Monday, May 3, 2010
নূহের নৌকা
ইসলাম ধর্মে হজরত নূহ (আঃ)-এর আমলের মহাপ্লাবনের উল্লেখ আছে। উল্লেখ আছে, তার সেই বৃহৎ নৌকার কথাও। লোকমুখে ওই নৌকা নূহের কিস্তি বলেও পরিচিত। বাইবেলেও আছে নূহের নৌকার কথা। হিন্দু শাস্ত্রেও নানা সূত্রে মহাপ্লাবনের উল্লেখ আছে। শতপথ ব্রাহ্মণে মহাপ্লাবনের উল্লেখ আছে। মনুকে মহাপ্লাবনের কথা জানানো হয়েছিল আর তাকে এ প্লাবনের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন মৎস্য অবতার। পৃথিবীর বহু ধর্মগ্রন্থ, পুরাণ ও লোককথায় মহাপ্লাবন ও নূহের কিস্তির অনুরূপ ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়। সাধারণভাবে বিশ্বাস করা হয়, এমন একটি মহাপ্লাবন ঘটেছিল। কিন্তু সত্যিই এটি ঘটেছিল নাকি ধর্মগ্রন্থে প্রতীকীভাবে মহাপ্লাবনের উল্লেখ করা হয়েছে, তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা বিস্তর মাথা ঘামিয়েছেন, এমনকি নূহের নৌকার সন্ধানে নানা স্থানে প্রত্নতাত্তি্বক অনুসন্ধানও চালিয়েছেন। এবার প্রত্নতাত্তি্বকদের একটি দল বলছেন তারা তুরস্কে আরারাত পর্বতে নূহের নৌকার সন্ধান পেয়েছেন, জানাচ্ছে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক। পুরাণ ও ধর্মগ্রন্থের বহু উল্লেখের সূত্র ধরে মহাপ্লাবন নিয়ে গবেষণা করেছেন বিজ্ঞানীরা। তারা মোটামুটি একমত, একটি বড় প্লাবন ঘটেছিল। বিজ্ঞানীদের ধারণার সঙ্গে ধর্মগ্রন্থের বর্ণনার সম্পূর্ণ মিল নেই, কিন্তু বিজ্ঞানীদের অনুসন্ধান অনেক অজানা বিষয়ের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ৯ হাজার ৪শ' বছর আগে এক উষ্ণায়নের কালে ভূমধ্যসাগরের পানির উচ্চতা বেড়ে গিয়েছিল বলে বিজ্ঞানীদের মধ্যে সাধারণ একটি মত চালু আছে। এর আগে কৃষ্ণসাগর সুপেয় পানির জলাধার ছিল। কিন্তু এই প্লাবনের ফলে কৃষ্ণসাগরে লবণাক্ত পানি ঢুকে যায়। প্রচলিত একটি মত বলছে, এ সময় কৃষ্ণসাগরের পানি ১৯৫ ফুট পর্যন্ত উঠেছিল। এতে আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকায় বসতি ডুবে যাওয়ার কথা। পরবর্তীকালে ভূতাত্তি্বকরা অবশ্য পানির উচ্চতা বিষয়ে ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে তারা নিশ্চিত হয়েছেন পানির উচ্চতা ১৫-৩০ ফুট পর্যন্ত উঠেছিল। পানির উচ্চতা নিয়ে যেমন তর্ক আছে, তেমনি তর্ক আছে প্লাবনের সময়কাল নিয়েও। আবার এসব তর্ক-বিতর্কের দিকে মানুষের নজর ফিরেছে তুরস্কের খবরে। ইভানজেলিকাল ক্রিশ্চিয়ান প্রত্নতাত্তি্বকদের একটি দল বলছেন, তারা বরফ ও আগ্নেয়গিরির ধ্বংসাবশেষের নিচে নূহের নৌকা খুঁজে পেয়েছেন। এর আগে ২০০৬ সালে খবর বেরিয়েছিল ইরানে এমন একটি নৌকার ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। সেবার ইরানের এলবুর্জ পর্বতমালার সুলেইমান পর্বতে নৌকা আকৃতির একটি পাথরের স্থাপনা পাওয়া গিয়েছিল। পাথর হলেও দেখতে তা ছিল একেবারে কাঠের মতো। বলা হয়েছিল, এটি অশ্মীভূত কাঠ। আবার অনেকে মনে করেন, প্লাবনের পর নৌকাটি পানিতে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এবারের অনুসন্ধানকারীরা বলছেন, তারা ১০০ শতাংশ নিশ্চিত না হলেও ৯৯.৯৯ শতাংশ নিশ্চিত, এটিই নূহের নৌকা। তারা বলছেন, ২০০৭ এবং ২০০৮ সালে তারা সমুদ্রপৃষ্ঠের ১৩ হাজার ফুট ওপরে আরারাত পর্বতের চূড়ার কাছে চাপা পড়া সাতটি কাঠের কম্পার্টমেন্ট পেয়েছেন। ২০০৯ সালে প্রত্নতাত্তি্বক উপাদানগুলো ফিল্মে ধারণ করা হয়েছে। ওই প্রত্নস্থানের কাঠের রেডিও কার্বন ডেটিংও করা হয়েছে। এই ডেটিংয়ে কাঠের বয়স বেরিয়ে এসেছে ৪ হাজার ৮শ' বছর। জীববিজ্ঞানী টড উড বলছেন, সময়টা একটু কম হয়ে গেল। তিনি নিজেও বিশ্বাসী একজন বিজ্ঞানী। তবু সময় নিয়ে তার দ্বিধা। কেউ কেউ বলছেন, নূহের নৌকা তুরস্কেই পাওয়া যাওয়ার কথা। কিন্তু অন্য পাহাড়ে। ফলে, আরারাত পর্বতের নৌকা অনেকের বিস্ময় জাগিয়েছে। তুরস্কের সরকার চিন্তা করছে, নূহের এই নৌকাকে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সেজন্য এখনও বেশ পথ পাড়ি দিতে হবে। কারণ পণ্ডিতরা এখনও নানা মতে, নানা পথে বিভক্ত। বোঝা যাচ্ছে, পণ্ডিত মহলে এ নিয়ে বেশ তর্ক হবে।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment