বিপুলা পৃথিবীর অসীম রহস্যের অনেকটা এখনও মানুষের জানার বাইরে। গবেষণা,
অভিযান, জানার জন্য নানা তৎপরতা চলছে সমানে। গহিন জঙ্গলে, পর্বতচূড়ায়,
মাটির নিচে, সমুদ্রের গভীরে_ সর্বত্র বিস্তৃত এ তৎপরতা। অবশ্য ভূলোকেই
সীমাবদ্ধ নয় আয়োজনগুলো, বিশ্ব ছেড়ে মহাবিশ্বের দিকে নজর পড়েছে বহুদিন হলো।
আকাশ ছেদ করে মহাকাশের দিকে যাত্রা শুরুর পরও বহুদিন কেটে গেছে। মঙ্গলে
নেমেছে কিউরিওসিটি। নিত্যনতুন খবর মিলছে সেখানকার। চাঁদে মানুষের পদচ্ছাপ
পড়ার খবর পুরনো হতে হতে পাঠ্যবই থেকেও হারিয়ে গেছে। বলতে গেলে
মহাকাশচারীদের কাছে চাঁদ এখন ডালভাত। সকাল-বিকেল চাঁদে যাওয়া-আসা চলছে যেন।
চাঁদে যাওয়াটা এতটাই হালকা ব্যাপারে পরিণত হয়েছে যে, রাষ্ট্রীয় আয়োজনে
নামি মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে চন্দ্রগমনেই আর সীমাবদ্ধ নেই
ব্যাপারটি। চাঁদের রাস্তাও বেসরকারি খাতে যাওয়ার জোগাড়। বেসরকারি খাত
মানেই উন্মুক্ত বাণিজ্য। দিব্যি প্রস্তাব চলে এসেছে, যে কেউ (টাকা থাকলে)
চাঁদে পিকনিক করতে যেতে পারবেন। শহর থেকে বেরিয়ে কোনো পিকনিক স্পটে একদিনের
বেড়িয়ে আসাটা আমাদের কাছে ডালভাত। কেউবা সপ্তাহ বা আরেকটু বেশি সময়ের জন্য
পাহাড়ে, জঙ্গলে, নদী বা সমুদ্রেই চলে যান। আরেকটু বেশি আয়োজন হলে পাশের
দেশগুলোতে ছোট সফর। যাদের সময়-সুযোগ বেশি তারা হয়তো আমাজনের গহিন জঙ্গলে,
কেনিয়ার তৃণভূমিতেই গেলেন_ চাঁদের রাতে পিরানহা আর বৃহৎ সিংহের সঙ্গে রাত
কাটালেন। তাই বলে চাঁদে? আমাদের দেশের লোকেরা অপেক্ষাকৃত ঘরকুনো। ঘর থেকে
আঙিনা তাদের কাছে বিদেশ। কিন্তু পশ্চিমের লোকেরা তেমন নয়। তারা বহু অভিযান,
আবিষ্কারের নেশায় কত দুর্গম অভিযান চালিয়েছে তার হিসাব নেই। দেখা যাবে,
সেসব দেশের লোক দলে দলে চাঁদে যাচ্ছে। সামার ভ্যাকেশনে চাঁদ ভ্রমণ আইডিয়াটা
মন্দ নয়। দেখাদেখি আমাদের দেশের কেউ কেউ যদি চাঁদে চলে যান তবে সেটা
রীতিমতো একটা খবর হয়ে যাবে। কোনো ধনকুবের হয়তো সবার কাছে বিদায় নিয়ে,
গুরুজনদের দোয়া নিয়ে চাঁদে চলে গেলেন। ফিরে আসার পর তার সাক্ষাৎকার ছাপা
হওয়া শুরু হলো। আহা রূপালি চাঁদ! পূর্ণিমার রাতে সে চাঁদের আলো যখন জলের
ওপর এসে পড়ে, যখন মাঠের ভেতর এসে নামে তখন কত যে আলো ও ছায়ার খেলা তৈরি হয়!
কত যে রহস্য রাতের আলো ও ছায়ায়! রহস্যের আধার সেই চাঁদ না জানি কত মোহনীয়,
রমণীয়। চাঁদের আলো পড়লে ভাঙা ঘরেও কত সুখ আসে। স্বয়ং চাঁদ না জানি কত
সুখের! সত্যিই কি তা-ই? চাঁদ তো খটখটে এক উপগ্রহ। হাঁটতে চাইলে উড়তে হবে।
সেখানে না আছে পানি না আছে গাছ। সমুদ্র, নদী কিছুই নেই। অভিযাত্রী মানুষকে
কে বোঝাবে পৃথিবী থেকেই চাঁদ সুন্দর। গবেষণার প্রয়োজনে চাঁদে যাওয়াটাই
কর্তব্য। উপগ্রহটিকে তলিয়ে দেখা উচিত। কিন্তু ভ্রমণের আইডিয়াটা বোধ হয় একটু
বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে। লোকে পকেটের টাকা গচ্চা দিয়ে খটখটে উপগ্রহ থেকে অযথা
ঘুরে আসবে কেন? টাকা খরচ করার জায়গা না থাকলে ধনকুবেররা জনহিতকর কাজেই খরচ
করুন না। আর অভিযানপ্রিয় হলে নাসার মতো প্রতিষ্ঠানেই যোগ দিয়ে ফেলা যায়।
বেসরকারি খাতে চাঁদের রাস্তা ইজারা দিলে সাধারণ মানুষের মনেও যে
চাঁদযাত্রার চাহিদা তৈরি হবে সেটি সামাল দেওয়া কিন্তু কঠিন। সবচেয়ে বড় কথা
হলো, চন্দ্র ভ্রমণ হবে সোনার ডিম পাড়া হাঁস হত্যা করে তার পেট থেকে ডিম বের
করার সমান। রূপালি চাঁদ কতটা রূপালি সেটা বই পড়লেই জানা যায়। খরচাপাতি করে
চক্ষুকর্ণের বিবাদভঞ্জনের কারণ কী?
No comments:
Post a Comment