ইন্দর কুমার গুজরাল, সংক্ষেপে আইকে গুজরাল ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন
সাকুল্যে এক বছরেরও কম সময়। ১৯৯৭ সালের ২১ এপ্রিল থেকে ১৯৯৮ সালের ১৯ মার্চ
পর্যন্ত। ওই সময়কার ভারতের রাজনীতির অস্থির পরিস্থিতির কথা অনেকেরই মনে
পড়বে। কংগ্রেসের একাধিপত্যের পর হঠাৎ শুরু হয়েছে পরিবর্তনের হাওয়া। বড় দলের
জনপ্রিয়তা তছনছ করে রাজ্যে রাজ্যে গড়ে উঠেছে জনপ্রিয় সব আঞ্চলিক দল। জোট
বা কোয়ালিশনের রাজনীতি সরগরম। এই জোটের নেতৃত্বে কখনও বড়, কখনও ছোট, কখনও
মাঝারি দলের আধিপত্য ও প্রধানমন্ত্রিত্ব। বলা চলে, কোয়ালিশনের সরকারে হাত
পাকিয়ে টালমাটাল পরিস্থিতি সামলে ১৯৯৮ সালে অবশেষে বিজেপির রাষ্ট্রীয়
ক্ষমতায় আগমন। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন পিভি নরসিংহ রাও। তার পর
এক মাসের জন্য গদিতে বসেছিলেন অটল বিহারি বাজপেয়ি। বাজপেয়ির পর বছরখানেকের
জন্য গদিনসীন হয়েছিলেন এইচডি দেব গৌড়া। দেব গৌড়ার পর আইকে গুজরালের
ক্ষণজন্মা শাসন। টলোমলো ওই শাসনকালে কোনো প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে
সুদূরপ্রসারী নীতি প্রণয়ন দূরের কথা, অমন নীতির কথা চিন্তা করাও কঠিন। অথচ
নরসিংহ রাও, বাজপেয়ি, দেবগৌড়া, গুজরাল_ সবাই বেশ কিছু নতুন নীতির কথা
ভেবেছিলেন। শুধু ভাবনা নয়, তারা সে প্রক্রিয়ায় কিছু এগিয়েছিলেনও।
বাংলাদেশের কারও ভুলে যাওয়ার কথা নয়, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে
গঙ্গা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি হয়েছিল তা সম্ভব হয়েছিল এইচডি দেব গৌড়া
সরকারের আমলে। অন্য কোনো সরকার ক্ষমতায় থাকলে এমন চুক্তি সম্ভব ছিল কি-না
সে আলোচনা আজও চলছে। প্রাসঙ্গিকভাবে মনে পড়বে, ওই সময়েই ভারতের প্রত্যক্ষ ও
পরোক্ষ সহযোগিতায় ১৯৯৭ সালে পার্বত্য শান্তিচুক্তিও স্বাক্ষরিত হতে
পেরেছিল। অনেকেরই মনে পড়বে, সে সময় জ্যোতি বসু ভারতরাষ্ট্রের
প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রস্তাব পেয়ে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন পার্টির উল্টো
সিদ্ধান্তের কারণে। ভারতের অর্থনৈতিক উদারীকরণের প্রবক্তা হিসেবে পিভি
নরসিংহ রাওয়ের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক নীতির কথাও এখন সর্বজনস্বীকৃত। আর
আইকে গুজরালের অবদানের কথা তো সর্বজনবিদিত। তিনি প্রতিবেশীদের সঙ্গে
সম্পর্কোন্নয়নে যে তত্ত্ব দিয়েছিলেন তা রীতিমতো গুজরাল ডকট্রিন বলে খ্যাত।
আইকে গুজরালের জন্ম ১৯১৯ সালের ৪ ডিসেম্বর, মৃত্যু ৩০ নভেম্বর ২০১২। গুজরাল
পরিবার সাংস্কৃতিকভাবে খুব উজ্জ্বল। আইকে গুজরাল নিজে লেখক ও কবি। তার
স্ত্রী শীলা গুজরাল পাঞ্জাবি ভাষার নামকরা কবি। খ্যাতনামা চিত্রকর সতীশ
গুজরাল তার ভাই। গুজরাল পরিবারের জামাই অনুপ জালোটা। রাজনীতি ও শিল্পকলা
গুজরাল পরিবারের হাত ধরাধরি করে এগিয়েছে সবসময়। তবে সবকিছুর ওপর প্রতিবেশী
রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে আইকে গুজরালকে আমাদের বিশেষভাবে স্মরণ করতে হবে
তার নীতির কারণে।
কী ছিল গুজরাল ডকট্রিনে? নিকটবর্তী প্রতিবেশীদের ব্যাপারে ভারতের রাষ্ট্রীয় নীতি কী হওয়া উচিত তা গুজরাল পাঁচটি পয়েন্টে ব্যক্ত করেছিলেন। রাষ্ট্র হিসেবে ভারত যেহেতু তার প্রতিবেশীদের থেকে কখনও বিচ্ছিন্ন হতে পারবে না, তাই বন্ধুত্বপূর্ণ ও আন্তরিক সম্পর্ক নির্মাণের দিকেই তাকে এগোতে হবে।
১.সার্কভুক্ত দেশগুলোর মতো প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারত পারস্পরিক সহযোগিতা আশা করবে না। ভারত থাকবে উদার ভূমিকায়। প্রতিবেশীরা যা দেবে তা বিশ্বাস ও আস্থার সঙ্গে গ্রহণ করবে।
২.কোনো দক্ষিণ এশীয় দেশই নিজের ভূমিকে অন্য কোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কাজে লাগাতে দেবে না।
৩.কোনো রাষ্ট্রই অন্যের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না।
৪.দক্ষিণ এশীয় প্রতিটি রাষ্ট্রই পরস্পরের ভৌগোলিক ও আঞ্চলিক সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে।
৫.দক্ষিণ এশীয় দেশগুলো যে কোনো বিবাদ দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে সমাধা করবে।
বলাবাহুল্য, গুজরাল ডকট্রিন ভারতে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিল। শেষ পর্যন্ত এ নীতি অনুসৃতও হয়নি। ফলে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে অবিশ্বাস ও সন্দেহের সম্পর্ক এখনও অটুট। চারদিকের প্রতিবেশীদের নিয়ে ভারতও যে খুব সুখে আছে তা নয়। অথচ কে অস্বীকার করবে, শান্তিপূর্ণ দক্ষিণ এশিয়া প্রতিষ্ঠা করতে গুজরাল ডকট্রিনের বিকল্প আসলেই নেই?
কী ছিল গুজরাল ডকট্রিনে? নিকটবর্তী প্রতিবেশীদের ব্যাপারে ভারতের রাষ্ট্রীয় নীতি কী হওয়া উচিত তা গুজরাল পাঁচটি পয়েন্টে ব্যক্ত করেছিলেন। রাষ্ট্র হিসেবে ভারত যেহেতু তার প্রতিবেশীদের থেকে কখনও বিচ্ছিন্ন হতে পারবে না, তাই বন্ধুত্বপূর্ণ ও আন্তরিক সম্পর্ক নির্মাণের দিকেই তাকে এগোতে হবে।
১.সার্কভুক্ত দেশগুলোর মতো প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারত পারস্পরিক সহযোগিতা আশা করবে না। ভারত থাকবে উদার ভূমিকায়। প্রতিবেশীরা যা দেবে তা বিশ্বাস ও আস্থার সঙ্গে গ্রহণ করবে।
২.কোনো দক্ষিণ এশীয় দেশই নিজের ভূমিকে অন্য কোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কাজে লাগাতে দেবে না।
৩.কোনো রাষ্ট্রই অন্যের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না।
৪.দক্ষিণ এশীয় প্রতিটি রাষ্ট্রই পরস্পরের ভৌগোলিক ও আঞ্চলিক সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে।
৫.দক্ষিণ এশীয় দেশগুলো যে কোনো বিবাদ দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে সমাধা করবে।
বলাবাহুল্য, গুজরাল ডকট্রিন ভারতে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিল। শেষ পর্যন্ত এ নীতি অনুসৃতও হয়নি। ফলে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে অবিশ্বাস ও সন্দেহের সম্পর্ক এখনও অটুট। চারদিকের প্রতিবেশীদের নিয়ে ভারতও যে খুব সুখে আছে তা নয়। অথচ কে অস্বীকার করবে, শান্তিপূর্ণ দক্ষিণ এশিয়া প্রতিষ্ঠা করতে গুজরাল ডকট্রিনের বিকল্প আসলেই নেই?
No comments:
Post a Comment