Thursday, February 28, 2013

আইটেম সঙ :::মাহবুব মোর্শেদ

২২ ফেব্রুয়ারির টাইমস অব ইন্ডিয়া জানাচ্ছে, ভারতের 'সেন্ট্রাল বোর্ড অব ফিল্ম সার্টিফিকেশনে'র কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক অফিসগুলোকে জানিয়ে দিয়েছে, তারা যেন সিনেমার আইটেম সঙগুলোকে 'এ' ক্যাটাগরিভুক্ত করেন। 'এ' ক্যাটাগরিভুক্ত হলে আইটেম সঙগুলো অ্যাডাল্ট উপাদান হিসেবে গণ্য হবে। ফলে আইটেম গান আছে এমন চলচ্চিত্র শুধু প্রাপ্ত বয়স্করাই দেখতে পারবেন। তবে আইটেম গানের 'এ' প্রাপ্তির সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়বে টিভিতে। টিভি যেহেতু সবাই দেখে, সেহেতু সেন্ট্রাল বোর্ড অব ফিল্ম সার্টিফিকেশনের সিদ্ধান্ত অনুসারে টিভিতে আইটেম সঙ প্রচার বন্ধ হয়ে যাবে। আইটেম সঙ ও মুভি নির্মাতাদের জন্য এটি দুঃসংবাদ নিঃসন্দেহে। কেননা আইটেম সঙের জনপ্রিয়তা টিভিই তৈরি করে। টিভিতে গান দেখেই দর্শকরা হলে যান সিনেমা দেখতে। টিভিতে প্রচার বন্ধ হলে যে এর প্রভাব হলেও পড়বে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অবশ্য সেন্সরের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিদের করারই-বা কী আছে? সাম্প্রতিক সময়ে আইটেম সঙগুলো এতটাই দুষ্ট হয়ে উঠছিল যে, এগুলো নিয়ন্ত্রণের একটা উপায় বের করা খুব দরকারি হয়ে পড়েছিল। মুম্বাইয়ের সিনেমার দর্শকমাত্রই জানেন আইটেম সঙ কী বস্তু। সিনেমার কাহিনীর সঙ্গে এর কোনো সম্পর্কই সাধারণত থাকে না। রসাল গান, ইঙ্গিতপূর্ণ লিরিক বিখ্যাত কোনো নায়িকাকে দিয়ে রসাল ভঙ্গিতে পরিবেশন করা হয়। মজার ব্যাপার হলো, ভালো-মন্দ নির্বিশেষে মুম্বাইয়ের সিনেমায় আইটেম গানের একটা বিশেষ জায়গা তৈরি হয়েছে। উইলিয়াম শেকসপিয়রের ওথেলো অবলম্বনে তৈরি ওমকারার মতো বুদ্ধিদীপ্ত সিনেমায় যেমন আইটেম সঙ আছে, তেমনি এমনও সিনেমা আছে যাতে একটা হিট আইটেম সঙ ছাড়া বিশেষ আর কিছুই থাকে না। সে গানের জোরেই সিনেমা হিট এমনকি সুপারহিট হয়ে যায়। সাধারণত যেসব হিন্দি গান সচরাচর চারদিকে বাজতে শোনা যায় সেগুলো আইটেম গানই। এগুলোকে আইটেম নম্বরও বলা হয়। বিনোদনপিয়াসী দর্শকরা মুভিতে কয়টি আইটেম নম্বর আছে সে হিসাব জেনে নিয়েই হলে ঢোকেন। যে নায়িকারা আইটেম গানে অংশ নেন তারা আইটেম গার্ল। আইটেম গার্লদের পারিশ্রমিক বেশি। একটা আইটেম গানে অংশ নিয়েই তারা বড় সম্মানী পান। আইটেম গানের বাজার মূল্যের কারণে মুভি নির্মাতারা একটু বাড়াবাড়িই করে ফেলছিলেন। আর তাই লাগামটা টানা হলো। এখন নিশ্চয়ই মুভি নির্মাতারা সতর্ক হবেন। বোম্বে সিনেমার হুম্মা হুম্মা, দিল সের ছাইয়া ছাইয়া, বান্টি আউর বাবলির কাজরা রের মতো গান যদি আর তৈরি না হয় তবে দর্শকদের জন্য তা দুঃখের ঘটনাই হবে। আইটেম সঙের এই আকস্মিক অন্তর্ধান নিয়ে কভার স্টোরি প্রকাশ করেছে আউটলুক পত্রিকা। আইটেম গানের পূর্বাপর বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছেন তারা। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক কেন আইটেম সঙ নিয়ন্ত্রণের জন্য সার্টিফিকেশন বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছে, তা জানা গেল আউটলুক থেকেই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক মনে করে, নারী নির্যাতন বাড়িয়ে দিচ্ছে আইটেম সঙ। বলিউডের ডিরেক্টর দিবাকর ব্যানার্জির মতে, সমাজের আরও বড় বড় সমস্যার দিকে না তাকিয়ে আইটেম সঙকে দোষারোপ করে এর সমাধান হবে না। পিতৃতন্ত্র, সামন্ততন্ত্রসহ নানা সমস্যাই তো আছে। সেগুলোর সেন্সর কে করবে? অন্যদিকে রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহরা মনে করেন, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তটাই নেওয়া হয়েছে। আইটেম সঙ সিনেমার জন্য নেতিবাচক। মুম্বাইতে একটি মত প্রবল হয়ে উঠছে যে, বহু বছরের চর্চায় এখানকার সিনেমা-সংস্কৃতি যথেষ্ট পরিপকস্ফ। কিন্তু গানসহ কিছু মেলোড্রামাটিক উপাদান মুম্বাইয়ের সিনেমার অগ্রযাত্রার পথে বাধা। একটা বাঁধা ছকের বাইরে সিনেমাকে বের করে নিয়ে আসার জন্য বাজার মাত করার সনাতন পদ্ধতিগুলো থেকে বের হয়ে আসা উচিত। আইটেম সঙ বন্ধ হলে, সে পথ যে খুলে যাবে তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু দর্শকরা কী করবেন। বিনোদন যাদের মূল লক্ষ্য তারা 'এ' পাওয়া সিনেমাগুলো দেখবেন হয়তো। কিন্তু যে সিনেমা শুধু আইটেম গানের জন্য 'এ' পেল সে সিনেমা পরে সর্বার্থে এ পাওয়ার চেষ্টা করবে না তো?

No comments:

Post a Comment