২ মে কৌতূহলকর একটি খবর দিল গার্ডিয়ান পত্রিকা। যুক্তরাজ্যের পাবলিশার্স
অ্যাসোসিয়েশনের বরাতে তারা জানাল, ই-বুক বা ডিজিটাল বইয়ের বাজার বাড়ছে। এই
বৃদ্ধির গতিটা কেমন তা জানলে রীতিমতো বিস্ময় জাগবে। ২০১১ সালেই ই-বুক
বিক্রি বৃদ্ধির হার ৩৬৬%। ২৫০টি পাবলিশিং কোম্পানির সরবরাহকৃত তথ্যের ওপর
ভিত্তি করে তৈরি করা ইয়ারবুকে এ তথ্যগুলো প্রকাশিত হয়েছে। ২০১১ সালে শুধু
ফিকশন, নন-ফিকশন ও ছোটদের বইয়ের ই-ভার্সন বিক্রি হয়েছে ৯২ মিলিয়ন পাউন্ড।
এই বিক্রি ছাপা কাগজের বইয়ের মোট বিক্রির ৬ শতাংশ। আর ওই বছরে ছাপা বইয়ের ৭
শতাংশ বিক্রি কমেছে। এখনও ব্রিটিশ পাঠকের পাঠ্যসূচিতে ছাপা বইয়েরই রমরমা।
কিন্তু ই-বুক বিক্রির হারটা যেভাবে বাড়ছে তাতে ভবিষ্যতের বইয়ের বাজারের হাল
কী দাঁড়াবে তা ভাবনার বিষয় বটে। ই-বুকের ইতিহাস খুব দীর্ঘ নয়। ১৯৪৬ সালে
উল্লেখযোগ্য ই-বুক তৈরি হলেও, ই-বুকের বিকাশের সূচনা ধরতে হয় ১৯৭১ সালকেই।
ওই বছর মাইকেল এস. হার্ট ই-বুকের উদ্যোগ প্রজেক্ট গুটেনবার্গ শুরু করেন।
ফ্লপি-ডিস্ক, কমপ্যাক্ট ডিস্কে ঘুরতে ঘুরতে একসময় ইন্টারনেট মাধ্যমেও ই-বুক
জনপ্রিয় হতে থাকে। ব্যক্তিগত স্বেচ্ছাসেবী উদ্যোগে তৈরি হতে থাকে একের পর
এক ই-বুক। আর সেগুলো পেঁৗছতে থাকে সারা পৃথিবীর পাঠকের হাতে। অনলাইনে
ই-বুকের বিশাল সংগ্রহ গড়ে ওঠার পর ১৯৯২ সালে সনি বাজারজাত করে ই-বুক রিডার।
আর ২০০০ সাল আসার সঙ্গে সঙ্গে বাজারে আসতে থাকে বাহারি সব ই-বুক রিডার।
অর্থাৎ পিসি অথবা ল্যাপটপেই যে ই-বুক পড়তে হবে না নয়। চলতি পথে ট্যাবলেট
কম্পিউটার, ফোন, আইপ্যাড, ই-বুক রিডারে বই পড়ার ব্যবস্থা হয়েছে। পাঠকদের
প্রয়োজন মতো ই-বুক রিডার তৈরি হচ্ছে, পাঠকরাও সেগুলো কিনছেন। ভারী বই বহন
করার ঝক্কি নেই। একটা ছোট রিডারেই এঁটে যাচ্ছে শত শত বই। ঘরে রাখার সমস্যা
নেই, ঘর বদলের সময় টানাটানির হ্যাপা নেই, বই সংগ্রহ ও সংরক্ষণের সেই
পরিশ্রম নেই। চাইলে কেনা যায়, মুফতেও পাওয়া যায়। রিডার খুলে যত্রতত্র পড়া
যায়। বইয়ের সমান রিডারের এমন সুবিধায় পাঠকরা রিডারের দিকে ঝুঁকবেন তাতে আর
বিস্ময়ের কী আছে? তবে হা-হুতাশও কম নেই। ছাপা কাগজের বই হারিয়ে যাবে কি-না
সে প্রশ্ন উঠছে। ছাপা কাগজের বই না থাকলে কী হবে? লেখাপড়ার চল উঠে যাবে?
পাথরে লেখালেখির চল ছিল এককালে। পাথর উঠে গেছে বলে কি লেখাপড়ার চল হারিয়ে
গেছে? তারও চেয়ে বড় কথা, বাস্তবতা। যুগ যেমন বইও হবে তেমন। যদিও বাংলাদেশে
ই-বুক ততটা জনপ্রিয় নয়। তাতে অবশ্য বিস্ময়ের কিছু নেই। কেননা এখানে তো বই-ই
জনপ্রিয় নয়। পড়ার লোকের বড় অভাব। তাই নতুন মডেলে আইফোন বের হলে ঢাকার
বাজারে মুহূর্তেই চলে আসে। কিন্তু নতুন মডেলের কিন্ডেল চান, পাবেন না।
কিন্তু এমন চলতে দেওয়া উচিত নয়। পাঠক বাড়াতে হবে, যে ছাপা কাগজের ঝক্কির
মধ্যে যেতে চায় না, তার হাতে ই-বুক রিডারই তুলে দেওয়া হোক। ই-বুক তৈরি করে
বিক্রি ও বিতরণের ব্যবস্থা হোক। অবশ্য অনলাইন উদ্যোগে বড় ফাঁড়াটা থাকতে
সেটি ঘটার সম্ভাবনা খুব কম। বাংলাদেশে অনলাইনে বসে কেউ কিনতেও পারে না,
বেচতেও পারে না। দ্বার বন্ধ করে ব্যারিকেড দিয়ে বসে আছি আমরা। ফলে কোটি
কোটি টাকার ব্যবসা হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। সেখানে বই কেনা বা বেচার সামান্য
দুঃখের কথার গুরুত্বই-বা কতটুকু?
No comments:
Post a Comment