কবি বলেছেন, নামে কী আসে যায়। গোলাপকে যে নামেই ডাকো, সে গোলাপই। সংখ্যার ব্যাপারেও হয়তো কবি বলতেন, সংখ্যাতেই বা কী আসে যায়। প্রতিটি দিনই সমান। প্রতিটি দিন সমান বললে তবু মন ভরছে না। কেননা, বিপুলা পৃথিবীর রহস্য অনন্ত। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত গবেষণা যেমন এসব রহস্য ভেদ করতে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তেমনি রহস্যাবৃত নানা পন্থাতেও লোকে রহস্যভেদের চেষ্টা করে চলেছে। গ্রহ-নক্ষত্র বিচার, রাশিফলের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ জানার চেষ্টা চলছে সমানে। গ্রহ-নক্ষত্র, রাশির মতো সংখ্যাতত্ত্ব নিয়েও মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। সংখ্যাতত্ত্বের প্রতি মানুষের অদম্য আকর্ষণের একটা চেহারা দেখা যাচ্ছে ১২-১২-১২ নিয়ে উন্মাদনায়। ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর তারিখটা সাজিয়ে ১২-১২-১২ লিখলে আকর্ষণীয় দেখায়। বিশেষ কোনো তারিখ মনে হতেই পারে। হিসাব অনুসারে এমন দিন এসেছিল ১৯১২ সালে। একশ বছর পর ২১১২ সালেও ফিরে আসবে এমন আরেকটি দিন। স্বাভাবিক নিয়মে এখন যারা বেঁচে আছেন, তারা ২১১২ সাল দেখে যেতে পারবেন না, যেমনভাবে ১৯১২ সালে বেঁচে থাকা কাউকে এখন খুঁজে পাওয়া কষ্টকর। ১২-১২-১২ কি বিশেষ তারিখ? কী হয়েছিল ১৯১২ সালের ১২ ডিসেম্বর। ইন্টারনেট ঘেঁটে খুব আগ্রহী হওয়ার মতো ঘটনা জানা যাচ্ছে না। ১৯১২ সালের পৃথিবী আজকের মতো এতটা কাছাকাছি ছিল না। তথ্যপ্রযুক্তি না থাকার কারণে পৃথিবীতে কোথায় কী ঘটেছে, তা নিয়েও খুব বেশি তথ্য নেই। তবে এ দিনের বড় কোনো ঘটনা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ নেই। আজ বড় কিছু ঘটবে কি? পৃথিবীব্যাপী অনেক জুটি
আজ বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হবে। ১২-১২-১২কে স্মরণীয় করে রাখবে ভালোবাসার বন্ধন। চিকিৎসকরা সন্তান প্রসব করানোর অনুরোধ পাচ্ছেন। সংখ্যা নিয়ে মানুষের মাতামাতিতে সংখ্যাতাত্তি্বকদের দ্বারস্থ
হওয়া ভালো। সন্তান জন্মদান নিয়ে সংখ্যাতাত্তি্বকদের মত হলো, ১২-১২-১২ খুব সৌভাগ্যের দিন। এ দিনে জন্ম নেওয়া শিশুদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। এমনকি এ দিনটি নতুন ব্যবসায়িক উদ্যোগের জন্যও শুভ। একটি জরিপ অনুসারে, ৭৫ হাজার জুটি আজ বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হতে যাচ্ছে। এমনকি বিয়ে করা দম্পতিরাও এ দিনে নতুন করে বিয়ে করতে যাচ্ছেন। আমাদের দেশে শীতকাল এমনিতেই বিয়ের জন্য উপযুক্ত সময় বলে বিবেচিত হয়। ১২-১২-১২ ম্যাজিকে বিয়ের সংখ্যাটা বেড়ে যাবে, সন্দেহ নেই। এরই মধ্যে দু'জন তারকার বিয়ে নিয়ে মিডিয়া সরগরম। একজন ক্রিকেটের অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। আরেকজন জনপ্রিয় মডেল ও অভিনেত্রী মোনালিসা। বিশেষ দিনে এই দুই বিয়েতে সবার শুভকামনা থাকবে। বিখ্যাত ভারতীয় সংখ্যাতাত্তি্বক ড. বিবেক চোপড়ার মতে, '১২-১২-১২ খুব তাৎপর্যপূর্ণ দিন। ১২-১২-১২ বা ১২-১২-২০১২ যোগ করলে ৫ ও ৯_ এ দুটি সংখ্যা পাওয়া যায়। এ দুটো সংখ্যা মঙ্গল ও চাঁদের প্রতীক। আমরা যদি ১ ও ২কে যোগ করি, তাহলে ফল মিলবে ৩। এটি বৃহস্পতির প্রতীক। ৫, ৯, ৩_ তিনটি সংখ্যাই সৌহার্দ্যপূর্ণ ও শান্তিময় বিশ্বজগতের পক্ষে যুক্তি নির্দেশ করে।' মায়া ক্যালেন্ডার অনুসারে, ২০১২ সময়ের শেষ বিন্দু। এ বছরই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কথা। ধ্বংসের দিনক্ষণ একটি হিসাবমতে ২১ ডিসেম্বর। সে দিক থেকে ১২-১২-১২ অশুভ সংখ্যা বলে অনেকের মত।
এ দিন নিয়ে দুঃসংবাদের ভবিষ্যদ্বাণী আরও আছে। অস্ট্রেলিয়ার জ্যোতিষী জেসিকা অ্যাডামস সংবাদ মাধ্যমকে বার্তা পাঠিয়ে জানিয়েছেন, ১২ ডিসেম্বর ইন্টারনেট ব্যবহার বড় ধরনের বিপর্যয় হতে পারে। মিডিয়াতেও ঘটতে পারে অশুভ কোনো ঘটনা। তিনি অনলাইন ডাটার নিরাপদ ব্যাক-আপ তৈরির জন্যও পরামর্শ দিয়েছেন।
এসব বিষয়ে বিবেক চোপড়ার মত হলো, 'এই তারিখে পৃথিবী ধ্বংস হবে না। আমরা আনন্দিত চিত্তে ও নিরাপদে ২০১৩কে বরণ করে নিতে পারব।' কিন্তু কেন এ তারিখটির প্রতি মানুষের অসীম আগ্রহ? বিবেক চোপড়ার মতো অনেকের মতে, লোকে আসলে অনেক দিনের ভিড়ে মনে রাখার মতো একটা দিন চায়। স্মরণীয় একটা দিনের সঙ্গে নিজের জীবনের ঘটনাবলিকে মেলাতে চায়। ঐতিহাসিক ঘটনাবলির সঙ্গে মানুষ জড়াতে পারে ভাগ্যচক্রে। ক্যালেন্ডারের বিশেষ একটি দিনের সঙ্গে জড়াতে ভাগ্যযোগ লাগে না। স্রেফ পরিকল্পনা থাকলেই চলে। সে কারণেই ১২-১২-১২ নিয়ে এমন উন্মাদনা। এ দিনটি বিশেষ কি-না, তা দিন ফুরালেই বোঝা যাবে। কিন্তু দিন ফুরাবার আগেই গণমাধ্যমের কল্যাণে দিনটি বিশেষ হয়ে উঠেছে। সাধারণ মানুষের সম্মিলিত উদ্যোগ দিনটিকে ইতিমধ্যেই ঐতিহাসিক মর্যাদা দিয়ে ফেলেছে। ১২-১২-১২ নিয়ে মানুষের উন্মাদনা ও আগ্রহ স্পর্শ করেছে বিখ্যাত গায়কদেরও। তারা নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে একটি কনসার্টের আয়োজন করেছেন। গাইবেন বনজোভি, ডেভ গ্রোল, বিলি জোয়েল, এলিসিয়া কি'স, ক্রিস মার্টিন, ব্রুস স্প্রিংস্টিন, এডি ভেডার, রজার ওয়াটার্স, কেনি ওয়েস্ট, পল ম্যাককার্টনি। বিশাল আয়োজন নিঃসন্দেহে। এ আয়োজন থেকে পাওয়া অর্থ ব্যয় করা হবে হারিকেন স্যান্ডি-বিধ্বস্তদের সেবায়। মানুষের কল্যাণে মানুষের জন্য একটা উৎসব তৈরি হলো_ এও কি কম পাওয়া?
No comments:
Post a Comment