জাতির উদ্দেশে বক্তৃতা দিতে গিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং
সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন, টাকা কি গাছে ধরে? দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি
বিচার করে মনমোহন সিংকে এমন কঠোর উক্তি করতে হয়েছে। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন,
টাকা সহজলভ্য নয়। চাইলেই টাকা মেলে না। কিন্তু সমালোচকরাও বসে নেই। মনমোহন
কেন এ কথা বললেন, তার উদ্দেশ্য কী ইত্যাদি নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু
হয়েছে। সম্প্রতি রাজনীতিক যশোবন্ত সিং পত্রিকায় কলাম লিখে বলেছেন, হ্যাঁ,
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী টাকা গাছেই ধরে। তার বক্তব্য হলো, প্রধানমন্ত্রী না
জানলেও সামান্য লোকেরাও জানে টাকা গাছে ধরে। কৃষিনির্ভর অর্থনীতিতে বলতে
গেলে গাছই টাকার একমাত্র উৎস। আমরা শস্য বিক্রি করে টাকা পাই।
শিল্পকারখানাতেও গাছ কাজে লাগে। গবাদিপশু গাছের ওপর নির্ভর করেই বেড়ে ওঠে।
গাছ আমাদের খাদ্যও জোগায়। মজার ব্যাপার হলো, অর্থনীতির এই অন্যতম খুঁটি গাছ
থেকে টাকাও তৈরি হয়। টাকা যেহেতু কাগজে তৈরি, অতএব গাছের উপাদান ব্যবহার
করেই টাকাও তৈরি হয়। সমালোচকরা প্রমাণ করে দিচ্ছেন, টাকা গাছেই ধরে। কিন্তু
ভারতের অর্থনীতির যে পরিস্থিতি তাতে প্রমাণ করলেই গাছ থেকে টাকা পাড়া
যাচ্ছে না। টাকা পেড়ে যাবতীয় সমস্যার সমাধানও করা যাচ্ছে না। বস্তুত ভারতীয়
সরকারকে বহু অর্থনৈতিক বাধা অতিক্রম করেই কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে।
জোট সরকার নানা অর্থনৈতিক ইস্যুতেই ক্ষণে ক্ষণে টালমাটাল হয়ে উঠছে।
সম্প্রতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে সরকার ছাড়লেন তার মূলেও আছে অর্থনৈতিক
প্রসঙ্গ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সহসা এ বছর নেমে
এসেছে। নানা সংস্কার দরকার, বিপ্লবী কর্মসূচিও জরুরি। কিন্তু নাজুক
সরকারের পক্ষে তেমন উদ্যোগ সম্ভব হচ্ছে না। কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছে
মনমোহন সরকার। যে ব্যক্তির হাতে একদা ভারতের অর্থনৈতিক সংস্কারের সূত্রপাত
ঘটেছিল যিনি ছিলেন নতুন সমৃদ্ধ ভারতের উদ্গাতা তার হাতেই অর্থনীতির এমন
বেহাল পরিস্থিতি, তাই কঠোর সমালোচনার জন্ম দিচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, প্রশাসক
হিসেবে মনমোহন অতটা দক্ষ নন। যে সিদ্ধান্ত আজ নিতে হবে সে সিদ্ধান্ত তিনি
নিচ্ছেন কাল। যে ওয়ালমার্ট বন্ধ করে দিচ্ছে পশ্চিমারা সে ওয়ালমার্টকে তিনি
এখন ভারতে ব্যবসা করার অনুমতি দিচ্ছেন। তেলের দাম বাড়ছে। বিরোধীরাও ইস্যু
পেয়ে বন্ধ পালন করছেন। প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। বাম-ডান মিলে মনমোহনকে বেকায়দায়
ফেলতে সবাই প্রস্তুত। কিন্তু মনমোহন সরকার ম্যানেজ করতে পারছে না কিছুই।
গোলমাল চলছেই। এত গোলমালের মধ্যে মনমোহনও মৌনব্রত পালন করে চলছিলেন। সে
মৌনব্রত অনেকের প্রশংসাও পেয়েছিল। কিন্তু মৌন থেকে তো সমস্যার সমাধান হয়
না। সব সমালোচনাকে নিরুত্তর যেতেও দেওয়া যায় না। তাই শেষ পর্যন্ত তাকে
বলতেই হলো, টাকা কি গাছে ধরে? টাকা গাছে ধরে বটে। কিন্তু তার জন্য সময় দিতে
হয়। অর্থনীতি যখন সমস্যায় পড়ে তখন নগদ টাকার দরকার হয়। এই টাকা কিন্তু
গাছে মেলে না। কিন্তু এই কথা সমালোচকদের বোঝাবে কে?
No comments:
Post a Comment