Sunday, June 6, 2010

টুইটার ও ব্রেকিং নিউজ


বলিউডের বিখ্যাত অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন ব্লগিং শুরু করার পর ভারতে একটু তোলপাড় লেগে গিয়েছিল। বিগ বির পদাঙ্ক অনুসরণ করে অনেকেই ব্লগিংয়ের রাস্তায় হাঁটতে শুরু করেছিলেন। অনেকের মনে পড়বে, তখন আমাদের দেশের বিনোদন পাতাগুলোতে নিয়মিত বলিউডের বিভিন্ন অভিনেতা-অভিনেত্রীর ব্লগিং করার খবর প্রকাশিত হতো। ব্লগিং নিয়ে বলিউডের ওই তোলপাড়ের সময় পশ্চিমবঙ্গে জনপ্রিয় বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার একটি মন্তব্য প্রকাশ করেছিল। তাতে একটু পরিহাস করে বলা হয়েছিল, এবার সাংবাদিকদের যুগ শেষ। কারণ কী? কারণ নিউজ নিজেই কথা বলতে শুরু করেছে। আনন্দবাজার বলছিল, সাংবাদিকদের মোক্ষম অস্ত্র হলো, 'জানা যায়', 'বলা হয়ে থাকে', 'ধারণা করা হচ্ছে', 'খবরে প্রকাশ'। সাংবাদিকরা নাকি এই শব্দগুলো তখনই ব্যবহার করেন যখন তার হাতে তেমন তথ্য-প্রমাণ থাকে না। এমনকি তিনি যখন খবরটি উড়োকথা হিসেবে শুনেছেন তখনও নাকি স্রেফ একটি সূত্র জানায় বলে খবর হিসেবে চাউর করে দিতে পারেন। অমিতাভ বচ্চন তো বটেই, হলিউডের তারকারা খবরের বড় উৎস। ফলে তারা নিজেরা লিখতে শুরু করলে সাংবাদিকদের মোক্ষম অস্ত্র কাজে আসবে না বলেই মনে করছিল আনন্দবাজার। তারকারা ব্লগিং শুরু করার পর সাংবাদিকরা কতটা বিপদে পড়েছেন তা গবেষণার বিষয় বটে। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশে সংবাদের যে অনেক পরিবর্তন ঘটছে না নিশ্চিত করে বলা যায়। গত সপ্তাহে এমনই একটি খবর দিল লন্ডনের ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকা। তারা বলছে, মাইক্রো ব্লগিং সাইট 'টুইটার' এখন সাংবাদিকদের কাছে ব্রেকিং নিউজের অন্যতম সূত্র। পত্রিকাটি ব্রিটেনের নির্বাচনের পর দরকষাকষির সময় ডেভিড ক্যামেরন ও নিক ক্লেগের টুইটার মেসেজের উল্লেখ করেছে। টুইটারে এই নেতারা আভাস দিয়েছিলেন যে, তাদের ঐকমত্য হতে যাচ্ছে। ফলে টুইটারের স্ট্যাটাসকে উদ্ধৃত করেই ব্রেকিং নিউজের অনুসন্ধান শুরু হয়ে গিয়েছিল। ইন্ডিপেন্ডেন্ট এমন অনেক উদাহরণ দিয়েছে। তারা বলছে, টুইটার সোশ্যাল নেটওয়ার্ক নয়, আবার ব্লগ সাইটও নয়। টুইটারের মাধ্যমে একবারে মাত্র ১৪০ শব্দ শেয়ার করা যায়। ফলে দিন দিন ১০০ মিলিয়ন ব্যবহারকারীর মধ্যে টুইটার নিউজ সাইট হিসেবেই জনপ্রিয় হচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়ার একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানও সম্প্রতি বলেছে, লোকে টুইটারকে এখন খবরের অল্টারনেটিভ সাইট হিসেবেই গণ্য করছে। আর আমেরিকা-ব্রিটেনের রাজনীতিকরাও টুইটারের মাধ্যমে সাংবাদিকদের নানা সংবাদের ক্লু দিতে শুরু করেছেন। টুইটার এখন সাংবাদিকদের কাছে ব্রেকিং নিউজের উৎস। ইরানের নির্বাচনের আগে-পরে মীর হোসেইন মুসাভির সমর্থকরা টুইটার ব্যবহার করে কেমন সংগঠিত হয়েছিল সে কথাও এই সূত্রে সবার মনে পড়বে। কিন্তু বাংলাদেশের সাংবাদিকরা যদি এখন ব্রেকিং নিউজের জন্য টুইটারে যান তবে তাদের হতাশ হতে হবে। কারণ টুইটার এখনও বাংলাদেশে ততটা জনপ্রিয় নয়। তারও চেয়ে বড় কথা, মোবাইলে এসএমএস সার্ভিসের মাধ্যমে টুইটার ব্যবহার এখনও চালু হয়নি এখানে। ফলে টুইটারের যে সহজ ও স্বতঃস্ফূর্ত ব্যবহার তা এখানে চালু হয়নি। কিন্তু ফেসবুক বন্ধ হওয়ার পর টুইটার অ্যালেক্সা ওয়েব র‌্যাংকিংয়ে ১০ নম্বর স্থানে চলে এসেছে এক সপ্তাহেই। এ অবস্থা চলতে থাকলে আর টুইটারের জন্য মোবাইলের এসএমএস সার্ভিস চালু হলে নিশ্চয় আমাদের আপামর জনসাধারণের সঙ্গে রাজনীতিকরাও টুইটার ব্যবহার করবেন। তখন আমাদের দেশে টুইটার ব্রেকিং নিউজের উৎস হবে, সন্দেহ নেই।

No comments:

Post a Comment