যবনিকা বলে একটি কথা আছে। শব্দটির অর্থ পর্দা বা আড়াল। নাটকের শেষে মঞ্চে
যবনিকাপাত ঘটে। যবনিকা ভারী বা পাতলা কাপড়ের হতে পারে। কিন্তু লৌহ যবনিকা
কি হয়? এমন পর্দা কি আছে যা ইতিহাসের দুইকাল পর্বের মধ্যে লৌহ যবনিকা তৈরি
করে ফেলতে পারে? যাদের চোখের সামনে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙন, দুই জার্মানির
একত্রীকরণ, পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে ভাঙন ও ক্ষমতার পালাবদল দেখেছে তাদের
কাছে হয়তো লৌহ যবনিকা শব্দের একটি অর্থ থাকতে পারে। তৎক্ষণাৎ হয়তো এ কথা
কারও মনে হয়নি যে, চোখের সামনে একটা লোহার পর্দা পড়ে গেল। কিন্তু ক্রমেই
স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, পৃথিবী আর আগের মতো নেই। শুধু রাজনীতিতেই নয়,
চিন্তাবিশ্বেও ঘটে গেছে গুরুতর ব্যত্যয়। এককালের সেলিব্রেটি ও ডাকসাইটে
মার্কসবাদী চিন্তাবিদদের খোঁজ পরবর্তীকালে কেউ সেভাবে নিয়েছে কি? যার
মতাদর্শ রাজত্ব করে না তার মতাদর্শের খোঁজ কে নেয়? বেদনা সঞ্চার করার মতো
খবর হলেও আসলে সত্য যে, এরিক হবসবমের মৃত্যুর আগে আমরা কি মনে রেখেছিলাম
যে, তিনি জীবিত আছেন? যুক্তরাজ্যের মতো দেশে পুঁজিবাদের অন্তরের ভেতর তিনি
ছিলেন আমরণ মার্কসবাদী তাত্তি্বক ও ইতিহাসবিদ হিসেবে। বেঁচেছিলেন ৯৫ বছর।
গার্ডিয়ান পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে বড় করে তার মৃত্যুসংবাদ দেখে তাই একটু
অপরাধবোধও হলো। এরিক হবসবমের মতো বহু মার্কসবাদী পণ্ডিত, তাত্তি্বক আজও
আছেন। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সময়ের ভাষায় কথা বলতে না পেরে অনেকেই জীবিত
অবস্থায় হারিয়ে গিয়েছেন। অথচ কত প্রয়োজনীয় ছিল তাদের চিন্তাচর্চা। রাজনীতি
রাতারাতি তাদের হাওয়া করে দিতে চেয়েছে। রাজনীতি বলে দিয়েছে তারা
অপ্রাসঙ্গিক। বিস্মৃতি তাহলে সবচেয়ে বড় রাজনীতি! এরিক হবসবম লিখেছেন, এইজ
অব রেভলিউশন, এইজ অব ক্যাপিটাল, এইজ অব এম্পায়ার। তিনটি মিলে নাইনটিনথ
সেঞ্চুরি ট্রিলজি বলে আখ্যায়িত হয়। আধুনিক ইতিহাস পাঠ করতে গেলে ওই ট্রিলজি
অবশ্য পাঠ্য বলে গণ্য। এরিক ও টিও রেঞ্জার মিলে একটি তত্ত্ব দিয়েছিলেন।
ইনভেন্টেড ট্র্যাডিশন বা আবিষ্কৃত ঐতিহ্য হিসেবে পরিচিত ওই তত্ত্ব।
'ইনভেনশন অব ট্র্যাডিশন' বইয়ে তারা ওই তত্ত্ব উপস্থাপন করেছিলেন। ঐতিহ্য
বলতেই এমন বিষয় বোঝানো হয় যা পুরনো। কিন্তু কোনো কোনো সময় ঐতিহ্যকে
সাম্প্রতিক হিসেবে আবিষ্কার করা সম্ভব। আবিষ্কার হলো এমন একটি প্রক্রিয়া
যার মধ্য দিয়ে ঐতিহ্যের নতুন সূচনা ও নবায়ন ঘটানো হয়। এ প্রক্রিয়ায় আধুনিক
জাতি ও জাতীয়তার ধারণাগুলোর বিকাশ ঘটে।
এরিক জন আর্নেস্ট হবসবমের জন্ম ১৯১৭ সালে মিসরের আলেকজান্দ্রিয়ায় একটি ইহুদি পরিবারে। বেড়ে উঠেছেন অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা ও জার্মানির বার্লিনে। হিটলার ক্ষমতায় আসার বছরে ১৯৩৩ সালে তারা চলে আসেন ব্রিটেনে। জীবনের বেশিরভাগ সময় তিনি কাটিয়েছেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে। শিষ্যদের কাছে তিনি প্রিয় মার্কসিস্ট হিসেবে পরিচিত। মার্কসবাদী অভিধা সত্ত্বেও একাডেমিক অঙ্গনে তার অবদান বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গেই স্বীকৃত হয়েছে সে দেশে। তার শেষ বইটি প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিল ২০১৩ সালে। কাজও শেষ দিকে। এর আগেই চলে গেলেন তিনি। ১ অক্টোবর ২০১২ তারিখে।
এরিক জন আর্নেস্ট হবসবমের জন্ম ১৯১৭ সালে মিসরের আলেকজান্দ্রিয়ায় একটি ইহুদি পরিবারে। বেড়ে উঠেছেন অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা ও জার্মানির বার্লিনে। হিটলার ক্ষমতায় আসার বছরে ১৯৩৩ সালে তারা চলে আসেন ব্রিটেনে। জীবনের বেশিরভাগ সময় তিনি কাটিয়েছেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে। শিষ্যদের কাছে তিনি প্রিয় মার্কসিস্ট হিসেবে পরিচিত। মার্কসবাদী অভিধা সত্ত্বেও একাডেমিক অঙ্গনে তার অবদান বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গেই স্বীকৃত হয়েছে সে দেশে। তার শেষ বইটি প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিল ২০১৩ সালে। কাজও শেষ দিকে। এর আগেই চলে গেলেন তিনি। ১ অক্টোবর ২০১২ তারিখে।
No comments:
Post a Comment