Saturday, February 19, 2011

ব্রান্ডিং রিকশা


ক্রিকেট বিশ্বকাপ নিয়ে উচ্ছ্বাসের শেষ নেই বাংলাদেশে। ঢাকার রাস্তা নানা বর্ণের আলোয় সেজেছে। একদিকে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম, অন্যদিকে শেরেবাংলা স্টেডিয়াম_ নগরবাসী গভীর রাত পর্যন্ত ঘুরে ঘুরে আলো দেখছেন, আলোর ঝরনাধারার পাশে ছবি তুলছেন। ক্ষণে ক্ষণে খণ্ড খণ্ড মিছিল বের হচ্ছে রাস্তায়। বিশ্বকাপ উপলক্ষে বাহারি স্যুভেনির বের হয়েছে_ বাচ্চাদের হাতে শোভা পাচ্ছে তেমন স্যুভেনির। অনেকেই বাংলাদেশের জার্সি পরে ঘুরছেন ও পতাকা বহন করছেন পরম উৎসাহে। রাতের রাস্তায় শুধু যে আলোর বাহার তা নয়, রাজনৈতিক প্রচারণা থেকে ক্রিকেটারদের প্রতি অভিনন্দন বাণী, নানা দেশের ক্রিকেটারদের ছবি, মাস্কট, নেতা-নেত্রীদের ছবিসহ অনেক কিছুই দেখা যাচ্ছে। ঢাকার রাস্তার সংস্কার হয়েছে চোখে পড়ার মতো। গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলোতে রিকশা আগেও ছিল না, এখনও নেই। নতুন করে অনেক অগুরুত্বপূর্ণ রাস্তা থেকে রিকশা উধাও হয়ে গেছে। শহরের লক্কড়-ঝক্কড় বাসগুলো হাওয়ায় মিশে গেছে। তবু রাস্তায় ভিড় নেই, বাসস্ট্যান্ডে মানুষের অধীর প্রতীক্ষা নেই। উদ্বোধনীর দিন আধাবেলা বন্ধ থেকে দু'দিনের বন্ধে বেশ একটা উৎসবের আমেজ এসেছে শহরে। রাস্তা সংস্কারের এই বিপুল আয়োজনের মধ্যে অল্প লোকই রাস্তায় বেরোনোর কথা ভাবছেন। এই অবসরে এখনও রাস্তার সমস্যা, চলাচলের সমস্যা বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে না। অতএব ভালয় ভালয় উদ্বোধনী থেকে প্রথম ম্যাচ পর্যন্ত সময় গড়াল তা স্বীকার করতেই হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি বেশ প্রশংসিত হয়েছে। বিশেষ করে রিকশায় করে অধিনায়কদের মঞ্চে আগমন বেশ নজর কেড়েছে। রিকশা যে আমাদের শহরের বিশেষ বৈশিষ্ট্য, এটি আমরা গর্বের সঙ্গে উপস্থাপন করেছি, বিশ্ববাসী দেখে প্রশংসাও করেছে। শুধু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেই নয়, ঢাকার রাস্তাগুলোর সজ্জাতেও দেখছি রিকশাকে বেশ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বোঝা যায়, আয়োজকদের মাথায় রিকশা বেশ একটা জায়গা করে নিয়েছিল। বিশ্বকাপের মধ্য দিয়ে আমরা রিকশার একটা ব্রান্ডিং করে ফেললাম। রিকশার জায়গায় অনেক কিছুই থাকতে পারত। সুন্দরবনের বাঘ তো আছেই, সুন্দরবন, কক্সবাজারসহ অনেক কিছুই আরও গুরুত্ব পেতে পারত। কিন্তু সেসবকে ছাপিয়ে রিকশা যে বিশেষ একটা জায়গা জুড়ে এলো, তার কারণ কী? রিকশা ঢাকা শহরের অন্যতম যান, একথা ঠিক। যানটি পরিবেশসম্মত, জ্বালানিনির্ভর নয়_ ফলে এখন সমাদৃত হওয়ার মতো যানই বটে। কিন্তু আমাদের শহরে কি রিকশার সে কদর আছে? আমাদের শহরের সব সমস্যার প্রথম কারণ হিসেবে আমরা রিকশাকে দায়ী করে, একে একেবারে কোণঠাসা করে ফেলেছি। শহরে রিকশা করে কোথাও থেকে কোথাও যাওয়ার উপায় খুব একটা নেই। রিকশা এখন মোটামুটি পাড়ার গলিতে চলার বাহন। শহরে রিকশার জন্য আমরা কোনো ব্যবস্থা করতে পারিনি, করতেও চাই না। তারপরও রিকশাকে যে বিশ্বসভার সামনে গর্বভরে উপস্থাপন করছি তার কারণ কী? হয়তো যানটি দৃষ্টিনন্দন, এটাই হয়তো মুখ্য কারণ। কিন্তু আমাদের অবচেতনে কি এমন মনোভাবও আছে যে, এ যানটি পরিবেশবান্ধব এবং জ্বালানি-সাশ্রয়ী। এমন দিন হয়তো আমাদের দেশেও খুব দূরে নয়, যখন জ্বালানি বাঁচাতে রিকশা বা রিকশার মতো বাহনকে বেছে নিতে হবে, তেমন মেসেজ কি এবারের বিশ্বকাপের মধ্য দিয়ে আমরা দিয়ে ফেললাম? আমাদের রিকশা আর্ট অনেক আগেই শিল্পবোদ্ধাদের কদর পেয়েছে। কেউ কেউ বলেন, মানুষের পায়ে টানা এমন যান অমানবিক। তারপরও এ কথা সত্য, আমাদের শহরে বহু মানুষের কাছে রিকশাই জীবিকার একমাত্র উৎস। রিকশার ব্রান্ডিংয়ে কে কী বুঝেছে জানি না। তবে খেটে খাওয়া মানুষগুলো যে বিশ্বকাপের সঙ্গে অধিকতর একাত্ম বোধ করেছে তা বলাই বাহুল্য।

No comments:

Post a Comment