Tuesday, May 15, 2012

প্রাইভেট!

ঢাকা শহরে প্রাইভেট নামে একপ্রকার যান আছে। Private, privat, privet, প্রাইভ্যাট, প্রাইভাড ইত্যাদি বাহারি নামের যান আদতে সিএনজি অটোরিকশা। ঢাকা শহরে আদর করে এই যানটিকে সিএনজি বলে ডাকা হয়। সিএনজি নামের সবুজ যানটি পাবলিক পরিবহন বটে কিন্তু কার্যক্ষেত্রের একে যান না বলে অমাবস্যার চাঁদ বলা ভালো। পথচারী মাত্রই জানেন, সিএনজিচালককে যদি জিজ্ঞেস করা হয় তিনি অমুক স্থানে যাবেন কি-না তবে উত্তর নিশ্চিতভাবেই ‘না’ মিলবে। প্রতিদিন রাস্তায় শত শত যাত্রী এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে ‘না’ উত্তর পেয়ে ভাবতে বসতে পারেন, সিএনজি অটোরিকশাগুলো আসলে যায় কোথায়? যদিও বা পরমভাগ্যে কোনো সিএনজিচালক নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে রাজি হন, তাকে মিটারে যাওয়ার অনুরোধ করা পাপ। বড় অঙ্কের ভাড়া গুনেই তবে তাকে রাজি করানো সম্ভব। তবু সিএনজি আছে বলে জরুরি প্রয়োজনে রক্ষা। পকেট সাফ করে তবু গন্তব্যে যাওয়া চলে। ঢাকা শহর বোধহয় পৃথিবীর একমাত্র রাজধানী শহর, যেখানে ট্যাক্সিক্যাব বলে কিছু নেই। কাগজে-কলমে হলুদ ও কালো/নীল ট্যাক্সিক্যাব চালু থাকলেও রাস্তায় তাদের পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। হলুদগুলো রীতিমতো সোনার হরিণ। আর কালো ট্যাক্সিক্যাবগুলোর যে জীর্ণদশা তাতে উঠবার আগেই নিরাপত্তাহীনতা চেপে বসে। সবেধন নীলমণি ওই সবুজ সিএনজি। এ যানে মিটার থাকলেও কার্যকর নয়। আন্দাজে ভাড়া ঠিক করে পথ চলতে হয়। কেন এমন ব্যবস্থা জিজ্ঞেস করলে চালকরা মালিকের দোষ দেন। মালিকরা সরকারের দোষ দেন। রুট পারমিট নিতে যত লাখ লেগেছে তত লাখ তুলতে চান মালিকরা। আর তাই জমা বেশি। জমাটা তোলা হয় সরাসরি যাত্রীদের কাছ থেকে। যাত্রীদের টাকা প্রকারান্তরে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের পকেটেই যাচ্ছে। বেশ। এ দেশে বড় কথা বলার লোকের অভাব নেই, কিন্তু পাবলিক পরিবহনের দুর্দশা নিয়ে কথা বলার লোকের দারুণ অভাব। কেন, কে জানে? এত বড় একটা শহর, ট্যাক্সিক্যাব তো নেই-ই, বৈধ সিএনজি অটোরিকশা আছে সাকল্যে ১৩ হাজার। অবৈধ কিছু আছে। আর আছে প্রাইভেট! শোনা যাচ্ছে, আরও ৫ হাজার সিএনজি অটোরিকশা অনুমতি পাবে। প্রশ্ন হলো, সংখ্যাটা ১৩ হাজারে থেমে থাকল কেন? প্রতিদিন লোক বাড়ছে, প্রাইভেটকার বাড়ছে। অথচ অতিপ্রয়োজনীয় সিএনজি বৃদ্ধিই শুধু গলাটিপে ধরা হবে কেন? কেউ বলতে পারেন, এ শহরে শেষ সচ্ছল ব্যক্তিটিকে পর্যন্ত প্রাইভেটকার কিনতে বাধ্য করার জন্য এ ব্যবস্থা। কেউবা বলবেন, চাহিদা অনুসারে অটোরিকশা না ছেড়ে মানুষকে সংকটে ফেলতেই এ ব্যবস্থা। কেউ বলবেন, প্রাইভেট নামধারী পাবলিক সিএনজির রমরমা তৈরি করতেই এই নীতি। প্রাইভেটগুলোতে মিটার নেই। ভাড়া হাঁকে ইচ্ছামতো। তারও চেয়ে বড় কথা, ব্যক্তিগত কাজের জন্য কেনা এ যানটি অবৈধভাবে যাত্রী পরিবহন করে, যেটি কোনোভাবে মেনে নেওয়ার উপায় নেই। রোববারের ডেইলিস্টারে এই প্রাইভেট বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তাতে জানা যাচ্ছে, প্রাইভেটগুলোর রমরমার পেছনে আছে উৎকোচ যোগ, আছে কিছু অসাধু কর্মকর্তার আশীর্বাদও। প্রাইভেট সিএনজি থাকা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের জন্য ভালো। কিন্তু সেটি কোনোভাবেই বাণিজ্যিকভাবে যাত্রী পরিবহন করতে পারে না। বাণিজ্যিকভাবে পরিবহনের জন্য পাবলিক পরিবহনের সংখ্যাই বাড়াতে হবে। এজন্য ঢাকা শহরে ৫ হাজার নয়, অন্তত ২০ হাজার নতুন ট্যাক্সিক্যাব ও সিএনজি অটোরিকশা নামাতে হবে। আর বাধ্যতামূলকভাবে তাতে মিটার চালু করতে হবে। সিএনটি অটোরিকশা সুলভ হলে, প্রাইভেটকারের প্রয়োজন কমে যাবে। সেটি আখেরে শুভ ফল দেবে। আর সিএনজির মিটার চালু রাখতে হলে রাস্লায় ট্রাফিক পুলিশকে দায়িত্ব দিলেই শুধু চলবে না। যারা ৩-৪ লাখ টাকার সিএনজির দাম ১১ লাখে তোলেন তাদের ঠেকাতে হবে। রুট পারমিটজনিত উৎকোচে একটি সাধারণ পরিবহনের দাম ১১ লাখে ঠেকলে তাতে যে মিটার কায়েম করা যাবে না, তা বলাই বাহুল্য। আমাদের যোগাযোগমন্ত্রীর অনেক শুভ উদ্যোগ আছে। এ বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করি।

No comments:

Post a Comment