ভাস্কর চক্রবর্তী লিখেছিলেন, 'শীতকাল কবে আসবে সুপর্ণা?' কবির ইচ্ছা_
শীতকাল এলে তিনি তিন মাস ঘুমিয়ে থাকবেন। শীতনিদ্রা যাপন করবেন, আলস্য যাপন
করবেন ব্যাঙের মতো। আমাদের দেশ শীতপ্রধান নয়, বছরের নির্দিষ্ট কয়েকটি মাসের
শীতেই এখানে জনজীবনে স্থবিরতা নেমে আসে। রাস্তাঘাটে ভিড় কমে যায়, সকাল ও
সন্ধ্যায় ঘরের বাইরে চলাচল কমে যায়। শীত এখানে মূলত আলস্যপ্রধান ঋতু।
শীতপ্রধান দেশগুলোর থেকে চিত্রটা একেবারেই আলাদা। যেখানে বছরভর শীত সেখানে
লোকের আলাদা করে শীতের প্রস্তুতির দরকার পড়ে না। শীত উপলক্ষে জনজীবনে বিশেষ
স্থবিরতাও নেমে আসে না। তুষারপাত, তুষারঝড়ে কিছু সমস্যা হয়। তাপমাত্র
মাইনাসে নামতে নামতে এমন পর্যায়ে পেঁৗছায় যে বাধ্য হয়ে বাইরের কাজ বন্ধ করে
দিতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশের মতো অল্প শীতে তারা কাতর হয় না। অবশ্য শীতে
কাতর না হওয়ার পেছনে যুক্তিসঙ্গত কারণও আছে। শীতপ্রধান দেশগুলো শীতের হাত
থেকে স্থায়ীভাবে বাঁচতে নানা ব্যবস্থা তৈরি করে নিয়েছে। তাদের অফিস, আদালত,
বিপণি বিতান, বাড়িঘর, যানবাহন_ সবই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। সেন্ট্রাল হিটিং
সিস্টেমের বাইরে খুব কম সময়ই তাদের থাকতে হয়। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার
সঙ্গে আমাদের বিশেষ পরিচয় আছে কি? আতপ নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে আমাদের পরিচয় আছে।
শীতকালে কিন্তু শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বন্ধই থাকে। অর্থাৎ শীত
নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা তার জানা নেই। সেন্ট্রাল হিটিং সিস্টেমের কোনো উদাহরণ
পাওয়া যায় না। ফলে স্বল্পকালীন শীত কোনোরকমে শীতের কাপড়ে পার করে দেওয়াই
এখানে রেওয়াজ। শীত নিয়ন্ত্রণের স্থায়ী ব্যবস্থা এখানে বাস্তবসম্মতও হয়তো
নয়। এ বছর শীত পড়েছে বেশ, কিন্তু গত কয়েক বছরে শীত ততটা পড়েনি।
উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় বছরের কিছু সময় তীব্র শীত পড়ে। জনজীবন বিপর্যস্ত
হয় তাতে, শীতার্ত মানুষের মৃত্যুও ঘটে। কিন্তু অনেক স্থানে শীত এসেই বলে
যাই। শীতের কাপড় নামাতে নামাতেই তুলে ফেলতে হয়েছে বিগত বছরগুলোতে। তখন
অনেকেই শীতে কবির মতোই উচ্চারণ করেছেন, শীতকাল কবে আসবে সুপর্ণা? এবার শীত
একটু বেশিই পড়েছে। পত্রিকা বলছে এমন শীত গত চলি্লশ বছরে পড়েনি। সেদিক থেকে এ
শীত ঐতিহাসিকও বটে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। লোকে শীতে কাতর
হয়ে পড়েছে। বেশ কিছু মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। শীতের সময় শীতার্ত মানুষের কাছে
শুধু শীতের কাপড় নয়, প্রয়োজনীয় খাবার পেঁৗছানোও জরুরি। কেননা, প্রবল শীতে
শরীর দ্রুত তাপ হারাতে থাকে, প্রয়োজনীয় ক্যালরি তৈরি না হলে শরীর দুর্বল
হতে হতে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়। শীতের এই তীব্রতায় অনেকের মনেই প্রশ্ন
উঠেছে, এবার এমন শীত পড়ল কেন? কেউ কেউ বরফ পড়ার আশঙ্কাও ব্যক্ত করছেন। বলা
হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় শীতের তীব্রতা। বিগত
বছরগুলোতে শীত কম পড়ার পর প্রশ্ন উঠেছিল, কেন এমন হলো। তখনও বলা হয়েছিল,
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই এসব ঘটছে। দুই ক্ষেত্রেই নিশ্চয়ই জলবায়ু
পরিবর্তনই দায়ী। কিন্তু এমন শীত তো আমাদের দেশে নজিরবিহীন নয়, অতীতে যখন
এমন শীত পড়েছে তখন এবার পড়তে দোষ কী? আমাদের সমুদ্র আছে, সমুদ্র থাকলেই
জলোচ্ছ্বাস, ঝড়-তুফান থাকবে। একে মেনে নিয়েই দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হবে।
আমাদের শিয়রের কাছে হিমালয় পর্বতমালাও আছে। হিমালয়ের পাদদেশের সব দেশেই তো
বরফ পড়ে। আমরা একটু দূরে বলে বরফের হাত থেকে বেঁচে গিয়েছি। তাই বলে শীত
মেনে নিতে পারব না? শীত আমাদের জলবায়ুতে সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ নাকি এ নিয়ে
দুশ্চিন্তা শুরু করা দরকার, তা নিয়ে নিশ্চয় আবহাওয়াবিদরা কোনো নির্দেশনা
দেবেন। আপাতত, নগদে আমরা শীতকেই পাচ্ছি। আসুন, আমরা শীত মেনে নেই। সাবধান
থেকে একে উপভোগ করি। যারা কষ্টে আছেন খাবার ও বস্ত্র নিয়ে তাদের কাছে যাই।
No comments:
Post a Comment