Thursday, July 29, 2010

আসল পরিচয় ব্যাংক ব্যালান্সে!


সৈয়দ কাশুয়া ইসরায়েলি আরব লেখক। বয়সে তরুণ। জন্ম ১৯৭৫ সালে ইসরায়েলেরই তিরায়। তিনটি আলোচিত উপন্যাসের লেখক। হারিটজ, জেরুজালেম পোস্ট ইত্যাদি পত্রিকায় বিদ্রূপাত্মক কলাম লেখেন। স্ত্রী-পুত্র নিয়ে থাকেন জেরুজালেমেই। সম্প্রতি তার উপন্যাস 'সেকেন্ড পারসন' বের হয়েছে। এ নিয়ে জেরুজালেম পোস্টেই তার একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে। স্বভাবে তির্যক মন্তব্যে অভ্যস্ত সৈয়দ কাশুয়া। সাক্ষাৎকারের শুরুতেই তার স্বভাবের কিছু পরিচয় দিয়েছেন সাক্ষাৎকারগ্রহীতা। বলেছেন, কেউ যদি তার বেস্ট সেলিং বই নিয়ে কাশুয়াকে জিজ্ঞেস করেন তো উত্তর মিলবে, 'এটি তেমন কিছুই নয়, ব্যঙ্গকাহিনীর মোড়কে একটা সস্তা মেলোড্রামা।' এমন একজন ইসরায়েলি লেখককে নিয়ে আগ্রহ বোধ করার স্বাভাবিক কারণ তৈরি হয়। তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল আইডেনটিটি নিয়ে। ইসরায়েলে বসে তিনি আইডেনটিটির ব্যাপারটা কীভাবে দেখেন? তিনি বলেন, ইসরায়েলে বসে আইডেনটিটি নিয়ে আলোচনা করা কঠিন। কারণ কেউ যখন আইডেনটিটি ক্রাইসিসের কথা বলেন তখন বুঝতে হবে তিনি মানসিক কোনো সংকটের কথা বলছেন। আর কেউ যখন আইডেনটিটির কথা বলেন তখন বুঝতে হবে তিনি জাতীয় পরিচয়ের কথাই বোঝাচ্ছেন। কিন্তু ইসরায়েল তো যুদ্ধের মধ্যে আছে। তিনি বলেন, এখানে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের কোনো ব্যাপার নেই। এখানে আমরা কোনো একটি পক্ষের হয়েই জন্ম নেই। আর আজীবন সেই পক্ষেরই চিহ্নিত হয়ে থাকি। কাশুয়াকে প্রশ্ন করা হয় তার উপন্যাসের চরিত্র নিয়ে। তিনি উত্তর দেন একটু ঘুরিয়ে, একটু গভীরে গিয়ে, আগের প্রশ্নের সূত্র ধরে। বলেন, ব্যক্তিগতভাবে তুমি কে? এ প্রশ্নের উত্তর জানাটা আমার কাছে প্রয়োজনীয় মনে হয় না। এটা ঠিক, চরিত্ররা তাদের কাজ, পাঠাভ্যাস, বন্ধুদের দ্বারা চিহ্নিত হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলেই এ পরিচয় ঠুনকো হয়ে যায়। এগুলোকে ভুয়া মনে হয়। কাশুয়া বলেন, 'বাছা, সব কথার শেষ কথা হলো ব্যাংক অ্যাকাউন্টই হলো তোমার আইডেনটিটি। তুমি হয়তো তরুণ বলেই আমি কে এমন বিলাসী প্রশ্ন জাগছে। এখন অপেক্ষা করো প্রথম ঋণ নেওয়ার ঘটনা পর্যন্ত। বুঝবে তোমার প্রকৃত আইডেনটিটি কোথায়।' কাশুয়া আরও নানা কথা বলেছেন। বলেছেন, পরিবার-পরিজন, স্ত্রী-পুত্র, সামাজিক ও পারিবারিক দায়বদ্ধতা নিয়ে। আর অবশ্যই তার নতুন উপন্যাস নিয়ে। বলা হচ্ছে, এ উপন্যাস নাকি তার আত্মজীবন থেকেই প্রভাবিত। বলেছেন, তার নিজের আচার-আচরণ নিয়েও। আপনি কি বিনয়ী? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি স্মরণ করেছেন মাহমুদ দারবিশের একটি উক্তি। মাহমুদ দারবিশ বলেছেন, বিনয় হলো নির্বুদ্ধিতারই একটি ধরন। তো কাশুয়া বলেন, আমি নির্বোধ কিন্তু বিনয়ী নই। সরলার্থে আমি সাফল্যের সঙ্গে যুক্ত হতে পারি না। আমি নিজেকে প্রশ্ন করি, আমি একটি বই লিখেছি। প্রচুর বিক্রি হচ্ছে। রিভিউগুলোও ভালো। এর বেশি আমি কি চাই? কেন আমি এ জন্য খুশিতে নাচতে পারব না?
এসব নানা কথার ভিড়ে সৈয়দ কাশুয়ার একটি কথা মনে গভীর রেখাপাত করে গেল। ফরাসি দার্শনিক জঁ বদ্রিয়ার বলেছিলেন, তুমি যা কেনো তা-ই তোমার পরিচয়। কাশুয়া এক কাঠি সরেস। ইসরায়েলে বসে জাতীয় পরিচয়ের প্রশ্নটি তুলে রেখে তিনি বললেন, জাতীয় পরিচয় নয়, গোষ্ঠী নয়, রাষ্ট্র নয়, ব্যাংকে গচ্ছিত টাকাই তোমার পরিচয়। এখানে গিয়েই ঠেকে সব পরিচয়ের রাস্তা। শেষ পর্যন্ত হয়তো এখানে গিয়েই পেঁৗছেছে পরিস্থিতি। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, রাষ্ট্র নির্বিশেষে এখানে গিয়েই মানুষ হয়তো থমকে দাঁড়ায়। বাজারের দুনিয়ায় তার বাজারদরটি বুঝতে পারে খুব সহজ মাপকাঠিতে।

No comments:

Post a Comment