Saturday, May 22, 2010

ক্লিওপেট্রা অত সুন্দর ছিলেন না!


উইলিয়াম শেক্সপিয়র তার সৌন্দর্য প্রসঙ্গে বলেছিলেন, 'বয়স তাকে বাঁধতে পারে না, প্রথাও তার অনিঃশেষ রূপমাধুরীকে ম্লান করতে পারে না।' চসার তার তুলনা করেছেন, মে মাসের গোলাপের সঙ্গে। মিকেল অ্যাঞ্জেলো থেকে শুরু করে বিশ্বখ্যাত চিত্রকররা তাকে এঁকেছেন ভয়ঙ্কর সুন্দর হিসেবে। এখনও শিল্পীরা কল্পনার ক্লিওপেট্রা আঁকেন মনের মাধুরী মিশিয়ে। পৃথিবী বিখ্যাত অভিনেত্রী সোফিয়া লরেন, এলিজাবেথ টেলর থেকে শুরু করে বহু দেশের বহু সুন্দরী অভিনেত্রীই তার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। কবি ও শিল্পীর কল্পনায় ক্লিওপেট্রা হয়ে উঠেছেন ইতিহাসের অন্যতম সুন্দরী। কিন্তু কেউ যদি বলে, যেমন ভাবা হয় তেমন সুন্দর ছিলেন না ক্লিওপেট্রা! আর নিজের বক্তব্যের পক্ষে যুক্তিতর্ক হাজির করেন? এমনই কাণ্ড ঘটিয়েছে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক। ওয়েবসাইটে সম্প্রতি তারা একটি অডিও প্রকাশ করেছে। অডিওতে তারা জানাচ্ছে, কয়েক বছর আগে ব্রিটিশ মিউজিয়ামের একজন কিওরেটর পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়েছেন, আধুনিককালে আমরা যাকে সুন্দর বলি সে অর্থে সুন্দর ছিলেন না ক্লিওপেট্রা। তাহলে কেমন ছিলেন ক্লিওপেট্রা? প্রত্নতাত্তি্বকরা বলছেন, তিনি ছিলেন মোটাসোটা, বেঢপ কাপড়-চোপড় পরিহিত নারী। নাক ছিল মোটা আর ঝোলানো, দাঁত ছিল নষ্ট, চোখ ছিল তীক্ষষ্ট আর গলা ছিল ছড়ানো। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক জানাচ্ছে, যখন এ গবেষণার কথা সবাইকে জানানো হয়েছিল, তখন সারাবিশ্বের পত্রপত্রিকায় ফলাও করে ক্লিওপেট্রার এই রূপের কথা ছাপা হয়েছিল। কিন্তু তাতে কী? ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক জানাচ্ছে এক নতুন খবর, এতসব জানাজানি হওয়ার পরও ক্লিওপেট্রাকে নিয়ে রহস্যের শেষ নেই। তাকে নিয়ে মানুষের কল্পনা যেন বাগ মানতে চাইছে না। এখনও তিনি শিল্প আর ফ্যাশনের রানী। ক্লিওপেট্রা এখনও উজ্জ্বল, ত্রূক্রর এবং অবশ্যই মোহনীয় নারী।
কয়েক বছর আগে ব্রিটিশ মিউজিয়ামের কিওরেটর ক্লিওপেট্রার রাজকীয় স্ট্যাচু এবং মুদ্রায় ছাপাঙ্কিত তার ছবি বিশ্লেষণ করে জানতে পেরেছিলেন, রানীর এই সৌন্দর্যহীনতার কথা। খ্রিস্টপূর্ব ৩২ অব্দের এক রৌপ্য মুদ্রায় ক্লিওপেট্রার ছবি বিশ্লেষণ করেছেন প্রত্নতাত্তি্বকরা। মুদ্রার এক পাশে মার্ক অ্যান্টনির ছবি, অন্যপাশে ক্লিওপেট্রার। রোমান জেনারেল ও রাজনীতিক মার্ক অ্যান্টনি তার দীর্ঘকালীন প্রেমিক ছিলেন। অ্যান্টনিই এ মুদ্রার উদ্যোক্তা। ফলে আধুনিককালে যে ক্লিওপেট্রার দেখা আমরা পাই তা ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তোলা বলেই মনে হয়। নিউক্যাসেল ইউনিভার্সিটির প্রত্নতাত্তি্বক মিউজিয়ামের পরিচালক বলেছেন, 'রোমান লেখকরা ক্লিওপেট্রার প্রজ্ঞা ও ক্যারিশমার কথা বলেছেন। বলেছেন, তার কণ্ঠস্বর ছিল মোহনীয়।' কিন্তু লক্ষ্য করার মতো ব্যাপার হলো, কেউই তার সৌন্দর্য বিষয়ে কিছু বলেননি। ক্লিওপেট্রার রমণীয় ও মোহনীয় ইমেজটা অতিসাম্প্রতিককালের নির্মাণ বলেই মনে হয়। বলা হচ্ছে, মার্ক অ্যান্টনি সম্ভবত তার প্রজ্ঞার প্রেমে পড়েছিলেন। আর সেটিই ছিল ক্লিওপেট্রার আসল সৌন্দর্য। ক্লিওপেট্রা ছিলেন মিসরের শেষ ফারাও। তার সময়েই মিসর রোমানদের অধীনে একটি প্রদেশে পরিণত হয়। তিনি মিসরের টলেমি ডাইনেস্টির সদস্য ছিলেন। প্রথমে তিনি পিতা ও ভাইদের সঙ্গে যৌথভাবে দেশ শাসন করেন। পরে নিরঙ্কুশ ক্ষমতাধর হন। এবং জুলিয়াস সিজারের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে নিজের ক্ষমতা নিষ্কণ্টক করেন। বলা হয়ে থাকে, রোমান সাম্রাজ্যের ইতিহাস পাল্টে দিয়েছিলেন ক্লিওপেট্রা। খ্রিস্টপূর্ব ৪৮ অব্দে তিনি রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজারকে কাবু করেন। সিজারের এক সন্তানের মা হন। পরে মার্ক অ্যান্টনির সঙ্গে ঘর বাঁধেন এবং তিন সন্তানের মা হন। শেষ পর্যন্ত অক্টাভিয়ানের সঙ্গে যুদ্ধে অ্যান্টনির পরাজয়ের পর ৩১ খিস্টপূর্বাব্দে অ্যান্টনি ও ক্লিওপেট্রা দু'জনেই আত্মহত্যা করেন। ক্লিওপেট্রা মিসরীয় কোবরা এসপের দংশন খেয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। ক্লিওপেট্রা রহসময়ী, তাকে নিয়ে রচিত হয়েছে বহু মিথ, নাটক, কবিতা, গান, চিত্র, চলচ্চিত্র। তিনি বহু মানুষের প্রিয়। তিনি দুটি সভ্যতার মেলবন্ধন ঘটিয়েছিলেন অপরিসীম বুদ্ধিমত্তা আর কর্মতৎপরতা দিয়ে। বুদ্ধিই তার সৌন্দর্য। কিন্তু মানুষ তার শারীরিক সৌন্দর্যকেই এতকাল তার শক্তি ভেবে এসেছে। প্রত্নতাত্তি্বকদের ভুল ভাঙানোয় তাই হতাশ হওয়ার কিছু নেই। বরং এখানেই আশাবাদের শুরু।

No comments:

Post a Comment