আমাদের কবি অনেক আগে অভিশাপ দিয়ে গেছেন, প্রেমিক মিলবে প্রেমিকার সঙ্গে
ঠিকই কিন্তু শান্তি পাবে না, পাবে না, পাবে না। কবির কথা অক্ষরে অক্ষরে
ফলছে বাংলাদেশে। প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে মিলন হলেও শান্তি মিলছে না।
নির্বাচন হলেও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না, গণতন্ত্র এলেও সরকারি সব
কাজের কেন্দ্র হিসেবে সংসদ প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না। সংসদ বসলেও তিক্ত তর্কে
অশান্তি বরং বাড়ছে। পথে বের হলে শান্তি নেই। ঘরে থাকলেও নেই। বেডরুম পাহারা
দেওয়া যেমন অসম্ভব তেমনি রাস্তা পাহারা দেওয়া আরও অসম্ভব। আইন-শৃঙ্খলা
রক্ষাকারী বাহিনীর অপারগতা বা অধিক পারঙ্গমতার সুযোগে চুরি-ছিনতাই,
রাহাজানি, ডাকাতি, গুম, খুন চলছে। অবশ্য বিগত আমলগুলোতে লোকে ভীষণ শান্তিতে
ছিল তা বলা যাবে না। তখন যত্রতত্র বোমা ফাটার আশঙ্কা ছিল। গুপ্তহত্যা,
ক্রসফায়ারও কম ছিল না। জানি না, যারা সুখে-শান্তিতে বসবাস করেন পৃথিবীর
নানা দেশে তাদের কাছে হয়তো আমাদের দেশ একটা যুদ্ধক্ষেত্রের মতোই। প্রবাস
থেকে কেউ দেশে বেড়াতে এলে তিনি হয়তো সামান্য জ্যামযুদ্ধেই পরাজয় বরণ করে
পাততাড়ি গুটিয়ে চলে যেতে চান। শুধু জ্যামেই যুদ্ধ নয়, আমাদের জীবন
সংগ্রামমুখর, নিত্যই আমরা জীবনযুদ্ধে শামিল। যদি রাজনীতির কথা ভাবি তবে
সেখানে ঠাণ্ডা যুদ্ধ নয়, রীতিমতো উষ্ণ যুদ্ধের দেখাই মিলবে। কবির ভাষায়
বলতে ইচ্ছা করে_ এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি। তো এই যুদ্ধের দেশে
শান্তি পুরস্কার এসেছে। যেনতেন শান্তি পুরস্কার নয়, নোবেল শান্তি
পুরস্কার। যথারীতি শান্তি পুরস্কার শান্তি আনতে পারেনি, বরং অশান্তিই বয়ে
এনেছে। আমাদের মন্ত্রী প্রশ্ন রেখেছেন, যিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন
তিনি কোন যুদ্ধে শান্তি এনেছেন। অবাক করার মতো প্রশ্ন বটে। আশপাশে তো কম
যুদ্ধ চলছে না। এর যে কোনো একটিতে শান্তি আনলেই তো নোবেল শান্তি পুরস্কার
জুটবার কথা। এর মধ্যে অনেকেই শান্তি আনার চেষ্টা করছেন। ফলে এ দেশে শান্তি
পুরস্কার একটা কেন, দশটাও এসে যেতে পারে। আসাও উচিত। প্রফেসর ইউনূস
ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম চালিয়েছেন, নারীর ক্ষমতায়ন ঘটিয়েছেন, বিশ্বের সামনে
মডেল দিয়েছেন। এসবের কিছু না করে, এ দেশের চলমান যুদ্ধে নীরব দর্শকের
ভূমিকা পালন করলেও তাকে নোবেল দেওয়া উচিত ছিল। দুই দলের মারামারিতে যোগ না
দিয়ে চুপচাপ বসে থাকা লোকদের পুরস্কৃত হওয়া উচিত। যারা এ সংঘাত মেটানোর
সামান্য উদ্যোগ নিয়েছেন তাদেরও পুরস্কার প্রাপ্য। তেমন কিছু যে প্রফেসর
ইউনূস করেননি তা নয়। তিনি বঙ্গরণাঙ্গনে শান্তি স্থাপনের জন্যও নোবেল পেতে
পারতেন। ক্ষুদ্রঋণের পাশাপাশি নোবেল কমিটি বাংলাদেশের চলমান যুদ্ধে তার
অবদানের কথাও বলতে পারত। ড. ইউনূসের শান্তি পুরস্কার আবার যে অশান্তি
সৃষ্টি করল তার পেছনে আছে হিলারি ক্লিনটনের সফর। এ সফরকে প্রথমে সফলতা
হিসেবেই দেখা হচ্ছিল সরকারের তরফে। কিন্তু ক্রমেই খোলাসা হতে থাকে যতটা
সফলতা হিসেবে দেখা হচ্ছে, সফলতা তারও থেকে কিছুটা কম। এই বোধ থেকে
মন্ত্রীরা মুখ খুলতে শুরু করেছেন। শুধু মুখ নয়, চশমা খুলে, চোখ খুলে তারা
চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন, কঠোর সমালোচনায় অবতীর্ণ হচ্ছেন, খোলা মাঠে লড়াই করতে
বলছেন। মানুষ ভেবেছিল, হিলারির সফরের পর শান্তি আসবে। অবস্থা বলছে, শান্তি
নয়_ অশান্তিই আসছে। হিলারি অনেকের সঙ্গেই মিললেন; কিন্তু শান্তি এলো না,
এলো না, এলো না। হিলারির পূর্বসূরিরা এ দেশে শান্তি স্থাপন করে দিয়ে গেছেন
অতীতে। তাই হিলারির প্রতিও আমাদের আহ্বান, আপনি সামনের বার শান্তির বারতা
নিয়ে আসুন। এই যুদ্ধক্ষেত্রে শান্তি স্থাপন করে নোবেল শান্তি পুরস্কার
জেতার সুবর্ণ সুযোগ লাভ করুন। নোবেল কমিটির কাছেও আমাদের আবেদন, এ দেশে
শান্তি স্থাপনের ইস্যুকে যেন পুরস্কারের বিবেচনায় গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হয়।
এছাড়া শান্তি স্থাপনের আর কোনো পথই খোলা নেই।
No comments:
Post a Comment