গতকাল অর্থাৎ ১৬ মে ব্রিটেনে প্রথমবারের মতো পালিত হলো জাতীয় ফ্ল্যাশ ফিকশন দিবস। খবরটা পড়ার পর আবশ্যিকভাবে পাঠকের প্রথম প্রশ্ন হবে_ কী দিবস? হ্যাঁ, ঠিকই তো পড়েছি, লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকায় স্পষ্টভাবেই লিখেছে, ফ্ল্যাশ ফিকশন দিবস। দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো_ কী বস্তু বা ঘটনা এই ফ্ল্যাশ ফিকশন? ফ্ল্যাশ ফিকশন কাহিনীভিত্তিক সাহিত্য আঙ্গিকেরই একটি ধারা। ইংরেজি ভাষায় ছোট গল্প, বড় গল্প, উপন্যাসের মতো ফর্ম বা সাহিত্য আঙ্গিকগুলোকে এককথায় ফিকশন বলা হয়। সাহিত্য মোটাদাগে তিন ভাগে বিভক্ত_ ফিকশন, নন-ফিকশন, কবিতা। নন-ফিকশন হলো, যা কাহিনী ও কবিতা নয় তা-ই। ফিকশনের ক্ষুদ্রতম শিল্প আঙ্গিকটিকে বলা হচ্ছে ফ্ল্যাশ ফিকশন। প্যারাবোল আঙ্গিকটি ইতিমধ্যেই পরিচিত। অধিকাংশ নীতিকাহিনী প্যারাবোল আঙ্গিকে লিখিত বলে পৃথিবীর বিখ্যাত প্যারাবোলগুলোর সঙ্গে আমরা কমবেশি পরিচিত। ফ্ল্যাশ ফিকশন আকারে প্যারাবোলের সমান হতে পারে। প্যারাবোলের চেয়ে বড় বা ছোটও হতে পারে। তবে ছোটগল্পের ধাঁচটা আত্মস্থ করেই তার বিকাশ। তাই এর আরেক নাম ছোট ছোট গল্প বা মাইক্রোফিকশন বা ক্ষুদ্র গল্প। এক ঝলকে যে গল্প পড়া যায় তার নামই ফ্ল্যাশ ফিকশন। উদাহরণ দেওয়া যাক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে থেকে। তিনি একদা ছয় শব্দের একটি গল্প লিখেছিলেন। সেটি আদর্শ ফ্ল্যাশ ফিকশন হিসেবে স্বীকৃত।For sale : baby shoes, never worn. 'বিক্রয়ের জন্য :বাচ্চাদের অব্যবহৃত জুতা।' অল্প কথায় অনেক কথা বলার এ পদ্ধতিতে অনেকেই গল্প লিখেছেন। বলা হয়ে থাকে, এ গল্পগুলো সবার পকেটে থাকে। শুধু বের করে লিখে ফেললেই হলো। ব্রিটেনে ক্ষুদ্র গল্পের এমন একটি দিবস কেন উদযাপিত হচ্ছে? আর্ট ফর্ম বিশেষত যেগুলো ক্ষীয়মাণ সেগুলোর চর্চা অব্যাহত রাখার জন্যই এমন উদ্যোগ। ঘটা করে মাইক্রো ফিকশনের প্রচার ও প্রসার বৃদ্ধি করার জন্য রীতিমতো প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হয়েছে। লেখকদের উৎসাহিত করার জন্য আছে নানা আয়োজন। ফ্ল্যাশ ফিকশনের আয়তন কত বড় হতে পারে? এক শব্দ থেকে ১ হাজার শব্দ পর্যন্ত হতে পারে এর আয়তন। কীভাবে লেখা যায় এই বিশেষ ধরনের গল্প?
ডেভিড গ্যাফনে লেখার উপায় বাতলে দিয়েছেন।
গল্পের মাঝখান থেকে শুরু করুন।
কেননা, এত ছোট গল্পে দৃশ্য ও চরিত্র প্রতিষ্ঠা করার মতো যথেষ্ট সময় পাওয়া যাবে না।
বেশি চরিত্র আনবেন না।
ছোট লিখতে গেলে অনেক চরিত্র আনলে চলবে না। এমনকি কোনো নাম ব্যবহারের প্রয়োজন নাও হতে পারে। নাম ব্যবহার করবেন তখনই, যখন এটা দিয়ে অনেক কিছু বোঝা যাবে।
গল্পের শেষটা যেন শেষে না থাকে।
ছোট বলে গল্পের শেষে মূল ঘটনা বলে দেওয়ার প্রবণতা লেখককে আচ্ছন্ন করে তুলতে পারে। পাঠক যেখানে পড়া শেষ করবেন, সেখানে গল্পটা থাকলে তা আকর্ষণীয় হবে না। তাই মাঝে গল্পটা বলতে হবে। অন্য স্থানগুলোতে গল্পের অনুষঙ্গ থাকতে পারে।
শ্রমসাধ্য শিরোনাম দিন, যাতে সেটি অর্থপূর্ণ হয়।
শেষ লাইনটা এমনভাবে লিখুন, যাতে সেটা ঘণ্টার মতো বেজে ওঠে।
শেষ লাইনে এমন একটা সিম্ফনি বেজে উঠুক, যাতে গল্পটা অন্য কোথাও নিয়ে যায়।
প্রথমে বড় করে লিখে পরে ছোট করুন।
প্রথমে বিস্তারিত লিখে তারপর ছোট করুন। যেভাবে একটি পাথর থেকে ভাস্কর্য তৈরি হয়, সেভাবে গল্পটা ছেঁকে তুলুন।
No comments:
Post a Comment