টাইম ম্যাগাজিন সাধারণত তাদের প্রকাশিতব্য সংখ্যাটি ছাপা কাগজে প্রকাশের
আগেই ইন্টারনেটে প্রকাশ করে। ইন্টারনেটের সুবিধা হলো সেখানে যুক্তরাষ্ট্র,
এশিয়া, ইউরোপ এবং সাউথ প্যাসিফিকের চারটি সংস্করণই পরপর দেওয়া থাকে। চাইলে
যে কেউ যে কোনো সংস্করণ পড়তে পারেন। ছাপা কাগজে যারা টাইম ম্যাগাজিন পড়েন
তাদের সে সুযোগ থাকে না। এশিয়ার দেশগুলোর পাঠকরা এশীয় সংস্করণই সাধারণত
বাজারে কিনতে পারেন। ইন্টারনেটের সুবিধা হলো, প্রতিটি সংস্করণ মিলিয়ে পড়া
যায়। তাতে সূক্ষ্ম ও স্থূল অনেক পার্থক্য থাকে। যেমন, একবার যুক্তরাষ্ট্র ও
ইউরোপীয় সংস্করণের একটি লেখার শিরোনাম দেওয়া হয়_ 'আফগানিস্তানে আমরা কী
করছি?' আবার এশিয়া ও সাউথ প্যাসিফিক সংস্করণে একই লেখার শিরোনাম_
'আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র কী করছে?' পার্থক্যটা খেয়াল করার মতো। ২৪
অক্টোবর টাইম ম্যাগাজিনের যে সংখ্যা প্রকাশ হবে তার তিনটি সংস্করণের বিষয়
একই, সেই আফগানিস্তান_ 'কেন যুক্তরাষ্ট্র কখনও আফগানিস্তানকে বাঁচাবে না?'
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের জন্য প্রকাশিত সংস্করণের বিষয়_ 'নিশ্চুপ
সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রত্যাবর্তন'। 'দ্য রিটার্ন অব দ্য সাইলেন্ট মেজরিটি'।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে সাম্প্রতিক ঘটনাবলি নিয়ে অনেকের আগ্রহ আছে। সবাই
বুঝতে চান কী ঘটছে। বোঝার ক্ষেত্রে টাইমের পর্যবেক্ষণ অবশ্যই প্রভাব ফেলে।
তারা যেভাবে বিষয়টাকে নিশ্চুপ সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রত্যাবর্তন হিসেবে আখ্যায়িত
করেছে তাকে অনেকেই যথার্থ মনে করবেন। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে করপোরেট
কোম্পানিগুলোর যে একাধিপত্য তৈরি হয়েছে রাষ্ট্রীয় নীতিতে তাদেরই রমরমা।
সাধারণের মতের বিশেষ গুরুত্ব নেই। মত দেওয়ার সুযোগও নেই। সেখানকার সমাজে
জনমত বলে যে বিষয়টির অস্তিত্ব তাও করপোরেটদের নিয়ন্ত্রণাধীন। ফলে বহুকাল
সাধারণের কথা সেখানে শোনা যায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের মন্দার সময় সাধারণ লোকে
ভুগেছে, চাকরি হারিয়েছে, কষ্টে দিনযাপন করেছে। কিন্তু খুব বেশি প্রতিবাদ
রাস্তায় দেখা যায়নি। কিন্তু এবার মন্দার পূর্বাভাসেই রাস্তা ফুঁসে উঠেছে।
মার্কিনরা ওয়ালস্ট্রিট দখলের কর্মসূচি দিয়েছে। ওয়ালস্ট্রিট সেখানে করপোরেট
কোম্পানি, ব্যাংক-বীমার আখড়া। ওয়ালস্ট্রিটমুখী কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারকে
বার্তা দিতে চাইছে মানুষ। সরকার, রাজনীতি ও দেশ পরিচালনায় করপোরেট
আধিপত্যের অবসান চাইছে। অকুপাই ওয়ালস্ট্রিট বা ওয়ালস্ট্রিট দখলের কর্মসূচি
যারা পালন করছে তাদের অধিকাংশই তরুণ। কোনো কোনো পত্রিকায় তাদের কিডস বা
নিতান্তই বাচ্চা বলে অভিহিত করা হয়েছে। মজার ব্যাপার হলো, বাচ্চা ছেলেদের
আন্দোলন কিন্তু বাচ্চা থেকে ক্রমে বড় হচ্ছে। আমেরিকার আন্দোলন ইউরোপ ছাড়িয়ে
আফ্রিকা পর্যন্ত দোলা দিয়েছে। সর্বত্র করপোরেটবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।
অকুপাই ওয়ালস্ট্রিট মুভমেন্ট দেখে অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, এবার টুইটার
ফেসবুকের ঘরেই আগুন লাগল। টুইটার ফেসবুকের মতো সামাজিক নেটওয়ার্কগুলোর
জন্মস্থান আমেরিকা। কিন্তু এ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে আরব বিশ্বে একটির পর
একটি দেশ স্বাধীন হচ্ছে। তরুণরা বড় বড় আন্দোলনের জন্ম দিচ্ছে। এমনকি ভারতে
দুর্নীতিবিরোধী অভিযানেও প্রযুক্তির বিপুল প্রভাব। এসব দেখে উৎসাহিত হয়েছে
আমেরিকার তরুণরা। তারা প্রশ্ন করেছে, ওখানে হলে এখানেও সম্ভব নয় কেন? লেডি
গাগার ভক্ত, জাস্টিন বেইবারের অনুরক্ত, ঘরকুনো স্বভাবের, চ্যাটে মগ্ন একটি
প্রজন্ম ভার্চুয়াল বাস্তবতার পর্দা ভেদ করে বাইরে বেরিয়ে আসছে। পরস্পরের
সঙ্গে আগুন ভাগ করে নিচ্ছে, ছড়িয়ে দিচ্ছে। কিন্তু তারা কি আনতে পারবে নতুন
যুগ? এই পৃথিবীর মধ্যে আরেকটি পৃথিবীর উত্থানের সম্ভাবনা কি আসন্ন?
No comments:
Post a Comment