Thursday, May 13, 2010

এ জার্নি বাই ছাদ!


ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ নিশ্চয়ই এক রোমাঞ্চকর অনুভূতি তৈরি করে। অ্যাডভেঞ্চার, রুদ্ধশ্বাস ভ্রমণের নাম ট্রেনের ছাদ। এ কারণে মুম্বাইর অ্যাকশন ছবিগুলোতে প্রায়ই দ্রুতগতিতে ছুটে চলা ট্রেনের ছাদে নায়ক আর ভিলেনকে মারপিট করতে দেখা যায়। পুরনো দিনের ছবিতে ট্রেনের ছাদে মারপিট পরিচিত দৃশ্য ছিল। নতুন ছবিগুলোও কম যায় না। হালের ধুম-টুতেও দেখা গেল এমন মারপিটের দৃশ্য। শুধু মুম্বাইর ছবি কেন বাংলাদেশের ছবিতেও ট্রেনের ছাদে মারপিটের দৃশ্য বেশ পরিচিত। তবে ট্রেনের ছাদের সবচেয়ে আকর্ষক দৃশ্য বোধহয় ১৯৯৮ সালে মুক্তি পাওয়া 'দিল সে' সিনেমার সেই 'ছাইয়া ছাইয়া' গানটি। শাহরুখ খান ও মালাইকা অ্যারোরা একদল নারী-পুরুষ সঙ্গে করে পুরো একটি গানের দৃশ্যায়ন করেছেন চলন্ত ট্রেনের ছাদে উঠে। বলতে গেলে চলন্ত ট্রেনের ছাদে দৃশ্যায়িত এ গানটি রোমাঞ্চকর ভ্রমণের এক প্রতীকে পরিণত হয়েছিল। শুধু তাই নয়, এআর রহমানের সুরের এ গান ভারত বাংলাদেশ তো বটেই, বিবিসির টপ চার্টেও উঠেছিল। আর এর প্রভাব এতটাই বিস্তৃত হয়েছিল যে হলিউডের পরিচালক স্পাইক লির সিনেমা ইনসাইড ম্যানে ছাইয়া ছাইয়া গানটি টাইটেল সং হিসেবে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল। ট্রেনের ছাদে ভ্রমণের এমন সব ফিল্মি দৃশ্যের কথা মনে পড়ে গেল ৬ মে ২০১০ তারিখে বিবিসি ওয়েবসাইটের একটি সংবাদ পড়ে। সংবাদটি অবশ্য রোমাঞ্চের নয়, দুঃখজনক। বিবিসিতে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে প্রচারিত হলেও সংবাদটি দেশীয় সংবাদমাধ্যমের চোখ এড়িয়ে গিয়ে থাকবে কোনো কারণে। সেবামূলক সংগঠন সেভ দ্য চিলড্রেন সূত্রে বিবিসি জানাচ্ছে, বাংলাদেশে বহু শিশু-কিশোর ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ করে। অনেক সময় শিশুরা স্রেফ মজা করার জন্য কিংবা রোমাঞ্চকর ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নেওয়ার জন্য ট্রেনের ছাদে উঠে পড়ে। কিন্তু রোমাঞ্চই শেষ কথা নয়। বাংলাদেশে যাত্রীর তুলনায় ট্রেনের সংখ্যা অপ্রতুল। ফলে সপ্তাহ শেষে যখন মানুষ বাড়ি ফেরে তখন মালপত্র নিয়ে শিশু-কিশোরদের ছাদেই তুলে দেওয়া হয়। অনেক সময় নিম্ন আয়ের মানুষেরা পুরো পরিবার নিয়েই ছাদে চড়ে বসে। এছাড়া তাদের কোনো উপায় থাকে না। ছাদে ভ্রমণের ফলে একদিকে যেমন টাকা বাঁচে, অন্যদিকে ভিড় থেকে মুক্তি মেলে। কোনো ঈদ-উৎসবে বাড়ি ফেরার প্রসঙ্গ এলে তো কথাই নেই। বহু শিশু-কিশোর ও বয়স্ক মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ সময় ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ করে। সেভ দ্য চিলড্রেন বলছে, এভাবে ট্রেনের ছাদে ভ্রমণের মাধ্যমে শিশুদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। অনেক সময়ই শিশুরা ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে বা কোনো কিছুর সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। অনেক সময় খোলা ইলেকট্রিক তারে লেগে গিয়েও করুণ মৃত্যুবরণ করেছে শিশুরা। সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের কাছে ট্রেনের ছাদে শিশুদের ভ্রমণ বন্ধ করার আবেদন জানিয়েছে। সরকার বলছে, একমাত্র ট্রেন কোম্পানিগুলোই পারে ছাদে শিশুদের ভ্রমণ বন্ধ করতে। তাদের মতে, রেলের লোকজনই এগুলো বন্ধ করতে পারে। কিন্তু এটি বন্ধ করা কঠিন। কারণ এটি ঝামেলার কাজ।
সেভ দ্য চিলড্রেন বলছে, পুরো বাংলাদেশেই শিশুদের ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ করতে দেখা যায়। সেভ দ্য চিলড্রেন এমন নানা বিপদ থেকে শিশুদের রক্ষার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, তারা শিশুর পরিবারকে কাজে সুযোগ করে দিয়ে শিশুর স্কুলে ফেরার পথের বাধা দূর করে। প্রশ্ন হলো, সেভ দ্য চিলড্রেনের এমন আহ্বানের পরও কি ট্রেনের ছাদে এমন আনন্দময় মৃত্যুভ্রমণ বন্ধ হবে?

No comments:

Post a Comment