Tuesday, May 4, 2010
এমপিদের বই পড়ার অভ্যাস
অনেকেরই মনে থাকার কথা সৈয়দ মুজতবা আলী কী লিখেছিলেন বই পড়া প্রসঙ্গে। বাজারে গিয়ে স্বামী বই কিনতে উদ্যত হলে স্ত্রী বলেছিলেন, বই? সেও তো ঘরে একখানা আছে। অর্থাৎ নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস দূরের কথা, নিদেনপক্ষে আসবাব হিসেবে ঘরে একখানা বই থাকাই যথেষ্ট। এ শুধু পরিহাসের কথা, নাকি সত্য সত্যই কেউ মনে করেন এমন, এ নিশ্চয়ই গবেষণার বিষয়। তবে আমেরিকার এক কাগজে একটা কৌতুক পড়েছিলাম জর্জ বুশের পাঠাভ্যাস প্রসঙ্গে। জর্জ বুশের হোয়াইট হাউস ত্যাগের সময় তার ব্যক্তিগত জিনিসপত্র পরিবহনের জন্য ট্রাক এলো। প্রেসিডেন্টদের অনেক বই থাকে। ফলে বড় ট্রাকই বরাদ্দ। কিন্তু মাল পরিবহনের লোকজন বুশের স্টাডিতে গিয়ে হতভম্ব হয়ে গেলেন। পুরো স্টাডিজুড়ে পড়ে আছে শুধু দু'খানা বই। একটা স্পোর্টস ম্যাগাজিন আর এক কপি হাসলার। এও নিশ্চয়ই কৌতুক শুধু, সত্য নয়। তবে রাজনীতিকদের বই পড়ার অভ্যাস নিয়ে বিস্তর বাঁকা কথা চালু আছে। এমনকি তারা যখন বই লেখেন তখনও বেশ কথা হয়। সম্প্রতি সারাহ পলিনকে নিয়ে কথা হচ্ছে। বিল ও হিলারি ক্লিনটন এবং ওবামার কথা বোধহয় ভিন্ন। তারা লিখে বেস্টসেলার তালিকায় নাম উঠিয়েছেন। তাদের বই নিয়ে কথা হয়েছে। অনেক প্রশংসা কুড়িয়েছেন তারা। পৃথিবীতে এমন অনেক রাজনীতিক আছেন যাদের প্রজ্ঞা, বিদ্যা ও জ্ঞানের গভীরতা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। তারা লিখলে মানুষ পড়ার জন্য মুখিয়ে থাকে। তারা যে পড়েন সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। নেলসন ম্যান্ডেলার মতো নেতা যে জাতিতে জন্মেছেন তারা নিশ্চয়ই ভাগ্যবান। কিন্তু সাধারণভাবে রাষ্ট্রনায়কদের কাছে প্রজ্ঞা ও দার্শনিকতা প্রত্যাশা করা হয়। প্লেটো বলেছিলেন, তার আদর্শ রাষ্ট্রের প্রধান হবেন একজন দার্শনিক রাজা। বলেছিলেন, দার্শনিকদেরই রাজা হতে হবে কিংবা রাজাকে দার্শনিক হয়ে উঠতে হবে। ভারতবর্ষেও রাজর্ষি নামে এক ধারণা ছিল। যিনি রাজা হবেন তিনি আবার ঋষিও। এ ধারণাগুলোকে ইউটোপীয় বলে উড়িয়ে দেওয়ার উপায় নেই। কারণ, অশোক, আকবরের উদাহরণ তো আমাদের ইতিহাসেই আছে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, আমাদের এখনকার রাজনীতিকদের পরিস্থিতি কী? জ্ঞানে, প্রজ্ঞায়, বিদ্যায় তাদের দৌড় কেমন? এসব প্রশ্ন উঠলে অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নেবেন। কারও কাছে এও মনে হতে পারে, রাজনীতিকের সঙ্গে পাঠাভ্যাসের সম্পর্ক কী? এসব প্রশ্নের সুরাহা হলেও অনেকে বিশ্বাস করতে চাইবেন না যে, আমাদের সংসদ ভবনে একটি লাইব্রেরি আছে, আর সেখান থেকে গুটিকয় এমপি পড়াশোনা করেন। এমনকি তারা বই ফেরত না দিতে পেরে লাইব্রেরি কর্তৃপক্ষের নোটিশও খেয়েছেন। গতকালের পত্রিকায় এমন খবর পড়ে দুঃখের বদলে সুখই হলো। বলতে ইচ্ছা করছিল, পড়ূয়া যে সামান্য ক'জন এমপি আছেন তাদের নোটিশ নয়, ধন্যবাদ দিন। বই নিশ্চয় ফেরত নেবেন, কিন্তু ধন্যবাদ দিয়ে নিন। কারণ এই যুগে এমন এমপি খুঁজে পাওয়া ভার। মাঝে মধ্যেই পত্রিকায় দেখি এমপিরা লাইব্রেরিতে যান না। এমনকি লাইব্রেরি থেকে কীভাবে বই ওঠাতে হয় জানেন না। কবে শুনব, লাইব্রেরি কোথায় তা-ই জানেন না অনেকে। কিন্তু আমাদের সংসদের লাইব্রেরি দেশের সবচেয়ে সমৃদ্ধ লাইব্রেরি বলে কথিত আছে। ইতিহাসের এক বাঁক ফেরার মুহূর্তে ১৯৭১ সালের মার্চের আগে এ লাইব্রেরিতে প্রচুর বই এসেছিল পাকিস্তান থেকে। সে বইগুলো থেকে গিয়েছিল। কিন্তু বইগুলো পতিত রইল, কেউ আবাদ করল না। এমপিদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। তারা অপরিহার্য সংসদ অধিবেশনেই নাকি যেতে পারেন না। সচিবালয়, নির্বাচনী এলাকা, তদবির এসব তো আছে। এর মধ্যে আবার বই পড়ার আবদার? সবাই নিশ্চয়ই পড়বেন না। কিন্তু কাউকে না কাউকে তো পড়তে হবে। নইলে সংসদীয় আইন-কানুন, আলাপ-আলোচনা থেকে তো জ্ঞান-বিদ্যার ব্যাপার উঠেই যাবে। তেমন দিন না আসুক। আসুন, বই পড়ার প্রতি আগ্রহীদের প্রতি আমরা বিশেষ দৃষ্টি দেই। তাদের জন্য বই পড়া ভাতা চালু করি। এখন যদিও দশ-বিশজন পড়ূয়া এমপির নাম জানা যাচ্ছে, আগামীতে হয়তো এ সংখ্যা দু'তিন জনে নেমে আসবে। কিন্তু তাদের রক্ষা করতে হবে। তারা বইখেলাপি হোন, নোটিশ পান সমস্যা নেই। কিন্তু একজন দার্শনিক রাজা হয়তো ওই দু'একজনের মধ্য থেকেই বেরিয়ে আসবে।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment