Saturday, June 12, 2010
শাকিরা ও ওয়াকা ওয়াকা
বিশ্বকাপের থিম অ্যানথেমটি এখন সবার মুখে মুখে, টেলিভিশনের পর্দায়, ইউটিউবে, রেডিওতে। লাখ লাখ মানুষ এখন শাকিরার সঙ্গে গলা মিলিয়ে গাইছেন 'ওয়াকা ওয়াকা'। ওয়াকা শব্দের মানে, 'এখন সময় আফ্রিকার'। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শাকিরা যেভাবে তার পরিবেশনা দিয়ে কোটি দর্শককে মাতিয়েছেন তাতে অনেকেই একবাক্যে বলেছে_ অসাধারণ, মোহনীয়, মনোমুগ্ধকর। শাকিরাও বলেছেন, তার জীবনের সবচেয়ে আবেগী মুহূর্তগুলোর একটি এ বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করার ঘটনা। কিন্তু খোদ আফ্রিকানরাই বাদ সেধেছে শাকিরার এই গান নিয়ে। এখন সময় আফ্রিকার, এটি আফ্রিকার মানুষের অন্তরের কথা। দক্ষিণ আফ্রিকার জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে তারা প্রমাণ করেছে, দারিদ্র্যপীড়িত কালো মানুষরা জেগে উঠছে। বিত্ত-বৈভবে আফ্রিকার এই উত্থানকে এখন নতুন করে গুনতে হবে বিশ্ববাসীকে। অবশ্য আফ্রিকায় নতুন চৈতন্যের জাগরণ শুরু হয়েছিল অনেক আগেই। বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন সভ্যতা মিসরে আফ্রিকানরাই নির্মাণ করেছিল। আধুনিক পৃথিবীতে নেলসন ম্যান্ডেলাও নতুন জাগরণের মন্ত্র শুনিয়েছিলেন। এবার বিশ্বকাপের প্রথম খেলায় মেক্সিকোর সঙ্গে মারদাঙ্গা লড়াইয়েও তারা দেখিয়ে দিল, ফুটবলেও তাদের গুনতে হবে। হ্যাঁ, আফ্রিকা এবার নতুন করে জাগছে, নতুন যুগে প্রবেশ করছে। বিশ্বকাপের গানে তার প্রতিধ্বনি বাজবেই। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কথাটা শাকিরার মুখ থেকে শুনতে হবে কেন? এ প্রশ্ন তুলেছেন আফ্রিকার তরুণ-তরুণীরা। তারা বলছেন, এ গান তো গাইবার কথা আমাদের। আমরাই বিশ্বকে জানাতে পারতাম আমরা জেগে উঠছি। আমাদের কোথায় কমতি ছিল? কিন্তু আমাদের কথাগুলো বলার জন্য শাকিরাকে ডেকে আনা হলো কেন? গানটি আফ্রিকান ব্যান্ড ফ্রেশলিগ্রাউন্ড ও শাকিরার যৌথ প্রযোজনা। তারপরও মুখ্য ভূমিকা শাকিরারই। ফলে বিশ্বকাপের মাঠে উত্তেজনা ছড়ানোর আগেই গান নিয়ে এক প্রস্থ হয়ে গেছে। আফ্রিকানদের এই তর্কে নিশ্চয়ই অনেকে সায় দেবেন। আফ্রিকা একটি মহাদেশ। এ মহাদেশের গান আধুনিক যুক্তরাষ্ট্রের গানকে নতুন মাত্রা দিয়েছিল। জ্যাজ, রক অ্যান্ড রোলের জন্ম হয়েছিল আফ্রিকান সঙ্গীতের হাত ধরে। শাকিরা তো সেই সঙ্গীতধারারই উত্তরাধিকার। শাকিরার জন্ম ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৭, কলম্বিয়ায়। জীবনের শুরুতেই তিনি লাতিন আমেরিকার শিল্পী হিসেবে গণ্য হন। এরপর পরিণত হন পুরো আমেরিকা মহাদেশের জনপ্রিয় শিল্পীতে। লাতিন আমেরিকান মেয়েদের কাছে শাকিরা আইকন। নোবেল বিজয়ী কথাশিল্পী গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ জানিয়েছিলেন, লাতিন মেয়েরা শাকিরার মতো করে হাঁটে, শাকিরার মতো করে চুল বাঁধে, শাকিরার মতো করে পোশাক পরে। নব্বইয়ের দশকে এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকাজুড়ে তিনি খ্যাতিমান হন। গানের এ অপূর্ব ক্ষমতা যে, লাতিন আমেরিকার শিল্পী হয়েও তিনি বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় হন। বাংলাদেশেও তিনি জনপ্রিয়। শাকিরার গানে নানা জাদু আছে, তার মধ্যে আছে নানা সংস্কৃতির মিশ্রণ। তিনি ইংরেজি, পর্তুুগিজ ও স্প্যানিশ এই তিন ভাষায় কথা বলতে এবং গাইতে পারেন। তার বংশের মধ্যে লেবানিজ ও ইতালীয় ধারাও মিশেছে। শাকিরা শব্দটি আরবি, অর্থ কৃতজ্ঞ। বলা হয়ে থাকে, শাকিরার পরিবেশনার সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর দিক তার নাচ। আর তার বিশিষ্ট নাচের স্টাইলটি এসেছে মধ্যপ্রাচ্যের বেলি ড্যান্সিংয়ের এতিহ্য থেকে। কি খ্যাতি কি পরম্পরা কোনো দিক থেকে শাকিরাকে একটি মহাদেশের বলা যাবে না। ফলে শেষ পর্যন্ত তিনি গোটা বিশ্বের শিল্পী। আইকন। আর এ কারণেই ফিফা তাকে বেছে নিয়েছে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। বিশ্বখ্যাত ঔপন্যাসিক মার্কেজ ২০০৬ সালে শাকিরাকে নিয়ে একটি লেখা লিখেছিলেন। শাকিরার সাক্ষাৎকার ভিত্তিক লেখাটিতে তিনি শিল্পী অন্তর্লোকের নানা চিত্র তুলে এনেছিলেন। শোনা যায়, মার্কেজের সঙ্গে শাকিরার সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ। মার্কেজের উপন্যাস অবলম্বনে 'লাভ ইন দ্য টাইম অব কলেরা' সিনেমা তৈরির সময় নাকি খোদ মার্কেজ তাকে সিনেমার মিউজিক ট্র্যাক তৈরি করতে বলেছিলেন। মজার ব্যাপার এই, শাকিরা বাংলাদেশে এসেছিলেন। ভয়াবহ সাইক্লোন সিডরের আক্রমণের পর তিনি ঘুরে গেছেন দক্ষিণাঞ্চল। কিন্তু তিনি চলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমাদের মিডিয়া জানতেই পারেনি খবরটি।
http://www.youtube.com/watch?v=v4N5N-mGf4U
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment