Monday, April 19, 2010
কত কথা বলে রে!
কবি বলেছেন, জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাসি। জাহান্নামের আগুনে বসে কেউ পুষ্পের হাসি হাসতে পারে কি-না সে নিশ্চয়ই গবেষণার বিষয়। জেলখানায় বসে অপরাধীরা যে দিব্যি পুষ্পের হাসি হাসতে পারে সে নিশ্চয় করে বলে দেওয়া যায়। সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে শাস্তি বিধানের জন্য অপরাধীদের জেলখানায় পাঠানো হয়। বিচারাধীন বা সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদের জন্য জেলখানা প্রকৃত অর্থে বন্দিশালা হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে সবসময় সেটি হয় না। রোববারের সমকালে এমন এক সন্ত্রাসীর বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে যিনি জেলখানায় বসে ৩১ দিনে ৩০টি সিম বদলে মোবাইল ফোনে ৩,৬০০ মিনিট কথা বলেছেন। বিজ্ঞাপনের ভাষা অনুকরণ করে কেউ পরিহাস করে বলতে পারেন, কত কথা বলে রে! কিন্তু যুক্তি দিয়ে বিচার করতে গেলে বিষয়টা বিস্ময়কর বটে। যারা জেলখানায় থাকেন না, স্বাধীন মানুষ হিসেবে বিচরণ করেন তারা কি চাইলে ৩১ দিনে ৩০টি সিম বদলাতে পারবেন? সিম বিক্রির কড়াকড়ি এখন। চাইলেই কেউ নতুন সিম কিনতে পারে না। পরিচয়পত্র দেখাতে হয়, ছবি জমা দিতে হয়, আঙ্গুলের ছাপ দিতে হয়। মোবাইল কোম্পানিগুলোর ডাটাবেজে নাম ওঠে। পুলিশ চাইলে যে কোনো সময় সিম ক্রেতাদের নাম-পরিচয় নিয়ে তাকে চিহ্নিত করতে পারে। কিন্তু সন্ত্রাসী হাবিবুর রহমান তাজের ক্ষেত্রে এসবের বালাই নেই। প্রশ্ন উঠবে, সিম কেনার এই কড়াকড়ির মধ্যে কীভাবে তিনি এত সিম জোগাড় করলেন? কারা ছবি, পরিচয়পত্র এবং আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে তার জন্য সিম জোগাড় করলেন। আর কোন বিক্রেতাই-বা এত সিম সরবরাহ করলেন? এ তো গেল সিমের হিসাব। টকটাইমের হিসাব কে করবে? ৩,৬০০ মিনিট কম সময় নয়। কার সঙ্গে, কাহার সঙ্গে তাজের এত কথা? জেলখানার ভেতরে বসে পুষ্পের হাসি হাসতে হাসতে তিনি কতজনকে হুমকি দিয়েছেন, কতজনের সঙ্গে তদবির করেছেন, কতজনের সঙ্গে নেটওয়ার্ক তৈরি করেছেন তার হিসাব কে দেবে? সাম্প্রতিক সময়ে দেশে মোবাইল ফোনে হুমকি দেওয়ার ঘটনা বেড়ে চলেছে। কিন্তু হুমকি যতটা আসে, হুমকিবিরোধী তৎপরতা ততটা নেই। জানা গেছে, মন্ত্রীকে পর্যন্ত হুমকি দেওয়া হয়েছিল মোবাইল ফোনে। কিন্তু সিম বিক্রির বেলায় বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো। যখন পুলিশ মোবাইল কোম্পানির কাছে হুমকিদাতার নাম-পরিচয় চাইল তখন তারা তা দিতে পারলেন না। সাধারণ মানুষ হুমকি পেলে আর তা পুলিশকে জানালে ব্যবস্থা কেমন নেওয়া হবে তা সহজেই অনুমেয়। আর সন্ত্রাসী যদি পুলিশের নজরদারিতে বসে মানে জেলখানার গোয়েন্দা ও পুলিশের পাহারায় বসে মোবাইল ফোনে হুমকি দেয় তবে আর তাকে ধরবেই-বা কে, আর ধরেই-বা কী হবে? পুলিশ সন্ত্রাসীকে ধরবে, বিচার করবে, শাস্তি দেবে, সন্ত্রাসীর জেল হবে। কিন্তু সন্ত্রাসী নিজেই অনেক ধাপ পেরিয়ে জেলে বসে আছেন। ধরপাকড়ের মিছে মায়ার আর দরকার কী? সন্ত্রাসী তাজ রেকর্ড করেছেন কথা বলায়। অল্প সময়ের মধ্যে এতগুলো সিম ব্যবহার ও এত কথা বলার জন্য তার নাম গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে উঠবে কি-না তা জানার জন্য নিশ্চয়ই সচেতন নাগরিকরা উদ্যোগী হবেন। এমনকি ফোন কোম্পানিগুলো মোবাইল ফোনের বিকাশে তাজের অবদানের জন্য তাকে পুরস্কার দিতে পারে। তাকে নিয়ে বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাণ করে ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে পারে। কিন্তু জেলখানা কর্তৃপক্ষ কী বলবে? তারা বলবে, নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে, জ্যামার লাগানো হচ্ছে। অসাধু তৎপরতা বন্ধ করার উদ্যোগ আসছে। হচ্ছে হবে করে করে অনেক দিন চলে যাচ্ছে। কিন্তু কাজের বেলা কিছুই হচ্ছে না। জেলখানায় অপরাধীদের স্বাধীনতা কমানো যাচ্ছে না। শোনা যায়, নেশাদ্রব্যের জমজমাট ব্যবসা সেখানে যেমন হয়, তেমনি অস্ত্র বিকিকিনির যোগাযোগও দিব্যি চলে। বেড়ায় যেখানে ক্ষেত খায় সেখানে বেড়া যত উঁচু আর কণ্টকাকীর্ণ হোক ক্ষেত খাবেই। এখন তাই বেড়ার দিকে নজর দেওয়ার সময় এসেছে। কারণ ফস্কা গেরো দিয়ে সন্ত্রাস দূর করা যাবে না। কিন্তু গেরো শক্ত করার দায়িত্ব কার? কে নেবে এ গুরুদায়িত্ব? দায়িত্ব নেওয়ার লোক না থাকলে কথা চলতেই থাকবে। হয়তো অদূর ভবিষ্যতে জেলখানায় বসেই কথা বলার রেকর্ড বাড়তে থাকবে। আমাদের কিছু করার থাকবে না, শুধুই বলব, কত কথা বলে রে!
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment