মিসরের চলমান রাজনৈতিক সংকটের সমাধান কোন পথে হবে, এ প্রশ্ন এখন অনেকের মুখে। এ নিয়ে বিশ্বের বড় বড় পত্রিকা বিশ্লেষণমূলক নানা লেখা প্রকাশ করছে। সে বিশ্লেষণের ঢেউ এসে পড়ছে আমাদের দেশেও। ক'দিন আগে একটা লেখা পড়ছিলাম, শিরোনাম 'যদি ইসলামিক ব্রাদারহুড ক্ষমতায় আসে তবে কী হবে?', পরে আরেকটা লেখার দেখা মিলল, 'যদি এলবারাদি নেতৃত্ব গ্রহণ করেন তবে কী হবে?' আজ আবার দেখছি আরেক শিরোনাম 'যদি মোবারক টিকে যান তবে?' এই বিশ্লেষণগুলোর শুরু ইংরেজিতে 'হোয়াট ইফ' দিয়ে। এসব লেখায় উমর সোলেইমানের নামও এসেছে, ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনিও নাকি ক্ষমতা গ্রহণ করতে পারেন। জল্পনা-কল্পনা বাতাসে দ্রুত বয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কী হবে সময়ই তা বলবে। এ মুহূর্তে তাহরির স্কয়ারের জনতা, তাদের ঘিরে রাখা সেনাবাহিনী, জনতার ওপর আক্রমণকারী মোবারকের পেটোয়া বাহিনী, হোয়াইট হাউস, এলবারাদি, ওমর সোলেইমান থেকে শুরু করে বড় বড় বিশ্লেষক পর্যন্ত কেউ-ই বলতে পারছেন না আসলে কী ঘটবে। 'টাইম উইল সে', হ্যাঁ, সময়ই বলবে বটে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ যদি জানতে পারেন, মিসরের সমস্যার সমাধানে তাদের একটা বিশেষ ভূমিকা আছে তবে কি তারা খুশি হবেন? মজার ব্যাপার, সমাধানটা শেষ পর্যন্ত বোধহয় বাংলাদেশ থেকেই যাচ্ছে। তাহরির স্কয়ারে বিরামহীন প্রতিরোধের মধ্যে সেনাবাহিনীর 'নিরপেক্ষ' ভূমিকা দেখে অনেকে বিস্মিত হয়েছিলেন। শুরুতে কারও মনে হয়নি যে সেনাবাহিনী সেখানে মোবারকের বিকল্প হতে পারে। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে ততই সেনাবাহিনীর ভূমিকা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এখন পত্রপত্রিকা পড়ে মনে হচ্ছে, মোবারকের প্রস্থানটাকে সহজ করতে সেনাবাহিনী সক্রিয় ভূমিকা নেবে। সেনাবাহিনী কি তবে সরাসরি ক্ষমতা দখল করবে? দখল করলে হয়তো ইতিমধ্যে করে ফেলত, তাদের পক্ষে মোবারক কিংবা তাহরির স্কয়ারের জনতা_ কোনো একটা পক্ষ অবলম্বন করা কঠিন হতো না। কিন্তু সেনাবাহিনী আরও উচ্চতর ভূমিকা নিতে যাচ্ছে। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে এবং পত্রিকাগুলো বলছে, মিসরে এখন সেনাসমর্থিত অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পরিকল্পনা চলছে। সেনাবাহিনী অন্তর্বর্তী নেতা খুঁজছে। মোবারকের প্রস্থানের উপায়ও খুঁজছে। সেনাসমর্থিত অন্তর্বর্তী সরকার ধারণাটি বাংলাদেশের বেলায় বেশ সফল হয়েছিল। এ ধরনের একটি সরকার দু'বছর ক্ষমতায় থেকে একটি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিল। এর ফলে একদিকে যেমন সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ শাসনের অভিযোগ ওঠেনি, তেমনি সিভিল সোসাইটিও আত্মসম্মান বজায় রেখে সরকারটিকে সমর্থন দিয়ে যেতে পেরেছে। মোটামুটিভাবে পর্দার আড়ালে থেকে সেনাবাহিনীও শাসনকাজে ভূমিকা রাখতে পেরেছে। আমাদের সমাজে এ নিয়ে নানা তর্ক-বিতর্ক আছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেনাসমর্থিত সরকার যে আমাদের একটা রাজনৈতিক সংকট থেকে উদ্ধার করেছে সেটা অনেকেই অস্বীকার করতে চান না। মিসরের সমাজ বেশ জটিল, সেখানে পোক্ত একটা শাসকশ্রেণী আছে। আরব বিশ্বের বিশিষ্ট রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মিসর নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থসংশ্লিষ্টতা আছে। আছে মিসরের আশপাশের দেশগুলোর রাজনৈতিক ভবিষ্যতের প্রশ্নও। ফলে ক্ষমতার পক্ষের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো সহসা সেখানে বিপ্লবের দাবিকে সমর্থন করে বসবে না। কিন্তু একান্তই যদি চেঞ্জ দরকার হয় তবে তারা নিজেদের স্বার্থ নিশ্চিত করে এমন একটি ট্রানজিশন তৈরি করতে চাইবে, যাতে সাপও মরে লাঠিও না ভাঙে। এখন দেখার বিষয়, সাপের ভূমিকা কে নেয়, মোবারক না প্রতিবাদী জনতা। সেখানে আমাদের মডেল অনুসরণ করে তাই সেনাসমর্থিত সরকারের সম্ভাবনা বেশ। তবে পরিস্থিতি যখন গনগনে তখন ভবিষ্যদ্বাণী না করাই ভালো। কারণ কবির ভাষায় বললে বলতে হয়, মিসর ও ভবিষ্যৎ হাত ধরাধরি করে
চলেছে পরস্পর।
No comments:
Post a Comment