Wednesday, July 14, 2010

পুরনো গাড়ি


গাড়ির ক্ষেত্রে পুরনো কথাটি ভীষণ আপেক্ষিক। বিশেষ করে, বাংলাদেশের রাস্তায় যেসব গাড়ি চলে, তার সিংহভাগই নাকি পুরনো। খুব কম ভাগ্যবানই নতুন গাড়ি কিনতে এবং তা রাস্তায় চালাতে পারেন। অন্য দেশে এক-দু'হাত ঘুরে যে গাড়িটি বাংলাদেশে আসে, তার গুণ ও মান বিচার করে সেটিকে হয় নতুন গাড়ির শোরুমে কিংবা রিকন্ডিশন্ড গাড়ির ঝাঁকের মধ্যে সাজিয়ে রাখা হয়। তাই কেউ যদি পুরনো গাড়ির কথা তোলেন তবে প্রথমেই প্রশ্ন উঠবে_ কতটা পুরনো, কোন গাড়ির থেকে পুরনো, কেমন পুরনো? যখন অধিকাংশই পুরনো, তখন পুরনো বাছার নিয়মনীতি যদি স্পষ্ট না হয় তবে পুরনো বাছতে রাস্তা উজাড় হবে এ নিশ্চয় করে বলা যায়। আশার কথা, সব গাড়িকে পুরনো আখ্যা দিয়ে গাড়ি উজাড়ের অভিযান চালু হওয়ার সম্ভাবনা কম। বরং ইদানীং পুরনো গাড়ির বিরুদ্ধে যে অভিযান চালু হওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে, তার লক্ষ্য নাকি একেবারে লক্কড়-ঝক্কড় মার্কা গাড়িগুলো। ঢাকার রাস্তায় যারা পাবলিক পরিবহনে যাতায়াত করেন তারা ভালো করেই জানেন, দরকারের সময় একটি বাস কী মহার্ঘ বস্তু। আর সে যদি লক্কড়-ঝক্কড় মুড়ির টিন হয়, তাতেও অসুবিধা নেই। বাসে যদি সিটগুলো শ্যাওলা জমা হয়, তাতেও আপত্তি নেই। বসার জায়গা না থাকলেও ক্ষতি নেই। শুধু একটু দাঁড়ানোর জায়গা পেলে আর বাসটিকে কোনো রকমে চলতে দেখলেই যাত্রীরা খুশি। বলা বাহুল্য, মুড়ির টিন বলে কথিত পাবলিক পরিবহনগুলোই পুরনো গাড়িবিরোধী অভিযানের মূল লক্ষ্য। এ গাড়িগুলোর কামাই ভালো, কদরও ভালো; কিন্তু চেহারা ভালো নয়। বছরের পর বছর মেয়াদ-উত্তীর্ণ হয়ে চলছে এগুলো। পরিবেশ দূষণ করছে নানাভাবে। সবচেয়ে বড় কথা, একান্ত প্রয়োজন না হলে এ বাসগুলোকে দেখলে আর ভ্রমণের রুচি হয় না। যেমন এগুলোর চেহারা, তেমনি ব্যবস্থাপনা। যাত্রী হয়রানির চূড়ান্ত ব্যবস্থা তাদের বেশ রপ্ত। জনমত জরিপ করলে যে কেউ বলবেন_ অবশ্যই, অতি অবশ্যই এ গাড়িগুলো উঠিয়ে দিন। কিন্তু অনেকেই বেখবর যে, এ গাড়িগুলোই কোনো কোনো রুটের পরিবহনে সবেধন নীলমণি। এর আগে একবার এমন পুরনো গাড়িবিরোধী অভিযান চলেছিল। তখন দেখা গেল, সাধারণের ব্যাপক অসুবিধা হচ্ছে। আর সাধারণের এ অসুবিধাকে পুঁজি করে খারাপ ও লক্কড়-ঝক্কড় গাড়ির মালিকরা বেশ ফায়দা হাসিল করলেন। আরও কিছুদিন অচল গাড়ি চালানোর অনুমতি পাওয়া গেল। সত্যি বলতে, এমন অভিযান ভালো। অনন্তকাল চলতে পারে, চলা উচিত। কিন্তু তাতে সমস্যার সমাধান হবে কি-না কেউ বলতে পারে না। কারণ, যারা অভিযান পরিচালনা করছেন তারা হয়তো জানেন না, ডিম আগে না মুরগি আগে। রাস্তা থেকে গাড়ি উঠিয়ে তারপর গাড়ি কেনার বায়না পাঠালে চলে না। মানুষ তো ঘরে ফিরবে, ঘর থেকে অফিসেও যাবে। তাই প্রথমে গাড়ি কেনার বায়না দিতে হবে। নতুন গাড়ি নামাতে হবে। সেগুলো যখন যথেষ্ট জনপ্রিয় হবে, তখন পুরনো গাড়িতে কেউ সেধে উঠতে যাবে না। আর যদি যায়, তবে তখন পুলিশ নামিয়ে পুরনো গাড়ি উচ্ছেদ করলে কেউ কিছু বলবে না। ঢাকার রাস্তা থেকে পরিবেশ দূষণকারী মুড়ির টিনগুলো এভাবেই উচ্ছেদ সম্ভব। এভাবে না করে অন্যভাবে আগের মতো উচ্ছেদ করলে অবশ্য নিয়মিত বিরতিতেই এমন উচ্ছেদ অভিযানের দেখা মিলতে থাকবে। সেও মন্দ নয়। কর্তাব্যক্তিরা ভাবছেন, উদ্যোগ নিচ্ছেন তার প্রমাণ হিসেবে এমন অভিযানের যথেষ্ট গুরুত্ব আছে।

No comments:

Post a Comment