Thursday, July 1, 2010

ডেথ অব দি ল্যারি কিং লাইভ


ল্যারি কিং লাইভের সঙ্গে পরিচয় নেই এমন টেলিভিশন দর্শক হয়তো খুবই কম। জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল সিএনএনের সরাসরি সম্প্রচারিত অনুষ্ঠান ল্যারি কিং লাইভ আদতে একটি টক শো। বলা হয়ে থাকে, ল্যারি কিং লাইভ হলো টক শোগুলোর পিতৃস্থানীয়। একটি টক শো কেমন হবে, কীভাবে সেটি জনপ্রিয় হবে এবং কীভাবে একজন সাক্ষাৎকারদাতাকে প্রশ্ন করা হবে এসব বিষয়ে রীতিমতো শিক্ষকের আসনে ল্যারি কিং।
সচেতন টক শো হোস্টরা ল্যারি কিংয়ের কাছ থেকে এখনও শেখেন। আর সেলিব্রেটি সাক্ষাৎকারদাতারা ল্যারি কিং লাইভে ডাক পাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকেন। কারণ এই অনুষ্ঠান প্রতিরাতে ১ মিলিয়ন মানুষ দেখেন। এতে কথা বলতে পারা মানে খবরের উৎস হয়ে যাওয়া। ল্যারি কিং লাইভ হলো এমন একটি অনুষ্ঠান যা গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান পেয়েছে। কারণ এ হলো দীর্ঘতম সময় ধরে চলতে থাকা একটি অনুষ্ঠান_ যার হোস্ট, চ্যানেল এবং সম্প্রচার সময় ২৫ বছর ধরে এক ছিল। কোনো হেরফের হয়নি। আর এই ২৫ বছরে ল্যারি কিং ৫০ হাজার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। সিএনএনের সবচেয়ে জনপ্রিয় অনুষ্ঠান এটি। এমনকি এও বলা হয়, এ অনুষ্ঠানকে টেক্কা দিতে পারে এমন অনুষ্ঠান এখনও আসেনি। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন ওঠে, ল্যারি কিংয়ের জনপ্রিয়তার রেসিপি কী? অনেকে বলেন তার সহজ ও সাবলীল কথনভঙ্গির কথা। তার তাৎক্ষণিক বুদ্ধিদীপ্তির কথা। কেউ বলেন, তিনি হোস্ট হিসেবে গেস্টদের প্রতি অত্যন্ত সদয়, এমন কথাও। আর সমালোচকরা বলেন, কিং গেস্টদের অনেক ছাড় দেন। আক্রমণাত্মক প্রশ্ন করেন না। ফলে নিউজমেকাররা তার কাছে আসতে এবং খোলাখুলি কথা বলতে পছন্দ করেন। সমালোচকরা বলেন, তিনি অধিকাংশ সময়ই প্রস্তুতিহীনভাবে সাক্ষাৎকার শুরু করেন। কিন্তু কিং বলেন অন্য কথা, সবচেয়ে ভালো প্রশ্নগুলো করার চেষ্টাই থাকে তার। ল্যারি কিং লাইভ নিয়ে আলোচনা ও গবেষণার শেষ নেই। এবার নতুন আলোচনার জন্ম দিলেন স্বয়ং ল্যারি কিং।
ক'দিন আগে একটা ব্লগ পড়ছিলাম। একটু কর্কশ ভাষাতেই ব্লগার লিখেছিলেন, সিএনএনের এখন উচিত ল্যারি কিংকে থামিয়ে দেওয়া। কারণ, লাইভ অনুষ্ঠানে ল্যারি কিং নাকি নানা ভুল করে বসছিলেন। ভুল হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। ল্যারি কিংয়ের জন্ম ১৯৩৩ সালে। বয়স অনেক হয়েছে। সরাসরি সম্প্রচারিত একটি অনুষ্ঠান চালানোর জন্য যত তৎপর ও তাৎক্ষণিক হওয়া দরকার তত সক্রিয় নিশ্চয় আর তিনি নেই। কিন্তু আমেরিকার মতো দেশে, কেবল নিউজ নেটওয়ার্কের মতো প্রতিষ্ঠানে নিশ্চয় এমন কোনো ব্যাপার নেই যে অযোগ্য হয়ে যাওয়ার পরও একজনকে দিয়ে একটি সরাসরি সম্প্রচারিত টিভি অনুষ্ঠান চালিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। তাই ব্লগের লেখাটি পড়ে একটু অবাকই হয়েছিলাম। বুধবার একটু বিস্মিত হয়ে পড়লাম ল্যারি কিংয়ের ঘোষণা। প্রতিদিনকার ল্যারি কিং লাইভ অনুষ্ঠানের আগে কিং নিজেই তার শোর মৃত্যু সংবাদ জানালেন। বললেন, 'আজকের অনুষ্ঠান শুরুর আগে আমি ব্যক্তিগত কিছু খবর আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে চাই। ২৫ বছর আগে নিউইয়র্কের গভর্নর মারিও কোমোর সাক্ষাৎকার নেওয়ার মধ্য দিয়ে এই টেবিলে আমি বসেছিলাম। আজকে অনেক বছর পর আমি লোকদের সঙ্গে কথা বলে এই অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি টানার সিদ্ধান্ত নিলাম।' সাংবাদিকদের স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন কিং, সিএনএনের পক্ষ থেকে তার ওপর কোনো চাপ ছিল না। তারা কোনোভাবে তার ওপর বিরক্তও ছিলেন না। শো বন্ধ করার পরও তিনি থাকবেন সিএনএনের সঙ্গেই। মাঝে মধ্যে বিশেষ অনুষ্ঠান করবেন, কিন্তু সেই ল্যারি কিং লাইভে আর তাকে দেখা যাবে না।

No comments:

Post a Comment