সামান্য এক কার্টুন নিয়ে ভারতজুড়ে তোলপাড় হচ্ছে। ভারতের নানা ইংরেজি দৈনিকে
কার্টুনটি দেখে মনে হলো এ তো সামান্যই। ঠিক কার্টুনও নয় কোলাজ। একটু
পরিহাস আছে বটে, কিন্তু লন্ডনের পত্রিকা প্রাইভেট আই হরহামেশা যেমন
তীব্র-তীক্ষষ্ট কোলাজ করে তার তুলনায় এ কিছুই না। কার্টুনে পশ্চিমবঙ্গের
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইন্ডিয়ান রেলওয়ের লোগো দেখিয়ে বলছেন,
দেখতে পাচ্ছ মুকুল, সোনার কেল্লা। এরপরই সদ্য বিদায়ী রেলমন্ত্রীর পাশে
বর্তমান রেলমন্ত্রী মুকুল রায়ের ছবি। মুকুল বলছেন, ওটা দুষ্ট লোক। এরপরই
মমতার উক্তি, দুষ্ট লোক? ভ্যানিশ। কার্টুন প্রসঙ্গে সবার মনে পড়বে,
সম্প্রতি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের রেলমন্ত্রীর পদ থেকে দিনেশ ত্রিবেদিকে
সরিয়ে মুকুল রায়কে বসিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল সমর্থিত জোট
ক্ষমতায় বলে কেন্দ্রীয় সরকার দ্বিমত সত্ত্বেও মেনে নেয় এই সিদ্ধান্ত।
কোলাজটি অবশ্যই বাস্তবসম্মত, সঠিক তথ্যের ওপরই তৈরি। কিন্তু মমতা ক্ষেপেছেন
বেশ। প্রথমে কলকাতার পুলিশ ফেসবুককেই অনুরোধ করেছে কার্টুন সরিয়ে ফেলতে।
মামাবাড়ির অনুরোধ বটে। নানা দেশের সরকারগুলো এখন পান থেকে চুন খসলেই ফেসবুক
থেকে এটা-ওটা সরানোর নির্দেশ জারি করে বসছে। মমতাই-বা পিছিয়ে থাকবেন কেন।
কিন্তু কোলাজ সরানোর অনুরোধ করেই চুপ থাকল না পশ্চিমবঙ্গ সরকার। কোলাজের
অপরাধে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্রকে গ্রেফতার
করেছে পুলিশ। স্বাধীন মতপ্রকাশের ওপর এমন হামলায় ভারতজুড়ে মমতার তীব্র
সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছে মূলধারা ও বিকল্পধারার গণমাধ্যমগুলো। এক
কার্টুনের ধারাবাহিকতায় আরও নানা কার্টুন হয়েছে। কোথাও মমতাকে দেখানো হয়েছে
হিটলারের রূপে, কোথাওবা অত্যাচারী পুলিশরূপে। প্রেস কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার
চেয়ারম্যান বিচারপতি মার্কেন্ডেয় কুটজু পর্যন্ত বলেছেন, মমতাকে গণতান্ত্রিক
সংস্কৃতি শিখতে হবে আর পরিপকস্ফ আচরণও করতে হবে। নাগরিকরা প্রশ্ন করছে,
শাসকদের কোনো সমালোচনাই তাহলে করা যাবে না? শাসকরা যাচ্ছেতাই সিদ্ধান্ত
নেবেন, হাস্যকর ও বেদনাদায়ক নানা কাজ করে যাবেন আর নাগরিকরা সামান্য
সমালোচনাও করতে পারবে না, এ কী করে হয়। সত্যিকার অর্থে, এত জল ঘোলা না করে
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি এমন একটা কোলাজকে মেনে নিতেন তবে ভারতজুড়ে এত
নিন্দা তাকে কুড়াতে হতো না, এক কার্টুনের জের ধরে আরও কার্টুন হতো না। যাই
হোক, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মিডিয়ার ওপর রুষ্ট হয়ে বলেছেন, তারা শুধু
নেতিবাচক দিকগুলোকেই প্রাধান্য দেয়। যে মিডিয়া ক্ষমতায় আসার আগে মমতার
প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করত সেই মিডিয়ার প্রতিই মমতাকে অভিযোগ করতে হচ্ছে
মেয়াদের এক বছর না যেতেই। মিডিয়াগুলো বলছে, তাদের পলিসি পরিবর্তন হয়নি। বরং
কৃতকর্মের ফলই ভোগ করতে হচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কিছুদিন আগে
সরকারের অর্থপুষ্ট লাইব্রেরিগুলোর জন্য ক্রয়যোগ্য পত্রিকার তালিকা ঠিক করে
দিয়ে মিডিয়ায় তুমুল সমালোচনার শিকার হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার এই
কার্টুন কেলেঙ্কারি। তবে কার্টুন কাণ্ডের পর মমতা মিডিয়া নিয়ে এবার খুশি
হতে পারেন। কারণ, টাইম ম্যাগাজিন বিশ্বের প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির মধ্যে
তার নাম নিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রভাবশালী বটে। বাংলাদেশ-ভারত
সম্পর্কোন্নয়নের বেশ ক'টি উদ্যোগ তিনি থামিয়ে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়,
কেন্দ্রীয় সরকারের বেশ কিছু ভাইটাল ডিসিশনেও বাগড়া দিয়েছেন। মমতা হেলে বসলে
ভারতের সরকারও হেলে যাওয়ার আশঙ্কা। তাই দিদিকে ট্যাক্স দিয়েই চলতে হচ্ছে
সরকারকে। সেদিন এনডিটিভিতে দেখলাম, একজন সাংসদ মমতার এই প্রভাব নিয়ে
মতপ্রকাশ করতে গিয়ে বলছেন, এখনও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দেশ চালাচ্ছে। এত
প্রভাব আর ক্ষমতা যার তিনি সমালোচনা না সয়েই রাজ্য চালাবেন সেটা কীভাবে
মানা যায়?
No comments:
Post a Comment