Sunday, August 1, 2010
আগে যদি জানাই ছিল তবে...
গত কয়দিনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড হয়ে গেল। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিউশন ফির ওপর সাড়ে চার শতাংশ ভ্যাট আরোপ করার পর শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে পড়েছিলেন। কেউ ফোড়ন কেটে বলবেন, রাস্তায় কেন নামবে শিক্ষার্থীরা? তাদের ক্যাম্পাসে নামতে পারে না? না নামতে পারে না, যে বিল্ডিংগুলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বলে আমরা চিনি সেখান থেকে নামলে সোজা রাস্তাই পড়ে। খুব কম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েরই ক্যাম্পাস আছে, যেখানে ছাত্ররা নামতে পারে। ফলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাস্তাতেই নেমেছে। রাস্তা বন্ধ হয়েছে, ভাংচুর হয়েছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষও হয়েছে। আর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নগরে বিক্ষোভ-মিছিল নিষিদ্ধ করেছে। শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি বেড়েছে তারা প্রতিবাদ করবে, রাস্তায় নামবে এটা স্বাভাবিক যুক্তি। আবার ঢাকার দুর্মূল্যের রাস্তা পথচারীদের জন্য খোলা রাখতে হবে সেটাও প্রত্যাশিত। কিন্তু যেটা প্রত্যাশিত নয় সেটি হলো, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আর সরকারের অবস্থান। শিক্ষার্থীদের যখন রাস্তায় নামতে হলো, আর পুলিশকে যখন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হলো তার আগে-পরে ভাবনা-চিন্তার অবকাশ ছিল। ভ্যাট বসিয়েছে সরকার। কিন্তু বসিয়েই ক্ষান্ত থেকেছে। ভ্যাট কে দেবে তা স্পষ্ট করেনি। এদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষগুলো সরকারের চেয়ে এককাঠি সরেস। ভ্যাট বসানোর পর তারা ধরেই নিয়েছেন, দেনেঅলাই দেবে। কে দেনেঅলা? শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ছাড়া আর কে? অতএব তারা আর স্পষ্ট করে জেনে নেওয়ারও দরকার বোধ করেননি যে কে ভ্যাট দেবে। ফলে শিক্ষার্থীরা সোজা রাস্তায় নেমে পড়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত নানা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অবশেষে পানি যখন অনেক গড়িয়েছে তখন সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রীরা বিষয়টাকে স্পষ্ট করে বললেন। জানালেন, শিক্ষার্থীদের ভ্যাট দিতে হবে না। মন্ত্রীদের যখন বিষয়টা জানা, তখন যুক্তির খাতিরে বলতেই হয় কর্তাদেরও জানা ছিল। যদি জানাই ছিল তবে আগে কেন বলেননি? এ প্রশ্নও উঠবে এখন। সঠিকভাবে জানা থাকলে, প্রথমেই মিডিয়ায় জানানো যেত, নিদেনপক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষগুলোকে বোঝানো যেত। যেদিন রাস্তায় প্রথম শিক্ষার্থীরা নামল তখনও বলা যেত। কিন্তু দেরিটা করা হলো কেন? এই অস্পষ্টতা কার স্বার্থে? মনে পড়ছে, হাসপাতালগুলোর রোগীদের ওপর ভ্যাট আরোপের কথা। ভ্যাট দেওয়ার কথা হাসপাতালের, কিন্তু হাসপাতালগুলো এতকাল রোগীদের কাছ থেকেই ভ্যাটের টাকা নিয়ে এসেছে। এ নিয়ে হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টে মামলাও চলেছে। শেষ পর্যন্ত আদালতের রায়ে রোগীরা ভ্যাটের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছেন। সেদিক থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভাগ্য যে কে ভ্যাট দেবে তা নিয়ে তাদের দীর্ঘকাল ধরে আদালতের বারান্দায় অপেক্ষা করতে হয়নি। বিচিত্র এই দেশ! ভ্যাট আরোপ হলো, সে ভ্যাট কে দেবে তাও স্পষ্ট করে বলা হলো না। ক্ষমতাধররা ক্ষমতাহীনের কাঁধে দায় চাপিয়ে ক্ষান্ত। কোথাওবা এ বলে তুমি দাও, ও বলে তুমি দাও। কিন্তু ভ্যাট আরোপের সময় একথা কি স্পষ্ট করে বলা যেত না এ না ও, কে আসলে ভ্যাট দেবে? নাকি এও এক জটিল অঙ্ক। যে অঙ্ক সঠিকভাবে কষতে পারবে ভ্যাট শেষ পর্যন্ত সে-ই দেবে?
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment