Thursday, March 14, 2013

ব্রোকেন নিউজ, ব্রেকিং নিউজ

খবরের মাহাত্ম্য আমরা সবাই জানি। সকালবেলা গরম চায়ের সঙ্গে সংবাদপত্রের পাতা ওল্টাতে না পারলে অনেকেরই স্বস্তি লাগে না। সকালবেলা সংবাদপত্র পাঠের অভ্যাস অবশ্য নতুন নয়, আর এ নিয়ে আলোচনারও বিশেষ গুরুত্ব নেই। এখন আলোচনা প্রতি মুহূর্তের সংবাদ নিয়ে। সম্প্রতি দেশে যে উত্তপ্ত অবস্থা তৈরি হয়েছিল তাতে অনেককেই দেখেছি প্রতি মূহূর্তের খবর জানতে উদগ্রীব। যাদের ইন্টারনেটে অবাধ যাতায়াত আছে তারা তো পারলে প্রায় সব পত্রিকা আর অনলাইন নিউজ পেপারের সাইট খুলে বসে থাকেন। শুধু পত্রিকা কেন, ফেসবুকে বন্ধুরা কী শেয়ার করছেন, ব্লগে কী লেখা হচ্ছে_ এসব নিয়ে সবার মধ্যে তুমুল আগ্রহ। টিভি খুলে স্ক্রলের টিকআর-এ নিউজ ফিডে চোখ রাখছেন অনেকে। আর যাদের এসব সুযোগ নেই তারা মোবাইলেই জানার চেষ্টা করছেন কখন কোথায় কী হচ্ছে। বন্ধুদের ফোন করে সর্বশেষ অবস্থা জানার রেওয়াজ তো আছেই। আবার পত্রিকা বা অনলাইন নিউজ পেপারের সার্ভিস থেকেও সরাসরি এসএমএসে খবর পাওয়ার উপায়ও আছে। এসব দেখে মনে হয়, খবরের প্রতি মানুষের আগ্রহ একেবারে তীব্র। প্রতি মুহূর্তের তাজা খবর চাই। এত খবর পত্রিকাগুলো পাবে কোথায়? তাই ছোট-বড় সব বিষয়ই খবর হচ্ছে। অগুরুত্বপূর্ণ অনেক খবর ব্রেকিং নিউজের মর্যাদা পাচ্ছে। ব্রেকিং নিউজ নিয়ে কিছুদিন আগে কিছু বিতর্ক চোখে পড়েছিল। তাতে দেখা গেল, প্রথিতযশা অনেক সাংবাদিকই ব্রেকিং নিউজের বাড়াবাড়িতে বিরক্ত। কোনটা ব্রেকিং নিউজ আর কোনটা নয়, সে বিবেচনা যে অনেকেরই নেই_ সে বিতর্কও উঠেছে। তর্কটা শুরু হয়েছিল পশ্চিমের টেলিভিশন ও অনলাইন পোর্টালের ব্রেকিং নিউজ দেওয়ার তীব্র আগ্রহ থেকে। এখন অবশ্য অনেকে ব্রেকিং না বলে লেটেস্ট বলছেন। সর্বসাম্প্রতিক, তাজা খবর, সদ্য সংবাদ ইত্যাদি নানা নামে অভিহিত করা হচ্ছে এসব নিউজকে। নামে যাই বলা হোক, উপস্থাপনের ভঙ্গি কিন্তু ব্রেকিং নিউজের মতোই। কিন্তু কেউ কি প্রশ্ন করছেন, এত খবর দরকার পড়ছে কেন হঠাৎ করে? আগেও তো মানুষ শহুরে জীবনযাপন করত। সকালবেলা পত্রিকা পড়ার সঙ্গে টেলিভিশনে টুকটাক খবর দেখার মধ্যেই তাদের আগ্রহ তৃপ্ত হতো। এখন প্রতি মুহূর্তের খবর দরকার হচ্ছে কেন? এ কথা সত্য যে, জীবনযাপনের পদ্ধতিতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। মোবাইল এমন এক জায়গা করে নিয়েছে জীবনে যে, মোবাইল যখন ছিল না তখন যোগাযোগ কীভাবে হতো তা রীতিমতো ভুলেই যেতে বসেছে সবাই। কেউ কেউ বলেন, মোবাইল আর ইন্টারনেটের কারণে ডিটেইলের দিকে মানুষের নজর আর সেভাবে যায় না। অনেকেই বিস্তারিত নিউজ পড়তে চায় না। লোকে খণ্ড খণ্ড নিউজ পড়তে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। একেবারে নতুন বাস্তবতা এটা। ব্রেকিং নিউজ না বলে আসলে একে বলা উচিত ব্রোকেন নিউজ। খণ্ড খণ্ড খবর জোড়া দিয়েই নতুন সময়ের নতুন পাঠক জেনে যান ঘটনাবলি সম্পর্কে। কী এবং কেন ঘটছে তা নিয়ে জানতে বিশেষ সময় ব্যয় করার মনোযোগই অনেকের নেই। এক কথায় জানাতে পারলে তারা জানল নয়তো ওদিক থেকে মুখ ফিরিয়ে অন্যদিকে রওনা হলো। খবরের এত দরকার কি শুধু আমাদের দেশেই পড়েছে? সংঘর্ষ দেখা দিলেই কি খবর নিয়ে বাড়তি আগ্রহ দেখা দেয়? বিশেষ পরিস্থিতিতে খবর নিয়ে আগ্রহ বেড়ে যায় সন্দেহ নেই। কিন্তু পরিস্থিতি যখন শান্ত থাকে তখনও লোকে খবর চায়। আর এটা শুধু বাংলাদেশের বাস্তবতা নয়, পুরো পৃথিবীতেই এ অবস্থা। পরিস্থিতি দেখে বোঝা যায়, আমাদের আগের প্রজন্ম পর্যন্ত সাংবাদিকরা খবরকে যেভাবে দেখতেন সেভাবে হয়তো ভবিষ্যতে দেখা হবে না। ব্রোকেন নিউজ বদলে দেবে অনেক কিছুই। আর অনলাইন নিউজ মিডিয়া, ফেসবুকসহ নানা সামাজিক মাধ্যম নিউজকেও ভেতরে ভেতরে পাল্টে দিতে চলেছে।