Thursday, January 12, 2012

ইউক্যালিপটাস

ইউক্যালিপটাস বৃক্ষ দেখতে মনোহর। আকাশের দিকে মাথা উঁচিয়ে সটান দাঁড়িয়ে থাকা এমন বৃক্ষ দেশীয় জাতের মধ্যে দুর্লভ। এভাবে দাঁড়িয়ে থাকা বৃক্ষের মধ্যে একমাত্র গগন শিরিষের সঙ্গেই এর তুলনা চলে। ইউক্যালিপটাস গাছ বাড়ে দ্রুত। ইউক্যালিপটাস শোভিত অঙ্গনের সৌন্দর্যও অন্যরকম। অনেক সময় আশপাশের কোনো এলাকায় মনোহর সৌন্দর্য দেখে আমরা আপন মনে বলে উঠি, ছবির মতো সুন্দর। অথবা এমন দৃশ্য শুধু বিদেশেই দেখতে পাওয়া যায়। যেন সুন্দর হতে হলে কোনো দৃশ্যকে ছবিতে স্থান পেতে হবে কিংবা বিদেশি হতে হবে। ইউক্যালিপটাস শোভিত অঙ্গনগুলো এমন ছবির মতো কিংবা বিদেশি দৃশ্যের মতো হয়ে উঠতে পারে। অবশ্য দেখতে সুন্দর হলেও কাজে খাটো নয়। কাঠ যথেষ্ট ভালো, ইলেকট্রিক খুঁটি তৈরিতে নাকি ইউক্যালিপটাসের জুড়ি নেই। অল্প সময়ে কেজো কাঠের উৎপাদন করতে হলে ইউক্যালিপটাস যথার্থ নির্বাচন। এত ভালো একটা গাছ হলেও ইউক্যালিপটাসের মধ্যে অহিতকর উপাদানও কম নয়। ইউক্যালিপটাস নিজে বাড়ে সত্য, কিন্তু বাড়তে গিয়ে সে অন্য গাছের জীবনীশক্তি শোষণ করে। আশপাশের বৃক্ষরাজিকে বাড়তে দেয় না। এ গাছে পাখি বাসা বানাতে পারে না। ফলে বাগানের মধ্যে এ গাছ নিতান্তই অনাহূত বলে বিবেচিত হওয়ার কথা। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে বিদেশ থেকে আমদানি করে লাখ লাখ ইউক্যালিপটাস গাছ আমাদের দেশে লাগানো হয়েছে। শুধু ইউক্যালিপটাস নয়, অ্যাকাশিয়া এমনকি যে চেরি গাছের ফলন এ দেশে হতেই চায় না, সে চেরিও শত শত লাগানো হয়েছে। অনেকে বলেন, এটা পরজীবিতার লক্ষণ। বিদেশের অনেক শহরে ইউক্যালিপটাস, অ্যাকাশিয়া-শোভিত রাস্তা আছে। ফলে কেউ কেউ নাকি চেয়েছিলেন আমাদের রাস্তাগুলোর পাশে বিদেশি গাছ থাকুক। শুধু রাস্তায় নয়_ প্রাঙ্গণে, চত্বরে, মাঠেও বিদেশি গাছের বনায়ন হয়েছে। নিশ্চয় এটি অপরিপকস্ফতা ও অপরিকল্পনার ফল। আমাদের দেশীয় হাজার জাতের গাছ আছে। এসব গাছ ফল দেয়, ফুল দেয়, ছায়া দেয়, কাঠও দেয়। খুঁজলে লম্বা-উঁচু এবং সুদর্শন গাছও মিলতে পারে। কিন্তু দেশি গাছ বিসর্জন দিয়ে আমরা বিদেশি গাছ দিয়ে বনায়ন করেছি। প্রকৃতিতে তার কুফলও ফলেছে যথেষ্ট। কিন্তু শোধরাতে গিয়ে দেরি হচ্ছে। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা, মূলত ইউক্যালিপটাস অ্যাকাশিয়া নিধন করে দেশি গাছ লাগানোর পক্ষে মত দিলেও কোনো এক অজানা কারণে এখনও দেশজুড়ে এসব ক্ষতিকর গাছের রাজত্ব। অবশ্য ধীরে ধীরে কিছু অগ্রগতি হচ্ছে। যেমন সম্প্রতি সংসদ ভবন এলাকায় ৪৭২টি ইউক্যালিপটাস গাছ কাটার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গাছ কাটার এমন সিদ্ধান্ত সাধুবাদযোগ্য। আরও আশার কথা যে, এসব গাছ কেটে ফলদ গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ দৃষ্টান্ত সংসদ কর্তৃপক্ষের বাইরে অন্যরা অনুসরণ করলে শুভ ফল মিলবে। আমাদের দেশে রাস্তার পাশে কিংবা পাবলিক প্লেসে নিষ্ফলা বৃক্ষ লাগানোর পক্ষে যুক্তিগুলো খুব অদ্ভুত। বলা হয়ে থাকে, ফলদ বৃক্ষ লাগালে সে ফল লোকে খেয়ে ফেলবে, তাই নিষ্ফলা বৃক্ষ লাগানো হয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ফল লোকে খেয়ে ফেললে অসুবিধাটা কোথায়? লোকে খেয়ে পুষ্টি পাবে। লোকে যদি নাও খায় তবে পাখি খাবে। এ রকম এক স্বার্থবাদী সংকীর্ণ চিন্তা কার মাথায় এসেছিল কে জানে। কিন্তু সে চিন্তা আমাদের অনেক ক্ষতি করেছে। এখন এজমালি জায়গায় ফলদ গাছ দেখাই যায় না। এখন সংসদের সিদ্ধান্তের পর অন্যরাও ইউক্যালিপটাস কেটে ফলদ গাছ লাগালে সেটি ধীরে ধীরে ভালো ফল দিতে পারে।

No comments:

Post a Comment