Monday, December 6, 2010

তান্দুয়ায় চলছিল দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের প্রস্তুতি : হাসানুল হক ইনু


হাসানুল হক ইনুর জন্ম ১৯৪৬ সালের ১২ নভেম্বর। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে বুয়েটের ছাত্রনেতা হাসানুল হক ইনু ঢাকার আশপাশের এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করার সঙ্গে জড়িত হয়েছিলেন। পরে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে চলে যান সীমান্ত পেরিয়ে কলকাতায়। সেখান থেকে তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় সামরিক প্রশিক্ষণ শিবিরে। প্রশিক্ষণের পর তাকে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিচালনার ভার দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছিল ভারতের দেরাদুনের অদূরে ছোট শহর তান্দুয়ায়। সেখানে চলছিল রাজনৈতিক কর্মীদের সামরিক প্রশিক্ষণের কাজ। দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে ১৪ ব্যাচে ১০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন তান্দুয়ায়। যুদ্ধকালে তান্দুয়া প্রশিক্ষণ শিবিরের অভিজ্ঞতা, মুজিব বাহিনী, মুক্তিবাহিনী বা বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স গঠন ও রাজনৈতিক কর্মীদের সামরিক তৎপরতা নিয়ে তিনি কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
মাহবুব মোর্শেদ

সমকাল : ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের প্রথম দিকে আপনি কোথায় ছিলেন?
হাসানুল হক ইনু : ডিসেম্বরের প্রথম দিকে আমি ভারতের দেরাদুনের অদূরে তান্দুয়া নামক এক পাহাড়ি শহরের সামরিক প্রশিক্ষণ শিবিরে ছিলাম। সমতল থেকে প্রশিক্ষণ শিবিরের উচ্চতা ছিল প্রায় ৭ হাজার ফুট। মুজিব বাহিনীর সবচেয়ে বড় গেরিলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছিল তান্দুয়ায়। আমি সেই গেরিলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রধান ছিলাম। প্রশিক্ষকও ছিলাম।
সমকাল : কী ধরনের প্রশিক্ষণ আপনারা দিতেন?
হাসানুল হক ইনু : আমি সেখানে গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষকের দায়িত্বে ছিলাম। বুয়েটে থাকার সময়ই আমরা গ্রেনেড তৈরি থেকে শুরু করে, অস্ত্র চালনাসহ নানা সামরিক অভিজ্ঞতা পেয়েছিলাম। সে অভিজ্ঞতা কাজে লেগেছিল। ভারতে যাওয়ার পর শুরুতে আমাদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
সমকাল : বিএলএফের কাজ শুরু হয় কখন?
হাসানুল হক ইনু : এপ্রিল থেকে প্রস্তুতি শুরু করলেও মে মাসের প্রথম থেকেই মুজিব বাহিনীর কাজ শুরু হয়। মিত্রবাহিনী যখন ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করে তখন একটি ব্যাচের প্রশিক্ষণ শেষ করে আমরা আরেকটি ব্যাচের প্রশিক্ষণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। সেই সময় পর্যন্ত আমরা ১৪টি ব্যাচ পাঠিয়েছি। বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্সকে সহযোগিতা করার জন্য ভারতের পক্ষ থেকে মেজর জেনারেল উবানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তিনি বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্সের চার অধিনায়কের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধের কলাকৌশল ঠিক করতেন।
সমকাল : প্রশিক্ষণ কি তান্দুয়াতেই শুরু হয়?
হাসানুল হক ইনু : দুটি ট্রেনিং সেন্টার দিয়ে বিএলএফের কাজ শুরু হয়। একটি ছিল মেঘালয়ের হাফলংয়ে। কিন্তু এক ব্যাচের প্রশিক্ষণের পর এটি বন্ধ হয়ে যায়। চূড়ান্ত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি তান্দুয়াতে ছিল। এখান থেকে গেরিলাদের প্রায় ১৪টি ব্যাচ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। মোট হিসাব করলে তাদের সংখ্যা ছিল প্রায় ১০ হাজার।
সমকাল : কারা সেখানে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতেন?
হাসানুল হক ইনু : তৎকালীন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, আওয়ামী লীগের তরুণ নেতা ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সংগঠনগুলোর তরুণ নেতা, যারা রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে কাজ করতেন_ তারা তান্দুয়ায় প্রশিক্ষণ নিতেন। তাদের অনেকেই ছিলেন থানা পর্যায়ের নেতা। সেই তরুণ যুবকদের আমরা গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দিতাম। যুদ্ধের কলাকৌশল এবং দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ কীভাবে পরিচালনা করতে হয় সেই প্রশিক্ষণও আমরা তাদের দিতাম। বাংলাদেশ-পাকিস্তানের মধ্যকার যুদ্ধটি ছিল একটি রাজনৈতিক যুদ্ধ। রাজনৈতিক যুদ্ধ পরিচালনা করার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদেরও রাজনৈতিক জ্ঞান থাকা উচিত, রাজনৈতিক আদর্শ থাকা উচিত। সেই হিসেবে ১৯৬৫ সালের পর থেকে যারা জাতীয়তাবাদী বিভিন্ন সংগ্রামে সামনের কাতারে এসেছেন সেসব যুব এবং ছাত্র নেতাদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এই গেরিলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল সেই বাছাই করা রাজনৈতিক কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্দেশ্যে। আমরা চেয়েছিলাম যাতে বাংলাদেশের প্রতিটি থানার রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রশিক্ষণ পায়। প্রতিটি জেলায় যেন প্রশিক্ষিত রাজনৈতিক কর্মীরা ছড়িয়ে যেতে পারেন।
সমকাল : কত মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো?
হাসানুল হক ইনু : নূ্যনতম এক মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। এত ভালো ট্রেনিং যুদ্ধের সময় আর কেউ পায়নি। মুক্তিবাহিনীর প্রশিক্ষণ হতো ৭-১০ দিন। কিন্তু আমরা যে প্রশিক্ষণ প্রদান করতাম তাতে তারা যুদ্ধের নেতৃত্ব দেওয়ার উপযুক্ত হতো। এভাবে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আমরা প্রশিক্ষিত ১০ হাজার নেতা তৈরি করেছি। তারা অস্ত্র বিদ্যা শিখত, গেরিলা যুদ্ধের কৌশল শিখত, যুদ্ধবিদ্যা শিখত এবং দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে টিকে থাকার কৌশল শিখত। তান্দুয়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আমি ৫২ জন বাঙালি মুক্তিযোদ্ধাকে প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দান করি। এই ৫২ জন প্রশিক্ষকের নেতৃত্বে আমি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দান করি। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ আমাদের সহযোগিতা করত।
সমকাল : কোন পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স গঠন করা হয়?
হাসানুল হক ইনু : মুজিবনগরে গঠিত বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের পরিকল্পনায় ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সমর্থনে এবং তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সরাসরি সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স গঠন করা হয়। বাংলাদেশ সরকারের অধীনে বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স কাজ করতে শুরু করে।
এর কৌশল ছিল প্রতিনিধিত্বমূলক। যে কোনো মুক্তিযোদ্ধা ইচ্ছা করলেই প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য এখানে আসতে পারতেন না। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি থানা এবং জেলা থেকে প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচন করে নিয়ে আসা হতো। যারা ছাত্র ও যুব আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন সে রকম ব্যক্তিকে এখানে প্রশিক্ষণের জন্য বাছাই করা হতো। সুতরাং এই কেন্দ্র থেকে যে ১০ হাজার গেরিলা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন তারা বিভিন্ন জাতীয় আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী যুব নেতা, ছাত্র নেতা অথবা আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের তরুণ নেতা। তারাই এখানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়েছেন। যেহেতু মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি রাজনৈতিক যু্দ্ধ তাই রাজনৈতিক জ্ঞানসম্পন্ন নেতাদের সামরিক শিক্ষা দেওয়া হয়েছে, যাতে করে তারা ভেতর থেকে যুদ্ধ করতে পারে। সুতরাং রাজনৈতিক কর্মীরা যুদ্ধ করেনি_ এ ধরনের যে কথাটি প্রচলিত আছে তা ঠিক নয়। বরং বিএলএফের মাধ্যমে শীর্ষ পর্যায়ের ছাত্র এবং যুব নেতারা এর মাধ্যমে প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন। তারা বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধও করেছেন।
সমকাল : বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্সের নেতৃত্বে ছিলেন কারা?
হাসানুল হক ইনু : বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্সের চার জন অধিনায়ক ছিলেন। শেখ ফজলুল হক মনি, সিরাজুল আলম খান, তোফায়েল আহমদ এবং আবদুর রাজ্জাক। বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স তখন চারটি সেক্টরে ভাগ হয়ে কাজ করত। উত্তরবঙ্গ সেক্টর_ শিলিগুড়ির জলপাইগুড়ির পাঙ্গা নামক স্থানে এই সেক্টরের হেডকোয়ার্টার ছিল। এই সেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন সিরাজুল আলম খান। সহ-অধিনায়ক ছিলেন মনিরুল ইসলাম ওরফে মার্শাল মনিরুল ইসলাম। পশ্চিম অঞ্চলের সেক্টরের হেড কোয়ার্টার ছিল ভারতের ব্যারাকপুরে। এই সেক্টরের অধিনায়ক ছিলেন তোফায়েল আহমদ। সহ-অধিনায়ক ছিলেন জাসদ নেতা নূর আলম জিকু। প্রয়াত কাজী আরেফ আহমেদ তার সঙ্গে সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন। আরেকটি সেক্টর ছিল ময়মনসিংহের গারো পাহাড়ের ভেতরে তুরা নামক স্থানে। ওই সেক্টরের অধিনায়ক ছিলেন আবদুর রাজ্জাক এবং সহ-অধিনায়ক অ্যাডভোকেট সৈয়দ আহমেদ। চতুর্থ সেক্টরের হেড কোয়ার্টার ছিল আগরতলায়। সেখানকার অধিনায়ক ছিলেন শেখ ফজলুল হক মনি এবং তার সহযোগী চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মান্নান। তার সঙ্গে সহযোগিতা করতেন আ স ম আবদুর রব, আবদুল কুদ্দুস মাখন প্রমুখ। জেনারেল এমএজি ওসমানীর নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীরই একটি বাহিনী ছিল বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স। বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্সের চারজন অধিনায়ক থাকলেও মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক ছিলেন তিনিই। সাধারণ যে কনভেনশনাল আর্মি সেটা গড়ে উঠেছে অন্যভাবে। আমাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মূল লক্ষ্য ছিল এখান থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে তারা নিজ নিজ থানায় চলে যাবেন। আগে থেকেই বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স সেখানে আশ্রয়স্থল ঠিক করে দেয়। সেখানে কিছু দিন টিকে থাকার ব্যবস্থা করে দেবে। সীমান্ত থেকে সেখানে নিরাপদে পেঁৗছানোর ব্যবস্থা করে দেবে। একবার ভেতরে ঢুকলে জরুরি কাজ ছাড়া তারা আর ভারতে আসবেন না। তারা প্রশিক্ষণ দিয়ে নতুন মুক্তিযোদ্ধা রিক্রুট করবেন এবং দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করবেন। যুদ্ধের রসদও তাদের কাছে সেভাবে দিয়ে দেওয়া হতো। সুতরাং একটা দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের পরিকল্পনা নিয়েই কাজটা শুরু করা হয়েছিল।
সমকাল : ভারত-পাকিস্তান সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর কী হলো?
হাসানুল হক ইনু : তখন প্রশিক্ষণের জন্য আমাদের ব্যাচ আসা বন্ধ হয়ে গেল। তখন আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলাম দেশে ফেরত এসে সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য। যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য আমি এবং আমার ৫২ জন প্রশিক্ষক ওখান থেকে রওনা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ফেরত আসার জন্য আমি সামরিক সিগনাল চাচ্ছিলাম। কিন্তু আমরা আসলে আসতে পারিনি। আমাদের আসার মতো যানবাহন ছিল না। ভারতীয় কর্তৃপক্ষও আমাদের আসার মতো কোনো যানবাহন দেয়নি। তাই আমরা ভেতরের যু্েদ্ধ অংশগ্রহণ করতে পারিনি।
সমকাল : ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণের খবর আপনারা পেলেন কীভাবে?
হাসানুল হক ইনু : ওখানে সামরিক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আমরা আত্মসমর্পণের খবর পেয়েছি। সুতরাং আত্মসমর্পণের ঘটনাটা কীভাবে ঘটেছে সেটা আমি স্বচক্ষে দেখতে পারিনি।
সমকাল : ওখান থেকে কীভাবে আপনারা ফেরত এলেন?
হাসানুল হক ইনু : ওখান থেকে ট্রেনে করে কলকাতায় আসতে আমাদের ৩-৪ দিন সময় লেগেছে। কলকাতায় এসে একদিন থেকে আমরা দেশের ভেতরে চলে আসি। দেশের ভেতর আসার পর নিজ নিজ এলাকায় আমরা ফিরে যাই।
সমকাল : দেশে ফিরলেন কবে?
হাসানুল হক ইনু : তারিখটা এখন ঠিক মনে নেই। তবে সেটা ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা ছিল প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। যুদ্ধোত্তর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেরও একটা ব্যাপার ছিল। তাই তারা খুব তাড়াতাড়ি এ কাজে সহযোগিতা করার জন্য নিজ নিজ এলাকায় ফিরে গিয়েছিল।
সমকাল : ঢাকা শহরে এসে আপনি কী দেখলেন?
হাসানুল হক ইনু : তখন বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্সের বিভিন্ন পর্যায়ে যারা নেতৃত্ব প্রদান করেছেন, যেমন আ স ম আবদুর রব, নূরে আলম সিদ্দিকী, শাজাহান সিরাজ, আবদুুল কুদ্দুস মাখন তারা সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ঘাঁটি গেড়ে ঢাকা শহরের মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণ করতেন।
সমকাল : বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্সের সদস্যদের সঙ্গে এরপর কি আপনাদের যোগাযোগ হতো?
হাসানুল হক ইনু : আমাদের মধ্যে আমরা ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখেছি। বঙ্গবন্ধু দেশে ফেরার পর জানুয়ারি মাসের শেষ কিংবা ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে তৎকালীন ঢাকা স্টেডিয়ামে আমরা তার কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে অস্ত্র সমর্পণ করি। আমাদের বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্সের চার অধিনায়ক বঙ্গবন্ধুর পায়ের কাছে অস্ত্র রেখে আনুষ্ঠানিকভাবে অস্ত্র সমর্পণ করে।
সমকাল : সারাদেশে বিএলএফ কত জন মুক্তিযোদ্ধাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিল।
হাসানুল হক ইনু : বিএলএফ থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা প্রায় এক লাখ মুক্তিযোদ্ধাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিল। অর্থাৎ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একজন গড়ে ১০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিল।
সমকাল : যুদ্ধক্ষেত্রে মুজিব বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর একটা সাংঘর্ষিক অবস্থা তৈরি হয়েছিল_ এ ধরনের একটি বিতর্ক প্রচলিত আছে। এ সম্পর্কে কিছু বলুন।
হাসানুল হক ইনু : যুদ্ধক্ষেত্রে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে মুজিব বাহিনীর রাজনৈতিক, আদর্শগত, সামরিক কোনো ধরনেরই বিরোধ ছিল না, এরা ছিল পরস্পরের সহযোগী শক্তি। দু'একটি ক্ষেত্রে বিরোধ হতে পারে, কিন্তু প্রধানত কোনো বিরোধ ছিল না। এমন ছোটখাটো বিরোধ যুদ্ধাবস্থায় হতেই পারে। যে বিতর্কগুলো তৈরি হয়েছে তা পরবর্তীকালের প্রতিক্রিয়াশীল, ক্ষমতা দখলে ইচ্ছুক শক্তিগুলোর পক্ষ থেকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ছড়ানো হয়েছিল।

No comments:

Post a Comment