্যারি কিংয়ের জন্ম ১৯৩৩ সালে। বয়স অনেক হয়েছে। সরাসরি সম্প্রচারিত একটি অনুষ্ঠান চালানোর জন্য যত তৎপর ও তাৎক্ষণিক হওয়া দরকার তত সক্রিয় নিশ্চয় আর তিনি নেই। কিন্তু আমেরিকার মতো দেশে, কেবল নিউজ নেটওয়ার্কের মতো প্রতিষ্ঠানে নিশ্চয় এমন কোনো ব্যাপার নেই যে অযোগ্য হয়ে যাওয়ার পরও একজনকে দিয়ে একটি সরাসরি সম্প্রচারিত টিভি অনুষ্ঠান চালিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। তাই ব্লগের লেখাটি পড়ে একটু অবাকই হয়েছিলাম। বুধবার একটু বিস্মিত হয়ে পড়লাম ল্যারি কিংয়ের ঘোষণা। প্রতিদিনকার ল্যারি কিং লাইভ অনুষ্ঠানের আগে কিং নিজেই তার শোর মৃত্যু সংবাদ জানালেন। বললেন, 'আজকের অনুষ্ঠান শুরুর আগে আমি ব্যক্তিগত কিছু খবর আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে চাই। ২৫ বছর আগে নিউইয়র্কের গভর্নর মারিও কোমোর সাক্ষাৎকার নেওয়ার মধ্য দিয়ে এই টেবিলে আমি বসেছিলাম। আজকে অনেক বছর পর আমি লোকদের সঙ্গে কথা বলে এই অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি টানার সিদ্ধান্ত নিলাম।' সাংবাদিকদের স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন কিং, সিএনএনের পক্ষ থেকে তার ওপর কোনো চাপ ছিল না। তারা কোনোভাবে তার ওপর বিরক্তও ছিলেন না। শো বন্ধ করার পরও তিনি থাকবেন সিএনএনের সঙ্গেই। মাঝে মধ্যে বিশেষ অনুষ্ঠান করবেন, কিন্তু সেই ল্যারি কিং লাইভে আর তাকে দেখা যাবে না।