Thursday, April 8, 2010

পানি সম্পর্কে দু'একটি কথা যা আমরা জানি


১. পানি অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন_ এ দুই মৌল দিয়ে তৈরি।
২. পানি কঠিন, তরল ও বায়বীয়_ এ তিন আকারে থাকতে পারে।
৩. পানিকে যে পাত্রে রাখা হয়, পানি সেই পাত্রের আকার ধারণ করে।
৪. পৃথিবীর তিন ভাগ জল এবং একভাগ স্থল কথাটি সত্য। কিন্তু তিন ভাগ জলের প্রায় ৯৭% সাগরে থাকে। এ পানি খাওয়ার উপযুক্ত নয়। ২.৪% পানি জমাটবদ্ধ হিমবাহ হিসেবে আছে। ০.০০১% পানি মেঘ ও জলীয় বাষ্প হয়ে আছে। মাটির নিচে আছে ১.৬% পানি। নদী, খাল, বিল, পুকুরে আছে ০.০৬% পানি। মাটির নিচের ১.৬% ও নদী, খাল, পুকুরের ০.০৬% পানিই আমরা নাওয়া-খাওয়া, শিল্পকারখানা, কৃষি ইত্যাদিতে ব্যবহার করি।
৫. যে পানি আমরা মাটির নিচ থেকে তুলি বা জলাশয় থেকে নেই সে পানির ৭০% কৃষিকাজে, ২২% শিল্প কারখানায় ও ৮% ঘরে নাওয়া-খাওয়া ও ধোয়ার কাজে ব্যবহৃত হয়।
৬. পানির অপর নাম জীবন। আমাদের দেহ গঠনের মূল উপাদান পানি।
৭. মাটির নিচের পানি দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। নদীর পানি নিয়েও বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে নানা মাত্রার সংঘর্ষ লাগছে। ২০৫০ সাল নাগাদ পৃথিবীর এক-তৃতীয়াংশ মানুষ পরিষ্কার পানির উৎস থেকে বঞ্চিত হবে।
৮. মাটির নিচের পানির বিকল্প নদীর পানি। আগামীর পানি সংকট মোকাবেলায় নদীকে দূষণ ও দখলমুক্ত করার যথাযথ উদ্যোগ আমাদের নেই।
৯. মূল্যবান নদীকে আমরা বর্জ্য ও শিল্পবর্জ্য ফেলার কাজে ব্যবহার করি। পৃথিবীর অনেক বড় শহরে বর্জ্য রিসাইক্লিং করা হয়। অনেক শহর বর্জ্য মাটির নিচে পুঁতে ফেলে। আমরা দুটির কোনোটি না করে নদীতে ফেলি।
১০. ঢাকার পানির মূল উৎস এর চারদিকের নদীগুলো। দখলের কারণে নদীগুলো শীর্ণকায় হয়ে গেছে। আর দূষণের কারণে ঢাকার নদীগুলোর পানি ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ব্যবহার অযোগ্য হলেও এই পানিই মূলত ঢাকা শহরে সরবরাহ করা হচ্ছে। এর বাইরে ভূগর্ভস্থ পানি তুলেও তা বিতরণ করা হয়। কিন্তু মাটির নিচের পানির স্তর দ্রুত নিচে নামছে। আগামী দিনগুলোতে হয়তো মাটির নিচের পানি ব্যবহারের চিন্তা আমাদের পরিত্যাগ করতে হবে।
১১. ঢাকা শহরে এখন যে পানি সংকট দেখা দিয়েছে তা বিশুদ্ধ পানির সংকট নয়, মূলত দূষিত পানির সংকট। বিদ্যুৎস্বল্পতার কারণে দূষিত পানির সরবরাহও বিঘি্নত হচ্ছে।
১২. ঢাকা শহরে ওয়াসার সরবরাহ লাইন থেকে পানি সংগ্রহ করে তা ফুটিয়ে পান করা হয়। রান্নার কাজে ব্যবহৃত গ্যাসের সবচেয়ে বড় অংশ পানি বিশুদ্ধ করতেই ব্যয় হয়।
১৩. পানি সমস্যার কারণে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ডায়রিয়া মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
১৪. খবরে জানা গেছে, বিশুদ্ধ মিনারেল ওয়াটার হিসেবে বাংলাদেশে যে পানি বাজারজাত করা হয় তার একটি অংশ স্রেফ ওয়াসার পাইপলাইন থেকে সরাসরি বোতলজাত করা।
১৫. ঢাকা মহানগরীর সংসদ সদস্যরা আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন যে, পানি-সংকটের কারণে বিক্ষুব্ধ হয়ে জনতা রাস্তায় নামতে পারে।
১৬. কিছু কিছু স্থানে জনতা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছে। বিক্ষোভে তারা শূন্য হাঁড়ি-পাতিল-কলস প্রদর্শন করেছে।
১৭. পানি ব্যবস্থাপনার জন্য ৭ এপ্রিল থেকে রাজধানীর পাম্পগুলোতে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
১৮. বেশ কয়েক বছর ধরে গরমে পানি সংকটের সময় সেনা মোতায়েনের রেওয়াজ চলে আসছে।
১৯. সুষ্ঠু পানি ব্যবস্থাপনার জন্য নাকি জনবিক্ষোভ দমনের জন্য সেনা মোতায়েন করা হয় সেটি একটি প্রশ্ন।
২০. বর্ষা এলেই পানি সংকটের কথা সবাই ভুলে যাবে।
২১. শহরের জলাবদ্ধতা নিয়ে নতুন ধরনের আলোচনা শুরু হবে।
২২. যে কোনো সংকট মোকাবেলায় আমাদের কোনো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেই।
২৩. বলা হয়, চীনারা নাকি পরিকল্পনা করলে অন্তত ৫০ বছরের জন্য করে। ভারতীয়রা পরিকল্পনা করে পঞ্চবার্ষিক। পৃথিবীর নানা দেশে নানা মাত্রার পরিকল্পনার কথা আমরা জানি। আমরা পারতপক্ষে পরিকল্পনা করি না। পরিকল্পনার আলোচনা করি এক মৌসুমকে সামনে রেখে।
২৪. পানি নিয়ে ভবিষ্যতে আরও যে ভয়াবহ অবস্থা ঘনিয়ে আসছে, তা মোকাবেলার পরিকল্পনা আমাদের নেই।

No comments:

Post a Comment