Sunday, December 12, 2010

মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষাৎ পেলে মানুষ হতবিহ্বল হয়ে পড়ত : সাদেক হোসেন খোকা


মাহবুব মোর্শেদ
১৯৭১ সালে সাদেক হোসেন খোকা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞান বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র। ২ নম্বর সেক্টরের অধীনে যুদ্ধ করেছেন। জড়িত ছিলেন বিভিন্ন সাহসী গেরিলা অপারেশনে। ১৬ ডিসেম্বর তিনি ও তার সহযোদ্ধারা মিলে টেলিভিশন ও রেডিওর নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণ করেছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা যুদ্ধের কলাকৌশল, যুদ্ধে সাধারণ মানুষের সমর্থন ও ডিসেম্বরের ঢাকা নিয়ে ঢাকার বর্তমান মেয়র এবং মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে।
বিস্তারিত সাক্ষাৎকার পড়ূন পৃষ্ঠা-৫
...........................................
সাদেক হোসেন খোকার জন্ম ১ অক্টোবর ১৯৫১ সালে। ১৯৭১ সালে তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞান বিভাগে শেষ বর্ষের ছাত্র। যুক্ত ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের মেনন গ্রুপের সঙ্গে। ২ নম্বর সেক্টরের অধীনে যুদ্ধ করেছেন তিনি। ঢাকায় বিভিন্ন গেরিলা অপারেশনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। গেরিলা যুদ্ধের কলাকৌশল, যুদ্ধ পরিস্থিতি ও ডিসেম্বরের ঢাকা নিয়ে তিনি কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাহবুব মোর্শেদ

সমকাল : নভেম্বরে গেরিলারা ঢাকার চারদিকে একটা প্রতিরোধবলয় গড়ে তুলেছিল। সে সময় আপনাদের ক্যাম্প কোথায় ছিল?
সাদেক হোসেন খোকা : প্রকৃতপক্ষে নভেম্বরের শেষদিক থেকেই গেরিলারা ঢাকার চারদিকে অবস্থান গ্রহণ করে। বিশেষ করে ঢাকার পূর্বাঞ্চলের প্রতিটি গ্রামেই মুক্তিযোদ্ধারা খুব শক্ত অবস্থানে ছিল। তখন বেশিরভাগ সময়ই আমরা মুক্তাঞ্চলে অবস্থান করতাম এবং ঢাকায় এসে অপারেশন করে আবার সেখানে চলে যেতাম। আমাদের যুদ্ধ তো কনভেনশনাল ছিল না। গেরিলা যুদ্ধের নিয়মে এটিই ছিল আমাদের কৌশল। তখন ক্যাম্পগুলো অস্থায়ীভাবে তৈরি হতো। অপারেশন করে এবং পারিপাশর্ি্বকতার কথা বিবেচনা করে আমরা ক্যাম্পগুলো এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে সরিয়ে নিতাম। ক্যাম্পগুলো ছিল আমুলিয়া, মেন্দীপুর, মানিকদী_ এসব জায়গায়।
সমকাল : তখন কি দখলের উদ্দেশ্যে ঢাকার ভেতরে ঢোকার মতো পরিস্থিতি গেরিলাদের ছিল?
সাদেক হোসেন খোকা : সাধারণত দখলদার বাহিনীর শক্ত ঘাঁটি থাকে রাজধানী শহরে। কারণ, সামরিক-বেসামরিক সব প্রতিষ্ঠানের হেডকোয়ার্টার থাকে। তাই রাজধানী শহরকে তারা শক্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। পাকিস্তানি দখলদাররাও তা-ই করেছিল। এছাড়া তাদের রেগুলার ফোর্সও ছিল অনেক বেশি। গেরিলা যুদ্ধের ধরনই হলো শত্রুর শক্ত ঘাঁটিতে চোরাগোপ্তা হামলার মধ্য দিয়ে তাদের বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ঘটানো। তাদের পরাস্ত করা। এমন ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ঘটাতে হবে, যাতে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রচারমাধ্যমেও এটি গুরুত্বসহকারে প্রচার পায়। গেরিলা যুদ্ধের ক্ষেত্রে এ ধরনের প্রচারণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য তখন ঢাকা শহরের বাইরে অবস্থান নিয়ে আমরা গেরিলা অপারেশনগুলো পরিচালনা করতাম। সে সময় ঢাকা শহরে আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন করি, প্রচারের দিক থেকে যেগুলো খুবই গুরুত্ব পায়। তাতে সারাদেশের মানুষসহ গোটা বিশ্ববাসী জানতে পারে পাকবাহিনী ঢাকায় দারুণভাবে পর্যুদস্ত হচ্ছে। তখন হানাদার বাহিনীর লক্ষ্য ছিল, বিশ্ববাসীকে দেখানো যে, সবকিছু ঠিকঠাকমতো চলছে। আর আমাদের লক্ষ্য ছিল এখানে প্রশাসনসহ কোনো কিছুই সঠিকভাবে চলছে না সেটা দেখানো। তাই এ ধরনের প্রচারণা তখন ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সমকাল : আপনাদের বড় অপারেশনগুলো কী কী?
সাদেক হোসেন খোকা : আমার মনে পড়ে ঢাকা হলের (বর্তমান শহীদুল্লাহ হল) কাছে এয়ার ফোর্সের যে রিক্রুটিং সেন্টার ছিল সেটি আমরা ধ্বংস করেছিলাম। এছাড়া শান্তিনগরের ডিএফপি ভবন, পিলখানাসহ ঢাকা শহরের আরও অনেক জায়গায় আমরা এ ধরনের গেরিলা অপারেশন করেছিলাম। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর যখন তারা ক্ষমতা হস্তান্তর করল না তখন অনেক এমএনএ এবং এমপি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নিয়ে মুক্তাঞ্চলে চলে যান। পাকিস্তান সরকার তখন সেই এমপিদের আসন শূন্য ঘোষণা করে। আসনগুলোতে উপ-নির্বাচনের ব্যবস্থা করে। প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে নির্বাচন ঠেকানো আমাদের একটি গ্রুপের পক্ষে সম্ভব ছিল না। তখন আমরা রাজারবাগ পুলিশ লাইনের উল্টো দিকে অবস্থিত প্রধান নির্বাচন কমিশনারের অফিস উড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। আমাদের অপারেশনের পর ভবনটা একেবারে ধসে পড়ে। তাতে নির্বাচন কমিশনের একজন কর্মচারীও মারা যায়। এমন সুরক্ষিত জায়গায় এ ধরনের একটি বড় অপারেশন পরিচালনা করে আমরা প্রমাণ করতে পেরেছিলাম, মুক্তিযোদ্ধারাও ঢাকায় শক্ত অবস্থানে আছে। প্রচারের দিক থেকেও এটি বেশ গুরুত্ব পেয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়টাই বিভিন্ন গ্রুপ ঢাকায় এসে এ ধরনের অপারেশন করেছে। এ ধরনের অপারেশনের আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল পাক হানাদার বাহিনীকে এখানেই ব্যস্ত রাখা। যাতে তারা বাইরের দিকে মনোযোগ কম দিতে পারে।
সমকাল : কোন ক্যাম্প থেকে আপনি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন?
সাদেক হোসেন খোকা : মেলাঘর ক্যাম্প থেকে। সম্ভবত মে মাসের প্রথম সপ্তাহে আমি মেলাঘরে যাই। আমি ছাত্র ইউনিয়নের মেনন গ্রুপের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। আমাদের গ্রুপ থেকে অনেকেই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। এপ্রিলের প্রথম দিকে আমি আমার গ্রামের বাড়িতে চলে যাই। স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার নেতৃবৃন্দের দিকনির্দেশনা নেওয়া, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং গ্রুপিংয়েরও প্রয়োজন ছিল। এসব করতে করতে একটু দেরি হয়ে যায়। কমিউনিস্ট পার্টি তখন চীন এবং রাশিয়াপন্থি_ এই দু'ভাগে বিভক্ত ছিল। আমাদের মধ্যেই অনেকগুলো দল ছিল। কেউ কেউ পাকিস্তানি বাহিনী এবং মুক্তিবাহিনী উভয়কেই প্রতিরোধ করতে শুরু করে। সিরাজ শিকদাররাও এক রকম লাইন নেয়। মতিন সাহেব, আলাউদ্দিন ভাই তারা এক রকম লাইন নেন। মেনন এবং জাফর ভাইরা ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশ সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেন।
সমকাল : প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর?
সাদেক হোসেন খোকা : প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর আমি কর্নেল গাফফারের নেতৃত্বে তিন সপ্তাহ সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। তারপর সেখান থেকে ভাগ করে আমাদের ঢাকায় পাঠানো হয়।
সমকাল : ঢাকায় অন্য যে গেরিলা গ্রুপগুলো কাজ করত, তাদের সঙ্গে আপনাদের যোগাযোগ বা পারস্পরিক সমন্বয় কীভাবে হতো?
সাদেক হোসেন খোকা : ২ নং সেক্টরে আমরা যারা প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছি তারা একে অপরকে জানতাম। কোন গ্রুপে কে কে আছে, কমান্ডার কে_ এসব আমরা জানতাম। তাছাড়া আমাদের নিজেদের মধ্যেও পারস্পরিক যোগাযোগ তো ছিলই। পারস্পরিক যোগাযোগের ভিত্তিতেই একটা শক্তিশালী অবস্থান গড়ে উঠেছিল। শেষ দিকে পাকিস্তানি বাহিনী দু'একবার পূর্বাঞ্চলে ঢোকার চেষ্টা করেছে। তখন আমাদের গেরিলা গ্রুপগুলো তাদের সে চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দেওয়ার জন্য সম্মিলিত প্রয়াস চালায়।
সমকাল : ঢাকায় আপনারা যাওয়া-আসা করতেন কীভাবে?
সাদেক হোসেন খোকা : যেহেতু এটা ছিল গেরিলা যুদ্ধ। তাই আমাদের আলাদা কোনো পোশাক বা ইউনিফর্ম ছিল না। সাধারণ মানুষের মতোই আমরা যাতায়াত করতাম।
সমকাল : ঢাকার অধিবাসীরা আপনাদের কীভাবে সাহায্য করত?
সাদেক হোসেন খোকা : ঢাকার শতকরা ৯৯.৯৯ ভাগ মানুষ যুদ্ধের পক্ষে ছিল। ডিএফপি ভবনে যখন আমরা অপারেশন করি তখন সেখানকার এক কর্মচারী আমাদের সাহায্য করে। এমন সাহায্য প্রচুর পেয়েছি। নির্বাচন কমিশন অফিসে অপারেশন করার সময় প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছিল। অপারেশন শেষ করে শান্তিবাগের দিকে গিয়ে আমরা একটি মেসে আশ্রয় নিই। তারাও সেখানে আমাদের সানন্দে বরণ করে। তখন আকাশবাণী কিংবা বিবিসিতে মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা প্রচারিত হতো। মানুষ সেসব শুনে মুক্তিযোদ্ধাদের কল্পিত ছবি আঁকত মনে মনে। হঠাৎ মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষাৎ পেলে মানুষ হতবিহ্বল হয়ে পড়ত। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কী করবে তা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ত। সেই অভিজ্ঞতা ভাষায় বর্ণনা করার মতো নয়। তাই গেরিলা যুদ্ধে আমাদের যে সফলতা এর ক্রেডিট যদি কাউকে দিতে হয় তা এ দেশের সাধারণ মানুষকেই দিতে হবে। তাদের সমর্থন না পেলে আমাদের এই অর্জন কোনোভাবেই সম্ভব হতো না। সাধারণ মানুষের সঙ্গে সদ্ভাব রাখার জন্য আমাদেরও নানা নির্দেশনা দেওয়া হতো। আমাদের ওপর কঠোর নির্দেশ ছিল, যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না ঘটে। সাধারণ মানুষের সামান্যতম ক্ষতির কারণ যেন আমরা না হই।
সমকাল : ডিসেম্বরে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণার পর পরিস্থিতিতে কী পরিবর্তন এলো?
সাদেক হোসেন খোকা : যুদ্ধ তখন একেবারে চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে এসেছে। পাকিস্তানি বাহিনী একেবারে কোণঠাসা হয়ে গিয়েছিল। তারা কোনো অস্ত্র নিয়ে আসতে পারছিল না। বিমানও বন্ধ ছিল। গেরিলাদের আক্রমণে তারা বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছিল। কোনো ঐক্যবদ্ধ শক্তিকে যে সামরিক শক্তি দিয়ে দমানো যায় না তারই বড় প্রমাণ আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। শুরু থেকেই সারাদেশে মুক্তিযোদ্ধারা অসীম সাহসিকতার সঙ্গে যেভাবে যুদ্ধ করেছে, তাদের সাহসিকতার কাছে পাকবাহিনীর শতকরা ৮৫-৯০ ভাগ পরাজয় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। আর ডিসেম্বরের শুরুতে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ভারতের সামরিক অস্ত্রের সাপোর্ট আমরা পাই এবং যুদ্ধ আনুষ্ঠানিক পরিসমাপ্তির দিকে এগোতে থাকে। যে কারণে মিত্রবাহিনীর পক্ষ থেকে তাদের আত্মসমর্পণ করার আহ্বান জানানোর সঙ্গে সঙ্গেই তারা সাড়া দেয়।
সমকাল : ১৬ ডিসেম্বরের ঘটনা আপনার মনে আছে?
সাদেক হোসেন খোকা : আমার মনে পড়ে, আত্মসমর্পণের পর রেডিও-টেলিভিশন এগুলোর নিয়ন্ত্রণ আমরা গ্রহণ করি। শাহাদাত চৌধুরী, নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, এখলাসউদ্দিন আহমদ প্রমুখের প্রচেষ্টায় টেলিভিশন অন এয়ারে আসে। পরে সেদিন রাতে মেজর হায়দার ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে বক্তব্য প্রদান করেন। টেলিভিশন ভবনে আমি যখন প্রথম লোক পাঠাই তখন দু'একজন কর্মী সেখানে ছিল। তারা ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছিল। তাদের একত্র করে অন্যদের সহযোগিতায় টিভি চালানো সম্ভব হয়।
সমকাল : প্রথম কী অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়?
সাদেক হোসেন খোকা : মেজর হায়দারের ভাষণ দিয়েই অনুষ্ঠান শুরু করা হয়। বারবার সে ভাষণ প্রচার করা হয়।
সমকাল : রেডিওতেও আপনি গিয়েছিলেন?
সাদেক হোসেন খোকা : হ্যাঁ, রেডিওতেও আমরা যাই এবং সেখানকার নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণ করি। সাভারের মেইন টাওয়ারের যন্ত্রপাতি তখন কে বা কারা খুলে নিয়ে গিয়েছিল। সেগুলো খুঁজে বের করে সেটিকে আমরা আবার চালু করার ব্যবস্থা করি।
সমকাল : আত্মসমর্পণের খবর আপনি কখন শুনলেন?
সাদেক হোসেন খোকা : তখন মুক্তিযোদ্ধাদের নিজস্ব একটা নেটওয়ার্ক ছিল। সেই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আমরা অবগত হই যে, ১৬ তারিখ পাকবাহিনী আত্মসমর্পণ করছে। আমি তখন মানিকনগরের দিক দিয়ে আসছি ঢাকার দিকে। সেখানে অনেক রাজাকার আত্মসমর্পণ করে। আমার যতদূর মনে পড়ে, ওইদিন সকাল থেকেই আমরা ঢাকায় ছিলাম।
সমকাল : ভারতীয় সেনারা ততক্ষণে ঢাকায় এসে পেঁৗছেছিল?
সাদেক হোসেন খোকা : হ্যাঁ, ভারতীয় সেনারা ততক্ষণে ঢাকায় এসে পেঁৗছেছে।
সমকাল : আত্মসমর্পণের সময় আপনি কি রেসকোর্স ময়দানে ছিলেন?
সাদেক হোসেন খোকা : না, তখনও আমি রেসকোর্স ময়দানে পেঁৗছতে পারিনি।
সমকাল : রেডিও-টেলিভিশনের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য আপনারা কখন থেকে অপারেশন শুরু করলেন?
সাদেক হোসেন খোকা : মেজর হায়দারের নির্দেশেই আমরা অপারেশনটা শুরু করি। তখন ঢাকার অভ্যন্তরে আমাদের বাহিনী ছিল সবচেয়ে বেশি সুসংগঠিত এবং বেশি জনবল সম্পন্ন। তিনি আমাদের রেডিও-টেলিভিশনের নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণ করার জন্য নির্দেশ দিলেন। আমরা রেডিও-টেলিভিশনের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে মেজর হায়দারকে আহ্বান জানাই। তিনি এসে মুক্তিযোদ্ধাদের করণীয় সম্পর্কে দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। যাতে লুটপাট এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, বিশৃঙ্খলা এড়ানো সম্ভব হয়।
সমকাল : ওইদিন কি ঢাকা শহরে গোলাগুলি হয়েছিল?
সাদেক হোসেন খোকা : হ্যাঁ, বিভিন্ন দিকে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু গোলাগুলি হয়েছিল। আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠে অনেক বেসামরিক লোক কিছু গোলাগুলি করেছিল। আতঙ্কিত হয়ে পাকিস্তানি আর্মিও কিছু গুলি করেছিল। ১৬ তারিখ বিকেলেই আমরা জানতে পারি রায়েরবাজারে কিছু মানুষকে হত্যা করে ফেলে রাখা হয়েছে।
সমকাল : আপনি সেখানে গিয়েছিলেন?
সাদেক হোসেন খোকা : হ্যাঁ, সেখানে আমি গিয়েছিলাম। আমার তিন ঘনিষ্ঠ বন্ধু শাজাহান, বদিউজ্জামান এবং মনিরুজ্জামানের মৃতদেহ সেখান থেকে উদ্ধার করি। পরে আমরা তাদের বাড়িতে মৃতদেহ পেঁৗছে দিই।
সমকাল : রায়েরবাজারে গিয়ে আপনি কী দেখলেন?
সাদেক হোসেন খোকা : সেখানে লাশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে। তখন খবর সবেমাত্র ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষ দেখার জন্য, তাদের হারানো স্বজনদের লাশ খোঁজার জন্য সেখানে ছুটে আসছে। পরে ১৭ তারিখ সবাই জেনে যায়।

No comments:

Post a Comment