Friday, December 3, 2010

তিতাস নদীকে হাঁটুপানির বিল ভেবে তাতে লাফিয়ে পড়েছিল পাকিস্তানি সেনারা : মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহীম, বীরপ্রতীক


পাক সেনারা তিতাসকে বিল ভেবে লাফিয়ে পড়েছিল :ইবরাহিম
মাহবুব মোর্শেদ
'এস' ফোর্স ও ৩১১ ভারতীয় পদাতিক ব্যাটালিয়নের যৌথ আক্রমণে ৪ ডিসেম্বর মুক্ত হয়েছিল আখাউড়া। কৌশল-গতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আখাউড়া অভিযানে ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বীরপ্রতীক। সমকালের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, সেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ও পাকিস্তানিদের নাস্তানাবুদ হওয়ার কথা। পরাজিত হওয়ার পর পাকিস্তানিরা দিগ্গি্বদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে পালিয়েছিল। এক পর্যায়ে লাফিয়ে পড়েছিল তিতাস নদীতেও। ইবরাহিম বলেন, 'তিতাস
নদীকে তারা মনে করেছিল হাঁটুপানির কোনো বিল। আমরা দেখলাম, তারা সেখানে ঝাঁপিয়ে পড়ছে আর ডুবে মরছে।' ১৬ ডিসেম্বরের ঢাকার স্মৃতিচারণ করেছেন তিনি। বলেছেন, ১৯৭২-এর ৩০ জানুয়ারি ঢাকার মিরপুরে বিহারিদের বিরুদ্ধে পরিচালিত রক্তক্ষয়ী অভিযানের কথা। ভাই শহীদুল্লা কায়সারকে খুঁজতে গিয়ে সে অভিযানকালেই শহীদ হয়েছিলেন জহির রায়হান।
............................................................................................................
সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহীমের জন্ম ৪ অক্টোবর ১৯৪৯ সালে, চট্টগ্রামে। তিনি ১৯৭০ সালে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমীতে যোগ দিয়ে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ইনফ্যান্ট্রি করপস-এ কমিশন লাভ করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কর্মকর্তা হিসেবে। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বীরপ্রতীক উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের প্রথম থেকে ১৬ তারিখ পর্যন্ত সময়কালের অভিজ্ঞতা, বিশেষত আখাউড়া দখলের কথা তিনি বলেছেন এ সাক্ষাৎকারে। এসেছে ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি মিরপুর যুদ্ধের বেদনাদায়ক অধ্যায়ের কথাও। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাহবুব মোর্শেদ


সমকাল : যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে আপনাদের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ কী ছিল?
ইবরাহীম : ১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর দিনটি মুক্তিযুদ্ধের ধারাবাহিকতায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন হয়ে উঠেছিল আমাদের কাছে। মুক্তিযোদ্ধারা বুঝতে পারছিলাম যুদ্ধের শেষ দিনটি নিকটবর্তী ; এবং সুনিশ্চিতভাবেই আমরা বিজয়ীর বেশে বাংলাদেশে প্রবেশ করব। আমি তখন লেফটেন্যান্ট ইবরাহীম। দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের 'সি' কোম্পানির অধিনায়ক। একটি পদাতিক ব্যাটালিয়নে (যেমনটি ছিল দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট) চারটি কোম্পানি থাকে আর একটি সদর কোম্পানি বা সব বিষয়ে সহায়তাদানের জন্য কোম্পানি থাকে। আমাদের অধিনায়ক ছিলেন সদ্য মরহুম সেই সময়ের মেজর মঈনুল হোসেন চৌধুরী। তিনি পরে বীরবিক্রম খেতাব পেয়েছিলেন। আর আমরা ছিলাম ব্রিগেড সমপর্যায়ের একটি সংগঠন 'এস' ফোর্সের অন্তর্ভুক্ত। এ সময় 'এস' ফোর্স ও ভারতীয় ৩১১ পদাতিক ব্যাটালিয়ন মিলে আখাউড়া দখল ও মুক্ত করার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে।
সমকাল : আখাউড়া দখলের পরিকল্পনা কেন নেওয়া হলো?
ইবরাহীম : আখাউড়া হচ্ছে বাংলাদেশের পূর্ব সীমান্তের সীমান্তরেখার নিকটবর্তী একটি শহর। আখাউড়ার পাশেই সীমান্ত থেকে এক কিলোমিটার দূরে ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা অবস্থিত। আখাউড়া একটি রেলওয়ে জংশন। চট্টগ্রাম থেকে আখাউড়া পর্যন্ত রেললাইন এসে একটি শাখা সিলেট এবং অন্য একটি শাখা ঢাকার দিকে চলে যায়। তাই আখাউড়া দখল করা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আখাউড়ার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে তিতাস নদী। তিতাস নদীতে নৌ-চলাচল তখনও ভালোই হতো। এখন অবশ্য পানির অভাবে তা হয় না। মুক্তিবাহিনী এবং ভারতীয় বাহিনীর যৌথ কমান্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আখাউড়া আক্রমণের পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয় এবং আমরা নির্দেশ পাই। এই নির্দেশের ধারাবাহিকতায় ৩০ নভেম্বর দিবাগত রাত অর্থাৎ ১ ডিসেম্বরের প্রত্যুষে আমরা আজমপুর রেলওয়ে স্টেশন এবং আজমপুর গ্রামের ওপর আক্রমণ করি। সেখানে পাকিস্তানিদের ছোট্ট একটি প্রতিরক্ষা বূ্যহ ছিল। সেখানে নিম্নে ৩০ এবং ঊধর্ে্ব ৫০-এর বেশি সৈন্য ছিল না। সৌভাগ্যের বিষয়, আমাদের আক্রমণের মুহূর্তে তারা কোনো বাধা প্রদান না করে পলায়ন করে। আমরা সেখানে অনেক অস্ত্র পেলেও কোনো মানুষকে ধরতে পারিনি। তারা আজমপুর থেকে পালিয়ে দক্ষিণ দিকে দেড় থেকে দুই মাইল দূরে আখাউড়া চলে যায়। এটি আমাদের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল। কারণ আমরা চূড়ান্তভাবে আখাউড়াই দখল করতে চাচ্ছিলাম। তাই আমরা আজমপুর থেকে দক্ষিণ দিকে রেললাইন ধরে আখাউড়ার দিকে গেলাম। আখাউড়াকে অবরোধ করা হলো। অবরোধ করল দ্বিতীয় বেঙ্গল রেজিমেন্টের দুটি কোম্পানি বি এবং সি। বি কোম্পানির অধিনায়ক তখন ছিলেন লেফটেন্যান্ট বদিউজ্জামান। তিনি পরবর্তীকালে বীরপ্রতীক খেতাব পেয়েছেন এবং শহীদ হয়েছেন। আর আমি সি কোম্পানি নিয়ে দক্ষিণ দিকে মুভ করে আখাউড়ার উত্তর থেকে আখাউড়া অবরোধ করলাম। বাংলাদেশ এবং ভারতের ত্রিপুরা সীমান্ত রেখার কাছে সেখানে আমাদের গেরিলা এবং নিয়মিত সৈনিকরা ৩নং সেক্টরের সৈন্যরা মেজর আবদুল মতিনের নেতৃত্বে অবরোধ দেয়। দক্ষিণ দিক থেকে অবরোধ সৃষ্টি করে ভারতীয় ৩১১ পদাতিক ব্রিগেড। অতঃপর শুরু হয় গোলাগুলি। খণ্ড খণ্ড যুদ্ধ এবং খণ্ড খণ্ড আক্রমণ। আমাদের গোলন্দাজ বাহিনী কম ছিল। ভারতীয় গোলন্দাজ বাহিনীর শত ইচ্ছা থাকলেও সময়মতো তারা আমাদের সহায়তা দিতে পারত না। পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে যেহেতু এটি ছিল মরণপণ লড়াই তাই তারা তাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য প্রচুর পরিমাণে গোলা শেলিং করত। ৩ তারিখ রাতে আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলাম, আজকে মধ্যরাতের পর আমরা তাদের ওপর আক্রমণ করব। আক্রমণ করা হলো কিন্তু ওদিকে তারা কী করছে সেটা আমরা বুঝতে পারছি না। আমরা ধরেই নিয়েছিলাম তারা শক্ত বূ্যহ রচনা করেছে। তাদের গোলাগুলির প্রকৃতি বলছিল সে কথাই। মধ্যরাতে শুরু হয় আমাদের আক্রমণ। আমাদের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য তাদের পক্ষ থেকেও চলতে থাকে সমান প্রতিরোধ। এই গোলাগুলিতে দুর্ভাগ্যবশত একান্তই ভুল বোঝাবুঝির কারণে আমাদের পেছনের বন্ধুপ্রতিম সৈন্যরাও আমাদের প্রতি গুলিবর্ষণ শুরু করে। কারণ তারা মনে করেছিল আমরা আমাদের অবস্থানে নেই। সেখানে একটি কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় এবং সারারাত গোলাগুলি চলে। আমরা আমাদের আক্রমণের শক্তি ও আক্রমণের প্রভাব বুঝতে পারছিলাম না। সেটা দেখা গেল প্রত্যুষে। আমরা টের পেলাম পাকিস্তানি সৈন্যরা পলায়ন করছে। একটু আলো ফোটার পর আমরা দেখতে পেলাম তারা কাতারবন্দি হয়ে অস্ত্র কাঁধে নিয়ে পালাচ্ছে। কিছুসংখ্যক লোক পালাচ্ছে রেললাইন ধরে আবার কিছুসংখ্যক পানির গভীরতা না বুঝেই ঝাঁপিয়ে পড়ছে তিতাস নদীতে। তিতাস নদীকে তারা মনে করেছিল হাঁটু পানির কোনো বিল। আমরা দেখলাম তারা সেখানে ঝাঁপিয়ে পড়ছে আর ডুবে মরছে। এ রকম একটি অবস্থায় আমরা তাদের ওপর আক্রমণ অব্যাহত রাখি। এভাবে আমরা আখাউড়ার উত্তর অংশ পুরোটাই নিজেদের দখলে নিয়ে আসি। এ যুদ্ধটি পূর্বাঞ্চলের রণক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি যুদ্ধ। আখাউড়া মুক্ত হওয়ার পর ভারতীয় বাহিনী রেললাইন ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া হয়ে আশুগঞ্জের দিকে এলো এবং মুক্তিবাহিনী মহাসড়ক তথা সিলেট, তেলিয়াপাড়া, মাধবপুর, শাহবাজপুর, সরাইল, আশুগঞ্জের পথ ধরে আশুগঞ্জে আসার সুযোগ পেল। এটি হয়েছিল এস ফোর্সের তত্ত্বাবধানে তৎকালীন লে. কর্নেল সফিউল্লাহর (পরবর্তীকালে যিনি মেজর জেনারেল, সেনাপ্রধান এবং বীরউত্তম খেতাব লাভ করেন) নেতৃত্বে।
সমকাল : আপনারা কবে ঢাকায় পেঁৗছেছিলেন?
ইবরাহীম : ১৬ তারিখ আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণের খবর আমরা পেলাম ৪টায়। তখন বড় অধিনায়করা ঢাকায় কী করছেন সেটা জানার কোনো প্রয়োজন ও উপায় আমাদের ছিল না। আনুমানিক ৪টার দিকে আমরা খবর পেলাম এ রকম একটা কিছু ঘটতে পারে। সম্ভবত ৫টার দিকে আমরা খবর পেলাম আত্মসমর্পণ হয়ে গেছে। তখন গোলাগুলি বন্ধ। এক ঘণ্টার মধ্যে আমরা সবাই একত্রিত হয়ে নদী অতিক্রম করে রাস্তা ধরে ডেমরা থেকে হাঁটা শুরু করলাম ঢাকা মহানগরীর দিকে। সে এক ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা। আমরা দ্বিতীয় বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিকরা হাঁটছি রাস্তার দক্ষিণ পাশ দিয়ে, আর রাস্তার উত্তর পাশ দিয়ে হাঁটছে আত্মসমর্পণ করার উদ্দেশ্যে ঢাকাগামী পাকিস্তানি সৈনিকরা। ওদের কিছু ছিল বালুচ, আর মিলিশিয়া ছিল বেশি। এই করে আমরা রাত সাড়ে ৭টা কিংবা ৮টার দিকে ঢাকা মহানগরের গুলিস্তানের কাছে তখনকার আমলের একমাত্র স্টেডিয়ামে এসে উপস্থিত হলাম। তখন চারপাশে গোলাগুলি হচ্ছিল। তবে সেটা ছিল আনন্দের। রাতে আমরা যে যেখানে পারলাম বিশ্রাম নিলাম। পরের দিন আমরা ওপর থেকে কী আদেশ আসে সেটা জানার জন্য এবং তদনুযায়ী কাজ করার জন্য প্রস্তুত হলাম।
সমকাল : ঢাকা শহরে পেঁৗছে কী দেখলেন?
ইবরাহীম : সেদিন ঢাকা শহরের মানুষের মধ্যে ছিল বাঁধভাঙা আনন্দ। যে যেদিক থেকে পারছে ছুটে আসছে স্টেডিয়ামের দিকে। মুক্তিযোদ্ধাদের দেখার জন্য, তাদের সঙ্গে হাত মেলানোর জন্য। আর চারদিকে গোলাগুলি হলেও কোনো মানুষ কিন্তু মরেনি। আমরা বুঝতে পারছিলাম মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে এখনও অস্ত্র, গুলি রয়ে গেছে। সেই গুলি ফুটিয়ে তারা পাড়ায়-মহল্লায় আনন্দ প্রকাশ করছে। লোকেরা ঘরে ঘরে বাংলাদেশের পতাকা ওড়াচ্ছে। আমাদের চারদিকে লোকজন ভিড় করছিল। তারা পরস্পরকে বলাবলি করছিল, এরা মুক্তিযোদ্ধা। এ সময় গেরিলা মুক্তিযোদ্ধারাও এসে পেঁৗছে গিয়েছিলেন। যথাসম্ভব তারা কাদেরিয়া বাহিনীর।
সমকাল : ৩০ জানুয়ারি ১৯৭২-এ বিহারিদের বিরুদ্ধে মিরপুর অপারেশনে আপনি জড়িত ছিলেন?
ইবরাহীম : ৩০ জানুয়ারির অপারেশনটি দ্বিতীয় বেঙ্গল রেজিমেন্ট করেছিল। ২৮ এবং ২৯ জানুয়ারি উচ্চ পর্যায়ের কর্তৃপক্ষ নির্দেশ প্রদান করে ভারতীয় বাহিনীর কাছ থেকে দ্বিতীয় বেঙ্গল রেজিমেন্টকে মিরপুরের দায়িত্ব বুঝে নিতে হবে। এলাকা চেনার পূর্বে এবং পরিস্থিতি বোঝার পূর্বে এ রকম একটি জায়গার দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার প্রক্রিয়া অসম্পূর্ণ। তা সত্ত্বেও তৎকালীন সামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল আতাউল গনি ওসমানীর কড়া নির্দেশে এটা করা হলো। আমি তখন দ্বিতীয় বেঙ্গল রেজিমেন্টের হেডকোয়ার্টারে। রেসকোর্স ময়দানে তাঁবুর নিচে। আর তখনকার একটি কোম্পানি লে. কর্নেল হেলাল মোরশেদের নেতৃত্বে আমরা পাঠালাম মিরপুরে। মেজর মঈনুল হোসেন চৌধুরীও গেলেন মিরপুরে। আমাদের দায়িত্ব এলাকাটি ভারতীয় বাহিনীর কাছ থেকে বুঝে নেওয়া এবং সেখানে অপারেশন পরিচালনা করে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা। স্পর্শকাতর একটি পর্যায়।
সমকাল : জহির রায়হান সেখানে কীভাবে গিয়েছিলেন?
ইবরাহীম : ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত আমার বই 'সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে ২৮ বছর'-এ আমি এটি লিখেছি। অতঃপর অনেক সাংবাদিক এটার ওপর গবেষণা শুরু করেন। জহির রায়হান সেখানে কীভাবে গেলেন সেটিও লিখেছিলাম। জহির রায়হান ছিলেন অত্যন্ত বিখ্যাত বামপন্থি বুদ্ধিজীবী, সাহিত্যিক শহীদুল্লা কায়সারের ভাই এবং চিত্রপরিচালক। পারিবারিকভাবে তারা অনুমান করেছিলেন যে শহীদুল্লা কায়সারকে বিহারিরা মিরপুরে কোথাও অপহরণ করে লুকিয়ে রেখেছে। তারা অনুরোধ করেছিলেন, ২য় বেঙ্গল যেন শহীদুল্লা কায়সারকে অনুসন্ধানে তাদের সাহায্য করে। ৩০ তারিখ সকালবেলা তাদের পরিবারের ৬-৭ জন লোক মিরপুরে আমার অধিনায়ক মেজর মঈনুল হোসেন চৌধুরীর কাছে উপস্থিত হন। আমি সেখানে ছিলাম, ওসমান হায়দার চৌধুরী নিজামও ছিলেন।
মঈনুল হোসেন চৌধুরী বললেন, সামরিক অপারেশনে এত সিভিলিয়ানকে সঙ্গে রাখা সম্ভব নয়। আপনারা বলেন কে থাকবেন। পারিবারিক সিদ্ধান্ত ছিল, জহির রায়হান সেনাবাহিনীর সঙ্গে থাকবেন। সেনাবাহিনীর অপারেশনের সময় তিনি বিভিন্ন জায়গায় শহীদুল্লা কায়সারকে খোঁজার চেষ্টা করবেন। সেনাবাহিনীর সঙ্গে গিয়ে জহির রায়হার ওখানে শহীদ হয়ে গেলেন। আমাদের সেনাবাহিনীরও ৩৯ জন ওইদিন শহীদ হয়েছিলেন। পুরো নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে এক দিনে এত অধিকসংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা আমরা হারাইনি। অথচ মিরপুরে সেটি হলো_ ৩০ জানুয়ারি ১৯৭২-এ।

No comments:

Post a Comment