বিখ্যাত এক লেখক স্মৃতিকথায় জানিয়েছিলেন, আজ ভ্যালেন্টাইন বলতে যেমন আয়োজন বোঝায়, তেমনটা তারা কৈশোরে সরস্বতী পূজায় পেতেন। পড়াশোনার চাপের চেয়ে বেশি ছিল অভিভাবকদের চাপ। তাই পাড়ার মেয়েদের সঙ্গে দেখা হওয়া দূরের কথা, ভালোমতো চোখাচোখিই হতে পারত না। সরস্বতী পূজার দিনে একটা স্বাধীনতা পাওয়া যেত। আর সেই অবকাশে মন দেওয়া-নেওয়া হয়ে যেত। এখন অবশ্য সেকালের মতো অত চাপ নেই। এখন ভালোবাসার জন্য বছরভর অপেক্ষার বালাই নেই। ফেসবুকে বা সেলফোনে স্রেফ মনের কথা জানালেই হলো। যুগ বদলেছে। বদলের সঙ্গে সঙ্গে অনেক দিবসও তৈরি হয়েছে। যেমন, পহেলা ফাল্গুন ও ভ্যালেন্টাইনস ডে। বৈশাখের প্রথম দিনের মতো বসন্তের প্রথম দিনটি বেশ ঘটা করেই পালিত হচ্ছে কয়েক বছর ধরে। বাংলাদেশে বাংলা সনের যে ক্যালেন্ডার, তাতে বসন্তের দ্বিতীয় দিনেই ভ্যালেন্টাইনস ডে বা ভালোবাসা দিবস। এবার তৃতীয় দিনে পড়েছে সরস্বতী পূজা। পরপর তিন দিনের উৎসব। অবশ্য ঢাকায় এখন অন্য বসন্ত। অনেকে একে বাংলা বসন্ত বলে ডাকছেন আরব বসন্তের অনুকরণে। শাহবাগের প্রতিবাদে পহেলা ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবস সব ম্লান হয়ে গেছে। গণমাধ্যমের চোখও এখন শাহবাগে। তরুণরাও সেখানে। ফলে, আলাদা করে পালন করার অবকাশ না রেখে প্রতিবাদের মেলবন্ধনেই সব পালিত হচ্ছে। এবার অবশ্য ভ্যালেন্টাইস ডে একটু ভিন্নমাত্রায় পালিত হওয়ার কথা ছিল। ১৫ তারিখের বিদেশি সব পত্রপত্রিকা জুড়ে ওয়ান বিলিয়ন রাইজিংয়ের সচিত্র প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। পাশের দেশ ভারত-শ্রীলংকাতেও ওয়ান বিলিয়ন রাইজিং পালিত হলো দারুণ উৎসাহে। কিন্তু বাংলাদেশের গণমাধ্যমে জমজমাট আয়োজনের তেমন ছবি চোখে পড়ল না। যা হলো তাকে রুটিন কর্মসূচির বাইরে কিছু বলা যায় কি-না, সে প্রশ্নও থাকল। অথচ এ আন্দোলনের উদ্যোক্তা ঈভ এন্সলার ক্যাম্পেইন নিয়ে ঢাকা ঘুরে গেছেন গত মাসেই। ঈভ ও তার সহকর্মীরা দাবি তুলেছিলেন, এবারের ভ্যালেন্টাইন ডে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে পালিত হোক। শুধু ফুল, ক্যান্ডি আর উপহার নয়। বিশ্বব্যাপী নারীর ওপর যে নির্যাতন চলছে , তার বিরুদ্ধে পথে নামুক এক বিলিয়ন মানুষ। ভালোবাসা জানানোর সঙ্গে পুরুষরা কথা দিক_ নারীর পাশে থাকবে। নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকবে। প্রস্তাবটা দারুণ। আমাদের নারী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা এ প্রস্তাব নিয়ে শাহবাগে গেলে সাড়া নিশ্চয়ই পড়ত। কিন্তু তেমন হলো না। অবাক হয়ে দেখছিলাম, বিশ্বব্যাপী ওয়ান বিলিয়ন রাইজিংয়ের কর্মসূচি। বিপুল উৎসাহে নেচে-গেয়ে সমবেত হয়ে নারীরা পালন করছেন ওয়ান বিলিয়ন রাইজিং। নারীদের সঙ্গে মিলে পুরুষরাও একত্র হয়েছেন। এমন ভালোবাসা দিবসই তো দরকার। এমনিতেই ভালোবাসা দিবস যার যার কাছে তার তার মতো। কারওটা কারও সঙ্গে মেলে না। কেউ হয়তো ভালোবাসা বলতে বোঝেন নর-নারীর সম্পর্ককে। কেউ সেটিকে পারিবারিক, সামাজিক এমনকি দেশের প্রতি ভালোবাসার সঙ্গে সম্পর্কিত করেন। ফলে, একেক বছর যদি একেকভাবে দিবস পালনের প্রস্তাব আসে, মন্দ হয় না। অন্তত, গতানুগতিকতার বাইরে অন্য তাৎপর্য তৈরি হয় তাতে। গতানুগতিকতা কী? যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টিক ম্যাগাজিন যে তথ্য দিয়েছে, তা শিউরে ওঠার মতো। তারা জানাচ্ছে, এ বছর ভ্যালেন্টাইন ডেতে শুধু আমেরিকাতেই খরচা হয়েছে কুড়ি বিলিয়ন ডলার। এ খরচার বড় অংশ গেছে বাইরে খেতে গিয়ে। প্রায় সাড়ে নয় বিলিয়ন ডলার। বাকি খরচ গেছে কার্ড, ক্যান্ডি, ফুল, পোশাক, অলঙ্কার ইত্যাদি খাতে। খরচাটা দিন দিন বাড়তির দিকে গড়াচ্ছে। আমাদের দেশে কী হচ্ছে, সে হিসাব আপাতত নেই। কখনও হবে_ এমন আশাও নেই। তবে, আমেরিকার হিসাব দেখে কিছু অনুমান করে নেওয়া চলে। কিন্তু অনুমানে কি পুরো তুষ্টি আসবে? অনুমান না পোষালে অবশ্য আমরা একটা হাজারো, লাখো বা কোটি শব্দ জুড়ে দিতে পারি। আপত্তি নেই তাতে কারও। সঠিক পরিসংখ্যান যখন
নেই, তখন তো অনুমানেই কাজ চালাতে হয়।
নেই, তখন তো অনুমানেই কাজ চালাতে হয়।
No comments:
Post a Comment