Wednesday, August 4, 2010

নাওমি ও ব্লাড ডায়মন্ড


নাওমি ক্যাম্পবেলকে সবাই চেনেন। ব্রিটিশ সুপার মডেল নাওমি। লন্ডনে শপিং করা অবস্থায় তাকে আবিষ্কার করেন ফ্যাশন জগতের লোকেরা। আর শিগগিরই মিলান ও প্যারির ক্যাটওয়াকগুলোতে এবং বিখ্যাত সব ম্যাগাজিনের কভারে তার দেখা মিলতে থাকে। শুধু সুপার মডেল নয়, তাকে বিশ্বের এক নম্বর সুপার মডেল হিসেবেও গণ্য করা হতো। নানা আইনি জটিলতার জন্ম দিয়েও বিখ্যাত হয়েছেন তিনি। নাওমি আজ হাজিরা দিতে যাচ্ছেন হেগের আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে। বিষয় গুরুতর। এ নিয়ে নানা তর্ক-বিতর্ক চলছে মিডিয়ায়। ঘটনা এত দূর গড়িয়েছে যে, আন্তর্জাতিক আদালত নাওমির ইচ্ছা অনুসারে ৩ তারিখে নির্দেশ দিয়েছে সুপার মডেলের ব্যক্তিগত বিষয়ের নিরাপত্তার জন্য কেউ ট্রাইব্যুনাল বিল্ডিংয়ে হাজির হওয়ার সময় বা সেখানে অবস্থান করার সময় তার ছবি তুলতে পারবে না। কোর্ট বলেছেন, নাওমি ক্যাম্পবেলের খ্যাতির কারণে তার প্রাইভেসি সংক্রান্ত বিষয়গুলো বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। ফলে কোর্ট এই আদেশ জারি করেছেন। প্রশ্ন হলো, এই সুপার মডেলকে কেন কোর্টে হাজিরা দিতে হবে? প্রশ্নটির উত্তর খুঁজতে হলে চিনতে হবে চার্লস টেলরকে। জানতে হবে ব্লাড ডায়মন্ড কী জিনিস। লাইবেরিয়ার ২২তম প্রেসিডেন্ট চার্লস টেলর এখন আন্তর্জাতিক আদালতে বন্দি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ যুদ্ধাপরাধের। সিয়েরা লিয়নের গৃহযুদ্ধের সময় তিনি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছেন বলে তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা চলছে। টেলরের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সিয়েরা লিয়নের গৃহযুদ্ধ চলার সময় তিনি বিদ্রোহীদের অস্ত্র সরবরাহ করেছিলেন। আর এর বিনিময়ে তিনি তাদের কাছ থেকে নিয়েছিলেন হীরা। যুদ্ধরত এলাকা থেকে বেআইনিভাবে যে হীরা উত্তোলন করে যুদ্ধ ব্যয়ের কাজে লাগানো হয়, তাকে সাধারণভাবে ব্লাড ডায়মন্ড বলা হয়। যুদ্ধ ও হীরার সম্পর্ক আফ্রিকায় খুব পরিচিত। এই হীরা কনফ্লিক্ট ডায়মন্ড, ওয়ার ডায়মন্ড, হট ডায়মন্ড হিসেবেও পরিচিত। এডওয়ার্ড জুয়িক ব্লাড ডায়মন্ড নামে একটি সিনেমাও তৈরি করেছেন হলিউডে। সিয়েরা লিয়নের গৃহযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তৈরি এ ছবিটি পাঁচটি একাডেমী পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল। ব্লাড ডায়মন্ড ও চার্লস টেলরের সঙ্গে নাওমি ক্যাম্পবেলের সম্পর্কের পেছনে আছে একটি সেলিব্রেটি ডিনার। ডিনারের হোস্ট ছিলেন বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা। ঘটনা ১৯৯৭ সালের। ম্যান্ডেলার আমন্ত্রণে কেপটাউনে হাজির হয়েছিলেন মিয়া ফারো, কুইঙ্কি জোনস, চার্লস টেলর, নাওমি ক্যাম্পবেলসহ অনেক তারকা। সেখানে চার্লস টেলর নাওমির প্রতি আকৃষ্ট হন। ঘটনা এতদূর পর্যন্ত গড়ায় যে, সেই সন্ধ্যাতেই নাওমির দরজায় টেলরের করাঘাত পড়ে। তিনি নাওমিকে উপহার দেন এক বা একাধিক বড় হীরা। এই মূল্যবান উপহারে নাওমি কাত হয়ে যান। কোথাকার জল কোথায় গিয়ে হাজির। এখন নাওমিকে কোর্টে হাজিরা দিয়ে বলতে হবে তিনি চার্লস টেলরের কাছ থেকে ব্লাড ডায়মন্ড নিয়েছিলেন কি-না। যদি প্রমাণিত হয় যে, নাওমি ক্যাম্পবেলের কাছ থেকে হীরা নিয়েছেন, তবে মারাত্মক ঘটনা ঘটবে। কেননা এ যাবৎ টেলর বলে এসেছেন, তার কাছে কোনো হীরা ছিল না। নাওমি স্বীকার করলে টেলর ফেঁসে যাবেন এবং এর ফলে আফ্রিকায় হীরার বিনিময়ে অস্ত্রের যে অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে তা প্রমাণিত হবে। ফলে ঘটনা এখন নাওমির দিকে তাকিয়ে আছে। নাওমি আজ কী বলেন তার ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু। সুপার মডেল, গৃহযুদ্ধ, আফ্রিকা, একজন সাবেক প্রেসিডেন্ট, ম্যান্ডেলার ডিনার পার্টি! ঘটনাটি হলিউডের যে কোনো সিনেমাকে হার মানাবার জন্য যথেষ্ট বটে।

No comments:

Post a Comment