Sunday, June 26, 2011

অমৃতবৃক্ষের বিষফল


picture : http://ricknval.blogspot.com/
সাহিত্যের পাঠকরা 'বিষবৃক্ষ' কথাটির সঙ্গে কমবেশি পরিচিত। শুধু বাংলা সাহিত্যের পাঠকই নয়, ইংরেজি সাহিত্যের পাঠকও বিষবৃক্ষ চেনে। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৭৩ সালে বিষবৃক্ষ উপন্যাস লিখেছিলেন। আর উইলিয়াম ব্লেক ১৭৯৪ সালে 'এ পয়জন ট্রি' নামে একটি কবিতা লিখেছিলেন। সাহিত্যে চিনি বটে কিন্তু বাস্তবের বিষবৃক্ষ কেমন? যদি প্রশ্ন করা হয়, হাজারো বৃক্ষের মধ্যে বিষবৃক্ষ কোনটি_ তবে উত্তর মিলবে? বৃক্ষে যদি বিষাক্ত ফল হয় তবে সে বৃক্ষকে বিষবৃক্ষ বলা যায়। কিন্তু কোনো বৃক্ষ বিষ উৎপাদন করে? আপেলের বীজে বিষ থাকে, কিন্তু আপেল তো অমৃতসম। চকোলেট বৃক্ষেও বিষ থাকে, কিন্তু চকোলেট উপাদেয় খাবার। এমনকি রসুন-পেঁয়াজের মধ্যেও বিষ থাকে। এ বিষ কুকুর-বিড়ালের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু মানুষের রসনা পেঁয়াজ-রসুন ছাড়া তৃপ্ত হয় না। বৃক্ষে বা বৃক্ষফলে বিষ থাকলেও বিষটুকু বাদ দিয়ে অমৃতটুকু মানুষ ঠিকই বেছে নিতে পারে। কখনও কখনও মানুষ স্বেচ্ছায় বিষাক্ত নেশাদ্রব্য পানও করে। কিন্তু বঙ্কিম ও উইলিয়াম ব্লেক কি এমন কোনো প্রাকৃতিক বৃক্ষকে বিষবৃক্ষ বলেছেন? না। বঙ্কিম বা ব্লেকের কাছে মানুষই বিষবৃক্ষ। মানববৃক্ষে উৎপাদিত বিষফলের কারণেই তারা একে বিষবৃক্ষ বলেছেন। ধর্মগ্রন্থে, পুরাণে এমনকি বিজ্ঞানেও মানুষকে বিকশিত, শ্রেষ্ঠ, শ্রেয়তর জীব হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে_ এ হয়তো সত্য। কিন্তু প্রাণিকুলে মানুষের চেয়ে কে বেশি বিষোদ্গার করতে পারে? ব্যক্তিমানুষের বিষোদ্গারের ক্ষমতা নিয়ে তেমন কথা না হলেও আমাদের রাজনীতিতে বিষোদ্গার কথাটি বেশ পরিচিত। রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে। কিন্তু ব্যক্তিমানুষের বিষোদ্গারের ক্ষমতা রাজনীতির চেয়ে কম নয়? কথায়-চিন্তায়-ভাবনায় যে বিষ ভয়ঙ্কর। এ বিষ হয়তো মোকাবেলা করা সম্ভব কিন্তু মানুষ যখন মুনাফার লোভে খাদ্যদ্রব্যে, ফলমূলে বিষ ছড়ায় তা থেকে মুক্তি পাওয়ার পথ কী? অন্তরের বিষ যুদ্ধ, হিংসা, বিদ্বেষ তৈরি করে প্রাণ-সম্পদ ও প্রকৃতি ক্ষয়ের কারণ হতে পারে। সরাসরি বিষ প্রয়োগ করে এক ব্যক্তির প্রাণ হরণ করা যেতে পারে। কিন্তু খাদ্যদ্রব্যে বিষ এর চেয়ে ভয়ঙ্কর। প্রজন্মের পর প্রজন্মকে বিপর্যস্ত, বিকলাঙ্গ করে দিতে পারে এটি। যুদ্ধের হিংসার চেয়ে এটি কম কিসে? দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত খাদ্যদ্রব্যে বিষ প্রয়োগ করা হচ্ছে। শাকসবজি, ফলমূল, মাছ-মাংস সংরক্ষণের জন্য বিষাক্ত রাসায়নিক প্রয়োগের রীতি এখানে এমনই শিকড় গেড়েছে যে, এ থেকে নিস্তার মেলার পথ কী কেউ জানে না। সংবাদপত্রে প্রতিনিয়ত সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। ফলের মৌসুমে সংবাদ আরও বেশি করে প্রকাশিত হচ্ছে। পরিস্থিতি ভয়াবহ। না, বৃক্ষ এই বিষফল তৈরি করেনি। বৃক্ষ দিয়েছিল অমৃতফল। কিন্তু মানুষ সে ফল থেকে মুনাফা বাড়াতে একে বিষময় করে তুলেছে। সে বিষ স্লোপয়জনিং করছে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে। আমাদের সামনে বিকলাঙ্গ এক প্রজন্মের উত্থানকে অবশ্যম্ভাবী করে তুলছে। প্রশ্ন হলো, জনস্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে এই ভয়ঙ্কর বিষ প্রয়োগ বন্ধ করা হচ্ছে না কেন? কেন কঠোর ব্যবস্থা আসছে না? এর উত্তর নেই। হয় কোনো কর্তৃপক্ষ বা প্রশাসন নেই, অথবা থাকলেও জনস্বাস্থ্য বিষয়ে তারা থোড়াই কেয়ার করে। যদি তেমন ব্যবস্থা থাকত তবে ফরমালিনসহ ক্ষতিকর ও বিষাক্ত দ্রব্যগুলো বাজার থেকে উঠিয়ে নেওয়া হতো এতদিনে। কঠোর ব্যবস্থা নেই, তাই বিষ আছে। মুনাফালোভীদের অন্তরের বিষ আর বাহিরের বিষ মিলেমিশে বিষাক্ত করে তুলতে পারছে আমাদের ভবিষ্যৎও।

Saturday, June 18, 2011

হাম আপকে হ্যাঁয় কৌন


হিন্দি ভাষার বিখ্যাত বাক্য 'হাম আপকে হ্যাঁয় কৌন'। বাংলায় অনুবাদ করলে এর অর্থ দাঁড়ায়_ 'আমি আপনার কে হই?' নব্বইয়ের দশকে 'হাম আপকে হ্যাঁয় কৌন' নামে একটি সিনেমা নির্মিত হয়েছিল বলিউডে। সুরজ আর বারজাতিয়া পরিচালিত এই সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন সালমান খান ও মাধুরী দীক্ষিত। সর্বকালের সেরা ব্যবসাসফল হিন্দি সিনেমাগুলোর একটি হাম আপকে...। শুধু ব্যবসার দিক থেকেই নয়, নামের দিক থেকেও নাকি এ সিনেমা ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল। পুরো একটি বাক্যে সিনেমার নাম দেওয়ার রীতি চালু বেশ জেঁকে বসে 'হাম আপকে হ্যাঁয় কৌন' সিনেমার পর। এর আগে বড়জোর একটি বা দুটি শব্দে সিনেমার নাম দেওয়ার প্রচলন ছিল। অনেকেরই মনে থাকার কথা, সিনেমাটির কাহিনী কী ছিল। ঘটনার সূত্রপাত একটি বিয়েবাড়িতে। মাধুরীর বড় বোনের সঙ্গে সালমানের বড় ভাইয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে। বিয়েবাড়ির খুনসুটি মাধুরী ও সালমানের মধ্যে একটি নাটকীয় প্রেমের সূচনা ঘটায় এবং কাহিনী এগিয়ে যেতে থাকে। বাংলাদেশেও অনেক ক্ষেত্রে কনের বোন আর বরের ভাইয়ের সম্পর্ককে রোমান্টিক বলে বিবেচনা করা হয়। এই সম্পর্কটির নাম বেয়াই-বেয়াইন। বাংলা সিনেমায় হরহামেশা বেয়াই-বেয়াইনদের প্রেম ঘটতে দেখা যায়। একটি জনপ্রিয় বাংলা সিনেমার গানই আছে এ নিয়ে। 'আসসালামুয়ালাইকুম বেয়াই সাব...' গানটি অনেকের শুনে থাকবার কথা। এই গান বা হাম আপকে সিনেমার কথা মনে পড়ার বিশেষ কারণ বৃহস্পতিবারের আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত একটি খবর। আনন্দবাজার খবর দিয়েছে, ফিলিপা শার্লট মিডলটন ও প্রিন্স হ্যারি প্রেমে পড়েছেন বলে খবর রটেছে। প্রিন্স হ্যারি_ ডিউক অব ক্যামব্রিজ প্রিন্স উইলিয়ামের ছোট ভাই। প্রিন্সেস ডায়ানার ছোট ছেলে। আর ফিলিপা যাকে সংক্ষেপে পিপ্পা বলা হয়, তিনি ক্যাথেরিন এলিজাবেথ মিডলটন বা কেট বা ডাচেস অব ক্যামব্রিজের ছোট বোন। কেট ও উইলিয়ামের বিয়ের দিন বিশ্বের কোটি মানুষের চোখের সামনে রীতি অনুসারে পিপ্পা ও হ্যারি যথোচিত গাম্ভীর্য রক্ষা করেছেন বলেই মনে হয়। বাংলা বা হিন্দি সিনেমার মতো বেয়াই-বেয়াইনদের নাচে-গানে তাদের অংশ নিতে দেখা যায়নি। কিন্তু নাচ-গান, রসালাপ না থাকলেও পর্যবেক্ষকরা রীতিমতো আতশ কাচ নিয়ে পিপ্পা আর হ্যারির আচরণ পর্যবেক্ষণ করেছেন। তারা পরস্পরের সঙ্গে খোশগল্প করলেই ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়েছেন। বিয়ের দিন থেকে পিপ্পা স্টার। ব্রিটেনসহ বিশ্বের পত্রপত্রিকাগুলো পিপ্পাকে বিশেষ ট্রিটমেন্ট দিয়েছে। তাকে নিয়ে নানা গল্প ফেঁদেছে ট্যাবলয়েডগুলো। কবে কার সঙ্গে তার প্রেম ছিল, সে প্রেম আছে না ভেঙেছে, পোশাক কোথায় বানিয়েছেন, স্টাইল কী ইত্যাদি নিয়ে তো কথা চলেছেই। এত সবের মধ্যে প্রিন্স হ্যারির সঙ্গে পিপ্পাকে জড়িয়ে খবর রটতে রটতেও রটেনি। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, দু'জনের মধ্যে কিছু একটা ঘটেছে। একসঙ্গে দু'জনকে ঘুরতে-ফিরতে দেখা যাচ্ছে।
পত্রিকাগুলো রসাল কাহিনী পেয়ে এখন নানামুখী জল্পনা-কল্পনা জুড়ে দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি ব্রিটেনের রাজপরিবারেও একটি 'হাম আপকে হ্যাঁয় কৌন' ঘটতে যাচ্ছে? খবর সত্যি হলে রাশভারি সেই বিয়ের অনুষ্ঠান থেকেই গল্প শুরু হবে। শেষ খবর হলো, পিপ্পার সঙ্গে তার আগের প্রেমিকের ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। এখন তিনি 'একা'। আর প্রিন্স হ্যারি আবার আফগানিস্তান যাচ্ছেন। যুদ্ধের ময়দানে আপাচি হেলিকপ্টার চালাবেন। গল্প রুদ্ধশ্বাস ক্লাইমেক্সের দিকেই এগোচ্ছে। কিন্তু গল্পের শেষ কোথায় সেটি জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও বেশ কিছু দিন।