Saturday, April 28, 2012

ইউএফও

১৯৭৭ সালে ক্রেইগ থমাস 'ফায়ারফক্স' নামে একটি উপন্যাস লিখেছিলেন। রহস্য-রোমাঞ্চ ঔপন্যাসিক ক্রেইগের উপন্যাসের প্রেক্ষাপট স্নায়ুযুদ্ধের সময়কার। কাহিনীর কেন্দ্রে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য ও সোভিয়েত ইউনিয়ন। গোপন সূত্রে ব্রিটিশ ও আমেরিকান কর্তৃপক্ষ জেনে যায় সোভিয়েতরা মিগ-৩১ নামে নতুন ধরনের একটি এয়ারক্র্যাফট তৈরি করেছে। এ এয়ারক্র্যাফটটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, এটি সব ধরনের রাডার ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে উড়তে সক্ষম এবং এটি পাইলটের চিন্তার সঙ্গে সম্পর্কিত হয়ে ক্ষেপণাস্ত্র চালাতে পারে। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষগুলো ফায়ারফক্সের খবরে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ল এবং এয়ারক্র্যাফট নির্মাণের প্রযুক্তি নয়, খোদ এয়ারক্র্যাফটটি চুরি করার পরিকল্পনা আঁটল। তারা চুরির দায়িত্ব দিল দক্ষ পাইলট মাইকেল গ্রান্টকে। শ্বাসরুদ্ধকর উপন্যাসটি অবশ্য আমাদের আলোচনার বিষয় নয়, বিষয় এয়ারক্র্যাফটটি। ১৯৭৭ সালে যা ছিল রোমাঞ্চ উপন্যাসের খেয়ালি কল্পনা তা বর্তমানে বাস্তব হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যে রাডার ব্যবস্থাকে ফাঁকি দেওয়ার মতো এয়ারক্র্যাফট তৈরি হয়ে গেছে। ক্রেইগের কাল্পনিক এয়ারক্র্যাফটটি শুধু রাডার ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে পারত কিন্তু ইনফ্রারেড দিয়ে এর অস্তিত্ব শনাক্ত করা যেত। কিন্তু এখন স্টিলথ এয়ারক্র্যাফট প্রযুক্তিতে নির্মিত এয়ারক্র্যাফটগুলো উভয়কেই ফাঁকি দিতে সক্ষম। মজার ব্যাপার, এয়ারক্র্যাফটে বসে পাইলটের চিন্তার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের চিন্তা এখনকার এয়ারক্র্যাফটকে করতেই হয় না। এয়ারক্র্যাফটে পাইলটের বালাই থাকে না। ড্রোন নামে যে এয়ারক্র্যাফটটি তৈরি হয়েছে তা পাইলটবিহীন। চলে সম্পূর্ণ কম্পিউটারাইজড নেটওয়ার্কিং সিস্টেমে। পাকিস্তান ও আফগানিস্তান সীমান্তে জঙ্গি ও তালেবান দমন করতে গিয়ে ড্রোন প্রযুক্তি বিশেষ পরিচিতি পেয়েছে। ড্রোন নিয়ে পাকিস্তানে তীব্র বিতর্ক দেখা দিয়েছে কিছু কিছু সৈন্যের মৃত্যুর ফলে। সম্প্রতি ইরান একটি মার্কিন ড্রোন আটক করে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেখিয়েছিল। এখন শোনা যাচ্ছে, ইরান নাকি এমন একটি এয়ারক্র্যাফট তৈরির চেষ্টাও করছে। ড্রোন স্টিলথ প্রযুক্তি। ধারণা করা হচ্ছে, ইলেকট্রনিক সাইবার অ্যাটাক বা জ্যামিংয়ের সাহায্যে ইরানিরা ড্রোনটির খোঁজ পেয়েছিল। পাইলটবিহীন এ প্রযুক্তির পাশাপাশি সৈন্য বহনকারী স্টিলথ এয়ারক্র্যাফটের দেখাও মিলেছে পাকিস্তানে। ধারণা করা হয়, ওসামা বিন লাদেন হত্যা অভিযানে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষকে ফাঁকি দিতে এ ধরনের এয়ারক্র্যাফট ব্যবহার করা হয়েছিল। আর এই এয়ারক্র্যাফটগুলোর একটি লাদেনের বাড়ির কাছে বিধ্বস্ত হয়েছিল। এই বিশেষ এয়ারক্র্যাফটটি সবার কাছেই অপরিচিত, ধারণা করা হয় এটি স্টিলথ প্রযুক্তির এয়ারক্র্যাফট। বলাবাহুল্য, ক্রেইগ থমাসের কল্পনা এখন বাস্তব। গত শুক্রবার ভারতীয় পত্রিকা ডিএনএ ইন্ডিয়া খবর দিয়েছে, সম্প্রতি পাকিস্তানে যে বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে সে বিমানের পাইলট বিমানের সামনে দিয়ে একটি ইউএফও যেতে দেখেছেন। ইউএফও হলো আনআইডেন্টিফায়েড ফ্লাইং অবজেক্ট। সাধারণত ভিনগ্রহ থেকে পৃথিবীতে আসা নভোযানকেই এ নামে ডাকা হয়। এমন নভোযানের অস্তিত্ব অবশ্য প্রমাণিত নয়। এখন অবশ্য অশনাক্ত সব এয়ারক্র্যাফটকেই ইউএফও নামে ডাকার রেওয়াজ তৈরি হয়েছে। ডিএনএ জানাচ্ছে, একটি অসমর্থিত সূত্রমতে, ভোজা এয়ার বোয়িং-৭৩৭ বিপর্যয়ের ভিডিও চিত্রে ওই স্থান দিয়ে রহস্যময় তিনটি আলোর উৎসকে অতিক্রম করতে দেখা গেছে। এগুলোকেই ইউএফও বলা হচ্ছে। অসমর্থিত খবরটি দিয়েছে রাশিয়ান একটি পত্রিকা। এ দুর্ঘটনায় ১২৭ যাত্রী মারা গেছে। ফিরে আসি ক্রেইগ থমাসের উপন্যাসে। গ্রান্ট যখন মিগ-৩১ চুরি করে সোভিয়েতের আকাশ পাড়ি দিচ্ছে, তখন তার সঙ্গে দেখা হয়ে গিয়েছিল এক যাত্রীবাহী বিমানের। বলাবাহুল্য, বিমানের রাডারে মিগের অস্তিত্ব ধরা পড়েনি। সহসা একেবারে চোখের সামনে মিগটিকে দেখে রীতিমতো ভিরমি খেয়েছিল যাত্রীবাহী বিমানের পাইলট। অল্পের জন্য দুর্ঘটনাও ঘটতে যাচ্ছিল। হয়তো এমনই কোনো এয়ারক্র্যাফটের দেখা পেয়েছিল ভোজা। তাকে ইউএফও বলা হচ্ছে। রহস্য-রোমাঞ্চ উপন্যাসের সূত্রে কল্পনাটা একটু বেশি হয়ে গেল বটে। এখন থামা দরকার।

No comments:

Post a Comment