Tuesday, May 4, 2010

মুম্বাই কার?


১৯৯৫ সালে শিবসেনা মহারাষ্ট্রের ক্ষমতায় এসেই বোম্বের নাম পরিবর্তন করে মুম্বাই রেখেছিল। সে সময় অনেক ভারতীয় শহরের নামই পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু মুম্বাইয়ের নামকরণটা সবার চোখে পড়েছিল বেশি। কারণ এর জৌলুস ও বিশ্বপরিচিতি। আদতে বোম্বে নামটা খারাপ ছিল না। বোম্বে নাম দিয়েছিল পর্তুগিজরা। পর্তুগিজ ভাষায় বুম মানে ভালো, বে মানে উপসাগর। ভালো উপসাগরের তীরবর্তী শহর বোঝাতে পর্তুগিজরা বোম্বে নাম দিয়েছিল। ইংরেজ-পর্তুগিজরা যতই বোম্বে ডাকুক, স্থানীয় মারাঠিরা একে ডাকত মুম্বাই বা মাম্বাই বলেই। মাম্বা বা মহাঅম্বা দেবীর নাম থেকে মুম্বা এসেছে। আর মারাঠি আই শব্দের অর্থ মা। তবে এ শহরের প্রাচীন নাম ছিল কাকামুচি। এখনও নাকি কেউ কেউ মুম্বাইকে কাকামুচি বলে ডাকেন। হিন্দি সিনেমার সূত্রে যে শহরটি আমাদের এত চেনা সে শহরের আদি অধিবাসী মারাঠিরা নিজেদের স্বাতন্ত্র্য নিয়ে বিশেষভাবে গর্বিত ও চিন্তিত। স্থানীয় অধিবাসীরা মনে করেন, হিন্দি সংস্কৃতি তাদের গ্রাস করছে। কিন্তু সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যের আন্দোলন নয়, গ্রাসের ভয় থেকে মুম্বাইতে এবং মহারাষ্ট্রে যে রাজনীতি চলছে তা হলো উগ্র জাতীয়তাবাদী আন্দোলন। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছে শিবসেনা এবং তাদের নেতা বাল ঠ্যাকারে। পরিস্থিতি এতটাই গড়িয়েছে যে, কিছুদিন আগে টাইমস অব ইন্ডিয়া পত্রিকায় সোভান সাক্সেনা লিখেছেন, ভারতের উচিত সময় থাকতেই মুম্বাইয়ের মালিকানা দাবি করা। নইলে অতিদ্রুত বিজেপি, আরএসএস আর শিবসেনা মিলে মুম্বাইয়ের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা বনে যাবে। আর তারা কর্তা বনে গেলে মুম্বাইয়ে ভারতের অন্য অঞ্চলের মানুষের, বিশেষ করে উত্তর ভারতীয়দের অবস্থান নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়বে। বাল ঠ্যাকারে তত্ত্ব দিয়েছিলেন যে মুম্বাই ফর অনলি মারাঠিজ, মুম্বাই শুধু মারাঠিদের জন্য। বাকিরা? এত ব্যবসা-বাণিজ্য, চলচ্চিত্র রেখে বাকিরা কোথায় যাবে? কেউ বলল, তারা চলে যাবে। কেউ বলল থাকবে। এমন পরিস্থিতিতে মুকেশ আম্বানি বললেন, মুম্বাই ফর অল, মুম্বাই সবার জন্যই। তখন বাল ঠ্যাকারে বললেন, মানুষের কথা মানতে হবে। মানুষ চায় মুম্বাই শুধু মারাঠিদের হোক। মুকেশ আম্বানির জন্য যেমন রিলায়েন্স, মহারাষ্ট্রের মানুষের জন্য তেমনি মুম্বাই। তর্কে জড়িয়েছিলেন শচীন টেন্ডুলকারও। তিনি একজন গর্বিত মারাঠি হিসেবেই বলেছিলেন, মুম্বাই ভারতের সম্পত্তি, মুম্বাইতে সবার থাকার অধিকার আছে। শচীনের এই কথা শুনে বাল ঠ্যাকারে তাকেও ধমকে দিয়েছিলেন। পরিস্থিতি ধীরে ধীরে এমন এক জায়গায় এসে পেঁৗছাচ্ছে যে, সহজ সমাধানের রাস্তা ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসছে। শুধু উগ্র জাতীয়তাবাদ বললে বোধহয় আর সমাধান হচ্ছে না বিষয়টার। একটি বড় শহর যখন গড়ে ওঠে তখন তার উজ্জ্বলতার নিচে থেকে যায় অনেক অন্ধকার অঞ্চল। বঞ্চিত ভাগ্যহতরা তখন তাদের দুরবস্থার জন্য ওই শহরটিকে দায়ী করতে থাকে। খোদ মুম্বাইতেও তো বস্তি কম নয়। প্রশ্ন হলো, নিজেদের দুর্ভাগ্যের জন্য বঞ্চিতরা শহরের বহিরাগতদের দায়ী করছে কি-না, আর তাদের এই ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে শিবসেনা তাদের উগ্র জাতীয়তাবাদী রাজনীতির আখের গুছিয়ে তুলছে কি-না। বাল ঠ্যাকারে বলেছেন, মুম্বাইকে যেন বসার ঘর ভাবা না হয়। সবাই মুম্বাইতে আসবে এখানে থুথু মেরে চলে যাবে তা করতে দেওয়া হবে না। তার আরও অভিযোগ যে, মুম্বাই হামলার সময় উত্তর ভারতীয় শাসকরা যথেষ্ট মনোযোগের সঙ্গে বিষয়টির মোকাবেলা করেনি। অতএব, তারা বাইরের লোকদের প্রতিরোধ করবেন। শিবসেনা এখন যেনতেন কারণেই বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। শাহরুখ থেকে সালমান সবাইকে শাসিয়ে চলেছে। অবস্থার গুরুত্ব বুঝে রাহুল গান্ধী বলেছেন, মুম্বাইতে সবার থাকার অধিকার রক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। কোনো ভারতীয়র ওপর আঘাত এলে জবাব দেওয়া হবে। পরিস্থিতি মঙ্গলবার পর্যন্ত এমনই ছিল। কিন্তু বুধবার বাল ঠ্যাকারে জবাব দিয়েছেন। ভাষা তার অশ্রাব্য। যুক্তির বালাই নেই। তিনি বলছেন, অনেক বয়স হয়ে যাওয়ার পরও রাহুলের যেহেতু বিয়ে হয়নি আর এর ফলে যেহেতু তার ভেতর হতাশা জেগেছে তাই তিনি এমন যুক্তিহীন কথা বলছেন। তার এই বক্তব্যের পর তার সঙ্গে তর্ক করতে যে কারও বাধো বাধো ঠেকবে। কিন্তু মুম্বাইকে তো রক্ষা করতে হবে? তর্ক করে, গালি খেয়ে সবকিছুর পরও উগ্রপন্থার হাত থেকে মুম্বাইকে রক্ষা করা যাবে কি-না সেটি বড় প্রশ্ন। তার চেয়েও বড় প্রশ্ন, মানুষের প্রকৃত সমস্যার দিকে তাকানো। কারণ মানুষ পেছন থেকে সরে গেলে উগ্রপন্থা কোনো কাজেই আসে না।

No comments:

Post a Comment