খবরের মাহাত্ম্য আমরা সবাই জানি। সকালবেলা গরম চায়ের সঙ্গে সংবাদপত্রের
পাতা ওল্টাতে না পারলে অনেকেরই স্বস্তি লাগে না। সকালবেলা সংবাদপত্র পাঠের
অভ্যাস অবশ্য নতুন নয়, আর এ নিয়ে আলোচনারও বিশেষ গুরুত্ব নেই। এখন আলোচনা
প্রতি মুহূর্তের সংবাদ নিয়ে। সম্প্রতি দেশে যে উত্তপ্ত অবস্থা তৈরি হয়েছিল
তাতে অনেককেই দেখেছি প্রতি মূহূর্তের খবর জানতে উদগ্রীব। যাদের ইন্টারনেটে
অবাধ যাতায়াত আছে তারা তো পারলে প্রায় সব পত্রিকা আর অনলাইন নিউজ পেপারের
সাইট খুলে বসে থাকেন। শুধু পত্রিকা কেন, ফেসবুকে বন্ধুরা কী শেয়ার করছেন,
ব্লগে কী লেখা হচ্ছে_ এসব নিয়ে সবার মধ্যে তুমুল আগ্রহ। টিভি খুলে স্ক্রলের
টিকআর-এ নিউজ ফিডে চোখ রাখছেন অনেকে। আর যাদের এসব সুযোগ নেই তারা
মোবাইলেই জানার চেষ্টা করছেন কখন কোথায় কী হচ্ছে। বন্ধুদের ফোন করে সর্বশেষ
অবস্থা জানার রেওয়াজ তো আছেই। আবার পত্রিকা বা অনলাইন নিউজ পেপারের
সার্ভিস থেকেও সরাসরি এসএমএসে খবর পাওয়ার উপায়ও আছে। এসব দেখে মনে হয়,
খবরের প্রতি মানুষের আগ্রহ একেবারে তীব্র। প্রতি মুহূর্তের তাজা খবর চাই।
এত খবর পত্রিকাগুলো পাবে কোথায়? তাই ছোট-বড় সব বিষয়ই খবর হচ্ছে।
অগুরুত্বপূর্ণ অনেক খবর ব্রেকিং নিউজের মর্যাদা পাচ্ছে। ব্রেকিং নিউজ নিয়ে
কিছুদিন আগে কিছু বিতর্ক চোখে পড়েছিল। তাতে দেখা গেল, প্রথিতযশা অনেক
সাংবাদিকই ব্রেকিং নিউজের বাড়াবাড়িতে বিরক্ত। কোনটা ব্রেকিং নিউজ আর কোনটা
নয়, সে বিবেচনা যে অনেকেরই নেই_ সে বিতর্কও উঠেছে। তর্কটা শুরু হয়েছিল
পশ্চিমের টেলিভিশন ও অনলাইন পোর্টালের ব্রেকিং নিউজ দেওয়ার তীব্র আগ্রহ
থেকে। এখন অবশ্য অনেকে ব্রেকিং না বলে লেটেস্ট বলছেন। সর্বসাম্প্রতিক, তাজা
খবর, সদ্য সংবাদ ইত্যাদি নানা নামে অভিহিত করা হচ্ছে এসব নিউজকে। নামে যাই
বলা হোক, উপস্থাপনের ভঙ্গি কিন্তু ব্রেকিং নিউজের মতোই। কিন্তু কেউ কি
প্রশ্ন করছেন, এত খবর দরকার পড়ছে কেন হঠাৎ করে? আগেও তো মানুষ শহুরে
জীবনযাপন করত। সকালবেলা পত্রিকা পড়ার সঙ্গে টেলিভিশনে টুকটাক খবর দেখার
মধ্যেই তাদের আগ্রহ তৃপ্ত হতো। এখন প্রতি মুহূর্তের খবর দরকার হচ্ছে কেন? এ
কথা সত্য যে, জীবনযাপনের পদ্ধতিতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। মোবাইল এমন এক
জায়গা করে নিয়েছে জীবনে যে, মোবাইল যখন ছিল না তখন যোগাযোগ কীভাবে হতো তা
রীতিমতো ভুলেই যেতে বসেছে সবাই। কেউ কেউ বলেন, মোবাইল আর ইন্টারনেটের কারণে
ডিটেইলের দিকে মানুষের নজর আর সেভাবে যায় না। অনেকেই বিস্তারিত নিউজ পড়তে
চায় না। লোকে খণ্ড খণ্ড নিউজ পড়তে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। একেবারে নতুন
বাস্তবতা এটা। ব্রেকিং নিউজ না বলে আসলে একে বলা উচিত ব্রোকেন নিউজ। খণ্ড
খণ্ড খবর জোড়া দিয়েই নতুন সময়ের নতুন পাঠক জেনে যান ঘটনাবলি সম্পর্কে। কী
এবং কেন ঘটছে তা নিয়ে জানতে বিশেষ সময় ব্যয় করার মনোযোগই অনেকের নেই। এক
কথায় জানাতে পারলে তারা জানল নয়তো ওদিক থেকে মুখ ফিরিয়ে অন্যদিকে রওনা হলো।
খবরের এত দরকার কি শুধু আমাদের দেশেই পড়েছে? সংঘর্ষ দেখা দিলেই কি খবর
নিয়ে বাড়তি আগ্রহ দেখা দেয়? বিশেষ পরিস্থিতিতে খবর নিয়ে আগ্রহ বেড়ে যায়
সন্দেহ নেই। কিন্তু পরিস্থিতি যখন শান্ত থাকে তখনও লোকে খবর চায়। আর এটা
শুধু বাংলাদেশের বাস্তবতা নয়, পুরো পৃথিবীতেই এ অবস্থা। পরিস্থিতি দেখে
বোঝা যায়, আমাদের আগের প্রজন্ম পর্যন্ত সাংবাদিকরা খবরকে যেভাবে দেখতেন
সেভাবে হয়তো ভবিষ্যতে দেখা হবে না। ব্রোকেন নিউজ বদলে দেবে অনেক কিছুই। আর
অনলাইন নিউজ মিডিয়া, ফেসবুকসহ নানা সামাজিক মাধ্যম নিউজকেও ভেতরে ভেতরে
পাল্টে দিতে চলেছে।
Thursday, March 14, 2013
Thursday, February 28, 2013
আইটেম সঙ :::মাহবুব মোর্শেদ
২২ ফেব্রুয়ারির টাইমস অব ইন্ডিয়া জানাচ্ছে, ভারতের 'সেন্ট্রাল বোর্ড অব ফিল্ম সার্টিফিকেশনে'র কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক অফিসগুলোকে জানিয়ে দিয়েছে, তারা যেন সিনেমার আইটেম সঙগুলোকে 'এ' ক্যাটাগরিভুক্ত করেন। 'এ' ক্যাটাগরিভুক্ত হলে আইটেম সঙগুলো অ্যাডাল্ট উপাদান হিসেবে গণ্য হবে। ফলে আইটেম গান আছে এমন চলচ্চিত্র শুধু প্রাপ্ত বয়স্করাই দেখতে পারবেন। তবে আইটেম গানের 'এ' প্রাপ্তির সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়বে টিভিতে। টিভি যেহেতু সবাই দেখে, সেহেতু সেন্ট্রাল বোর্ড অব ফিল্ম সার্টিফিকেশনের সিদ্ধান্ত অনুসারে টিভিতে আইটেম সঙ প্রচার বন্ধ হয়ে যাবে। আইটেম সঙ ও মুভি নির্মাতাদের জন্য এটি দুঃসংবাদ নিঃসন্দেহে। কেননা আইটেম সঙের জনপ্রিয়তা টিভিই তৈরি করে। টিভিতে গান দেখেই দর্শকরা হলে যান সিনেমা দেখতে। টিভিতে প্রচার বন্ধ হলে যে এর প্রভাব হলেও পড়বে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অবশ্য সেন্সরের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিদের করারই-বা কী আছে? সাম্প্রতিক সময়ে আইটেম সঙগুলো এতটাই দুষ্ট হয়ে উঠছিল যে, এগুলো নিয়ন্ত্রণের একটা উপায় বের করা খুব দরকারি হয়ে পড়েছিল। মুম্বাইয়ের সিনেমার দর্শকমাত্রই জানেন আইটেম সঙ কী বস্তু। সিনেমার কাহিনীর সঙ্গে এর কোনো সম্পর্কই সাধারণত থাকে না। রসাল গান, ইঙ্গিতপূর্ণ লিরিক বিখ্যাত কোনো নায়িকাকে দিয়ে রসাল ভঙ্গিতে পরিবেশন করা হয়। মজার ব্যাপার হলো, ভালো-মন্দ নির্বিশেষে মুম্বাইয়ের সিনেমায় আইটেম গানের একটা বিশেষ জায়গা তৈরি হয়েছে। উইলিয়াম শেকসপিয়রের ওথেলো অবলম্বনে তৈরি ওমকারার মতো বুদ্ধিদীপ্ত সিনেমায় যেমন আইটেম সঙ আছে, তেমনি এমনও সিনেমা আছে যাতে একটা হিট আইটেম সঙ ছাড়া বিশেষ আর কিছুই থাকে না। সে গানের জোরেই সিনেমা হিট এমনকি সুপারহিট হয়ে যায়। সাধারণত যেসব হিন্দি গান সচরাচর চারদিকে বাজতে শোনা যায় সেগুলো আইটেম গানই। এগুলোকে আইটেম নম্বরও বলা হয়। বিনোদনপিয়াসী দর্শকরা মুভিতে কয়টি আইটেম নম্বর আছে সে হিসাব জেনে নিয়েই হলে ঢোকেন। যে নায়িকারা আইটেম গানে অংশ নেন তারা আইটেম গার্ল। আইটেম গার্লদের পারিশ্রমিক বেশি। একটা আইটেম গানে অংশ নিয়েই তারা বড় সম্মানী পান। আইটেম গানের বাজার মূল্যের কারণে মুভি নির্মাতারা একটু বাড়াবাড়িই করে ফেলছিলেন। আর তাই লাগামটা টানা হলো। এখন নিশ্চয়ই মুভি নির্মাতারা সতর্ক হবেন। বোম্বে সিনেমার হুম্মা হুম্মা, দিল সের ছাইয়া ছাইয়া, বান্টি আউর বাবলির কাজরা রের মতো গান যদি আর তৈরি না হয় তবে দর্শকদের জন্য তা দুঃখের ঘটনাই হবে। আইটেম সঙের এই আকস্মিক অন্তর্ধান নিয়ে কভার স্টোরি প্রকাশ করেছে আউটলুক পত্রিকা। আইটেম গানের পূর্বাপর বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছেন তারা। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক কেন আইটেম সঙ নিয়ন্ত্রণের জন্য সার্টিফিকেশন বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছে, তা জানা গেল আউটলুক থেকেই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক মনে করে, নারী নির্যাতন বাড়িয়ে দিচ্ছে আইটেম সঙ। বলিউডের ডিরেক্টর দিবাকর ব্যানার্জির মতে, সমাজের আরও বড় বড় সমস্যার দিকে না তাকিয়ে আইটেম সঙকে দোষারোপ করে এর সমাধান হবে না। পিতৃতন্ত্র, সামন্ততন্ত্রসহ নানা সমস্যাই তো আছে। সেগুলোর সেন্সর কে করবে? অন্যদিকে রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহরা মনে করেন, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তটাই নেওয়া হয়েছে। আইটেম সঙ সিনেমার জন্য নেতিবাচক। মুম্বাইতে একটি মত প্রবল হয়ে উঠছে যে, বহু বছরের চর্চায় এখানকার সিনেমা-সংস্কৃতি যথেষ্ট পরিপকস্ফ। কিন্তু গানসহ কিছু মেলোড্রামাটিক উপাদান মুম্বাইয়ের সিনেমার অগ্রযাত্রার পথে বাধা। একটা বাঁধা ছকের বাইরে সিনেমাকে বের করে নিয়ে আসার জন্য বাজার মাত করার সনাতন পদ্ধতিগুলো থেকে বের হয়ে আসা উচিত। আইটেম সঙ বন্ধ হলে, সে পথ যে খুলে যাবে তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু দর্শকরা কী করবেন। বিনোদন যাদের মূল লক্ষ্য তারা 'এ' পাওয়া সিনেমাগুলো দেখবেন হয়তো। কিন্তু যে সিনেমা শুধু আইটেম গানের জন্য 'এ' পেল সে সিনেমা পরে সর্বার্থে এ পাওয়ার চেষ্টা করবে না তো?
Friday, February 22, 2013
ওয়ান বিলিয়ন রাইজিং
বিখ্যাত এক লেখক স্মৃতিকথায় জানিয়েছিলেন, আজ ভ্যালেন্টাইন বলতে যেমন আয়োজন বোঝায়, তেমনটা তারা কৈশোরে সরস্বতী পূজায় পেতেন। পড়াশোনার চাপের চেয়ে বেশি ছিল অভিভাবকদের চাপ। তাই পাড়ার মেয়েদের সঙ্গে দেখা হওয়া দূরের কথা, ভালোমতো চোখাচোখিই হতে পারত না। সরস্বতী পূজার দিনে একটা স্বাধীনতা পাওয়া যেত। আর সেই অবকাশে মন দেওয়া-নেওয়া হয়ে যেত। এখন অবশ্য সেকালের মতো অত চাপ নেই। এখন ভালোবাসার জন্য বছরভর অপেক্ষার বালাই নেই। ফেসবুকে বা সেলফোনে স্রেফ মনের কথা জানালেই হলো। যুগ বদলেছে। বদলের সঙ্গে সঙ্গে অনেক দিবসও তৈরি হয়েছে। যেমন, পহেলা ফাল্গুন ও ভ্যালেন্টাইনস ডে। বৈশাখের প্রথম দিনের মতো বসন্তের প্রথম দিনটি বেশ ঘটা করেই পালিত হচ্ছে কয়েক বছর ধরে। বাংলাদেশে বাংলা সনের যে ক্যালেন্ডার, তাতে বসন্তের দ্বিতীয় দিনেই ভ্যালেন্টাইনস ডে বা ভালোবাসা দিবস। এবার তৃতীয় দিনে পড়েছে সরস্বতী পূজা। পরপর তিন দিনের উৎসব। অবশ্য ঢাকায় এখন অন্য বসন্ত। অনেকে একে বাংলা বসন্ত বলে ডাকছেন আরব বসন্তের অনুকরণে। শাহবাগের প্রতিবাদে পহেলা ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবস সব ম্লান হয়ে গেছে। গণমাধ্যমের চোখও এখন শাহবাগে। তরুণরাও সেখানে। ফলে, আলাদা করে পালন করার অবকাশ না রেখে প্রতিবাদের মেলবন্ধনেই সব পালিত হচ্ছে। এবার অবশ্য ভ্যালেন্টাইস ডে একটু ভিন্নমাত্রায় পালিত হওয়ার কথা ছিল। ১৫ তারিখের বিদেশি সব পত্রপত্রিকা জুড়ে ওয়ান বিলিয়ন রাইজিংয়ের সচিত্র প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। পাশের দেশ ভারত-শ্রীলংকাতেও ওয়ান বিলিয়ন রাইজিং পালিত হলো দারুণ উৎসাহে। কিন্তু বাংলাদেশের গণমাধ্যমে জমজমাট আয়োজনের তেমন ছবি চোখে পড়ল না। যা হলো তাকে রুটিন কর্মসূচির বাইরে কিছু বলা যায় কি-না, সে প্রশ্নও থাকল। অথচ এ আন্দোলনের উদ্যোক্তা ঈভ এন্সলার ক্যাম্পেইন নিয়ে ঢাকা ঘুরে গেছেন গত মাসেই। ঈভ ও তার সহকর্মীরা দাবি তুলেছিলেন, এবারের ভ্যালেন্টাইন ডে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে পালিত হোক। শুধু ফুল, ক্যান্ডি আর উপহার নয়। বিশ্বব্যাপী নারীর ওপর যে নির্যাতন চলছে , তার বিরুদ্ধে পথে নামুক এক বিলিয়ন মানুষ। ভালোবাসা জানানোর সঙ্গে পুরুষরা কথা দিক_ নারীর পাশে থাকবে। নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকবে। প্রস্তাবটা দারুণ। আমাদের নারী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা এ প্রস্তাব নিয়ে শাহবাগে গেলে সাড়া নিশ্চয়ই পড়ত। কিন্তু তেমন হলো না। অবাক হয়ে দেখছিলাম, বিশ্বব্যাপী ওয়ান বিলিয়ন রাইজিংয়ের কর্মসূচি। বিপুল উৎসাহে নেচে-গেয়ে সমবেত হয়ে নারীরা পালন করছেন ওয়ান বিলিয়ন রাইজিং। নারীদের সঙ্গে মিলে পুরুষরাও একত্র হয়েছেন। এমন ভালোবাসা দিবসই তো দরকার। এমনিতেই ভালোবাসা দিবস যার যার কাছে তার তার মতো। কারওটা কারও সঙ্গে মেলে না। কেউ হয়তো ভালোবাসা বলতে বোঝেন নর-নারীর সম্পর্ককে। কেউ সেটিকে পারিবারিক, সামাজিক এমনকি দেশের প্রতি ভালোবাসার সঙ্গে সম্পর্কিত করেন। ফলে, একেক বছর যদি একেকভাবে দিবস পালনের প্রস্তাব আসে, মন্দ হয় না। অন্তত, গতানুগতিকতার বাইরে অন্য তাৎপর্য তৈরি হয় তাতে। গতানুগতিকতা কী? যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টিক ম্যাগাজিন যে তথ্য দিয়েছে, তা শিউরে ওঠার মতো। তারা জানাচ্ছে, এ বছর ভ্যালেন্টাইন ডেতে শুধু আমেরিকাতেই খরচা হয়েছে কুড়ি বিলিয়ন ডলার। এ খরচার বড় অংশ গেছে বাইরে খেতে গিয়ে। প্রায় সাড়ে নয় বিলিয়ন ডলার। বাকি খরচ গেছে কার্ড, ক্যান্ডি, ফুল, পোশাক, অলঙ্কার ইত্যাদি খাতে। খরচাটা দিন দিন বাড়তির দিকে গড়াচ্ছে। আমাদের দেশে কী হচ্ছে, সে হিসাব আপাতত নেই। কখনও হবে_ এমন আশাও নেই। তবে, আমেরিকার হিসাব দেখে কিছু অনুমান করে নেওয়া চলে। কিন্তু অনুমানে কি পুরো তুষ্টি আসবে? অনুমান না পোষালে অবশ্য আমরা একটা হাজারো, লাখো বা কোটি শব্দ জুড়ে দিতে পারি। আপত্তি নেই তাতে কারও। সঠিক পরিসংখ্যান যখন
নেই, তখন তো অনুমানেই কাজ চালাতে হয়।
নেই, তখন তো অনুমানেই কাজ চালাতে হয়।
Saturday, January 12, 2013
ঐতিহাসিক শীত
ভাস্কর চক্রবর্তী লিখেছিলেন, 'শীতকাল কবে আসবে সুপর্ণা?' কবির ইচ্ছা_
শীতকাল এলে তিনি তিন মাস ঘুমিয়ে থাকবেন। শীতনিদ্রা যাপন করবেন, আলস্য যাপন
করবেন ব্যাঙের মতো। আমাদের দেশ শীতপ্রধান নয়, বছরের নির্দিষ্ট কয়েকটি মাসের
শীতেই এখানে জনজীবনে স্থবিরতা নেমে আসে। রাস্তাঘাটে ভিড় কমে যায়, সকাল ও
সন্ধ্যায় ঘরের বাইরে চলাচল কমে যায়। শীত এখানে মূলত আলস্যপ্রধান ঋতু।
শীতপ্রধান দেশগুলোর থেকে চিত্রটা একেবারেই আলাদা। যেখানে বছরভর শীত সেখানে
লোকের আলাদা করে শীতের প্রস্তুতির দরকার পড়ে না। শীত উপলক্ষে জনজীবনে বিশেষ
স্থবিরতাও নেমে আসে না। তুষারপাত, তুষারঝড়ে কিছু সমস্যা হয়। তাপমাত্র
মাইনাসে নামতে নামতে এমন পর্যায়ে পেঁৗছায় যে বাধ্য হয়ে বাইরের কাজ বন্ধ করে
দিতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশের মতো অল্প শীতে তারা কাতর হয় না। অবশ্য শীতে
কাতর না হওয়ার পেছনে যুক্তিসঙ্গত কারণও আছে। শীতপ্রধান দেশগুলো শীতের হাত
থেকে স্থায়ীভাবে বাঁচতে নানা ব্যবস্থা তৈরি করে নিয়েছে। তাদের অফিস, আদালত,
বিপণি বিতান, বাড়িঘর, যানবাহন_ সবই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। সেন্ট্রাল হিটিং
সিস্টেমের বাইরে খুব কম সময়ই তাদের থাকতে হয়। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার
সঙ্গে আমাদের বিশেষ পরিচয় আছে কি? আতপ নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে আমাদের পরিচয় আছে।
শীতকালে কিন্তু শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বন্ধই থাকে। অর্থাৎ শীত
নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা তার জানা নেই। সেন্ট্রাল হিটিং সিস্টেমের কোনো উদাহরণ
পাওয়া যায় না। ফলে স্বল্পকালীন শীত কোনোরকমে শীতের কাপড়ে পার করে দেওয়াই
এখানে রেওয়াজ। শীত নিয়ন্ত্রণের স্থায়ী ব্যবস্থা এখানে বাস্তবসম্মতও হয়তো
নয়। এ বছর শীত পড়েছে বেশ, কিন্তু গত কয়েক বছরে শীত ততটা পড়েনি।
উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় বছরের কিছু সময় তীব্র শীত পড়ে। জনজীবন বিপর্যস্ত
হয় তাতে, শীতার্ত মানুষের মৃত্যুও ঘটে। কিন্তু অনেক স্থানে শীত এসেই বলে
যাই। শীতের কাপড় নামাতে নামাতেই তুলে ফেলতে হয়েছে বিগত বছরগুলোতে। তখন
অনেকেই শীতে কবির মতোই উচ্চারণ করেছেন, শীতকাল কবে আসবে সুপর্ণা? এবার শীত
একটু বেশিই পড়েছে। পত্রিকা বলছে এমন শীত গত চলি্লশ বছরে পড়েনি। সেদিক থেকে এ
শীত ঐতিহাসিকও বটে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। লোকে শীতে কাতর
হয়ে পড়েছে। বেশ কিছু মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। শীতের সময় শীতার্ত মানুষের কাছে
শুধু শীতের কাপড় নয়, প্রয়োজনীয় খাবার পেঁৗছানোও জরুরি। কেননা, প্রবল শীতে
শরীর দ্রুত তাপ হারাতে থাকে, প্রয়োজনীয় ক্যালরি তৈরি না হলে শরীর দুর্বল
হতে হতে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়। শীতের এই তীব্রতায় অনেকের মনেই প্রশ্ন
উঠেছে, এবার এমন শীত পড়ল কেন? কেউ কেউ বরফ পড়ার আশঙ্কাও ব্যক্ত করছেন। বলা
হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় শীতের তীব্রতা। বিগত
বছরগুলোতে শীত কম পড়ার পর প্রশ্ন উঠেছিল, কেন এমন হলো। তখনও বলা হয়েছিল,
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই এসব ঘটছে। দুই ক্ষেত্রেই নিশ্চয়ই জলবায়ু
পরিবর্তনই দায়ী। কিন্তু এমন শীত তো আমাদের দেশে নজিরবিহীন নয়, অতীতে যখন
এমন শীত পড়েছে তখন এবার পড়তে দোষ কী? আমাদের সমুদ্র আছে, সমুদ্র থাকলেই
জলোচ্ছ্বাস, ঝড়-তুফান থাকবে। একে মেনে নিয়েই দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হবে।
আমাদের শিয়রের কাছে হিমালয় পর্বতমালাও আছে। হিমালয়ের পাদদেশের সব দেশেই তো
বরফ পড়ে। আমরা একটু দূরে বলে বরফের হাত থেকে বেঁচে গিয়েছি। তাই বলে শীত
মেনে নিতে পারব না? শীত আমাদের জলবায়ুতে সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ নাকি এ নিয়ে
দুশ্চিন্তা শুরু করা দরকার, তা নিয়ে নিশ্চয় আবহাওয়াবিদরা কোনো নির্দেশনা
দেবেন। আপাতত, নগদে আমরা শীতকেই পাচ্ছি। আসুন, আমরা শীত মেনে নেই। সাবধান
থেকে একে উপভোগ করি। যারা কষ্টে আছেন খাবার ও বস্ত্র নিয়ে তাদের কাছে যাই।
Friday, January 4, 2013
অতিথি সৎকার
বাঙালি সম্পর্কে যেসব কথা প্রচলিত তার মধ্যে একটি হলো বাঙালির মতো
অতিথিবৎসল জাতি খুঁজে পাওয়া ভার। বাঙালি কতটা অতিথিপ্রিয় তা নিয়ে নানা
রসিকতাও প্রচলিত। বিশেষত কলকাতার বাঙালিদের অতিথিবাৎসল্য নিয়ে বাংলাদেশের
বাঙালিরা প্রায়ই রঙ্গরস করেন। এই রঙ্গরস দেখে মনে হয় বিপুলসংখ্যক বাঙালি
হয়তো ততটা অতিথিবৎসল নাও হতে পারেন। তবু অতিথিবৎসল বলে বাঙালির খ্যাতি।
বাঙালির ভাষা অবশ্য তার অতিথিবাৎসল্যের পক্ষে যুক্তি দেয় না। ইংরেজি ভাষায়
অতিথির প্রতিশব্দ গেস্ট, আর যিনি আতিথ্য দান করেন তার প্রতিশব্দ হোস্ট।
মজার ব্যাপার, বাঙালির অভিধানে হোস্ট শব্দটির প্রতিশব্দ নেই। যিনি আতিথ্য
দান করেন বললে ঘুরিয়ে বলা হয়। অনেকে আপ্যায়ক বলতে চান। কিন্তু হোস্ট
শব্দটির সমার্থক কোনো একক বাংলা শব্দের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া ভার। তাহলে
বাঙালির অতিথিবাৎসল্যের ভাষাগত প্রমাণ কী? একথা ঠিক, বাংলায় অনেক বিদেশি
শব্দ ঢুকেছে। মজার ব্যাপার, গেস্ট শব্দটি যতটা সহজে ব্যবহৃত হয় তত সহজে
হোস্ট শব্দটির ব্যবহার হতে দেখা যায় না। ফারসি থেকে বাংলায় এসেছে মেহমান।
বাংলাভাষাভাষী মানুষরা মেহমান শব্দটিও বেশ ব্যবহার করেন। কিন্তু মেজবান
অর্থাৎ হোস্ট শব্দটির ব্যবহার এ দেশে নেই। বাংলাদেশের অল্প কিছু অঞ্চলে
মেজবান শব্দটির ব্যবহার আছে। কিন্তু ব্যাপক অর্থে মেজবান শব্দটি প্রচলিত
হয়নি। তবে কি বাঙালি নিজেকে অতিথি হিসেবে দেখতেই পছন্দ করে, আতিথ্যদানকারী
হিসেবে নয়? আর সে জন্যই কি ভাষায় এক কথায় প্রকাশযোগ্য কোনো শব্দই তারা তৈরি
করেনি? এ নিয়ে নিশ্চয় সমাজতাত্তি্বক ও ভাষাতাত্তি্বকরা কিছু বলতে পারবেন।
আপাতত অতিথি সেবা নিয়ে বাঙালির সংস্কৃতিই আমাদের আলোচ্য। অতিথি সেবায়
বাঙালির কুকীর্তির তালিকা দীর্ঘ। যেসব মাইগ্রেটরি বার্ড শীতপ্রধান দেশ থেকে
বাংলাদেশে আসে তাদের আদর করে বাঙালি অতিথি পাখি বলে ডাকে। মুসাফির
পাখিগুলোকে অতিথি পাখি বলা হচ্ছে তা নিশ্চয় ভালো। কিন্তু আতিথ্য তো দিতে
হবে। কিন্তু আতিথ্যের দিকে তেমন মন নেই বাঙালির। তারা অতিথি নিধনে ওস্তাদ।
সম্প্রতি অতিথি নিধন ও সৎকারের নানা খবর দেখে মনে হয়, আতিথ্য ব্যাপারটাই এ
দেশে দুর্লক্ষ্য। বাংলা একাডেমীর ব্যবহারিক অভিধানে সৎকার শব্দটির যেসব
অর্থ দেওয়া আছে সেগুলো হলো সম্মান, সমাদর, খাতির সেবা। সৎকারের আরেক অর্থ
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া, মৃতদেহের শেষকৃত্য। বাঙালি সম্মান বা সমাদর অর্থে পাখির
সৎকার করছে বলে মনে হয় না। তারা শেষকৃত্য অর্থেই সৎকার চালাচ্ছে। এমন ঘটলে
যে অতিথি আসবে না তা বলাই বাহুল্য। ফলে বাঙালিকে আতিথ্যদানের রীতিটা রপ্ত
করতে হবে। পাখিদের দিয়ে শুরু হোক, পরে মানুষের কথা ভাবা যাবে।
Subscribe to:
Posts (Atom)