Thursday, October 11, 2012

মোটে চারটি দেশ

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন নিয়ে সে দেশের মিডিয়া বহু আগে থেকেই সরব। শুধু সরব বললে ভুল হবে, প্রার্থীদের অন্ধিসন্ধি এমনকি দলের অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ লোকদের নিয়েও বড় বড় স্টোরি ইতিমধ্যে ছাপা হয়েছে। কেউ একটু বেফাঁস কথা বলে উঠলেই তা জাতীয় বিতর্কের উৎস হয়ে পড়ছে। সবাই একযোগে সেই বক্তব্যের বিহিত করার জন্য উঠেপড়ে লাগছেন। চলছে নানা জরিপ, বিশ্লেষণ, নানামুখী ক্যাম্পেইন বা প্রচারণা কৌশল। নির্বাচনে মিডিয়ার বিপুল ভূমিকা সেখানে। প্রার্থীরাও মিডিয়াকে খুশি করতে চান। তাই নির্বাচনী বাজেটের বড় একটি অংশ বিজ্ঞাপন বাবদ মিডিয়ার পকেটে ঢুকছে। মার্কিন মিডিয়া মানে তো শুধু মার্কিন মিডিয়া নয়_ এ মিডিয়ার বৈশ্বিক প্রভাব আছে। নিউইয়র্ক টাইমস বা লস এঞ্জেলেস টাইমসে একটা খবর প্রকাশিত হলে তা যেমন যুক্তরাষ্ট্রে প্রভাব ফেলে, বাংলাদেশেও তার প্রভাব পড়ে। ফলে মিডিয়ার দৌলতে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন স্বাভাবিকভাবে আন্তর্জাতিক বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। আর কোনো দেশের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটে না। পৃথিবীতে আরও অনেক প্রভাবশালী দেশ হয়তো আছে। কিন্তু সব দেশে গণতান্ত্রিক রীতি নেই। আবার গণতন্ত্র থাকলেও সে গণতন্ত্রে মিডিয়ার ভূমিকা এক রকম নয়। আর যুক্তরাষ্ট্র যে সবার ওপরে সে বিষয়টি জেনে ও মেনে সে দেশের মিডিয়া যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়কে সবার বিষয়ে পরিণত করার দক্ষতা অর্জন করতে পেরেছে। পৃথিবীব্যাপী বহু মানুষ যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছে ইতিমধ্যে। ভোটাধিকার শুধু যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের কিন্তু ভোটারদের বাইরে বহু মানুষ হয় বারাক ওবামা নয়তো মিট রমনির পক্ষ নিয়ে বসে আছেন। এ অবস্থান কি শুধু মিডিয়ার জন্যই? গভীরভাবে দেখলে বোঝা যাবে, এর পেছনে আরও বহু কারণ আছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় কে রিপাবলিকান না ডেমোক্রেট সেটা অনেক দেশের জন্যই ফ্যাক্টর। বিদেশ নীতি নিয়ে দুই দলের মধ্যে গুরুতর তফাত নেই। কিন্তু দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্য আছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অন্যান্য দেশের সম্পর্কে সূক্ষ্ম প্রভাব পড়ে ক্ষমতার পালাবদলে। তাই সবার নজর সেদিকে থাকে। বাংলাদেশের জন্য হয়তো দু'দলই সমান। কিন্তু সিরিয়ার জন্য দু'দলের অবস্থান একরকম হবে না, লিবিয়ার জন্যও হবে না। কিছু পার্থক্য হবেই। এ জন্য সেখানকার মানুষ বেশি করে হয়তো লক্ষ্য রাখছেন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের দিকে। শুধু যে বাইরের দেশগুলোই লক্ষ্য রাখে নির্বাচনের দিকে তা নয়। প্রার্থীরাও বাইরের দিকে খেয়াল রাখেন। যুক্তরাষ্ট্রে লাতিন আমেরিকান ভোটার আছেন, এশীয় ভোটার আছেন আবার ইসরায়েলি ভোটার আছেন। এদের সমর্থন আদায়ের জন্য এথনিক নানা সূত্রকে উজ্জীবিত রাখার চেষ্টা করা হয়। প্রার্থীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটারদের দুর্বল পয়েন্টগুলোকে পরিতৃপ্ত করার চেষ্টাও করেন। কিন্তু ভোটাররা কী ভাবেন? আমেরিকান নির্বাচন নিয়ে বহু বিষয় আমরা জানি। প্রেসিডেন্ট, ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের পরিবার-পরিজন, অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী, মেয়ের জন্মদিন, বিয়েবার্ষিকী কিছুই আর ভোটের মধ্যে অজানা থাকে না। সে তুলনায় ভোটারদের কথা তেমন কিছুই জানা যায় না। নেতাদের সামনে উচ্ছ্বসিত ভক্তদের দেখায় মিডিয়া। মনে হয়, ভোটাররা দু'ভাগে বিভক্ত। মাঝে মধ্যে জরিপ হয়, কে জিতবে শুধু তা নিয়েই নয়, কার বক্তব্য ভালো হলো তা নিয়েও জরিপ হয়। তাতেও ভোটারদের মনোভাব বোঝা যায়। কিন্তু এসবের ডিটেইল খুব মেলে না। যেমন, একটি প্রশ্ন খুব স্বাভাবিক। যুক্তরাষ্ট্রের সব দেশের অবস্থান অনুসারে আলাদা গুরুত্ব আছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ কোন কোন দেশকে ফ্যাক্টর মনে করে? নির্বাচনকে সামনে রেখে কান্টার মিডিয়া নামে একটি মিডিয়া গ্রুপ এ নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করেছে। তাদের গবেষণায় উঠে এসেছে চারটি দেশের নাম। সাকল্যে এই চারটি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের ভোটারদের কাছে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। দেশ চারটি কেন গুরুত্ব বহন করে তা নাম শুনলেই বোঝা যাবে। প্রথম চীন গুরুত্ব বহন করে এর বাণিজ্যের কারণে। চীনের পরেই আছে ইরাক, আফগানিস্তান ও ইসরায়েল। কান্টার মিডিয়ার এই জরিপটির কথা জানা গেল আটলান্টিক ম্যাগাজিনের অনলাইন থেকে।

No comments:

Post a Comment