Monday, February 14, 2011
বসন্ত কীভাবে এলো?
আমাদের কবি রবীন্দ্রনাথের কাছে বসন্তের খুব কদর। রবীন্দ্ররচনাবলীতে কত শত বার যে বসন্ত এসেছে তা গুনে বলা মুশকিল। তিনি নানাভাবে বসন্তকে স্বাগত জানিয়েছেন তার গানে। শ্যামল শোভন রথে আসীন হয়ে, বকুল বিছানো পথ অতিক্রম করে, ব্যাকুল বেণু বাজায়ে, পিয়াল ফুলের রেণু মেখে_ ঘন পল্লব কুঞ্জে কিংবা বন মলি্লকা কুঞ্জে বসন্ত যেন আসে এই তার প্রস্তাব। এমনভাবে ডেকেছেন যেন বসন্ত কোনো ঋতু নন, একজন মানুষ। যিনি কি না মধুর মদির হাসবেন, উতলা উত্তরীয় বাতাসে উড়িয়ে এই পাগল হাওয়ার দেশে আসবেন। কবির কালে এমন গাঢ় আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে বসন্ত আসতেন কি না জানা নেই। তবে, তখন প্রকৃতি বোধহয় আমাদের কালের প্রকৃতির চাইতে স্পষ্ট ছিল। ঋতুর আনাগোনা বোঝা সাধারণের পক্ষে কঠিন হতো না। ফলে, মাঘের শীত যখন কমে আসছে, গাছের পাতা যখন ক্রমশ হলুদ হচ্ছে তখন মানুষের শরীর-মন নিজে থেকেই চনমন করে উঠতো হয়তো। কিন্তু আমাদের সময়ে ঋতুগুলো অস্পষ্ট, দ্বিধাগ্রস্ত। কয়েক দিনের তীব্র শীতের পর কবে মাঘ এসেছে, কবে শীতে কাতর বাঘ কেঁদে-কেটে বন তোলপাড় করেছে, কবে মাঘ নিশিথের কোকিল ডেকেছে তার হিসাব কেউ রাখে বলে মনে হয় না। ঘরে ঘরে বাংলা পঞ্জিকা রাখার চল তো কয়েক প্রজন্ম আগেই গত হয়েছে। বহু ঘরে বাংলা মাসের ক্যালেন্ডার পাওয়াও ভার। আকাশ দেখে, বাতাস স্পর্শ করে যখন ঋতু বোঝার উপায় নেই, ক্যালেন্ডার নেই তখনও বাংলা পত্রিকাগুলো নিরলস_ এখনও ইংরেজি তারিখের পাশে বাংলা মাসের হিসাব প্রকাশ করে যাচ্ছে। দরকার হলে পত্রিকা দেখে বলে দেওয়া চলে এখন কোন মাসের কত তারিখ। পরিস্থিতি মোটাদাগে এই। তাই পয়লা ফাল্গুন আসার পর ঢাকার রাস্তায় বেরিয়ে একটু অবাকই হতে হলো। শহরে অতো গাছ যে যে হলুদ পাতা দেখে বলবো মাঘ শেষ, শীতের হেরফেরও খুব বেশি হয়নি, তেমন একটা প্রচারও হয়নি। তবু মেয়েরা বাসন্তী শাড়ি পরে, ছেলেরা পাঞ্জাবী পরে বেরিয়েছে। বিকালে বই মেলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গিয়ে একেবারে বিস্মিত হতে হলো। পয়লা ফাল্গুনের উৎসব এখন পয়লা বৈশাখ ছুঁই ছুঁই। মনে আপনা হতেই প্রশ্ন জাগলো_ তবে এই প্রকৃতি বর্জিত, ব্যস্ত শহরে বসন্ত কীভাবে এলো? সত্য যে, কবির দেখানো পথে আসেনি। ফুল ফোটা বা না ফোটার ঘটনা অনুসরণ করেও বসন্ত আসেনি। তবু বসন্তের প্রথম দিনটি যে মানুষ রাস্তায় নামলো, তারা খবর পেল কীভাবে? বুঝলো কীভাবে? মনে হচ্ছে, আমাদের আধুনিক শহরের জীবনের সঙ্গে ঋতু পরিবর্তন আর বাংলা সন তারিখের একটা গোপন রফা হয়ে গেছে। খ্রিস্টীয় ক্যালেন্ডার সর্বত্র চালু থাকলেও সে ক্যালেন্ডারের সঙ্গে আমরা মিলিয়ে নিয়েছি কয়েকটা তারিখ। যেমন, ১৪ যেমন এপ্রিল পয়লা বৈশাখ, তেমনি ১৩ এপ্রিল পয়লা ফাল্গুন, মানে বসন্ত। ১৩ তারিখের বসন্ত উৎসবের সঙ্গে ১৪ তারিখের ভ্যালেন্টাইন মিলেমিশে একটা দুদিনব্যাপী উৎসবে পরিণত হতে চলেছে বা হয়ে গেছে। একত্রে মিলবার অজুহাত শহরের জীবনে খুব কম। সেজে, শাড়ি পরে, পাঞ্জাবী গায়ে দিয়ে পথে নেমে জ্যামে বসে থাকারও যে সুখ আছে, শহরের সামান্য ঘোরাফেরার জায়গায় ভিড়ের মধ্যে পথ চলাতেও যে আনন্দ তা বসন্ত বৈশাখ না এলে বোঝা যায় না। গত কয়েক বছর ধরেই দেখছি, ১৩ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি বেশ একটা আকার নিচ্ছে ধীরে ধীরে। বাংলা একাডেমিতে বই মেলা চলছে, এখানে ওখানে মেলা গান বাজনা এরই মধ্যে হলুদ পোশাকের শত শত তরুণ-তরুণী। পয়লা ফাল্গুন, তারা ঘুরবে। পরের দিন যে ভালোবাসা দিবস সেও জানা কথা, পরের দিনও ঘুরবে তারা। তারুণ্যের এই উৎসব সামনের দিনগুলোতে বড় হবে।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
সুন্দর
ReplyDelete