জুন ২, ২০১১ বিডি নিউজে প্রকাশিত
‘কেন আমরা বুদ্ধিজীবীদের পছন্দ করি না?’ মে মাসের ৮ তারিখে গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত একটি লেখার শিরোনাম ছিল এটি। লেখক জন নটন। সাংবাদিক, বিদ্বান ও জনমানসে প্রযুক্তির ধারণা বিষয়ে অধ্যাপক। নটনের মতে, ব্রিটেনের সংস্কৃতির একটি দৃশ্যমান বিশিষ্টতা হলো- এখানে ‘বুদ্ধিজীবী/ইন্টেলেকচুয়াল’ শব্দটি একরকম অপমানসূচক অর্থে ব্যবহৃত হয়। শুধু জনমানসেই যে এমন মনোভাব তা নয়- ডাব্লিউ এইচ অডেনের মতো কবিও বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে রসালাপে মগ্ন হয়েছেন।
‘দুঃখজনক হলেও সত্য,
জীবনের নিবিড় একজন পর্যবেক্ষক
যাকে বুদ্ধিজীবী বলাই শ্রেয়
রাস্তার মানুষের কাছে তিনি
স্ত্রীর চোখে প্রতারক মানুষ একজন।’
এই হলো অডেনের কবিতার লাইন। শুধু অডেন নন, নটন জানাচ্ছেন, সাংবাদিক ও ইতিহাসবিদ পল জনসন ২০ শতকের শীর্ষ বুদ্ধিজীবীদের বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হিসেবে প্রমাণ করতে আস্ত একটা বই লিখে ফেলেছিলেন। বইয়ের নাম ‘ইন্টেলেকচুয়ালস : ফ্রম মার্কস অ্যান্ড টলস্তয় টু সার্ত্রে অ্যান্ড চমস্কি’। জন কেরি নামে একজন সাহিত্য সমালোচক ‘দ্য ইন্টেলেকচুয়ালস অ্যান্ড দ্য মাসেস’-এ তর্ক তুলেছেন কয়েক শতক ধরে বুদ্ধিজীবীরা কীভাবে জনগণকে তুচ্ছজ্ঞান করে সাংস্কৃতিক উচ্চম্মন্যতাকে অবলম্বন করেছেন। নটন বলছেন, ব্রিটেনে বুদ্ধিজীবী শব্দটির সঙ্গে যে শব্দটি বেশ ব্যবহৃত হয় সেটি হলো ’তথাকথিত’। বুদ্ধিদীপ্ত লোকদের ‘অতিচালাক’, জ্ঞানী রাজনীতিকদের ‘দুই মগজের অধিকারী’, সৃজনশীল ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ারদের ‘বফিন’ (চতুর ও হাস্যকর), কম্পিউটার ও গণিত বোদ্ধা ছোটদের ‘নার্ড’ (ঘরকুনো ও অসামাজিক) আখ্যা দেয়া হয়। নটন একটু উষ্মা প্রকাশ করে বলেছেন, বুদ্ধিজীবীতার প্রতি এই পরিহাসমূলক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে ব্রিটেনের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে ‘আইডিয়া’র প্রভাব তেমন দেখা যায় না।
জন নটনের লেখায় ব্রিটেনে বুদ্ধিজীবীতার যে বিবরণ পাওয়া গেল বাংলাদেশের সঙ্গে তার অনেক মিল। বহু বছরের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির ঐতিহ্যে গড়ে ওঠা ব্রিটিশ সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে আমাদের অমিলও নিশ্চয় অনেক। সেখানকার বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিস্তীর্ণ ও ঐতিহাসিক প্রভাব আছে। পৃথিবীর সেরা বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়, বড় বড় থিয়েটার, মিউজিয়াম, লাইব্রেরি, প্রকাশনা ও সংবাদপত্রের জাগরুক চর্চা এখনও বহাল। ব্রিটিশদের মধ্য থেকে বেড়ে ওঠা চিন্তক ও মননশীল ব্যক্তিরাই শুধু নন, বিশ্বের নানা দেশ থেকে আসা শ্রেষ্ঠ চিন্তকদেরও বিচরণক্ষেত্র ব্রিটেন। ফলে, ব্রিটেনে বুদ্ধিজীবীতা নিয়ে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে তার সঙ্গে আমাদের গুণগত ও পরিমাণগত পার্থক্য থাকবেই। কিন্তু উপরিস্তরের মিলটা দেখার মতো। আমাদের দেশে বুদ্ধিজীবীদের ‘আঁতেল’ বলে ঠাট্টা করা হয়। বুদ্ধিজীবী শব্দটির সঙ্গে ’তথাকথিত’ শব্দটিও বেশ চালু। জানার আগ্রহ আছে এমন লোক বিরক্তিকর, একটু খতিয়ে দেখতে চাওয়া ব্যক্তি ‘বেশি বোঝে’। বুদ্ধিজীবীরা সাধারণভাবে জনবিচ্ছিন্ন, ভণ্ড, ধান্দাবাজ, অবিশ্বস্ত ও দালাল পরিচিতি পান।
কেন এমন হলো? প্রশ্নটা সহজ, কিন্তু সহজ প্রশ্নের উত্তরটা মোটেও সহজ নয়। এদেশে বুদ্ধিজীবীতার ইতিহাস ও বর্তমানের মধ্যে নিশ্চয় এর উত্তর আছে। সঙ্গে এও সত্য, আমাদের বুদ্ধিজীবীতার ইতিহাস খুব দীর্ঘ নয়। ব্রিটেনে বুদ্ধিজীবীতার একটা দীর্ঘ ইতিহাস আছে। বিগত শতকগুলোতে সেখানে বড় বড় বুদ্ধিজীবী এসেছে। বিগতকালের বড় বুদ্ধিজীবীরা সেখানে এতই গালিভারের সমান যে এখনকার বুদ্ধিজীবীরা ব্রিটিশদের কাছে নাকি লিলিপুটের মতো। তাই তাদের কদর কম। আবার এও সত্য, প্রকৃত বুদ্ধিজীবীরা তাদের কালে ও দেশে সম্মান পান না। পরবর্তীকালই নাকি তাদের মর্ম বুঝতে পারে, সে অনুসারে সম্মানও দেখায়। ব্রিটেনে আরেক মজার সমস্যা হলো- সেখানে গেঁয়ো যোগীর কদর কম। অর্থাৎ ব্রিটিশ বুদ্ধিজীবীদের চাইতে অব্রিটিশ বুদ্ধিজীবীদের কদর সবসময়ই খানিকটা বেশি।
আমাদের বুদ্ধিজীবীতার হ্রস্ব ইতিহাসের দিকে তাকালে খুব বেশি এভারেস্টের দেখা মিলবে না। জনসমাজের মধ্যে বুদ্ধিজীবীর প্রভাব তৈরি হওয়ার জন্য যে গণতান্ত্রিক পরিবেশ, মতপ্রকাশের স্বাধীন পরিস্থিতি দরকার হয় তা এখানে নেই। তেমনি বুদ্ধিজীবীরা সামাজিক-সাংস্কৃতিক রূপান্তরের জন্য ইতিবাচক উদ্দেশ্যে জনসমাজকে দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন; জনগণের মুক্তির সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন এমন উদাহরণও এখানে তেমন নেই। কোনো বুদ্ধিজীবীর কথায়, লেখায়, অবস্থানে এদেশে মানুষের খুব বেশি যায় আসেনি। বলতে গেলে, পশ্চিমা সমাজে বুদ্ধিজীবীর যে ভূমিকা ছিল বা আছে তা আমাদের দেশে কখনো তৈরি হয়নি। ফলে, আধুনিকতা, ‘রেনেসাঁ’ ও স্বাধীনতার সঙ্গে বুদ্ধিজীবীতার তৃষ্ণা আমাদের সমাজেও জেগেছিল। এ তৃষ্ণা এখনও জাগরুক। রাষ্ট্র ও সমাজে ‘আইডিয়া’র অভাবের কথা তেমন শোনা না গেলেও ‘রাজনৈতিক কর্মসূচি’র অভাবের কথা স্বাধীনতার পর শোনা গেছে। অনেকেই জ্ঞানভিত্তিক সমাজের কথা বলেন। নানা কর্মকাণ্ডে মেধাবীদের অংশগ্রহণের কথা, রাজনীতিতে বিদ্বানদের প্রয়োজনীয়তার কথাও কানে আসে। তবে এগুলো কথার কথাই, আমাদের সমাজে বিদ্বান ব্যক্তিদের মূল্যায়নের রীতি স্মরণকালে তৈরি হয়নি। অন্যদিক থেকে বললে বিদ্বানরা সমাজে মূল্য তৈরি করতে পারেননি। রাষ্ট্রযন্ত্রে বুদ্ধিজীবীতার ভূমিকা স্পষ্ট হয়নি। ফলে পরিকল্পনা, রূপকল্পনা, দিকনির্দেশনা, অভীষ্ঠ, জাতি হিসেবে আত্মপ্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ইত্যাদি এখানে অনেকটাই অচেনা প্রসঙ্গ।
বুদ্ধিজীবী বলে একটা গোষ্ঠী শক্তভাবে গড়ে উঠতে পারলো না, রাষ্ট্র-সমাজে ভূমিকা রাখতে পারলো না তবুও বুদ্ধিজীবীদের সম্পর্কে এমন একটা ঠাট্টা ও অবজ্ঞার মনোভাব তৈরির পেছনে রহস্যটা কোথায়? বিনয় ঘোষ ‘বাংলার বিদ্বৎসমাজ’ বই লিখে এদেশে বুদ্ধিজীবীতার ইতিহাসের সূচনাপর্বটা আমাদের জানিয়েছেন। বিনয় ঘোষ চানক্যের উদ্ধৃতি টেনেছেন বইয়ে। চানক্য বলেছেন, ‘রাজা স্বদেশে পূজিত হন, বিদ্বান সর্বত্র হন পূজিত।’ বিনয় ঘোষ জানাচ্ছেন, ‘ইতিহাসে দেখা যায়, স্বদেশে পূজিত হন রাজা এবং বিদ্বান প্রথমে রাজার পূজা করে পরে দেশপূজ্য হন। রাজা যাকে সম্মানিত করেন, প্রজারাও তাকে মর্যাদা দেন। রাজসম্মান আগে, প্রজার সম্মান পরে।’ অতীতে যে বুদ্ধিজীবীরা এদেশে সম্মান পেয়েছেন তারা ছিলেন দরবারের বুদ্ধিজীবী। রাজার আকাঙ্ক্ষা অনুসারে তাদের বিদ্যা, জ্ঞান ও প্রজ্ঞা ব্যবহৃত হতো। উনিশ শতকের রূপান্তরের সময় এদেশে যে বুদ্ধিজীবীতা তৈরি হয়েছিল তা ‘নবযুগের রাজা ইংরেজদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ পোষকতায়’। কলকাতায় কীভাবে সেই অফিশিয়াল বুদ্ধিজীবীতার ধারা তৈরি হলো তার একটা প্রামাণ্য বিবরণ দিয়েছেন বিনয় ঘোষ। বাংলাদেশে যে বুদ্ধিজীবীতার দেখা আমরা পাই তা হরেদরে সেই অফিশিয়াল বুদ্ধিজীবীতারই অপভ্রংশ। এ বুদ্ধিজীবীতা দরবারি, অফিশিয়াল, সরকারি। এভাবেই এর বিকাশ ঘটেছে। আমাদের ইতিহাসে আমরা স্বাধীন, গণতান্ত্রিক, নিজস্ব বুদ্ধিজীবীতা দেখি নি। উনিশ শতকের কলকাতা হোক, কি বিশ বা একুশ শতকের ঢাকা- বুদ্ধিজীবী বলে আমরা যে গোষ্ঠীটাকে জেনেছি, তারা সরকারি বুদ্ধিজীবী। শাসকের মতাদর্শ, কর্তৃত্বশীল দর্শন, প্রচলিত মনোভাবের বাইরে তাদের কথা বলতে দেখা যায়নি/যায় না। এদের কেউ কেউ সমাজের প্রচলিত চিন্তা বা মতাদর্শ থেকে খানিকটা ভিন্ন অবস্থান নিয়ে অগ্রসর বা প্রগতিশীল খেতাবও পেয়েছেন। কিন্তু তাদের চিন্তা রাষ্ট্র ও শাসকশ্রেণীর জন্য কোনো গুরুতর সংকট তৈরি করেছে এমন উদাহরণ নেই। জনসমাজও (এমনকি জনগোষ্ঠীর কোনো একটি শ্রেণী) কোনো অদৃষ্টপূর্ব ও নতুন চিন্তার স্পর্শে সহসা জেগে ওঠেনি। জনসমাজে এই বুদ্ধিজীবীর কদর হবে এটা আশা করাও ভুল। ফলে, বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে হাসি-ঠাট্টা খুব অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। তবে এ হাসি-ঠাট্টার সবটাই নির্দোষ নয়। কারণ, কালেভদ্রে শাসক-বিরোধী, জনমনস্ক বুদ্ধিজীবীর আত্মপ্রকাশ ঘটলে তারা খুব সমাদৃত হয়েছেন এমন উদাহরণও পাওয়া যায় না। জ্ঞান, বিদ্যা, বুদ্ধির প্রতি সন্দেহ, তাচ্ছিল্য, সংশয়, অবিশ্বাস থেকে একটা সাধারণ নাকচের দেখা মেলে। ফলে, বুদ্ধিজীবীতার বিরুদ্ধে মানুষের মনোভাবকেও বুদ্ধিজীবীতার সঙ্গেই সন্দেহ করা দরকার।
শুধু পরিবর্তন, বিপ্লব, রেনেসাঁয় বুদ্ধিজীবী কাজে লাগবে এমন কথা নেই। সমাজে যখন বুদ্ধিহীনতা, আনপড় মনোভাব, আইডিয়াহীনতা শেকড় বিস্তার করে তখন বুদ্ধি, জ্ঞান ও বিদ্যার ব্যবহার বাড়ানো দরকার। আমাদের সমাজে এমন একটা চাহিদা গত দুই দশকে তৈরি হয়েছে। সমাজের একটা দৃশ্যমান ও বৃহৎ গোষ্ঠী এখন মনে করে- জ্ঞান, বিদ্যা, বুদ্ধির অংশগ্রহণ সমাজে-রাষ্ট্রে বাড়ানো দরকার। বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন তারা চায়- কিন্তু বিপ্লব নয়, স্থিতাবস্থা বজায় রেখেই রূপান্তরের পক্ষে তারা। আমাদের দেশে ‘সিভিল সোসাইটি’ ধারণার মধ্য দিয়ে এই অভীপ্সা প্রকাশিত হতে চায়। সিভিল সোসাইটির নিজস্ব ঐতিহাসিক ভিত্তি আছে, ভূমিকাও আছে। বর্তমান দুনিয়ায় পলিটিকাল সোসাইটির বাইরে একটা গোষ্ঠী শুধু নয়- সিভিল সোসাইটি এখন আন্তর্জাতিক একটি গোষ্ঠী। পশ্চিমা ‘আদর্শ’ রাজনীতি ও সংস্কৃতির বার্তাবাহক এই গোষ্ঠীকে পশ্চিমারা ‘আমাদের লোক’ বলে ডাকে। আমাদের দেশে সিভিল সোসাইটি গঠনের পেছনেও আন্তর্জাতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। কিন্তু এর মধ্য দিয়ে সমাজের একটা অংশের সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অভীপ্সাও ব্যক্ত হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই অভীপ্সা, রাজনৈতিক অভিলাষ পর্যন্ত গড়িয়েছে।
উনিশ শতকের বিদ্বৎসমাজ কীভাবে সিভিল সোসাইটির রূপ নিল, কীভাবে বিদ্বৎসমাজ সিভিল সমাজ পরিচয়ের মধ্যে পরিচয়ের স্বস্তি খুঁজে পেল তা পৃথক পর্যবেক্ষণের বিষয়। কিন্তু সিভিল সমাজের মধ্যেও বিদ্যা, জ্ঞান ও প্রজ্ঞার বদলে ক্ষমতা, গোষ্ঠীগত উদ্দেশ্য সাধন ও সংগঠিত আকাঙ্ক্ষার প্রাধান্য এখানে বিশেষভাবে লক্ষ্য করার মতো বিষয়।
নানা দিক থেকেই মনে হয়, আমাদের দেশে গোষ্ঠী বা সংগঠিত অস্তিত্বের বাইরে ব্যক্তি বুদ্ধিজীবীর অবস্থান কল্কে পায়নি। অর্গানিক বা ট্রাডিশনাল ইন্টেলেকচুয়াল ধারণা এখানে পরিচিত হলেও পাবলিক ইন্টেলেকচুয়াল ধারণাটি ততো জানা নয়। তবে, ইতিমধ্যে গুটিকয় পাবলিক ইন্টেলেকচুয়ালের দেখা আমরা পেয়েছি। এডওয়ার্ড সাঈদ বলেছেন, ‘সে পরিহাসময় ব্যক্তিটি বিব্রতকর প্রশ্ন উত্থাপনের জন্য পরিচিত; প্রচলিত ও গোঁড়া মতাদর্শকে মোকাবেলা করতে প্রস্তুত; যাকে সরকার বা কর্পোরেশনগুলো সহজে কিনতে পারে না’ তিনিই পাবলিক ইন্টেলেকচুয়াল। দেখা যাচ্ছে, মার্কসবাদী বা পুঁজিবাদী উদ্দেশে গঠিত সাংগঠনিক বুদ্ধিজীবীতার চাইতে জনমনস্ক ব্যক্তি বুদ্ধিজীবীতা বা পাবলিক ইন্টেলেকচুয়াল ধারণাটি অধিকতর গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠছে। পৃথিবীতে পাবলিক ইন্টেলেকচুয়ালরাই মানুষের ভালোবাসা পাচ্ছেন। আমাদের দেশেও পাবেন বলে মনে হয়।
মাহবুব মোর্শেদ: কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক।
‘কেন আমরা বুদ্ধিজীবীদের পছন্দ করি না?’ মে মাসের ৮ তারিখে গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত একটি লেখার শিরোনাম ছিল এটি। লেখক জন নটন। সাংবাদিক, বিদ্বান ও জনমানসে প্রযুক্তির ধারণা বিষয়ে অধ্যাপক। নটনের মতে, ব্রিটেনের সংস্কৃতির একটি দৃশ্যমান বিশিষ্টতা হলো- এখানে ‘বুদ্ধিজীবী/ইন্টেলেকচুয়াল’ শব্দটি একরকম অপমানসূচক অর্থে ব্যবহৃত হয়। শুধু জনমানসেই যে এমন মনোভাব তা নয়- ডাব্লিউ এইচ অডেনের মতো কবিও বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে রসালাপে মগ্ন হয়েছেন।
‘দুঃখজনক হলেও সত্য,
জীবনের নিবিড় একজন পর্যবেক্ষক
যাকে বুদ্ধিজীবী বলাই শ্রেয়
রাস্তার মানুষের কাছে তিনি
স্ত্রীর চোখে প্রতারক মানুষ একজন।’
এই হলো অডেনের কবিতার লাইন। শুধু অডেন নন, নটন জানাচ্ছেন, সাংবাদিক ও ইতিহাসবিদ পল জনসন ২০ শতকের শীর্ষ বুদ্ধিজীবীদের বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হিসেবে প্রমাণ করতে আস্ত একটা বই লিখে ফেলেছিলেন। বইয়ের নাম ‘ইন্টেলেকচুয়ালস : ফ্রম মার্কস অ্যান্ড টলস্তয় টু সার্ত্রে অ্যান্ড চমস্কি’। জন কেরি নামে একজন সাহিত্য সমালোচক ‘দ্য ইন্টেলেকচুয়ালস অ্যান্ড দ্য মাসেস’-এ তর্ক তুলেছেন কয়েক শতক ধরে বুদ্ধিজীবীরা কীভাবে জনগণকে তুচ্ছজ্ঞান করে সাংস্কৃতিক উচ্চম্মন্যতাকে অবলম্বন করেছেন। নটন বলছেন, ব্রিটেনে বুদ্ধিজীবী শব্দটির সঙ্গে যে শব্দটি বেশ ব্যবহৃত হয় সেটি হলো ’তথাকথিত’। বুদ্ধিদীপ্ত লোকদের ‘অতিচালাক’, জ্ঞানী রাজনীতিকদের ‘দুই মগজের অধিকারী’, সৃজনশীল ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ারদের ‘বফিন’ (চতুর ও হাস্যকর), কম্পিউটার ও গণিত বোদ্ধা ছোটদের ‘নার্ড’ (ঘরকুনো ও অসামাজিক) আখ্যা দেয়া হয়। নটন একটু উষ্মা প্রকাশ করে বলেছেন, বুদ্ধিজীবীতার প্রতি এই পরিহাসমূলক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে ব্রিটেনের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে ‘আইডিয়া’র প্রভাব তেমন দেখা যায় না।
জন নটনের লেখায় ব্রিটেনে বুদ্ধিজীবীতার যে বিবরণ পাওয়া গেল বাংলাদেশের সঙ্গে তার অনেক মিল। বহু বছরের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির ঐতিহ্যে গড়ে ওঠা ব্রিটিশ সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে আমাদের অমিলও নিশ্চয় অনেক। সেখানকার বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিস্তীর্ণ ও ঐতিহাসিক প্রভাব আছে। পৃথিবীর সেরা বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়, বড় বড় থিয়েটার, মিউজিয়াম, লাইব্রেরি, প্রকাশনা ও সংবাদপত্রের জাগরুক চর্চা এখনও বহাল। ব্রিটিশদের মধ্য থেকে বেড়ে ওঠা চিন্তক ও মননশীল ব্যক্তিরাই শুধু নন, বিশ্বের নানা দেশ থেকে আসা শ্রেষ্ঠ চিন্তকদেরও বিচরণক্ষেত্র ব্রিটেন। ফলে, ব্রিটেনে বুদ্ধিজীবীতা নিয়ে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে তার সঙ্গে আমাদের গুণগত ও পরিমাণগত পার্থক্য থাকবেই। কিন্তু উপরিস্তরের মিলটা দেখার মতো। আমাদের দেশে বুদ্ধিজীবীদের ‘আঁতেল’ বলে ঠাট্টা করা হয়। বুদ্ধিজীবী শব্দটির সঙ্গে ’তথাকথিত’ শব্দটিও বেশ চালু। জানার আগ্রহ আছে এমন লোক বিরক্তিকর, একটু খতিয়ে দেখতে চাওয়া ব্যক্তি ‘বেশি বোঝে’। বুদ্ধিজীবীরা সাধারণভাবে জনবিচ্ছিন্ন, ভণ্ড, ধান্দাবাজ, অবিশ্বস্ত ও দালাল পরিচিতি পান।
কেন এমন হলো? প্রশ্নটা সহজ, কিন্তু সহজ প্রশ্নের উত্তরটা মোটেও সহজ নয়। এদেশে বুদ্ধিজীবীতার ইতিহাস ও বর্তমানের মধ্যে নিশ্চয় এর উত্তর আছে। সঙ্গে এও সত্য, আমাদের বুদ্ধিজীবীতার ইতিহাস খুব দীর্ঘ নয়। ব্রিটেনে বুদ্ধিজীবীতার একটা দীর্ঘ ইতিহাস আছে। বিগত শতকগুলোতে সেখানে বড় বড় বুদ্ধিজীবী এসেছে। বিগতকালের বড় বুদ্ধিজীবীরা সেখানে এতই গালিভারের সমান যে এখনকার বুদ্ধিজীবীরা ব্রিটিশদের কাছে নাকি লিলিপুটের মতো। তাই তাদের কদর কম। আবার এও সত্য, প্রকৃত বুদ্ধিজীবীরা তাদের কালে ও দেশে সম্মান পান না। পরবর্তীকালই নাকি তাদের মর্ম বুঝতে পারে, সে অনুসারে সম্মানও দেখায়। ব্রিটেনে আরেক মজার সমস্যা হলো- সেখানে গেঁয়ো যোগীর কদর কম। অর্থাৎ ব্রিটিশ বুদ্ধিজীবীদের চাইতে অব্রিটিশ বুদ্ধিজীবীদের কদর সবসময়ই খানিকটা বেশি।
আমাদের বুদ্ধিজীবীতার হ্রস্ব ইতিহাসের দিকে তাকালে খুব বেশি এভারেস্টের দেখা মিলবে না। জনসমাজের মধ্যে বুদ্ধিজীবীর প্রভাব তৈরি হওয়ার জন্য যে গণতান্ত্রিক পরিবেশ, মতপ্রকাশের স্বাধীন পরিস্থিতি দরকার হয় তা এখানে নেই। তেমনি বুদ্ধিজীবীরা সামাজিক-সাংস্কৃতিক রূপান্তরের জন্য ইতিবাচক উদ্দেশ্যে জনসমাজকে দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন; জনগণের মুক্তির সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন এমন উদাহরণও এখানে তেমন নেই। কোনো বুদ্ধিজীবীর কথায়, লেখায়, অবস্থানে এদেশে মানুষের খুব বেশি যায় আসেনি। বলতে গেলে, পশ্চিমা সমাজে বুদ্ধিজীবীর যে ভূমিকা ছিল বা আছে তা আমাদের দেশে কখনো তৈরি হয়নি। ফলে, আধুনিকতা, ‘রেনেসাঁ’ ও স্বাধীনতার সঙ্গে বুদ্ধিজীবীতার তৃষ্ণা আমাদের সমাজেও জেগেছিল। এ তৃষ্ণা এখনও জাগরুক। রাষ্ট্র ও সমাজে ‘আইডিয়া’র অভাবের কথা তেমন শোনা না গেলেও ‘রাজনৈতিক কর্মসূচি’র অভাবের কথা স্বাধীনতার পর শোনা গেছে। অনেকেই জ্ঞানভিত্তিক সমাজের কথা বলেন। নানা কর্মকাণ্ডে মেধাবীদের অংশগ্রহণের কথা, রাজনীতিতে বিদ্বানদের প্রয়োজনীয়তার কথাও কানে আসে। তবে এগুলো কথার কথাই, আমাদের সমাজে বিদ্বান ব্যক্তিদের মূল্যায়নের রীতি স্মরণকালে তৈরি হয়নি। অন্যদিক থেকে বললে বিদ্বানরা সমাজে মূল্য তৈরি করতে পারেননি। রাষ্ট্রযন্ত্রে বুদ্ধিজীবীতার ভূমিকা স্পষ্ট হয়নি। ফলে পরিকল্পনা, রূপকল্পনা, দিকনির্দেশনা, অভীষ্ঠ, জাতি হিসেবে আত্মপ্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ইত্যাদি এখানে অনেকটাই অচেনা প্রসঙ্গ।
বুদ্ধিজীবী বলে একটা গোষ্ঠী শক্তভাবে গড়ে উঠতে পারলো না, রাষ্ট্র-সমাজে ভূমিকা রাখতে পারলো না তবুও বুদ্ধিজীবীদের সম্পর্কে এমন একটা ঠাট্টা ও অবজ্ঞার মনোভাব তৈরির পেছনে রহস্যটা কোথায়? বিনয় ঘোষ ‘বাংলার বিদ্বৎসমাজ’ বই লিখে এদেশে বুদ্ধিজীবীতার ইতিহাসের সূচনাপর্বটা আমাদের জানিয়েছেন। বিনয় ঘোষ চানক্যের উদ্ধৃতি টেনেছেন বইয়ে। চানক্য বলেছেন, ‘রাজা স্বদেশে পূজিত হন, বিদ্বান সর্বত্র হন পূজিত।’ বিনয় ঘোষ জানাচ্ছেন, ‘ইতিহাসে দেখা যায়, স্বদেশে পূজিত হন রাজা এবং বিদ্বান প্রথমে রাজার পূজা করে পরে দেশপূজ্য হন। রাজা যাকে সম্মানিত করেন, প্রজারাও তাকে মর্যাদা দেন। রাজসম্মান আগে, প্রজার সম্মান পরে।’ অতীতে যে বুদ্ধিজীবীরা এদেশে সম্মান পেয়েছেন তারা ছিলেন দরবারের বুদ্ধিজীবী। রাজার আকাঙ্ক্ষা অনুসারে তাদের বিদ্যা, জ্ঞান ও প্রজ্ঞা ব্যবহৃত হতো। উনিশ শতকের রূপান্তরের সময় এদেশে যে বুদ্ধিজীবীতা তৈরি হয়েছিল তা ‘নবযুগের রাজা ইংরেজদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ পোষকতায়’। কলকাতায় কীভাবে সেই অফিশিয়াল বুদ্ধিজীবীতার ধারা তৈরি হলো তার একটা প্রামাণ্য বিবরণ দিয়েছেন বিনয় ঘোষ। বাংলাদেশে যে বুদ্ধিজীবীতার দেখা আমরা পাই তা হরেদরে সেই অফিশিয়াল বুদ্ধিজীবীতারই অপভ্রংশ। এ বুদ্ধিজীবীতা দরবারি, অফিশিয়াল, সরকারি। এভাবেই এর বিকাশ ঘটেছে। আমাদের ইতিহাসে আমরা স্বাধীন, গণতান্ত্রিক, নিজস্ব বুদ্ধিজীবীতা দেখি নি। উনিশ শতকের কলকাতা হোক, কি বিশ বা একুশ শতকের ঢাকা- বুদ্ধিজীবী বলে আমরা যে গোষ্ঠীটাকে জেনেছি, তারা সরকারি বুদ্ধিজীবী। শাসকের মতাদর্শ, কর্তৃত্বশীল দর্শন, প্রচলিত মনোভাবের বাইরে তাদের কথা বলতে দেখা যায়নি/যায় না। এদের কেউ কেউ সমাজের প্রচলিত চিন্তা বা মতাদর্শ থেকে খানিকটা ভিন্ন অবস্থান নিয়ে অগ্রসর বা প্রগতিশীল খেতাবও পেয়েছেন। কিন্তু তাদের চিন্তা রাষ্ট্র ও শাসকশ্রেণীর জন্য কোনো গুরুতর সংকট তৈরি করেছে এমন উদাহরণ নেই। জনসমাজও (এমনকি জনগোষ্ঠীর কোনো একটি শ্রেণী) কোনো অদৃষ্টপূর্ব ও নতুন চিন্তার স্পর্শে সহসা জেগে ওঠেনি। জনসমাজে এই বুদ্ধিজীবীর কদর হবে এটা আশা করাও ভুল। ফলে, বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে হাসি-ঠাট্টা খুব অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। তবে এ হাসি-ঠাট্টার সবটাই নির্দোষ নয়। কারণ, কালেভদ্রে শাসক-বিরোধী, জনমনস্ক বুদ্ধিজীবীর আত্মপ্রকাশ ঘটলে তারা খুব সমাদৃত হয়েছেন এমন উদাহরণও পাওয়া যায় না। জ্ঞান, বিদ্যা, বুদ্ধির প্রতি সন্দেহ, তাচ্ছিল্য, সংশয়, অবিশ্বাস থেকে একটা সাধারণ নাকচের দেখা মেলে। ফলে, বুদ্ধিজীবীতার বিরুদ্ধে মানুষের মনোভাবকেও বুদ্ধিজীবীতার সঙ্গেই সন্দেহ করা দরকার।
শুধু পরিবর্তন, বিপ্লব, রেনেসাঁয় বুদ্ধিজীবী কাজে লাগবে এমন কথা নেই। সমাজে যখন বুদ্ধিহীনতা, আনপড় মনোভাব, আইডিয়াহীনতা শেকড় বিস্তার করে তখন বুদ্ধি, জ্ঞান ও বিদ্যার ব্যবহার বাড়ানো দরকার। আমাদের সমাজে এমন একটা চাহিদা গত দুই দশকে তৈরি হয়েছে। সমাজের একটা দৃশ্যমান ও বৃহৎ গোষ্ঠী এখন মনে করে- জ্ঞান, বিদ্যা, বুদ্ধির অংশগ্রহণ সমাজে-রাষ্ট্রে বাড়ানো দরকার। বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন তারা চায়- কিন্তু বিপ্লব নয়, স্থিতাবস্থা বজায় রেখেই রূপান্তরের পক্ষে তারা। আমাদের দেশে ‘সিভিল সোসাইটি’ ধারণার মধ্য দিয়ে এই অভীপ্সা প্রকাশিত হতে চায়। সিভিল সোসাইটির নিজস্ব ঐতিহাসিক ভিত্তি আছে, ভূমিকাও আছে। বর্তমান দুনিয়ায় পলিটিকাল সোসাইটির বাইরে একটা গোষ্ঠী শুধু নয়- সিভিল সোসাইটি এখন আন্তর্জাতিক একটি গোষ্ঠী। পশ্চিমা ‘আদর্শ’ রাজনীতি ও সংস্কৃতির বার্তাবাহক এই গোষ্ঠীকে পশ্চিমারা ‘আমাদের লোক’ বলে ডাকে। আমাদের দেশে সিভিল সোসাইটি গঠনের পেছনেও আন্তর্জাতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। কিন্তু এর মধ্য দিয়ে সমাজের একটা অংশের সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অভীপ্সাও ব্যক্ত হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই অভীপ্সা, রাজনৈতিক অভিলাষ পর্যন্ত গড়িয়েছে।
উনিশ শতকের বিদ্বৎসমাজ কীভাবে সিভিল সোসাইটির রূপ নিল, কীভাবে বিদ্বৎসমাজ সিভিল সমাজ পরিচয়ের মধ্যে পরিচয়ের স্বস্তি খুঁজে পেল তা পৃথক পর্যবেক্ষণের বিষয়। কিন্তু সিভিল সমাজের মধ্যেও বিদ্যা, জ্ঞান ও প্রজ্ঞার বদলে ক্ষমতা, গোষ্ঠীগত উদ্দেশ্য সাধন ও সংগঠিত আকাঙ্ক্ষার প্রাধান্য এখানে বিশেষভাবে লক্ষ্য করার মতো বিষয়।
নানা দিক থেকেই মনে হয়, আমাদের দেশে গোষ্ঠী বা সংগঠিত অস্তিত্বের বাইরে ব্যক্তি বুদ্ধিজীবীর অবস্থান কল্কে পায়নি। অর্গানিক বা ট্রাডিশনাল ইন্টেলেকচুয়াল ধারণা এখানে পরিচিত হলেও পাবলিক ইন্টেলেকচুয়াল ধারণাটি ততো জানা নয়। তবে, ইতিমধ্যে গুটিকয় পাবলিক ইন্টেলেকচুয়ালের দেখা আমরা পেয়েছি। এডওয়ার্ড সাঈদ বলেছেন, ‘সে পরিহাসময় ব্যক্তিটি বিব্রতকর প্রশ্ন উত্থাপনের জন্য পরিচিত; প্রচলিত ও গোঁড়া মতাদর্শকে মোকাবেলা করতে প্রস্তুত; যাকে সরকার বা কর্পোরেশনগুলো সহজে কিনতে পারে না’ তিনিই পাবলিক ইন্টেলেকচুয়াল। দেখা যাচ্ছে, মার্কসবাদী বা পুঁজিবাদী উদ্দেশে গঠিত সাংগঠনিক বুদ্ধিজীবীতার চাইতে জনমনস্ক ব্যক্তি বুদ্ধিজীবীতা বা পাবলিক ইন্টেলেকচুয়াল ধারণাটি অধিকতর গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠছে। পৃথিবীতে পাবলিক ইন্টেলেকচুয়ালরাই মানুষের ভালোবাসা পাচ্ছেন। আমাদের দেশেও পাবেন বলে মনে হয়।
মাহবুব মোর্শেদ: কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক।
No comments:
Post a Comment