Friday, October 5, 2012

রোগ প্রতিরোধক বিষণ্নতা!

 ভ্যান গঘ
বিষণ্নতা একটি রোগ_ এমন কথার সঙ্গে কমবেশি অনেকেরই পরিচয় আছে। শুধু ওষুধ কোম্পানির বিজ্ঞাপনের বদৌলতেই নয়, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানও বিষণ্নতাকে একটি রোগ হিসেবে চিহ্নিত করতে অভ্যস্ত। কেউ বিষণ্নতায় আক্রান্ত হলে তার প্রতি সাধারণ পরামর্শ হলো অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। বিষণ্নতা একজন মানুষকে শুধু কর্মোদ্যমহীন, সমাজবিচ্ছিন্নই করে তোলে না, অনেক ক্ষেত্রে বিষণ্নতা আত্মহত্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আটলান্টিক ম্যাগাজিন বিষণ্নতাজনিত মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। তাতে বলা হয়েছে_ সারা পৃথিবীতে হত্যা ও যুদ্ধ এই দুই কারণে যত মৃত্যুর ঘটনা ঘটে তার বিষণ্নতাজনিত আত্মহত্যার সংখ্যা বেশি। আমেরিকান জার্নাল অব পাবলিক হেলথের একটি গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, সে দেশে সড়ক দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর হারই এ যাবৎ বেশি ছিল। কিন্তু সম্প্রতি আত্মহত্যা সড়ক দুর্ঘটনাকে ছাড়িয়ে গেছে। আত্মহত্যার বেশিরভাগ ঘটনাই ঘটে বিষণ্নতা ও এক ধরনের মানসিক বৈকল্যের কারণে। বিষণ্নতা এক ধরনের দুরারোগ্য দুঃখ ও বেদনাবোধ তৈরি করে। মানুষের জেনম সম্পর্কে যত জানা যাচ্ছে ততই বিজ্ঞানীদের এ ধারণা প্রবল হচ্ছে যে, বিষণ্নতা মানিয়ে নেওয়া যায় না। কিন্তু বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, আমাদের পূর্বপুরুষরা বিষণ্নতার সঙ্গে অভিযোজিত হওয়ার ক্ষমতা রাখত। আটলান্টিক ম্যগাজিনে প্রকাশিত প্রবন্ধে ব্রেইন গ্যাব্রিয়েল এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন। একটি গবেষণাপত্রে ইমোরি ইউনিভার্সিটির ড. অ্যান্ড্রিউ মিলার ও অ্যারিজোনা ইউনিভার্সিটির ড. চার্লস রেইসন জানিয়েছেন_ মানুষের কিছু জিনে বিষণ্নতা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করে বটে; কিন্তু অন্যদিক দিয়ে এটি ইনফেকশনের ক্ষেত্রে প্রতিরোধক ব্যবস্থাও তৈরি করে। হাইপোথিসিসে তারা বলেছেন, বিষণ্নতার সঙ্গে যে জিনগুলোর সংযোগ সেগুলো প্রতিরোধক ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত। যে জিনগুলো বিষণ্নতার মূলে এবং একে উস্কে দেয় সেগুলো মানুষের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার জন্য সহায়ক। বিশেষভাবে শিশুদের জন্য এগুলো খুবই সহায়ক। তবে প্রেক্ষাপটতা অতীতের। ১৯০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ তিন মরণ ব্যাধি ছিল ইনফেকশনজনিত। এগুলো হলো, নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা, ডায়রিয়া। এসবের কারণে ৫ বছরের কম বাচ্চাদের ৩০.৪% মারা যেত। এই ইনফেকশনজনিত রোগগুলোর ক্ষেত্রে বিষণ্নতা কার্যকর প্রতিরোধক সিস্টেমকে সক্রিয় করতে পারত। সামাজিক একাকীত্ব, শক্তিক্ষয়, আনন্দদায়ক কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলার ঘটনাগুলো আমাদের পূর্বপুরুষদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে জাগিয়ে তুলত। পরিহাস হলো এখানেই যে, আগে মৃত্যুর প্রধান কারণ ছিল ইনফেকশনজনিত রোগভোগ আর তার প্রতিরোধক তৈরি হতো বিষণ্নতা থেকে। আর এখন চিকিৎসাবিজ্ঞানের কল্যাণে ইনফেকশনজনিত মৃত্যুর হার নেমে এসেছে। কিন্তু দুরারোগ্য বিষণ্নতাজনিত মৃত্যু অর্থাৎ আত্মহত্যা মহামারীর রূপ নিয়েছে। মিলার ও রেইসন বিশ্বাস করেন, প্রচণ্ড চাপ মানুষকে বিষণ্নতার দিকে চালিত করে আবার এটিই প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে চালু করে দেয়। ডাক্তাররা ধারণা করছেন, আমাদের পূর্বপুরুষরা যে ধরনের পরিবেশে বাস করতেন তাতে প্রচণ্ড চাপের মুখে তাদের শারীরিক ক্ষতি ও আহত হওয়ার আশঙ্কাও ছিল ব্যাপক। আর এই আহত অবস্থা তাদের ইনফেকশন ও মৃত্যুর দিকে নিয়ে যেত। কিন্তু একই সঙ্গে বিষণ্নতায় পতিত হওয়ার কারণে তাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থাও চালু হতো। এটা অনেকটা আগুন প্রতিরোধী ব্যবস্থা হিসেবে স্মোক ডিটেক্টর ব্যবহারের মতোই কাজ করত। ডাক্তারদের এই গবেষণা চলছে, চলুক। নিশ্চয়ই এর চূড়ান্ত ফল জানা যাবে শিগগিরই। আপাতত এই তথ্যই লাভজনক যে বিষণ্নতা শুধু রোগ নয়, রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থাও।
মূল লেখা : http://www.theatlantic.com/health/archive/2012/10/the-evolutionary-advantage-of-depression/263124/

No comments:

Post a Comment